আমরা নিচের চিত্রগুলো লক্ষ করি। কী দেখতে পাচ্ছি? পুরুরে পানি, নদীতে পানি ও খালে পানি। আমরা কি জানি, এ পানিতে কোন জীব বাস করে। আর এ জীব আমরা খেয়ে আমিষের চাহিদা পূরণ করে থাকি। উত্তরে আমরা বলব মাছ। তাহলে মাছ পানিতে চাষ করলে তার এ আবাস সম্পর্কে আমাদের কিছু দরকার। আমরা জানি, আমাদের বসবাসের জন্য যেমন বাড়ি ও বাড়ির পরিবেশ থাকা দরকার, তেমনি মাছের জন্য তার বসবাসের জায়গা পানির পরিবেশ সুন্দর থাকা দরকার। কাজেই এসো আমরা মাছ চাষে পানির গুণাগুণ ও তার প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা করি।
(১) পানির ভৌত গুণাগুণ ও মাছ চাষে তার প্রভাব
পানির ভৌত অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে পুকুরের উৎপাদন ক্ষমতা সম্পর্কে ধারণা করা যায়।
মাছ চাষের পানির ভৌত গুণাগুণ নিম্নে উল্লেখ করা হলো-
ক) পানির বর্ণ: পানির বর্ণ হালকা সবুজ হলে তা পুকুরের অধিক উৎপাদনশীলতা নির্দেশ করে। বিভিন্ন ধরনের জৈব ও অজৈব দ্রব্যের উপস্থিতির কারণে পানির বর্ণ বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। রং দেখে পানির উৎপাদন শক্তি আন্দাজ করা যায়। পানির রং সবুজ বা বাদামি হলে বোঝা যাবে পানিতে মাছের প্রাকৃতিক খাদ্য আছে। পুকুরে নিয়মিত সার প্রয়োগ করলে উক্ত রং বজায় থাকবে।
খ) পানির স্বচ্ছতা: পানির স্বচ্ছতা ২৫ সেন্টিমিটার বা তার কম হলে পুকুরের উৎপাদন ক্ষমতা বেশি হয় পানিতে কনুই পর্যন্ত হাত ডুবানোর পর যদি হাতের তালু দেখা যায়, তবে বুঝতে হবে মাছের জন্য বেশি খাদ্য নেই। তখন পুকুরে সার দিতে হয়।
গ) পানির গভীরতা: পানির গভীরতা মাছ চাষের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। মাছ চাষের জন্য পুকুরের পানির গভীরতা কমপক্ষে ১.৫ মিটার থেকে ৩ মিটার পর্যন্ত হতে পারে। তবে ২ মিটার গভীরতা মাছ চাষের জন্য উত্তম। পানির গভীরতা খুব বেশি হলে সূর্যের আলো পানির গভীরে পৌঁছাতে পারে না। আবার পানির গভীরতা খুব কম হলে সূর্যের তাপে পানি গরম হয়ে উঠে।
ঘ) পানির তাপমাত্রা: পানির তাপমাত্রার উপরও মাছের বৃদ্ধি নির্ভর করে। শীতকালে মাছের বৃদ্ধি কম হয় এবং গরমকালে বেশি বাড়ে। যেমন রুই জাতীয় মাছ চাষের জন্য ২৫-৩০ সেলসিয়াস তাপমাত্রা উত্তম।
ঙ) সূর্যালোক: সূর্যালোকের উপর খাদ্য উৎপাদন নির্ভর করে। তাই পুকুর পাড়ের বড় গাছপালা কেটে পানিতে সূর্যালোক প্রবেশের ব্যবস্থা করতে হবে। পুকুরে ভাসমান কচুরিপানা, শেওলা ও আগাছা ইত্যাদিও পানিতে সূর্যালোক প্রবেশে বাধার সৃষ্টি করে।
(২) পানির রাসায়নিক গুণাগুণ ও মাছ চাষে তার প্রভাব
মাছ চাষের পানির রাসায়নিক গুণাবলির মধ্যে কয়েকটি আলোচনা করা হলো-
ক) দ্রবীভূত অক্সিজেন: জলজ উদ্ভিদ যে অক্সিজেন ছাড়ে তা পানিতে দ্রবীভূত হয়। বাতাস থেকেও কিছু অক্সিজেন সরাসরি পানিতে মিশে। পুকুরে অবস্থিত মাছ, জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণী এ অক্সিজেন দ্বারা শ্বাসকার্য চালায়। অক্সিজেনের অভাবে মাছ দলবদ্ধভাবে পানির উপর ভেসে বেড়ায়। একে মাছের খাবি খাওয়া বলে।
পানিতে অক্সিজেন হ্রাসের কারণ হলো-
- পানিতে গাছের পাতা ও ডালপালা পচা;
- কাঁচা গোবর বেশি পরিমাণে ব্যবহার;
- আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকা;
- পানি খুব ঘোলা হওয়া।
অক্সিজেনের ঘাটতি পূরণের উপায় হলো-
- পানির উপরিভাগে ঢেউ সৃষ্টি করে তাৎক্ষণিকভাবে পানিতে অক্সিজেনের অভাব পূরণ করা যায়।
- সাঁতার কেটে বা বাঁশ দিয়ে পানির উপর পিটিয়ে এ ঢেউ সৃষ্টি করা যায়।
খ) দ্রবীভূত কার্বন ডাইঅক্সাইড: কোনো কারণে পানিতে কার্বন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে গেলে বিষক্রিয়ার সৃষ্টি করে। পুকুরের তলায় অত্যধিক জৈব পদার্থ ও কাদা থাকলে অধিক তাপমাত্রার পুকুরে এ গ্যাসের আধিক্য ঘটে।
গ) পানির পি-এইচ: পানি অম্লধর্মী না ক্ষারধর্মী, তা পি-এইচ মিটার দ্বারা পরিমাপ করা যায়। পি-এইচ- এর কম হলে পানি অম্লীয়, ৭-এর বেশি হলে পানি ক্ষারীয় এবং ৭ হলে পানি নিরপেক্ষ। সামান্য ক্ষ পানি মাছ চাষের জন্য ভালো। তবে পানির পি-এইচ ৬.৫-৮.৫ হলে পানি প্রাকৃতিক খাদ্য উৎপাদনে সহায়ক হয়।
ঘ) ফসফরাস: ফসফরাস পানিতে মাছের খাদ্যের পরিমাণ বাড়ায়।
ঙ. নাইট্রোজেন: নাইট্রোজেন অলজ অণুজীবের জন্য খুবই উপকারী। আর এ অণুজীবই মাছের প্রধান খাদ্য।
চ. পটাশিয়াম: মাছের খাদ্যচাহিদা পূরণের জন্য পানিতে পটাশ দিতে হয়।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমরা বুঝতে পারলাম, মাছ চাবে পানির অনেক প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। পানির গুণাগুণ এর উপর জলাশয়ে মাছের উৎপাদন নির্ভর করছে।
[সূত্র: এনসিটিবি]