Skip to content

 

রজনীগন্ধা ফুলের বৈশিষ্ট্য ও চাষ পদ্ধতি

রজনীগন্ধা ফুলের বৈশিষ্ট্য ও চাষ পদ্ধতি

(১) রজনীগন্ধা ফুলের পরিচয়

রজনীগন্ধা সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় ফুলগুলির মধ্যে রজনীগন্ধা অন্যতম। সামাজিক অনুষ্ঠানে এবং ফুলদানী সাজাবার কাজে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া এফুলের নির্যাস হতে সুগন্ধিও তৈরি হয়ে থাকে।

রজনীগন্ধা শব্দের অর্থ অনেকটা এমন দাঁড়ায়- ‘রাতের গন্ধ ছড়ানো ফুল’। আর এটাই সত্য। এ ফুল রাতে পরিবেশটাকে মোহনীয় করে দেয়। টিউব আকৃতির ফুলগুলো অবর্ণনীয় গন্ধ ছড়ায়। রাতের আঁধারে সাদা ফুলগুলো অদ্ভুত সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করে।

রজনীগন্ধা ফুল ইংরেজিতে Tuberose নামে পরিচিত। রজনীগন্ধা ফুলের মিষ্টি মধুর মতো সুগন্ধি রয়েছে। তাজা রজনীগন্ধা ফুল 10 ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় একটি শীতল জায়গায় প্রায় পাঁচ দিন সংরক্ষণ করা যেতে পারে।

রজনীগন্ধা ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম হলো Polianthes tuberosa, পরিবার Amaryllidaceae, উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Polianthes tuberose, রজনীগন্ধা ভারতীয় উপমহাদেশে আসে পর্তুগিজদের আসার পর। এর আদি বাসস্থান মেক্সিকোতে হলেও বর্তমানে অনেক দেশেই জন্মে।

(২) রজনীগন্ধা ফুলের ব্যবহার

জনপ্রিয়তা ও পরিচিতির দিক দিয়ে রজনীগন্ধা পৃথিবীর সর্বত্র সমাদৃত। আমাদের বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে এ ফুলের চাষাবাদ দিন দিন বাড়ছে।

সৌন্দর্যের কারণে আমাদের সামাজিক বিভিন্ন কাজে যেমন—গৃহসজ্জা, বিয়েশাদি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ব্যাপক হারে ব্যবহৃত হয় এই ফুল।ফলে বাণিজ্যিকভাবে এর চাষ শুরু হয়েছে বহু আগে।

সুগন্ধি ফুল হিসেবে রজনীগন্ধা খুবই জনপ্রিয়। এ ফুল সন্ধ্যারাতে ফোঁটে এবং সুগন্ধ ছড়ায় বলে এর রজনীগন্ধা নামকরন হয়েছে। চাহিদার দিক দিয়ে এবং বানিজ্যিক দৃষ্টিকোন থেকে এ ফুলের জুড়ি নেই।  কাটফ্লাওয়ার হিসেবে ফুলদানীর জন্য এটি অনন্য। এ ছাড়া মালা, পুষ্পস্তবক, বেনী ও মুকুট তৈরীতে এ ফুল ব্যবহৃত হয়। এ ফুলের নির্যাস থেকে সুগন্ধী দ্রব্য প্রস্তুত করা হয়।

ফুলের তোড়া সাজাতে অন্য যে কোনো ফুলের সঙ্গে রজনীগন্ধা ব্যাপক হারে ব্যবহার হয়। এ ছাড়া মালা তৈরি, মুকুট তৈরি ও গৃহসজ্জা থেকে শুরু করে বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠানে এ ফুলের ব্যবহার চোখে পড়ার মতো। ফুলের নির্যাস থেকে সুগন্ধীজাত দ্রব্য তৈরি হয়ে থাকে। ফুলের আকার ও পাপড়ির ওপর ভিত্তি করে তিন শ্রেণির রজনীগন্ধা পাওয়া যায়—সিঙ্গেল, সেমি-ডাবল ও ডাবল।

