বুনট হলো মৃত্তিকার একটি মৌলিক ও স্থায়ী ধরনের ধর্ম। কোন মৃত্তিকায় বিভিন্ন আকারের একক কণার পারষ্পরিক অনুপাত দ্বারা সৃষ্ট স্থূলতা বা সুক্ষ্মতাকে মাটির বুনট (Soil texture) বলে।
বিভিন্ন আকারের বালি, পলি এবং কর্দম কণা বিভিন্ন অনুপাতে মিশে একটি বিশেষ বুনট শ্রেণীর মৃত্তিকা সৃষ্টি করে। মৃত্তিকার ভৌত গুণাবলী বুনটের উপর নির্ভর করে।
বিভিন্ন বুনটের মৃত্তিকার ধর্ম বা বৈশিষ্ট বিভিন্ন। এই সমস্ত বৈশিষ্টগত কারনের জন্য এক এক শ্রেণীর মৃত্তিকা ব্যবস্থাপনা এক এক রকম এবং এক এক ফসলের জন্য বিশেষ উপযোগী।
এ পাঠ শেষ অবধি পড়লে আপনি- মাটির বুনট কি; মাটির বুনট কাকে বলে? মাটি কত প্রকার ও কি কি; তা জানতে পারবেন। মাটির বুনটের গুরুত্ব সম্পর্কে অবগত হতে পারবেন। মাটির বুনট রূপান্তরকরণ করার পদ্ধতি শিখতে পারবেন। গবেষণাগারে পরীক্ষার জন্য মাটি কিভাবে সংগ্রহ করতে হয়; মাটির প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করে মাটি শনাক্তকরণ ও সংরক্ষণ করতে পারবেন।
(১) মাটির বুনট কি? মাটির বুনট কাকে বলে?
মাটির বুনট কি: মৃত্তিকার একটি মৌলিক ও স্থায়ী ধরনের ধর্ম হচ্ছে বুনট। মৃত্তিকায় বালি, পলি ও কর্দম এই তিন ধরনের কণা থাকে। মৃত্তিকায় বালি, পলি ও কর্দম কণার পারস্পারিক অনুপাত বা শতকরা হার হলো মাটির বুনট।
মাটির বুনট কাকে বলে: বালি, পলি ও কর্দম কণার তুলনামূলক পরিমাণকে মাটির বুনট বলে। এটি একটি মৃত্তিকার প্রধান ভৌত ধর্ম। বুনটের উপর মৃত্তিকার অনেক ভৌত গুণাবলী নির্ভর করে।
মাটির উপযুক্ত ব্যবহার ও ব্যবস্থাপনার জন্য বুনট সম্পর্কে পরিস্কার ধারণা থাকা প্রয়োজন। যেমন, যে মাটি অধিক পলিকণা ধরে রাখে তা শস্য চাষের জন্য উত্তম কারণ পলিমাটি সহজলভ্য পানি ও পুষ্টি উপাদান ধারনের জন্য উপযুক্ত। সুতরাং সেচ পানি নিস্কাশন, শস্য নির্বাচন ইত্যাদি শস্য উৎপাদনে ব্যবহৃত ব্যবস্থাপনা মৃত্তিকার বুনটের উপর নির্ভর করে।
(২) মাটি কত প্রকার ও কি কি?
