Skip to content

 

লিচু চাষ পদ্ধতি ও নিয়মসমূহ

লিচু চাষ পদ্ধতি ও নিয়মসমূহ

লিচু গন্ধ ও স্বাদের জন্য দেশ-বিদেশে বেশ জনপ্রিয়।

বাংলাদেশে বৃহত্তর রাজশাহী, দিনাজপুর, কুষ্টিয়া, যশোর, পাবনা, ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রাম জেলায় বেশি পরিমাণে লিচু উৎপন্ন হয়।

লিচু টিনজাত করে সংরক্ষণ করা যায়।

লিচু
লিচু

(১) লিচুর জাত পরিচিতি

ক) বারি লিচু-১

স্থানীয় জার্মপ্লাজম থেকে বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জাতটি উদ্ভাবন করা হয়। ‘বারি লিচু-১’ উচ্চ ফলনশীল জাতটি চাষের জন্য ১৯৯৬ সালে অনুমোদন করা হয়।

বারি লিচু-১
বারি লিচু-১
  • এটি একটি আগাম জাত।
  • ফল ডিম্বাকার এবং রং লাল।
  • ফলের ওজন প্রায় ১৮-২০ গ্রাম, দৈর্ঘ্য ৩.৫ সেমি এবং প্রস্থ ৩.১ সেমি হয়ে থাকে।
  • ফলের ভক্ষণযোগ্য অংশ ৬৫.৩%।
  • প্রতি গাছে ৮-১০ হাজার ফল উৎপাদিত হতে পারে।
  • হেক্টরপ্রতি ফলন ১০-১২ টন।
  • সাধারণত মধ্য-মাঘ মাসে (জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ) কুঁড়ি আসতে শুরু করে এবং মধ্য-জ্যৈষ্ঠ (মে) মাসের শেষ সপ্তাহের মধ্যে ফল আহরণ শেষ হয়ে যায়।
  • দেশের উত্তরাঞ্চলে এ জাতটি চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী।

খ) বারি লিচু-২

‘বারি লিচু-২’ নামে উচ্চ ফলনশীল নাবী জাতটি বাংলাদেশে ১৯৯৬ সালে অনুমোদন করা হয়।

লিচু উৎপাদনের মৌসুম খুবই সংক্ষিপ্ত। তাই লিচুর উৎপাদন মৌসুমকে দীর্ঘায়িত করার জন্য গুরুত্বসহকারে জাতটি প্রবর্তন করা হয়েছে।

বারি লিচু-২
বারি লিচু-২
  • গাছের আকৃতি মাঝারী।
  • পাতা বর্শাকৃতির, পুষ্পমঞ্জরী পিরামিড আকৃতির ও ফল গোলাকার।
  • ফলের গড় আকৃতি দৈর্ঘ্য ৩.৪ সেমি এবং প্রস্থ ৩.০ সেমি।
  • পাকা ফলের রং গোলাপী লাল।
  • প্রতিটি ফলের ওজন ১৪-১৭ গ্রাম, ফলের শাঁস মাংসল, রসালো, মিষ্টি (টিএসএস ১৬.১%) এবং শাঁস ফলের ৬৫-৭০%।
  • বীজ অপেক্ষাকৃত বড়।
  • প্রতিবছর নিয়মিত ফল দেয়।
  • ফুল মাঘের মাঝামাঝী (ফেব্রুয়ারি প্রথম সপ্তাহ) সময়ে আসে।
  • জ্যৈষ্ঠের (জুন প্রথম সপ্তাহ) শেষ থেকে আষাঢ়ের প্রথম সপ্তাহে (মধ্য-জুন) ফল পাকে।
  • পূর্ণ বয়স্ক প্রতিটি গাছের ফলের সংখ্যা ২৩০০-২৭০০টি।
  • হেক্টরপ্রতি ফলন ৫-৬ টন।
  • জাতটি বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলে চাষের উপযোগী।

গ) বারি লিচু-৩

‘বারি লিচু-৩’ জাতটি বিদেশ হতে সংগৃহীত জার্মপ্লাজম থেকে বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নির্বাচন করে ১৯৯৬ সালে মুক্তায়ন করা হয়।