ফুলদানীতে এ ফুল ৭-১০ দিন সজীব থাকে এবং প্রতি রাতেই সুগন্ধ ছড়িয়ে ঘরের পরিবেশকে বিমোহিত করে। সুন্দর গন্ধের কারণে এই ফুলের নির্যাস থেকে সুগন্ধি দ্রব্যসামগ্রী তৈরি করা হয়। লাভজনক বিধায় বৈদেশিক বাণিজ্যেও এর অপার সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশে এ ফুলের উত্তরোত্তর চাহিদা বৃদ্ধির কারণে বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে এর যথেষ্ট চাষাবাদ হচ্ছে।

(৩) রজনীগন্ধা ফুলের বৈশিষ্ট্য

  • সবুজ চিকন কাণ্ডজুড়ে ধবধবে সাদা ফুলগুলো মনটাই ভালো করে দেয়। এর গন্ধ নেশা ছড়ায়। রাতে এ ফুল ফোটে এবং ফুলের মোহনীয় সুবাস পরিবেশকে মাতিয়ে তোলে।
  • রজনীগন্ধা (TubeRose) Agavaceae পরিবারের অন্তর্গত একটি মনোরম ও সুগন্ধী ফুল। রং ও সুগন্ধীর জন্য এই ফুল সবার কাছেই প্রিয়। রাতে সুগন্ধ ছড়ায় বলে একে রজনীগন্ধা বলে। এই ফুলকে রাতের রানি বলা হয়।কারণ এটি সন্ধ্যায় ফোটে আর মিষ্টি সুবাস ছড়ায়। এর মোহনীয় গন্ধ তনুমনে প্রশান্তি এনে দেয়। সাদা রং ও গন্ধে বাগান হয় সমৃদ্ধিশালী।
  • কন্দ জাতীয় বহু বর্ষজীবী ফুলগাছ। কন্দ ও বীজের মাধ্যমে বংশ বিস্তার করা যায়। তবে আমাদের বাংলাদেশে কন্দের মাধ্যমে এ ফুলের চাষাবাদ ও বংশবিস্তার হচ্ছে।
  • কন্দের মাধ্যমে উত্পাদিত গাছে মাতৃগুণাগুণ বজায় থাকে। কন্দ দেখতে পেঁয়াজের মতো। পাতার রং সবুজ, আকারে চিকন লম্বা।
  • রজনীগন্ধার কন্দ লাগিয়ে বংশবৃদ্ধি করা হয়। মার্চ-এপ্রিল মাস কন্দ লাগানোর উপযুক্ত সময়।
  • রজনীগন্ধা মূলত বর্ষাকালের ফুল হলেও প্রায় বছর জুড়ে ফোটে।
  • সবুজ ডাঁটার গায়ে সাদা রঙের জোড়ায় জোড়ায় ফুল ধরে। ফুলের ডাঁটা লম্বায় গড়ে প্রায় ৩ ফুট উঁচু হয়ে থাকে। ফুলের মাঝে পরাগ অবস্থিত। এ ফুলের বৈশিষ্ট্য ফুলের ডাঁটার গোঁড়ার দিকের ফুল শুরুতে ফোটে এবং পরবর্তী সময়ে ক্রমান্বয়ে ওপরের ফুলগুলো ফোটে।
  • অধিকাংশ নার্সারিতেই এই ফুল উৎপাদন হয়ে থাকে। এমনকি বাড়ির বাগানেও তার চাষ সম্ভব।
  • উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়ায় সুনিষ্কাশিত জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ দোঁআশ ও বেলে দোঁআশ মাটি রজনীগন্ধা চাষে উত্তম। টবেও রজনীগন্ধা চাষ করা যায়।
  • বর্ষার শুরুতেই এ ফুলের চাষ শুরু হয়। চারাকে দিনে ৩-৪ ঘণ্টা সূর্যের আলোয় রাখতে হয়।
  • এর মঞ্জরি না আসা পর্যন্ত পানি দিতে হয়। মঞ্জরি আসলে প্রতিসপ্তাহে একবার পানি দিতে হয়। তবে উদ্ভিদের গোড়ায় যেন পানি জমে না থাকে তার খেয়াল রাখতে হবে। যদি এর পাতা মরে যেতে থাকে এবং মাটি অতিরিক্ত আর্দ্র হয়ে যায়, বুঝবেন পানি বেশি দেওয়া হচ্ছে।
  • সারা বছরই বাজারে রজনীগন্ধা ফুলের চাহিদা বেশি থাকে এবং সারা বছরই চাষ হয়ে থাকে। তবে শীতকালে কিছুটা কম ফোটে। রজনীগন্ধার কন্দ লাগিয়ে বংশবৃদ্ধি করা হয়।
See also  রজনীগন্ধা ফুলের বৈশিষ্ট্য ও রজনীগন্ধা ফুল চাষ পদ্ধতি এবং পরিচর্যা