মাটির বুনটের শ্রেণীবিন্যাস মৃত্তিকায় উপস্থিত বালি, পলি ও কর্দমা কণার আনুপাতিক হারের উপর ভিত্তি করে করা হয়। দুটি পদ্ধতিতে শ্রেণীবিন্যাস করা হয়। একটি আন্তর্জাতিক পদ্ধতি এবং আর একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় পদ্ধতি।
আন্তর্জাতিক ও যুক্তরাষ্ট্রীয় উভয় পদ্ধতিতে মাটিকে একক কণার ভিত্তিতে ১২টি বুনট শ্রেণীতে ভাগ করা হয়েছে।
১২টি মাটির প্রকার হলো-
- বালি
- দোআঁশ বালি
- বেলে দোআঁশ
- দোআঁশ
- পলি এটেল দোআঁশ
- পলি
- বেলে এটেল দোআঁশ
- এটেল দোআঁশ
- পলি এটেল দোআঁশ
- বেলে এটেল
- পলি এটেল
- এটেল
নিচে ছক আকারে ১২টি মাটির প্রকারের নাম ও তাদের বিভিন্ন উপাদানের শতকরা পরিমাণ দেখানো হলো-
ক্রম ও বুনটের নাম | বালি (%) | পলি (%) | কদর্ম (%) |
১। বালি | ৮৫-১০০ | ০-১৫ | ০-১০ |
২। দোআঁশ বালি | ৭০-৮৫ | ০-৩০ | ০-১৫ |
৩। বেলে দোআঁশ | ৪৩-৮০ | ০-৫০ | ০-২০ |
৪। দোআঁশ | ৮৩-৫২ | ২৮-৫০ | ৭-২৭ |
৫। পলি দোআঁশ | ০-৫০ | ৫০-৮৮ | ০-২৭ |
৬। পলি | ০-২০ | ৮০-১০০ | ০-১২ |
৭। বেলে এটেল দোআঁশ | ৪৫-৮০ | ০-২৮ | ২০-৩৫ |
৮। এটেল দোআঁশ | ২০-৪৫ | ১৫-৫৩ | ২৭-৪০ |
৯। পলি এটেল দোআঁশ | ০-২০ | ৪০-৭৩ | ২৭-৪০ |
১০। বেলে এটেল | ৪৫-৬৫ | ০-২০ | ৩৫-৪০ |
১১। পলি এটেল | ০-২০ | ৪০-৬০ | ৪০-৬০ |
১২। এটেল | ০-৪৫ | ০-৪০ | ৪০-১০০ |
সাধারণত কৃষি ব্যবহারের সুবিধার জন্য বুনট শ্রেণীকে প্রধানত ৩টি মাটির প্রকারে ভাগে ভাগ করা হয়। যথা-
- বেলে মাটি: মাটির নমুনা ভিত্তিক যে সকল মাটিতে ৭০% বা এর বেশি বালি কণা থাকে সেসব মাটি বেলে মাটি নামে পরিচিত। এর দুটি শ্রেণী হচ্ছে বালি ও দোআঁশ বালি।
- দোআঁশ মাটি: এই মাটিতে বালি, পলি ও কর্দম কণার পরিমান এমনভাবে থাকে যে উক্ত মাটির স্থূলত্ব ও সুক্ষèতা গুণাবলী প্রায় সমান। এই মাটির বেশ কয়েকটি বুনট শ্রেণী রয়েছে।
- এঁটেল মাটি: কোন মাটিতে কমপক্ষে ৩৫% কর্দম কণা থাকে তাকে এটেল মাটি বলে। এ মাটির ৩টি প্রধান শ্রেণী হচ্ছে বেলে এটেল, পলি এটেল ও এটেল মাটি।
(৩) মাটির বুনটের গুরুত্ব
- মৃত্তিকার শ্রেণীবিন্যাস করা যায় ফলে কোন মাটিতে কোন ফসল ভাল উৎপাদন করা যাবে তা সহজে নির্ণয় করা যায়।
- মৃত্তিকার উপযুক্ত ব্যবহার ও ব্যবস্থাপনা করতে সাহায্য করে।
- মৃত্তিকার পানি ধরে রাখার ক্ষমতা জানা যায় ফলে সময়মত সেচ ও নিকাশ করা যায়।
- ভূমি কর্ষণের সুবিধা/অসুবিধা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
- শিলাক্ষয়ের পর্যায় জানতে সহায়তা করে।
- ক্রমান্বয়ে পলির স্তর জমা হয়ে নতুন বুনটের মাটি গঠিত হয় যা ফসল উৎপাদন ভাল।