বারি লিচু-৩
বারি লিচু-৩
  • ‘বারি লিচু-৩’ মাঝ মৌসুমী জাত, নিয়মিত ফল ধরে।
  • গোলাপের সুঘ্রাণ বিশিষ্ট অপেক্ষাকৃত বৃহদাকার ফল উৎপাদনকারী এ জাতটি বসত ভিটায় লাগানোর জন্য অত্যন্ত উপযোগী।
  • গাছের আকৃতি মাঝারী।
  • পাতা খর্বাকার বর্শাকৃতির হয়।
  • পুষ্পমঞ্জরী পিরামিড আকৃতির, ফল হৃদপিন্ডাকার হয়।
  • ফলের আকৃতি দৈর্ঘ্য ৩ সেমি ও প্রস্থ ৩.৩ সেমি।
  • পাকলে হলদে সবুজ ছোপসহ লাল রং ধারণ করে।
  • ফলের ওজন ১৭-১৯ গ্রাম।
  • ফলের শাঁস মাংসল রসালো ও খুব মিষ্টি (টিএসএস ১৯%)।
  • শাঁস ফলের ৭৫-৭৭%, বীজ ক্ষুদ্রাকার এবং মাঘের মাঝামাঝী (ফেব্রুয়ারি) সময় ফুল আসে এবং জ্যৈষ্ঠের মাঝামাঝী (জুন) সময় ফল পাকে।
  • প্রতিটি গাছের ফলের সংখ্যা ১৬০০-২০০০টি এবং হেক্টরপ্রতি ফলন ৫-৬ টন।
  • জাতটি বাংলাদেশের সর্বত্রই চাষের উপযোগী।
See also  লিচুর চারা লাগানোর নিয়ম, লিচু গাছে সার প্রয়োগ পদ্ধতি ও লিচু গাছের পরিচর্যা

ঘ) বারি লিচু-৪

‘বারি লিচু-৪’ জাতটি বাংলাদেশে চাষের জন্য ২০০৮ সালে অনুমোদন করা হয়।

বারি লিচু-৪
বারি লিচু-৪
  • এটি একটি মাঝ মৌসুমী জাত।
  • ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে ফুল আসে এবং জুন মাসে ফল পরিপক্কতা লাভ করে।
  • গাছপ্রতি ফলের সংখ্যা ৫,০০০টি।
  • ইহা একটি উচ্চ ফলনশীল উন্নত গুণগত মানসম্পন্ন জাত।
  • গাছপ্রতি ফলন ১৩০ কেজি এবং হেক্টরপ্রতি ফলন ১০-১২ টন।
  • বৃহদাকার ও গাঢ় লাল বর্ণের প্রতিটি ফলের গড় ওজন ২৭ গ্রাম।
  • ফল অতি ক্ষুদ্র বীজ সম্পন্ন ও মাংসল।
  • শাঁস অত্যন্ত মিষ্টি (টিএসএস ২২%), রসালো ও সুগন্ধযুক্ত।
  • ফলের খাদ্যোপযোগী অংশ ৭৮%।
  • জাতটি বাংলাদেশের উত্তর ও উত্তর পশ্চিমাঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে চাষের জন্য উপযোগী।

ঙ) বারি লিচু-৫

বারি লিচু-৫
বারি লিচু-৫
  • উচ্চ ফলনশীল নাবি জাত।
  • প্রতিবছর ফল ধরে।
  • ১৫ বছর বয়সের প্রতিটি গাছে ৩৪,০০টি ফল ধরে যার ওজন ৭৩.৮ কেজি।
  • ফল খুব মিষ্টি (টিএসএস ১৭.৫%)।
  • ফল মাঝারি আকৃতির এবং গড় ওজন ২১.৭৯ গ্রাম।
  • ফল ওভাল আকৃতির এবং পাকা ফল গাঢ় লাল রঙের হয়ে থাকে।
  • ফল সংগ্রহের উপযুক্ত সময় হল জুনের ৩য় সপ্তাহ।
  • ফলের শাঁস সাদা রঙের হয়ে থাকে।
  • ফলের খাদ্যোপযোগী অংশ শতকরা ৭০ ভাগ।
  • বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলের জন্য উপযোগী।
  • এ জাতের লিচুতে উল্লেখযোগ্য কোন রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ হয় না।

(২) লিচু চাষ পদ্ধতি ও নিয়মসমূহ

ক) মাটি ও জমি তৈরি

গভীর, নিকাশযুক্ত, ঊর্বর বেলে অথবা দোআঁশ মাটি লিচু চাষের জন্য উত্তম।

উঁচু ও মাঝারী উঁচু জমি নির্বাচন করতে হবে। চাষ ও মই দিয়ে জমি সমতল এবং আগাছামুক্ত করে নিতে হবে।

খ) চারা রোপনের নিয়ম ও পদ্ধতি

রোপণ প্রণালী: সমতল ভূমিতে- বর্গাকার ও পাহাড়ী ভূমিতে- কন্টুর পদ্ধতি।

চারা নির্বাচন: এক থেকে দুই বছর বয়স্ক সুস্থ ও সবল গুটি কলমের চারা বাছাই করতে হবে।