(৪) রজনীগন্ধা ফুলের জাত পরিচিতি

রজনীগন্ধার সাধারণত তিনটি জাত যেমন—সিঙ্গেল, সেমি ডাবল, ডাবল আমাদের বাংলাদেশে দেখা যায়। তার মধ্যে সিঙ্গেল জাতে রয়েছে পার্ল, বম্বে, ক্যালকাটা ও সিঙ্গেল ম্যাক্সিকান। আর ডাবল জাতে রয়েছে ডাবল পার্ল ও প্রোজ্জ্বল।

আমাদের বাংলাদেশের কৃষকরা প্রোজ্জ্বল, সেমি ডাবল ও ডাবল জাতের রজনীগন্ধা চাষ করে থাকেন। এর মধ্যে সিঙ্গেল জাতের ফুলগুলোতে পাপড়ি এক সারিতে হয় এবং দেখতে সাদা ও খুব সুগন্ধযুক্ত হয়। প্রোজ্জ্বল, সেমি-ডাবল, ডাবল জাতগুলোতে দুই বা তার বেশি পাপড়ি দেখা যায় এবং দেখতে হালকা লালচে ধরনের হয় এবং কম সুগন্ধযুক্ত হয়।

  • সিঙ্গল: যে সব জাতের ফুলের পাঁপড়ি একটি সারিতে থাকে সে সব জাতগুলি সিঙ্গেল শ্রেনীভুক্ত। একসারি পাপড়িযুক্ত সিঙ্গল জাতের গন্ধ বেশি। এ ধরনের জাতের ফুলে পাঁপড়ি একটি সারিতে থাকে। ফুল সম্পূর্ন সাদা রং এর হয় এবং ফুল গুলি খুবই সুগন্ধযুক্ত হয়।
  • সেমি-ডবল: যে সব জাতের ফুলের পাঁপড়ি দুই বা তিন সারিতে থাকে সে জাতগুলিকে সেমি-ডবল।
  • ডবল: তিন-এর অধিক পাঁপড়ির সারি থাকলে সে জাতগুলিকে ডবল শ্রেনীর অন্তভুক্ত করা যায়। পাঁপড়ির কিনারায় হালকা লাল রং এর আভা থাকে এবং ফুল গুলি কম সুগন্ধযুক্ত হয়।
  • ভ্যারিগেটেড জাত: ভ্যারিগেটেড জাতের বেলায় পাতায় হলুদাভ রেখা দেখা যায়৷

কয়েকটি জাতের বাণিজ্যিক নাম হলো। যথা-

  • সিগল জাত: পার্ল, বম্বে, ক্যালকাটা, সিংগল মেক্সিকান।
  • ডবল জাত: ডবল পার্ল।

বারি উদ্ভাবিত জাতসমূহ। যথা-

বারি রজনীগন্ধা-১:

বারি রজনীগন্ধা-১
বারি রজনীগন্ধা-১

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের ফুল বিভাগ কর্তৃক দেশের বিভিন্ন অঞ্চল, নার্সারি ও বিদেশ হতে জার্মপ্লাজম সংগ্রহ করে বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সর্বপ্রথম ২০১৬ সালে ‘বারি রজনীগন্ধা-১’ জাত উদ্ভাবন করা হয়। জাতটি ২০১১ সালে অবমুক্ত করা হয়।