(৪) মাটির বুনট রূপান্তরকরণ
বিভিন্ন সময় কৃষিকাজের প্রয়োজনের মাটির বুনট পরিবর্তন করতে হয়। বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করে মাটির বুনট পরিবর্তন করা যায়।
ক) মাটির বনুট রূপান্তরের প্রয়োজনীয়তা
মাটির বুনট প্রধানত তিন প্রকার- যেমন বেলে, দোঁআশ এবং এঁটেল।
এদের মধ্যে বেলে ও এঁটেল মাটি কৃষিকাজের জন্য উপযোগী নয়। কারণ বেলে মাটির পানি ধারণ ক্ষমতা অনেক কম (৫%) এবং এঁটেল মাটির পানি ধারণ ক্ষমতা অনেক বেশি (৫০%)। ফলে বেলে ও এঁটেল মাটিতে ফসল উৎপাদনের জন্য অনুকূল জৈবিক ও ভৌত ধর্ম বিরাজমান থাকে না। এজন্য এদেরকে কৃষি উপযোগী দোঁআশ মাটিতে রূপান্তর করা প্রয়োজন হয়।
দোঁআশ মাটির পানি ধারণ ক্ষমতা (৩৫%) ও বায়ুচলাচল ক্ষমতা মধ্যম যা ফসল উৎপাদনের জন্য উপযোগী।
খ) বেলে মাটিকে দোঁআশ মাটিতে রূপান্তর
- এঁটেল মাটি ব্যবহার: বেলে মাটির উপরিস্তরে এঁটেল মাটি প্রয়োগ করে ভালভাবে মিশিয়ে বুনটে রূপান্তর আনা যায়। এক্ষেত্রে বালি, পলি ও কর্দমা কণার অনুপাত ২ঃ১ঃ১ হলে বেলে মাটি দোঁআশ মাটিতে রূপান্তরিত হয়।
- মাটি গভীর চাষ: মাটির উপস্তিরে স্থুলকণা ও নিম্নস্তরে সূক্ষ্মকণা থাকে। এজন্য মাটির গভীরে চাষ করলে স্থূল ও সূক্ষ্ম কণার মিশ্রণে বেলে মাটি দোঁআশ মাটিতে পরিণত হয়।
- জৈব সার ব্যবহার: মাটিতে বিভিন্ন জৈব সার যেমন কম্পোস্ট, খামারজাত সার ও সবুজ সার ব্যবহার করে মাটির বুনট বেলে মাটি থেকে দোঁআশ মাটিতে রূপান্তর করা যায়।
- কেঁচো সার বা ভার্মিকম্পোস্ট প্রয়োগ করে: কেঁচো সার একটি উন্নত মানের জৈব সার যা বেলে মাটির সাথে মেশালে বেলে কণার দৃঢ়তা কমে নরম হয়ে যায় এবং এদের মিশ্রণে বেলে মাটি দোঁআশ মাটিতে রূপান্তরিত হয়।
- পলি মাটি প্রয়োগ করে: নদীর পলি সমৃদ্ধ পানি এবং পলিকনা মিশ্রিত বৃষ্টির পানি জমিতে এনে আটকিয়ে রাখলে আস্তে আস্তে বেলে মাটি দোঁআশ মাটিতে রূপান্তরিত হয়।
গ) এঁটেল মাটিকে দোঁআশ মাটিতে রূপান্তরকরণ
- বেলে মাটি ব্যবহার: এঁটেল মাটির পানি ধারণ ক্ষমতা অনেক বেশি থাকায় এ ধরণের মাটিতে জলাবদ্ধতা বেশি হয়। আবার শুকিয়ে গেলে অত্যাধিক শক্ত হওয়ার দরুন কর্ষণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। তাই এঁটেল মাটিতে পলিসহ বেলে মাটি প্রয়োগ করলে মাটি দোঁআশ মাটিতে রূপান্তরিত হয়। এক্ষেত্রে বালি, পলি ও কাদার অনুপাত ২ঃ১ঃ১ হওয়া বাঞ্চনীয়।
- সবুজ সার প্রয়োগ: জমিতে কিছু নির্দিষ্ট উদ্ভিদ চাষ করে ছোট ও নরম অবস্থায় চাষ দিয়ে মিশিয়ে দিলে মাটির গুণাগুন বৃদ্ধি পায় এবং মাটিতে অধিক পরিমাণ জৈব পদার্থ যুক্ত হয়ে এঁটেল মাটিকে দোঁআশ মাটিতে রূপান্তরিত করে।
