Skip to content

লালশাক চাষ পদ্ধতি

লালশাক চাষ পদ্ধতি

লালশাক সবার কাছেই প্রিয় একটি পুষ্টিকর শাক। লালশাকে প্রচুর ভিটামিন এ, বি, সি ও ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়। এটা দেখতে যেমন সুন্দর তেমন খেতেও সুস্বাদু। সারা বছরই এ শাক পাওয়া যায়।

দেশের প্রায় সব অঞ্চলেই লালশাক চাষ হয়। একই জমিতে বার বার লালশাকের চাষ করা যায়, সার কিংবা কীটনাশকের তেমন প্রয়োজন হয় না তাই উৎপাদন খরচ নেই বললেই চলে। আর সে কারণেই বাণিজ্যিক ভিত্তিতে লাল শাকের চাষ ও বাজারজাত লাভজনক ব্যবসা।

দেশের অনেক জায়গায় এখন বাণিজ্যিক ভিত্তিতে লালশাক চাষ ও বাজারজাত করা হচ্ছে। বেকারত্ব দূর করতে নারী বা পুরুষ নিজের জমিতে অথবা বর্গা নেওয়া জমিতে লালশাক চাষ করে ব্যবসা শুরু করতে পারেন।

(১) লালশাকের জাতের নাম ও পরিচিতি

চালশাকের অনেক জান রয়েছে। যেমন- আলতা পেটি ২০, রক্ত লাল, বারি লালশাক ১, ললিতা, রক্তরাঙ্গা, পিংকি কুইন, রক্তজবা ও স্থানীয় জাত।

বারি লালশাক-১:

বারি লালশাক-১
বারি লালশাক-১
  • লালশাকের এ জাতটি ‘বারি লালশাক-১’ নামে ১৯৯৬ সালে অনুমোদন করা হয়।
  • পাতা ও কান্ড উজ্জ্বল লাল।
  • ‘বারি লালশাক-১’ এর পাতার বোঁটা ও কান্ড নরম।
  • গাছ উচ্চতায় ২৫-৩৫ সেমি।
  • প্রতিগাছে ১৫-২০টি পাতা থাকে।
  • গাছের ওজন ১০-১৫ গ্রাম।
  • ফুলের রং লাল, বীজ গোলাকার, বীজের উপরিভাগ কালো ও কিছুটা লাল দাগ মিশ্রিত।
  • রান্নার পর শাকের রং গাঢ় লাল হয়। ‘বারি লালশাক-১’ বীজ বপনের ২৫-৩০ দিনের মধ্যে তোলা যায়।
  • বীজ উৎপাদনের জন্য ১১০-১৩০ দিন সময় লাগে।
  • উন্নত পদ্ধতিতে চাষ করলে হেক্টরপ্রতি ফলন ১২-১৪ টন হয়।
  • ‘বারি লালশাক-১’ ভিটামিন ‘এ’, ‘বি’, ‘সি’ ও ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ।
See also  পালংশাক চাষ পদ্ধতি

(২) লালশাক চাষ পদ্ধতি

ক) মাটি

  • প্রায় সব ধরনের মাটিতেই সার বছর ‘বারি লালশাক-১’ এর চাষ করা যায়। তবে শীত মৌসুমে লালশাকের ফলন বেশি হয়।
  • গ্রীষ্ম মৌসুমে পানি নিষ্কাশনের সুবিধাযুক্ত জমিতে লালাশাক চাষ করা যায়।
  • দোআঁশ বা বেলে দোআঁশ মাটি লালশাকের জন্য উত্তম।

খ) জমি তৈরি

জমি খুব ভালভাবে চাষ ও মই দিয়ে তৈরি করতে হবে। মাটি ও জমির প্রকার ভেদে ৪টি চাষ ও মই দিতে হয়।