  • জাতটি বাংলাদেশের সর্বত্র চাষাবাদ উপযোগী।
  • এটি একটি কন্দজাতীয় ফুল এবং ফুলের রং সম্পূর্ণ সাদা।
  • সুগন্ধি ফুল ও কাট ফ্লাওয়ার হিসেবে রজনীগন্ধার এ জাতটি খুবই জনপ্রিয়।
  • পুষ্পদন্ড প্রায় ৭৫ সেমি এবং স্পাইক প্রতি ফ্লোরেটের সংখ্যা ৩০-৩২ টি।
  • প্রায় সারা বছর এ ফুল ফোটে তবে খরিফ মৌসুমে বেশি ভাল হয়।
  • ফুলদানীতে এ ফুল প্রায় ৭-৮ দিন সজীব থাকে।

(৫) রজনীগন্ধা ফুলের চাষ পদ্ধতি

ক) জলবায়ু ও মাটি

রজনীগন্ধা উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়া পছন্দ করে, এ জন্য আমাদের বাংলাদেশে গ্রীষ্মকালে এ ফুলের চাষ করা হয়। এ ফুলের সফল চাষের জন্য গড় তাপমাত্রা ২০-৩৫০ সেন্টিগ্রেড ও আর্দ্র আবহাওয়ার প্রয়োজন হয়।

See also  রজনীগন্ধা ফুলের বৈশিষ্ট্য ও রজনীগন্ধা ফুল চাষ পদ্ধতি এবং পরিচর্যা

সুনিষ্কাশিত, জৈবপদার্থ সমৃদ্ধ দোআঁশ মাটি রজনীগন্ধা চাষের জন্য উত্তম।

আমাদের বাংলাদেশের যশোর, সাভার, নরসিংদী প্রভৃতি এলাকায় এখন বাণিজ্যিকভাবে এই ফুল চাষ হচ্ছে। রজনীগন্ধা আর্দ্র ও উষ্ণ জলবায়ুতে বেশ ভালো জন্মে।জৈবসারসমৃদ্ধ উর্বর দোআঁশ বা এটেল মাটিতে এর ফলন ভালো হয়।

খ) বংশ বিস্তার

  • রজনীগন্ধা বীজ ও কন্দ উভয় মাধ্যমেই বংশবিস্তার করে থাকে। তবে আমাদের বাংলাদেশে সাধারণত কন্দ দ্বারাই রজনীগন্ধার চাষ হয়ে থাকে। প্রতিটি গাছের গোড়ায় পেঁয়াজের মত যে বাল্ব পাওয়া যায় তাকে কন্দ বা বাল্ব বলে।
  • পুুরাতন গাছের গোড়ায় ঝাড় আকারে অনেক কন্দ থাকে। মাঝের কন্দটি বড় হয়। সাধারণত মাঝারী থেকে বড় আকারের কন্দ বংশ বিস্তারের জন্য ব্যবহার করা হয়।
  • বড় ধরনের কন্দ থেকে স্বাস্থ্যবান গাছ হয় ও গাছে তাড়াতাড়ি ফুল আসে কিন্তু ছোট কন্দ থেকে দুর্বল প্রকৃতির গাছ হয় ও দেরিতে ফুল আসে।
  • বড় ধরনের বাল্ব থেকে স্বাস্থ্যবান গাছ হয় ও গাছে তাড়াতাড়ি ফুল আসে কিন্তু ছোট বাল্ব থেকে দূর্বল প্রকৃতির গাছ হয় ও দেরীতে ফুল আসে।
  • কন্দ থেকে উৎপন্ন গাছে মা-গাছের সব বৈশিষ্ট্য অক্ষুন্ন থাকে এবং স্বল্প সময়ে গাছে ফুল আসে।
  • শীতকালে কন্দগুলি সাধারণত মাটির নিচে সুপ্ত অবস্থায় থাকে। শীতের শেষে কন্দগুলি লাগানোর জন্য উপযোগী হয়।