- জৈব সার প্রয়োগ: জমিতে বিভিন্ন জৈব সার যেমন খামারজাত সার ও কম্পোস্ট প্রয়োগ করলে মাটির ভৌত গুণাবলির উন্নয়ন হয়। মাটির স্থূল ও সুক্ষ্ম রন্ধের পরিমাণ সমান হয়। এতে এঁটেল মাটি দোঁআশ মাটিতে পরিণত হয়।
- কেঁচো সার বা ভার্মিকম্পোষ্ট প্রয়োগ: কেঁচো সারে ব্যাকটেরিয়া ও জৈব পদার্থ থাকে যা মাটির গুণাগুন বৃদ্ধি করে এঁটেল মাটিকে দোঁআশ মাটিতে রূপান্তরিত করে।
(৫) মাটির প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করে মাটি শনাক্তকরণ ও সংরক্ষণ
ক) মাটি সংগ্রহ
ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রে মাটির গুণাবলী নির্ধারণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মাটির গুণাবলী নির্ধারণের জন্য মাটির নমুনা সংগ্রহ করতে হয়। একটি জমি থেকে অধিক পরিমাণ ফসল উৎপাদনের লক্ষ্যে নিয়মিতভাবে মাটি পরীক্ষা করা প্রয়োজন। এজন্য সঠিক স্থান থেকে বৈজ্ঞানিক উপায়ে মাটির নমুনা সংগ্রহ করতে হয়।
মাটির নমুনা প্রধানত দুইভাগে সংগ্রহ করা হয়, যথা-পয়েন্ট বা সুনির্দিষ্ট নমুনা (Point sample) এবং কম্পোজিট বা মিশ্রিত নমুনা (Composit sample)। নির্বাচিত জমির একটি মাত্র নির্দিষ্ট স্থান থেকে মাটি সংগ্রহহ করলে একে পয়েন্ট নমুনা এবং অনেকগুলো প্রতিনিধিত্বশীল স্থান থেকে সংগৃহীত নমুনার মিশ্রণকে কম্পোজিট নমুনা বলে। সাধারণত কম্পোজিট নমুনা দ্বারা মাটির গুণাগুন যথাযথভাবে প্রতিফলিত হয়।
প্রয়োজনীয় উপকরণ:
- কোদাল, অগার, খুরপি বা বেলচা
- পলিথিন ব্যাগ
- পলিথিন শীট
- পানি
- স্কেল বা টেপ ৬। কাগজ, পেন্সিল
- কাঠের হাতুড়ি ইত্যাদি।
কার্যপ্রণালি:
- নির্বাচিত জমির চারপাশ থেকে সমানভাবে ৪-৫ হাত বাদ দিয়ে কমপক্ষে ৯টি স্থান থেকে মাটি সংগ্রহ করুন।
- মাটির উপরিস্তরের ১৫ সে.মি. গভীর পর্যন্ত মাটি সংগ্রহ করুন। সাধারণত গাছে র শিকড় এই অঞ্চলেই বিস্তৃত হয়।
- পরিষ্কার খনন যন্ত্রের সাহায্যে কর্ষণ স্তরের গভীরতা পর্যন্ত “V” আকৃতির গতর্ করুন। গর্তের এক পাশ থেকে ৭-৮ সে.মি. পুরু মাটির চাকার দু’পাশ এবং কর্ষণতলের অংশ কেটে চাকাটি পলিথিন শিটের উপর রাখুন।
- একইভাবে ৯টি স্থান থেকে সংগ্রহকৃত একই পরিমাণ মাটির চাকা সংগ্রহ করে একই জায়গায় রাখুন।
- পলিথিন শীটে রাখা সংগৃহীত মাটির নমুনার চাকাগুলো পরিস্কার হাতে গুঁড়া করে ভালভাবে মিশ্রণ করুন। মিশ্রণের সময় মাটি থেকে ঘাস বা শিকড় ও অন্যান্য অপদ্রব্য পরিষ্কার করে নিন।
- মাটি ঢেলাযুক্ত হলে শুকিয়ে হাতুড়ি দিয়ে গুঁড়ো করে একটি কাঁচে জারে বা পলিজারে সংরক্ষণ করুন।