ঘ) বপনের সময়

সারা বছরই এ জাতের লালশাক চাষ করা যায়।

গ) বীজ বপন

  • বীজ ছিটিয়ে বুনতে চাইলে সেক্ষেত্রে, জমি ভাল করে চাষ ও মই দিয়ে সমান করার পর ১ ভাগ বীজের সাথে ৯ ভাগ শুকনা ছাই মিশিয়ে হালকা ভাবে ছিটিয়ে লাল শাকের বীজ বুনতে হয়।
  • লালশাক বীজ ছিটিয়ে ও সারিতে বপন করা যায়। তবে সারিতে বপন করা সুবিধাজনক।
  • সারিতে বপন করতে চাইলে সেক্ষেত্রে সারি থেকে সারির দূরত্ব ২০ সেমি দিতে হবে।
  • তারপর একটি কাঠির সাহায্যে ১.৫-২.০ সেমি গভীর লাইন টেনে বীজ বুনে মাটি সমান করে দিতে হবে।

সারের পরিমাণ ও প্রয়েগের নিয়ম

নিম্নোক্ত সব সার বীজ বোনার আগেই মাটির সাথে ভালভাবে মিশিয়ে দিতে হবে।

সারএক শতকেহেক্টর প্রতি
গোবর৪০ কেজি১০ টন
ইউরিয়া৫০০ গ্রাম১২৫ কেজি
টিএসপি৩০০ গ্রাম৭৫ কেজি
এমওপি৪০০ গ্রাম১০০ কেজি

ঙ) বীজের হার

বপন পদ্ধতিএক শতকেহেক্টর প্রতি   
সারিতে ১০০ গ্রাম১-১.৫ কেজি  
ছিটিয়ে ১৫০ গ্রাম ২-২.৫ কেজি    

চ) অন্তবর্তীকালীন পরিচর্যা

  • বীজ গজানোর ১ সপ্তাহ পর প্রত্যেক সারিতে প্রতি ৫ সেমি অন্তর গাছ রেখে অন্যান্য গাছ তুলে ফেলতে হবে। ছিটিয়ে বোনা হলে প্রতি বর্গমিটারে ১০০ থেকে ১৪০ টি গাছ রাখতে হবে।
  • নিড়ানি দিয়ে জমি আগাছামুক্ত রাখতে হবে।
  • জমির উপরিভাগে মাটিতে চটা হলে নিড়ানি দেওয়ার সময় তা ভেঙ্গে দিতে হবে।
  • ৪-৫ দিন পর পর সেচ দিতে পারলে ভাল। তাছাড়া পরিস্কার করে সময়মত মাটি আলগা করে দিতে হবে।
See also  গীমাকলমি শাকের জাত ও চাষ পদ্ধতি

ছ) ফলন

  • বীজ বোনার ৩০ থেকে ৪০ দিনের মধ্যে শাক খাওয়ার উপযুক্ত হয়। একসাথে শাক সংগ্রহ না করে ধীরে ধীরে সংগ্রহ করা ভালো।
  • প্রতি শতকে ৩০-৪০ কেজি, হেক্টর প্রতি ৫-৬ টন।
  • উন্নত পদ্ধতিতে চাষ করলে প্রতিবিঘা জমি থেকে প্রায় ৫শত কেজি লালশাক পাওয়া যায়।

লালশাক সুস্বাদু ও পুষ্টিকর তাই ছোট-বড় সবাই এই শাক খুব পছন্দ করে।

যেহেতু এর চাহিদা সবার কাছেই আছে তাই লালশাক চাষ করে পারিবারিক পুষ্টির চাহিদা পূরণ করার পাশাপাশি অতিরিক্ত উৎপাদন বাজারে বিক্রি করে বাড়তি আয় করাও সম্ভব।

লালশাক রপ্তানি করার জন্য রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করা যেতে পারে।

(৩) ছাদ বাগানে শাক চাষ পদ্ধতি

প্রায় সব ধরনের মাটিতেই সার বছর লালশাক চাষ করা যায়।

তবে শীত মৌসুমে লালশাকের ফলন বেশি হয় এবং দোআঁশ বা বেলে দোআঁশ মাটি ও যেখানে পানি জমে না এমন জমিই চাষের জন্য সবচেয়ে উপযোগী।