গ) জমি তৈরি ও সার প্রয়োগ

  1. জমি ৪-৫ বার চাষ দিয়ে ভালভাবে তৈরি করতে হয়। শেষ বার চাষের সময় হেক্টরপ্রতি ঊর্বরতা ভেদে ৯-১০ টন গোবর, ২৫০ কেজি টিএসপি ও ২৪০ কেজি এমওপি সার মাটির সাথে ভাল ভাবে মিশিয়ে দেয়া উচিত।
  2. কন্দ রোপণের ৩ সপ্তাহ পর যখন নতুন গাছের বৃদ্ধি শুরু হয় তখন হেক্টরপ্রতি ৩০০ কেজি ইউরিয়া সার এর অর্ধেক ১৫০ কেজি প্রথম উপরি প্রয়োগ এবং বাকি অর্ধেক ১৫০ কেজি সার পুষ্পদন্ড বের হওয়ার সময় দ্বিতীয় উপরি প্রয়োগ হিসেবে জমিতে দেয়া হয়।

ঘ) কন্দ রোপণ

  • বাঁছাইকৃত কন্দগুলি মার্চ-এপ্রিল মাসে জমিতে লাগানো উচিত। লাগানোর সময় কন্দের পুরানো শিকড়গুলি কেটে দেয়া উচিত।
  • সাধারণভাবে ভাল ফুুল পাওয়ার জন্য লাইন থেকে লাইনের দূরত্ব ৩০ সেমি এবং প্রতি লাইনে কন্দ থেকে কন্দের দূরত্ব ২০ সেমি বজায় রাখা ভাল।
  • প্রতিটি কন্দ সোজা করে ৭-১০ সেমি মাটির গভীরে পুঁতে দিতে হয়। কন্দ রোপণের পর প্লাবন সেচ দিয়ে সম্পূর্ণ মাঠ ভিজিয়ে দেয়া উচিত।
  • কন্দগুলি এমনভাবে লাগাতে হবে যাতে এর অগ্রভাগ ঠিক মাটির নিচে সমতলে অবস্থান করে।প্রতিটি বাল্ব (১.৫ – ৩.০ সে মি.) সোজা করে ৭-১০ সে:মি: মাটির গভীরে লাগানো উচিত।
  • মাটিতে রসের অভাব থাকলে কন্দ লাগানোর পূর্বে সেচ প্রদান করা উচিত। এছাড়া কন্দ রোপণের পর মাটিতে কন্দ বসার জন্য হালকা সেচ দেওয়া ভাল।

ঙ) অন্তর্বর্তী পরিচর্যা

  • রজনীগন্ধার ক্ষেত আগাছা মুক্ত রাখা উচিত। সেজন্য নিড়ানী দিয়ে আগাছা তুলে দিলে মালচিং এর কাজও সে সাথে হয়ে যায়।
  • শুকনো মৌসুমে প্রয়োজন মত সেচ এবং বর্ষাকালে অতিরিক্ত পানি সুনিষ্কাশনের জন্য ড্রেন করে দেয়া উচিত।
  • গাছের গোড়া থেকে শুকনো বা মরা পাতা সরিয়ে ফেলা উচিত।শীতকালে গাছের উপরের অংশ সম্পূর্ণ ভাবে কেটে দেয়া ভাল।
  • রজনীগন্ধার ক্ষেত আগাছা মুক্ত রাখা উচিত।
  • শীতকালে গাছের উপরের অংশ সম্পূর্ন ভাবে কেটে দেয়া ভাল।
  • এফিড, থ্রিপস পোকা দমনের জন্য ২মিলি লিটার ম্যালাথিয়ন প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ৭-১০ দিন অন্তর স্প্রে করা ভাল।

চ) রেটুন ফসল

রজনীগন্ধার পূর্ববর্তী বছরের ফসল মাঠে রেখে দিয়ে উপযুক্ত পরিচর্যার মাধ্যমে মৌসুমে পুনরায় ফুল উৎপাদন সম্ভব। এ প্রক্রিয়ায় ফুলের পুষ্পদন্ডের সংখ্যা বেশি পাওয়া গেলেও সবদিক দিয়ে ফুলের মান নিম্নতর হয় বিধায় বাজার মূল্য কমে যায়। তবে দ্বিগুণ সার ও যথেষ্ট সেচের মাধ্যমে এ প্রক্রিয়ায় উপযুক্ত  অন্তর্বর্তী পরিচর্যার মাধ্যমে অমৌসুমে ফুল উৎপাদন করে যথেষ্ট লাভবান হওয়া যায়।