কাচের জারে বা পলিব্যাগে যেসব তথ্য লিখে রাখা হবে:
- মাটির নমুনা নং
- সংগ্রহকারীর নাম
- নমুনা সংগ্রহের তারিখ
- গ্রাম/মৌজার নাম
- দাগ নং
- ভুমি শ্রেণী
- ফসল বিন্যাস
খ) মাটি শনাক্তকরণ
বিভিন্ন বুনটের মাটিতে বিভিন্ন ফসল হয়ে থাকে। একই বুনটের মাটিতে সব ধরনের ফসল উৎপাদন করা যায় না। এজন্য কৃষি ফসল উৎপাদনের জন্য মাটি শনাক্তকরণ খুবই দরকার।
প্রয়োজনীয় উপকরণ:
- নমুনা মাটি
- পানি ভর্তি ওয়াশ বোতল বা পিপেট
- বিকার
- নিক্তি
কার্যপ্রণালি:
- নিক্তির সাহায্যে নমুনা থেকে ৫০ গ্রাম মাটি মেপে বিকারে নিন।
- পিপেটের সাহায্যে ১০-১২ মিলি পানি নিয়ে বিকারে রাখা মাটিকে আস্তে আস্তে ভিজান।
- এবার বিকার থেকে সিক্ত মাটিকে দুই হাতের তালুর মধ্যে নিয়ে ভালভাবে মন্ড তৈরী করুন।
- তারপর মন্ডকে দুই হাতের তালুর সাহায্যে পিষে গোল, লম্বা, স্তম্ভ, ত্রিভূজ ইত্যাদি আকৃতি দেয়ার চেষ্টা করুন।
- পরিশেষে, সিক্ত এ মাটি দ্বারা যে সকল আকৃতি দেয়া যায় তা নিম্নোক্ত বৈশিষ্ট্যের সাথে মিলিয়ে একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যাবে।
পর্যবেক্ষণ নং | ফলাফল পর্যবেক্ষণ |
১। | এঁটেল মাটি শনাক্তকরণ- ক) দলা তৈরি করা যায় ও চ্যাপ্টা করা যায়। খ) ত্রিভূজ, বল, স্তবক ইত্যাদি যেকোনো আকৃতি দেয়া যায় কিন্তু মাটি ফেটে যায় না। গ) আঙুলে মাটির যথেষ্ট দাগ লেগে থাকে। ঘ) মাটি মিহি ও আঠার মতো চটচটে বা আঠালো। ঙ) মাটি দিয়ে আংটি বানানো যায়। |
২। | বেলে মাটি শনাক্তকরণ- ক) মাটি দিয়ে দলা বানানো যায় না। খ) ত্রিভূজ, বল, স্তবক তৈরি করতে গেলে ফেটে যায় এবং কোনো আকৃতি দেয়া যায় না। গ) মাটি অমর্সণ, বড় আকৃতির মৃত্তিকা বালি কণা দেখা যায়। ঘ) আঙুলে মাটির দাগ লেগে থাকে না। |
৩। | দোঁয়াশ মাটি শনাক্তকরণ- ক) ছোট ছোট দলা তৈরী করা যায় তবে দলা চ্যাপ্টা করা হলে ভেঙ্গে যায়। খ) মাটি দিয়ে বল তৈরি করা যায় এবং ফেটে যায়। গ) সোজা স্তবক বানানো যায়। ঘ) মাটি মিহি তবে চটচটে বা আঠালো নয়। ঙ) মুঠোর মধ্যে চাপ দিলে ঢেলা বেঁধে এবং বেশি চাপ দিলে ঢেলা ভেঙ্গে গুঁড়ো হয়ে যায়। |
৪। | এঁটেল দোঁয়াশ মাটি শনাক্তকরণ- ক) স্তবক বানানো ও চক্র তৈরী করা যায়। খ) ফাটলযুক্ত আংটি তৈরী করা যায়। গ) চটচটে, কাঁদা হাতে লেগে যায়। |
৫। | বেলে দোঁয়াশ মাটি শনাক্তকরণ- ক) শুধু বল তৈরী করা যায়, কিন্তু সহজে ভেঙ্গে যায়। খ) আঙুলে সামান্য মাটি দাগ লাগে। গ) ফিতা বানাতে গেলে টুকরা টুকরা হয়ে ভেঙ্গে যায়। |
