Skip to content

মাছ ও চিংড়ির সম্পূরক খাদ্য তৈরির পদ্ধতি

মাছ ও চিংড়ির সম্পূরক খাদ্য তৈরির পদ্ধতি

অধিক উৎপাদনের লক্ষ্যে প্রাকৃতিক খাদ্য যোগানের পাশাপাশি পুকুরের বাইরে থেকে মাছকে কিছু খাদ্য দেওয়া হয়। বাইরে থেকে দেওয়া এসব খাদ্যকে সম্পূরক খাদ্য বলা হয়। চালের কুঁড়া, গমের ভুষি সরিষার খৈল ইত্যাদি সম্পূরক খাদ্য।

জীবের পুষ্টির সবগুলো উপাদানের সংমিশ্রণে প্রয়োজনীয় আনুপাতিক হারে যে খাদ্য তৈরি করা হয় তাকে সুষম খাদ্য বলে।

আমাদের দেশে সম্পূরক খাদ্যের উপাদানের জন্য যে উপাদানগুলো ব্যবহার করা হয় তার মধ্যে সরিষার খৈল, চালের কুঁড়া, গমের ভুষি, চিটাগুড় ইত্যাদি প্রধান। গবেষণার মাধ্যমে রুই জাতীয় মাছের মিশ্র চাষ এবং আঁতুর পুকুরে পোনা মাছ চাছের জন্য স্বল্পমূল্যের উন্নতমানের সুষম সম্পূরক খাদ্য তৈরির পদ্ধতি উদ্ভাবন করা সম্ভব হয়েছে।

এখানে আমরা মাছ ও চিংড়ির সম্পূরক খাদ্য তৈরির পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করার চেষ্টা করব।

(১) রুই জাতীয় মাছের সম্পূরক খাদ্য তৈরি পদ্ধতি

ক) রুই জাতীয় মাছের মিশ্র চাষের ক্ষেত্রে সম্পূরক খাদ্য তালিকা

উপাদানের নামব্যবহারের মাত্রা (%)আমিষের প্রয়োগ (%)
ফিসমিল১০.০০৪.২৪
চালের কুঁড়া৫৩.০০৬.১৯
সরিষার খৈল৩০.৫০৯.১৯
ভিটামিন ও খনিজ মিশ্রণ০.৫০
চিটাগুড়৬.০০০.২৭
মোট১০০.০০২০.০০

খ) রুই জাতীয় পোনা মাছের মিশ্র চাষের ক্ষেত্রে সম্পূরক খাদ্য তালিকা

উপাদানের নামব্যবহারের মাত্রা (%)আমিষের প্রয়োগ (%)
ফিসমিল২১.০০১২.১৩
চালের কুঁড়া২৮.০০৩.৩৩
সরিষার খৈল৪৫.০০১৩.৫৫
ভিটামিন ও খনিজ মিশ্রণ১.০০
চিটাগুড়৫.০০০.৮৯
মোট১০০.০০৩০.০০