ছ) টবে চাষ

বড় টবে রজনীগন্ধার চাষ করা যায়। উপযুক্ত টব মিশ্রণ দিয়ে পাশাপাশি কয়েকটি কন্দ লাগিয়ে নিয়মিত সেচ ও মাঝে মাঝে সামান্য  খৈল ও গোবর পচানো মিশ্রণ দিলে উন্নত মানের ফুল পাওয়া যায়।

See also  রজনীগন্ধা ফুলের বৈশিষ্ট্য ও রজনীগন্ধা ফুল চাষ পদ্ধতি এবং পরিচর্যা

জ) ফুল সংগ্রহ/কাটা

  • রজনীগন্ধার একই ক্ষেত থেকে পরপর ২-৩ বছর ফুল উৎপাদন করা যায়। রজনীগন্ধা লম্বা ডাটার মাথায় মঞ্জরী আকারে হয়। রজনীগন্ধার পুষ্পদন্ডের প্রথম ফুল ফুটলেই ডাঁটিসহ ফুল কাটতে হয়।
  • ভোরের ঠান্ডা আবহাওয়ায় অথবা পড়ন্ত বিকেলে ফুল কাটতে হয়। ধারালো ছুরি বা সিকেচার দিয়ে মাটি থেকে ৪-৬ সেমি উপরে ফুলের ডাঁটি কাটতে হয় যাতে গোড়ার বাড়ন্ত কুঁড়ির ক্ষতি না হয়।
  • রজনীগন্ধা ফুল লম্বা ডাটার মাথায় মঞ্জুরী আকারে হয়। মঞ্জুরীর নিচের দুটি কুড়ি যখন দুধের মত সাদা রং ধারণ করে এবং ২-১ দিনের মধ্যে ফুটে যাবে এমনটি বোঝা যায় তখন ধারালো ছুরি দিয়ে রজনীগন্ধার ষ্টিক কেটে এনে বালতি ভর্তি ঠান্ডা পানিতে ঘণ্টা খানেক রেখে প্রয়োজনমতো ব্যবহার করা যেতে পারে।

ঝ) প্রক্রিয়াজাতকরণ

প্রস্বেদনের কারণে জলীয় ক্ষতি (Transpiration loss) এড়ানোর জন্য যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি অপ্রয়োজনীয় পাতা অপসারণ করে সুবিধামত বান্ডিল তৈরি করে প্রথমে বালতিতে চিনি সহ পানিতে ২ ঘন্টা ভিজিয়ে রেখে পরে ছিদ্র যুক্ত পলিথিনে জড়িয়ে দূরবর্তী বাজারে প্রেরণ করা যেতে পারে। এ প্রক্রিয়ায় ফূলের জীবনকাল (Vase life) দীর্ঘায়িত হয়।

রজনীগন্ধা ফুলের সজীবতা বৃদ্ধিকরণ:

রজনীগন্ধ্যা সিংগেল ফুলের সজীবতা বৃদ্ধির জন্য ২% সুক্রোজের সাথে ৩০০ পিপিএম হাইড্রোক্সিকুইনোলিন সালফেট এবং ৩০ পিপিএম সাইট্রিক এসিড কার্যকরী।

বাল্ব বা কন্দ উত্তোলন ও সংরক্ষণঃ

ডিসেম্বর-জানুয়ারী মাসে গাছের বৃদিধ বন্ধ হয়ে গেলে কন্দগুলি মাটি থেকে তুলে এনে পরিস্কার করে ছায়াযুক্ত শুষ্ক মেঝেতে ছড়িয়ে রাখতে হয়। প্রয়োজনমত পরিপক্ক কন্দ বাছাই করে পরবর্তীতে বংশবিস্তারের কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে। রজনীগন্ধার কন্দ বেশ কষ্টসহিষ্ণু এবং সাধারণ অবস্থায় এর কন্দ সহজেই সংরক্ষণ করা যায়।