ফলাফল: প্রদত্ত নমুনাটি এঁটেল মাটি/বেলে মাটি/দোঁআশ মাটি/এঁটেল দোঁআশ মাটি/বেলে দোঁআশ মাটি।
সতকর্তা: মাটির নমুনায় এমনভাবে পানি মিশাতে হবে যেন উক্ত মাটি শুধু দলা বানানোর উপযুক্ত হয়।
গ) মাটি সংরক্ষণ
পদ্ধতি: পলিথিন শীটে রাখা সংগৃহীত মৃত্তিকার নমুনার চাকাগুলো পরিষ্কার হাতে গুঁড়ো করে ভালভাবে মিশাতে হবে। মেশানো মাটি ছায়াযুক্ত স্থানে শুকিয়ে এর থেকে আধা কেজি পরিমাণ গুঁড়া মাটি পলিথিন ব্যাগে রাখতে হবে।
প্রয়োজনীয় উপকরণ:
- পুরু পলিথিন শীট
- কাটের শক্ত হাতুড়ি
- প্লাস্টিক/ কাঁচের বোতল
- ১০ মেশ চালনি
- তথ্য কার্ড বা ট্যাগ
কাজের ধাপ:
- পূর্বে সংগৃহীত শুকনো মাটি পলিথিন শীটে ছড়িয়ে খুব ভালভাবে গুঁড়ো করুন।
- গুঁড়ো করা মাটি ১০ মেশ চালনি দিয়ে চেলে পলিব্যাগ বা বয়ামে ভরে রাখুন।
- পলিব্যাগ বা বয়ামে তথ্য কার্ড বা লেভেল লাগিয়ে রাখুন।
- প্রস্তুতকৃত নমুনা আলমারি, সেলফ বা ফ্রিজে রেখে দিন।
তথ্যকার্ড বা ট্যাগের নমুনা:
- মাটির নমুনা সংখ্যা:
- নমুনা সংগ্রহের তারিখ:
- কৃষে কর নাম: পিতার নাম:
- গ্রাম/মৌজা: দাগ নম্বর:
- ডাকঘর:
- জমির পরিমাণ:
- থানা:
- ভূমি শ্রেণী:
- মৃত্তিকা সিরিজ:
- কী কী ফসলের আবাদ করা হয়:
সাবধানতা:
- নমুনা সংগ্রহের সময় ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি মরিচাবিহীন এবং পরিষ্কার হওয়া আবশ্যক।
- একই জমির মাটির সাথে অন্য জমির মাটি মিশানো যাবে না।
- কর্ষণস্তরের গভীরতা পর্যন্ত মাটি সংগ্রহ করতে হবে।
- মাটি গুঁড়ো করার জন্য ধাতব হাতুড়ি বা ধাতব পাত্র ব্যবহার করা যাবে না।
- তথ্য কার্ড সঠিকভাবে লাগাতে হবে।
প্রিয় পাঠক, উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে আমরা মাটির বুনট কি? মাটির বুনট কাকে বলে, মাটি কত প্রকার ও কি কি, মাটির বুনটের গুরুত্ব, মাটির বুনট রূপান্তরকরণ, মাটির প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করে মাটি শনাক্তকরণ ও সংরক্ষণ, প্রভৃতি বিষয় সম্পর্কে আমরা জানতে পারলোম।
মৃত্তিকা বুনট মৃত্তিকার একটি অন্যতম ভৌত ধর্ম। মৃত্তিকার অন্যান্য ভৌত ধর্মগুলোও মৃত্তিকা বুনটের উপর নির্ভর করে। মৃত্তিকার কণাসমূহ বিভিন্ন অনুপাতে মিশ্রিত হয়ে বুনট শ্রেণীর মাটির সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন বুনট শ্রেণীর মাটির বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এ সকল বৈশিষ্ট্যগত কারণে এক এক শ্রেণীর মাটির এক এক ফসলের জন্য উপযোগী। জমির উৎপাদন শক্তির উপর মৃত্তিকার বুনট ও সংযুতির যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে।
[সূত্র: ওপেন স্কুল]