রসুন একটি গুরুত্বপর্ণ মসলাজাতীয় ফসল। রসুনের অনেক ঔষধিগুণ রয়েছে। এটি মাংস, তরকারি, আচার, চাটনি, স্যুপ ও সস তৈরিতে ব্যবহার হয়। এছাড়াও ইনসেকটিসাইড, এন্টিব্যাকটেরিয়াল হিসেবে ব্যবহার হয়। রসুন পেটের পীড়া, আমাশয়, হৃদরোগ ও মানুষের শরীরে কোলেস্টেরল কমাতে বিশেষ উপকারী।
এ পাঠ শেষে আপনি- রসুন চাষের উপযুক্ত সময়, রসুনের জলবায়ু ও মাটি সম্পর্কে জানতে পারবেন। রসুন চাষে জমি তৈরি ও সার প্রয়োগ, বীজের হার, রোপন পদ্ধতি, আন্তঃপরিচর্যা, রোগ ও পোকামাকড় দমন, ফসল সংগ্রহ ও কর্তন, রসুন সংরক্ষণ প্ররভৃতি বিষয় সম্পর্কে ধারণা পাবেন। রসুন চাষ পদ্ধতি শিখতে পারবেন।
নিম্নে সহজ ও সংক্ষিপ্তভাবে রসুন চাষ পদ্ধতি তুলে ধরা হলাে-
(১) রসুন চাষের উপযুক্ত সময়, জলবায়ু ও মাটি
- রসুন চাষের উপযুক্ত সময় হলো বাংলাদেশে রসুন সাধারণতঃ শীতকালে চাষাবাদ করা হয়। রসুনের জন্য ঠান্ডা ও কুয়াশা মুক্ত এবং প্রচুর সূর্যালোক প্রয়োজন।
- বৃদ্ধির প্রথম পর্যায়ে ১৫ সে. এর নীচে তাপমাত্রা না হলে গাছের কন্দ উৎপাদনে প্রভাব ফেলে। অন্যদিকে বাল্ব বা কন্দ বৃদ্ধির জন্য দীর্ঘদিবস ও শুষ্ক আবহাওয়া প্রয়োজন।
- উর্বর দোআঁশ মাটি রসুন চাষের জন্য উপযোগী। এঁটেল মাটি, অধিক অম্লীয় ও ক্ষার মাটি রসুন চাষের জন্য উপযুক্ত নয়।
(২) রসুন চাষের জমি তৈরি ও সার প্রয়োগ
- জমি তৈরির জন্য ৫-৭ টি চাষ দিয়ে মাটি ঝুর ঝুরে করে মই দিয়ে সমান করে নিতে হবে।
- জমিকে খন্ডে ভাগ করে নিতে হবে। খন্ডের মাঝে পানি অপসারনের জন্য নালা তৈরি করতে হবে।
- সঠিক সময়ে সঠিক পরিমাণ সার প্রয়োগ করলে ফলন ভালো হয়। রসুনের জন্য প্রতি হেক্টর জমিতে ৫-১০ টন গোবর/কম্পোস্ট, ২৫০-৩০০ কেজি ইউরিয়া, টিএসপি ২০০-২৫০ কেজি, এমপি ৩০০ কেজি প্রয়োগ করতে হবে।
- জমি প্রস্তুতের সময় অর্ধেক ইউরিয়া, সম্পূর্ণ গোবর, অর্ধেক টিএসপি, সার মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। বাকি অর্ধেক ইউরিয়া দুই কিস্তিতে সমানভাগে চারা লাগানোর ৩৫ দিন এবং ৫০ দিন পর প্রয়োগ করতে হবে।
- বোরাক্স ও জিঙ্ক সালফেট প্রয়োগ করলে রসুনের ফলন ভালো হয়।
(৩) রসুন চাষে বীজের হার
বীজের পরিমাণ প্রতি হেক্টরে ৩০০-৪০০ কেজি রসুনের কোয়া প্রয়োজন হতে পারে। রসুনের উৎকৃষ্ট, বড়, পোকামাকড় ও রোগজীবাণুমুক্ত কন্দ বীজ হিসেবে ব্যবহার করতে হবে। তবে মোটামুটি ১ গ্রাম ওজনের কোয়া হলে বেশি ফলন পাওয়া যায়।
(৪) রসুনের রোপন পদ্ধতি
দুই পদ্ধতিতে রসুন রোপন করা যায়।
ক) ডিবলি পদ্ধতি: এক্ষেত্রে নরম মাটিতে বা জমিতে সুতা দ্বারা লাইন করে রসুনের কোয়া মাটিতে পুঁতে দিতে হবে।
খ) ফারো পদ্ধতি: সুনিষ্কাশিত উর্বর জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ দোআঁশ মাটিতে লাঙ্গল দ্বারা সোজা নালা করে ৩-৪ সে.মি. গভীরে কোয়া রোপন করা হয়। এটি রসুন চাষে উৎকৃষ্ট পদ্ধতি। রোপনের জন্য সারি থেকে সারি ১৫ সে.মি. এবং ৭-১০ সে.মি. দুরে দুরে কোয়া রোপন করা উচিত।