গ) খাদ্য প্রস্তুত করার নিয়মাবলী

  1. প্রথমে পরিমাণ মত খৈল একটি পাত্রে কমপক্ষে ১০-১২ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে।
  2. অতঃপর ভিজা খৈলের সাথে প্রয়োজনীয় পরিমাণ চালের কুঁড়া বা চিটাগুড়া মিশিয়ে ছোট ছোট গোলাকার বল তৈরি করতে হবে।
  3. তৈরিকৃত বলগুলোকে একটি পাত্রে রেখে বলসহ পাত্রটি একটি নির্দিষ্ট সময়ে পুকুরের একটি নির্দিষ্ট স্থানে ৩০-৪৫ সে.মি. গভীরতায় ডুবিয়ে রাখতে হবে।
  4. মাছের খাদ্য গ্রহণের নির্দিষ্ট কোন সময় নেই। তবে সকাল এবং বিকাল বেলা মাছের খাদ্য সরবরাহ করার উত্তম সময়। কারণ এ সময়ই মাছ খাদ্য গ্রহণ করে থাকে।
  5. প্রতিদিন সকাল ও বিকেলে নির্দিষ্ট সময়ে খাবার সরবরাহ করলে খাবার কম পরিমাণে অপচয় হয় এবং তাছাড়া মাছ কী পরিমাণ খাবার গ্রহণ করছে তার পরিমাণ নির্ধারণ করে সঠিক মাত্রার খাবার সরবরাহ করা যায়।
  6. মাছের দৈহিক ওজন অনুযায়ী পুকুরে প্রতিদিন খাদ্য সরবরাহ করতে হয়। সাধারণভাবে রুই জাতীয় মাছের ক্ষেত্রে মজুতকৃত মাছের মোট ওজনের ৩-৫% হারে প্রতিদিন দুবার সকাল-বিকাল সম্পূরক খাদ্য প্রয়োগ করতে হয়।
  7. সাধারণত প্রতি মাসে কমপক্ষে এক বার জাল টেনে কিছু সংখ্যক মাছের ওজন নিয়ে গড় ওজন বের করতে হয়। এরপর মজুদকৃত মাছের সংখ্যাকে প্রাপ্ত গড় ওজন দ্বারা গুণ করে পুকুরের মাছের মোট ওজন নির্ণয় করতে হয়।
  8. পুকুরে মাছের মোট ওজন হিসাব করে সম্পূরক খাদ্য সরবরাহের পরিমাণ বের করতে হয়।
  9. পুকুরে গ্রাস কার্প, থাই সরপুঁটি ও বিভিন্ন ধরনের ঘাস কেটে ছোট ছোট করে মাছকে খাবার হিসেবে পুকুরে সরবরাহ করতে হয়। এ ধরনের খাবার পুকুরের মাঝখানে অথবা এক পাশে বাঁশের সাহায্যে ভাসিয়ে রাখা হয়।
See also  মাছের সম্পূরক খাদ্য তৈরির ফর্মুলা তালিকা উপাদান এবং খাদ্য প্রস্তুত ও প্রয়োগ পদ্ধতি

(২) চিংড়ি মাছের সম্পূরক খাদ্য তৈরির পদ্ধতি

ক) চিংড়ির কয়েকটি সম্পূরক খাদ্য তালিকা

চালের কুঁড়া, গমের ভুসি, ফিসমিল, সরিষার খৈল, শামুক-ঝিনুকের মাংশল অংশ ইত্যাদি দিয়ে খুব সহজেই চিংড়ির সম্পূরক খাদ্য তৈরি করা যায়।

খাদ্য উপাদান নমুনা ১: শতকরা হার নমুনা ২: শতকরা হারনমুনা ৩: শতকরা হার
১। চালের কুঁড়া৩০ %৩০ %৩০ %
২। গবাদিপশুর নাড়ি-ভূঁড়ি৩৫ %
৩। আটা১০ %১০ %
৪। গমের ভুসি১৫ %২০ %১০ %
৫। সরিষার খৈল২০ %১০ %
৬। ফিস মিল ১০ %৩০ %৪০ %
মোট =১০০ %১০০ %১০০ %

খ) চিংড়ির কয়েকটি সম্পূরক খাদ্য প্রস্তুত নিয়মাবলী

  1. চিংড়ির সম্পূরক খাদ্য তৈরির বিভিন্ন উপাদানগুলো পাউডার আকারে সঠিক মাত্রায় একত্রে মিশাতে হয়।
  2. খাবারের উপাদানগুলো ভালভাবে গুঁড়ো করা হয়েছে কিনা তা ভালভাবে লক্ষ রাখতে হবে। যদি ভালভাবে গুঁড়া না হয় তাহলে প্রতিটি খাদ্য উপাদানকে আলাদাভাবে ছাকতে হবে।
  3. অতঃপর কোনো আঠালো খাদ্য উপাদান যেমন চিটাগুড় অথবা যা চিংড়ির দেহের জন্য ক্ষতিকর নয় এমন উপাদান পরিমাণ মত পানির সাথে মিশিয়ে পাত্রে গরম করতে হয়।
  4. নাড়তে নাড়তে যখন মন্ডে পরিণত হবে তখন পাত্রটি আঁচ থেকে নামিয়ে কিছুক্ষণ ঠান্ডা হওয়ার পর কাঠের ছাঁকনি বা মেশিনের সাহায্যে ছোট ছোট পিলেট তৈরি করা হয়।
  5. এ ছাড়া ভেজা পদ্ধতিতেও চিংড়ি খামারে খাদ্য প্রয়োগ করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে মিশ্রিত সম্পূরক খাদ্য প্রতি দিনের মাত্রা বা পরিমাণ অনুযায়ী পানিতে এমনভাবে মিশাতে হয় যেন ছোট গোলাকার বলের মতো তৈরি করা যায়। পরে তৈরিকৃত বল জলাশয়ের নির্দিষ্ট স্থানে আস্তে আস্তে সরবরাহ করতে হয়।