জনপ্রিয় এই ‘শাক’ খুব সহজেই ছাদ বাগানে চাষ করা যায়। যথা-

  1. অপেক্ষাকৃত কম গভীরতার পাত্র লালশাক চাষাবাদের জন্য উপযোগি।
  2. পাত্র যত বড় হবে তত বেশি লাল শাক চাষ করা যাবে। সেজন্য দৈর্ঘ্য এবং প্রস্তে একটু বড় পাত্র/বক্স লাল শাকের জন্য নির্বাচন করতে হবে।
  3. ছাদের উপরে অনেকেই বেড তৈরি করে। এইসব বেডেও লালশাকের চাষ খুব ভালো হয়।
  4. টব/বক্স/ড্রাম যা কিছুতেই লাল শাক চাষ করা হোক না কেন এর নিচের দিকে ৩/৪ টি ছিদ্র করে নিতে হবে যাতে অতিরিক্ত পানি জমে না থাকে।
  5. ছিদ্রগুলোর উপর ইটের ছোট ছোট টুকরা দিয়ে বন্ধ করে দিতে হবে।
  6. এখন ২ ভাগ দোআঁশ বা বেলে দোআঁশ মাটি এবং ১ ভাগ গোবর একত্রে মিশিয়ে ড্রাম বা টব ভরে পানিতে ভিজিয়ে রেখে দিতে হবে ৭-৮ দিন।
  7. সাত-আট দিন পর পূণরায় মাটি খুচিয়ে দিতে হবে।
  8. মাটি যখন খুব ঝুরঝুরে হবে তখন লাল শাকের শাকের বীজ বপন করতে হবে।
  9. ছাদ বাগানের জন্য বীজ একটু ঘন করে বুনলে ভাল হয়। আস্তে আস্তে বড় হওয়ার সাথে সাথে ২০-২১ দিন পর থেকে অল্প অল্প করে শাক তুলতে হবে এবং ৩০-৩৫ দিনের মধ্যে পুরো শাক তুলে খেয়ে ফেলতে হবে।
  10. পুরো শাক উঠানোর পর পুনরায় বীজ বপন করে দেয়া যাবে। এভাবে পর পর বছরে ৮-১০ বার পর্যন্ত লাল শাক চাষ করা সম্ভব।
See also  পুইশাক চাষ পদ্ধতি

(৪) রোগ ও পোকা দমন ব্যবস্থাপনা

লালশাকের ক্ষেতে প্রায় দুটি মারাত্মক রোগ (শুয়া পোকা ও মরিচা রোগ) দেখা যায়।

ক) শুয়া পোকা

  • এ পোকা লাল শাক গাছের পাতা খেয়ে সমুহ ক্ষতি করে থাকে।
  • এই পোকা থেকে মুক্তি পেতে ম্যালাথিয়ন ৫৭ ইসি, রক্সিয়ন ৪০ ইসি, ইকালাক্স ২৫ ইসি ঔষধগুলোর যেকোন একটি ১.১ লিটার পানিতে মিশিয়ে এক হে: জমিতে স্প্রে করতে হবে।

খ) মরিচা রোগ

  • এ রোগ লালশাক গাছের শিকড় ছাড়া সকল অংশকেই আক্রমণ করে। সাদা অথবা হলুদ দাগ পাতার নিচে দেখতে পাওয়া যায়। পরে সেগুলো লালচে বা মরিচা রং ধারন করে এবং পাতা মরে যায়।
  • এই রোগ থেকে লালশাককে বাঁচাতে প্রতি লিটার পানিতে ১.৫ গ্রাম ডাইথেন এম–৪৫ ঔষধ মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

[সূত্র: বিএআরআই]

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/krisi

Everything related to animal and plants in the Bangla language!View Author posts