(৫) রসুন চাষে আন্তঃপরিচর্যা
- রসুনের জন্য কন্দ গঠনের পূর্ব পর্যন্ত আগাছা পরিষ্কার করতে হবে এবং সাথে মাটি ঝুর ঝুরে করে গোড়ায় দিতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে রসুনের গোড়ায় কোন ক্ষতি না হয়।
- জমিতে কুচুরিপানা বা ধানের খড় দ্বারা মালচিং করলে মাটির রস সংরক্ষিত থাকবে এবং সে ক্ষেত্রে সেচের তেমন প্রয়োজন হবে না।
- জমির প্রকৃতির উপর নির্ভর করে পরিমানমত ১৫- ২০ দিন পর পর সেচ দিতে হবে। তবে রসুন সংগ্রহের এক মাস আগে সেচ বন্ধ করতে হবে।
(৬) রসুন চাষে রোগ ও পোকামাকড় দমন
- রসুনের ক্ষতিকর পোকামাকড়ের মধ্যে থ্রিপস্ ও মাইট উল্লেখযোগ্য। থ্রিপস গাছের পাতা রস চুষে খেয়ে তার উপর লম্বা সাদা দাগ সৃষ্টি করে। পরে পাতার অগ্রভাগ বাদামি হয়ে শুকিয়ে যায়। পোকা দমনের জন্য ১০০০ লিটার পানিতে ম্যালাথিয়ন ৫৭ ইসি ১ লিটার মিশিয়ে এক হেক্টর জমিতে স্প্রে করলে সহজেই এ রোগ দমন করা যায়।
- গোড়া পঁচা, পার্পল ব্লচ ও পাতা ঝলসানো রোগ হতে পারে।
- রসুনের ক্ষেত্রে গোড়া পঁচা রোগ হলে গোড়ার অংশ পঁচে যায়। এক্ষেত্রে ডাইথেন এম ৪৫ বা পেনকোজেব রোগনাশক স্প্রে করতে হবে।
- পার্পল ব্লচ রোগ ছত্রাকের আক্রমণে হয়ে থাকে। এক রোগের ফলে প্রথমে ছোট ছোট দাগ পড়ে এবং পরে বিস্তার লাভ করে। ছোট ছোট দাগগুলি একত্রিত হয়ে বড় বাদামি দাগ হয়ে পাতা শুকিয়ে যায়। এক্ষেত্রে ২ গ্রাম রোভরাল ৫০ কেজি ডাব্লিউপি ১ লিটার পানিতে স্প্রে করতে হবে।
(৭) চাষকৃত রুসুন ফসল সংগ্রহ ও কর্তন
- রসুন গাছের পাতা বাদামি রং ধারণ করলে, পাতা ভেঙ্গে পড়লে, কন্দের বাইরের দিকে কোয়াগুলি স্পষ্ট হয়ে উঠলে দুই কোয়ার মাঝে খাঁজ দেখা যাবে তখন বুঝতে হবে যে ফসল তোলার সময় হয়েছে।
- বপনের ৪-৫ মাসের মধ্যে রসুন সংগ্রহের উপর্যুক্ত সময়।
- হাত দিয়ে গাছ টেনে তুলে মাটি ঝেড়ে পরিষ্কার করে ছায়াতে শুকাতে হবে।
(৮) রসুন সংরক্ষণ
- রসুন ভালোভাবে শুকিয়ে নিতে হবে। শুকানোর পর দেখা যাবে কন্দের উপরে গলা সরু ও সংকুচিত হয়, এই পরিবর্তনকে কিউরিং বলে। কিউরিং এর ফলে রসুন দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায়।
- আলো বাতাস চলাচল করে এমন ঘরে কয়েকটি রসুন পাতা সহ এক সংগে বেঁধে ঝুলিয়ে রাখা যায়।
উপরোক্ত আলোচনার দ্বার আমরা রসুন চাষের উপযুক্ত সময় ও রসুন চাষ পদ্ধতি এবং রসুর চাষের সাথে সম্পর্কিত অন্যন্য বিষয় সম্পর্কে একটা স্পষ্ট ধারণা অর্জন করলাম।
রসুন একটি গুরুত্বপূর্ণ মসলাজাতীয় ফসল। একটি বহু ঔষধিগুন রয়েছে। প্রতি হেক্টরে ৩০০-৪০০ কেজি রসুনের কোয়া প্রয়োজন। মোটামুটি ১ গ্রাম ওজনের কোয়া প্রয়োজন। বপনের ৪-৫ মাসের মধ্যে রসুন সংগ্রহের সময়।
[সূত্র: ওপেন স্কুল]