ঞ) ফলন

হেক্টরপ্রতি প্রায় ৪,৫০,০০০ – ৫,০০,০০০ টি ফুলের স্টিক পাওয়া যায়।

রজনীগন্ধার চাষ অত্যন্ত লাভজনক। বিশেষতঃ বিদেশে এর রপ্তানি বাজার বেশ সম্ভাবনাময়। দেখা গেছে যে, প্রতি হেক্টরে প্রায় ১ লক্ষ কন্দ লাগিয়ে ৩.৫ লক্ষ ফুলের ডাঁটি পাওয়া যায়।

এ ফসল উত্তরোত্তর একটি লাভজনক ফসল হিসেবে আমাদের বাংলাদেশে স্থান করে নিয়েছে। এ কারণে এর চাষ ও বাজার ব্যবস্থার উন্নয়নের দিকে বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন।

(৬) রজনীগন্ধা চাষে রোগবালাই ব্যবস্থাপনা

ক) কান্ড পচা রোগ

কান্ড পচা রোগ
কান্ড পচা রোগ

এটি একটি ছত্রাক জনিত রোগ। এ ছত্রাকের সংক্রমণ প্রথমে গাছের মূলে শুরু হয় এবং পরে গোড়ায় ক্ষতি করে। আক্রান্ত গাছের পাতা প্রথমে হলুদ হয়ে নুয়ে পড়ে এবং পরে শুকিয়ে যায়।

প্রতিকার:

এ রোগ দমনে অটোস্টিন (০.২%) ১০ দিন পর পর ৩ বার প্রয়োগ করতে হবে।

খ) এফিড বা জাব পোকা

এফিড বা জাব পোকা
এফিড বা জাব পোকা

এ পোকা রজনীগন্ধা গাছের কচি পাতা, ফুল-কুড়ি ও ফুলের রস চুষে খায়। এ পোকার আক্রমণ বেশি হলে গাছ খাটো হয়ে যায়।

প্রতিকার:

  1. জাবপোকা চোখে পড়লে মেরে ফেলতে হবে।
  2. ক্ষেতে বন্ধু পোকা যেমন লেডি বার্ড বিটলের সংখ্যা বাড়াতে হবে।
  3. জাবপোকার আক্রমণ বেশি হলে ফাইফানন ৫৭ ইসি অথবা রগর ৪০ ইসি (১ মিলি প্রতি লিটার পানিতে) অথবা এডমায়ার-২০ এস এল ১ মিলি প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ১০-১৫ দিন পর পর নিয়মিত গাছে স্প্রে করলে ভাল ফল পাওয়া যায়।

গ) মিলিবাগ বা ছাতরা পোকা

মিলিবাগ বা ছাতরা পোকা
মিলিবাগ বা ছাতরা পোকা

রজনীগন্ধা গাছে ছাতরা পোকার আক্রমণ দেখা যায়। সাদা রঙের মোমের মত নরম দেহের ছাতরা পোকারা গাছ থেকে রস চুষে খায়। ফলে কুঁড়ি ফোটে না এবং ফুল শুকিয়ে যায়।

প্রতিকার:

  1. আক্রমণ কম হলে টুথ ব্রাশ দিয়ে পোকা সংগ্রহ করে মেরে ফেলতে হবে।
  2. বাগান বা টব পরিষ্কার পরিচছন্ন রাখতে হবে।
  3. আক্রমণ বেশি হলে নিম তেল ৫ মিলি + ৫ মিলি ট্রিক্স প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ৭-১০ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।

ঘ) বোট্রাইটিস পাতায় দাগ ও ব্লাইট

রোগের কারণ Botrytis sp. এবং এই রোগটি  বর্ষা ঋতুতে দেখা যায়।

প্রথমে আক্রান্ত ফুলে গাড় বাদামী রং এর দাগ পড়ে এবং পড়ে সমস্ত পুষ্পমঞ্জুরী শুকিয়ে যায়। পাতায় এবং কান্ডেও এই রোগের প্রকোপ দেখা যায়।

প্রতিকার:

এই রোগ দমনে রোভরাল (ম্যানকোজেব) .২% হারে ৭-১০ দিন অন্তর স্প্রে করলে ভাল ফল পাওয়া যায়।

[সূত্র: বিএআরআই]

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/krisi

Everything related to animal and plants in the Bangla language!View Author posts

You cannot copy content of this page