(৩) মাছ ও চিংড়ির সম্পূরক খাদ্য তৈরিতে কিছু বিবেচ্য বিষয়

নির্বাচিত খাদ্য উপকরণ ভালোভাবে গুঁড়া করে চালুনি দ্বারা চেলে সুনির্দিষ্ট পরিমাণে মেপে নিতে হবে। একটি পাত্রে সবগুলো উপকরণ ভালোভাবে মিশিয়ে সঠিক মাত্রায় পানি ব্যবহার করে নরম করতে হবে। যে মাছের জন্য খাবার তৈরি করা হবে সে মাছের আকার বা মুখের আকারের ওপর ভিত্তি করে নির্দিষ্ট যন্ত্রের সাহায্যে পিলেট বা দানাদার খাবার তৈরি করতে হবে।

See also  মাছের খাদ্য ব্যবস্থাপনা

খাদ্য প্রস্তুতের পূর্বে যেসব বিষয়গুলো বিবেচনায় আনা উচিত সেগুলো হলো- 

  • মাছের বাজার মূল্যের সাথে সামঞ্জস্য রেখে মাছের খাদ্য তৈরি করতে হবে; 
  • যে মাছের জন্য খাদ্য তৈরি করা হবে সে মাছের খাদ্যাভাস, পরিপাকতন্ত্রের গঠনও বিবেচনায় আনতে হবে এবং; 
  • মাছের পুষ্টি চাহিদাকে বিবেচনায় এনে সঠিক পদ্ধতিতে খাবার তৈরি করতে হবে।

মাছের খাদ্য তৈরির উপকরণ নির্বাচনের ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো বিবেচনায় আনতে হবে-

  • খাদ্য উপকরণের সহজলভ্যতা; 
  • খাদ্য উপকরণের বাজার মূল্য; 
  • খাদ্য উপকরণের পুষ্টিগুণ;
  • খাদ্য উপকরণে পুষ্টিবিরোধী উপাদানের উপস্থিতি।

উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে আমরা রুই জাতীয় মাছের সম্পূরক খাদ্য তৈরি পদ্ধতি, চিংড়ি মাছের সম্পূরক খাদ্য তৈরির পদ্ধতি এবং মাছ ও চিংড়ির সম্পূরক খাদ্য তৈরিতে বিবেচ্য বিষয়গুলো সম্পর্কে ধারণা অর্জন করলাম।

মাছ ও চিংড়ির সম্পূরক খাদ্য তৈরিতে খাদ্য উপকরণগুলোর শতকরা হার অনুযায়ী পরিমাপ করে ভালো করে মিশ্রিত করতে হয়। মিশ্রণের পরিমাণ নির্ভর করে খামারের আয়তন অনুযায়ী কি পরিমাণ খাদ্য তৈরি করা হবে তার ওপর। উপকরণগুলো যথাসম্ভব চালনি দিয়ে চেলে নেয়া উচিত যাতে উপাদানগুলো সঠিকভাবে মিশ্রিত হয়। মিশ্রণকে শক্ত বড়ি বা পিলেট আকারে তৈরি করার জন্য বাইন্ডিং এজেন্ট হিসেবে চিটাগুড় বা বাইন্ডার পানিতে মিশিয়ে গরম করে নেয়া হয় এবং ক্রমাগত মিশ্রিত করে আঠার মতো করে নেওয়া হয়। তারপর খাদ্য উপাদানগুলো মেশিনের মাধ্যমে পিলেট আকারে তৈরি করা হয়।

তবে বেশিরভাগ খামারীগণ নিজে এগুলো বাসায় তৈরি না করে বাজার থেকে রেডি মেইড খাদ্য কিনে মাছকে সরবরাহ করে থাকেন।

[সূত্র: ওপেন স্কুল]

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/krisi

Everything related to animal and plants in the Bangla language!View Author posts