চারা রোপণের সময়: জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ় (মধ্য-মে থেকে মধ্য-জুলাই) এবং ভাদ্র-আশ্বিন (মধ্য-আগস্ট থেকে মধ্য-অক্টোবর) মাস।

চারা রোপণের দূরত্ব: ৮ মিটার।

গর্ত তৈরি: গর্তের আকার ১ ⨉ ১ ⨉ ১ মিটার।

গর্তে সারের পরিমাণ: চারা রোপণের ১০-১৫ দিন পূর্বে গর্ত তৈরি করে প্রতি গর্তে নিম্নরূপ সার প্রয়োগ করতে হবে। গর্তে কিছুটা পুরাতন লিচু বাগানের মাটি মিশিয়ে দিলে চারার অভিযোজন দ্রুত বৃদ্ধি হবে।

See also  আধুনিক পদ্ধতিতে লিচু চাষে সেচ পদ্ধতি
সারের নামসারের পরিমাণ/গর্ত
টিএসপি৫০০ গ্রাম
এমওপি৪০০ গ্রাম
জিপসাম২০০-৩০০ গ্রাম
জিংক সালফেট৪০-৬০ গ্রাম
জৈব/গোবর২০-২৫ কেজি

চারা রোপণ: গর্ত ভর্তির ১০-১৫ দিন পর চারাটি গোড়ার মাটির বলসহ গর্তের মাঝখানে সোজাভাবে লাগাতে হবে। চারা রোপণের পর পানি, খুঁটি ও বেড়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

গ) লিচুর গাছে সার প্রয়োগ

গাছের যথাযথ বৃদ্ধি ও কাঙ্খিত ফলনের জন্য সার প্রয়োগ করা আবশ্যক। গাছের বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে সারের পরিমাণও বাড়াতে হবে।

বিভিন্ন বয়সের গাছের জন্য প্রয়োজনীয় সারের পরিমাণ নিচের ছকে দেয়া হল-

নিম্নলিখিত সার সমান তিন কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হবে।

প্রথম কিস্তি বর্ষার শুরুতে (ফল আহরণের পর), দ্বিতীয় কিস্তি বর্ষার শেষে (আশ্বিন-কার্তিক মাসে) এবং শেষ কিস্তি গাছে ফুল আসার পর প্রয়োগ করতে হবে

সারের নামগাছের বয়স ১-৪ (বছর)গাছের বয়স ৫-১০ (বছর)গাছের বয়স ১১-২০ (বছর)গাছের বয়স ২০ এর উর্ধ্বে (বছর)
গোবর (কেজি)১০২০৩০৫০
ইউরিয়া (গ্রাম)৩০০৮০০১২০০২০০০
টি এস পি (গ্রাম)৪০০১২০০২০০০৩০০০
এমওপি (গ্রাম)৩০০৮০০১২০০১৫০০
জিপসাম (গ্রাম)১০০২০০২৫০৩০০
জিংক সালফেট (গ্রাম)১০২০৩০৫০

ঘ) পানি সেচ ও নিকাশ

  • চারা গাছের বৃদ্ধির জন্য শুকনো মৌসুমে ১০-১৫ দিন পর পর সেচ দিতে হবে।
  • ফলন্ত গাছের বেলায় সম্পূর্ণ ফুল ফোঁটা পর্যায়ে একবার, ফল মটর দানার মত হলে একবার এবং এর ১৫ দিন পর আর একবার মোট তিনবার সেচের ব্যবস্থা করতে হবে।
  • সার প্রয়োগের পর সেচ দেয়া একান্ত দরকার।
  • অপরদিকে, বর্ষার সময় যাতে গাছের গোড়ায় পানি জমে না থাকে তার জন্য পানি নিকাশের ব্যবস্থা নিতে হবে।

ঙ) ডাল ছাঁটাইকরণ

পূর্ণ বয়স্ক গাছে পর্যাপ্ত আলো বাতাস প্রবেশের জন্য ফল সংগ্রহের পর অপ্রয়োজনীয় ডালপালা কেটে ফেলতে হবে।

ফল সংগ্রহের সময় লিচুর মাকড় আক্রান্ত ডাল ভেঙ্গে পুড়িয়ে ফেলতে হবে।

চ) গাছের মুকুল ভাঙ্গন

কলমের গাছের বয়স ৪ বছর পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত মুকুল ভেঙ্গে দিতে হবে।

ছ) লিচু ফল সংগ্রহ

  • ফল পাকার সময় খোসা আকর্ষণীয় খয়েরী, লাল বা সবুজ মিশ্রিত লাল রং ধারণ করে ও খোসার কাটাগুলি চ্যাপ্টা হয়ে সমান হয়ে যায়।
  • মঞ্জরীর গোড়া থেকে পাতাসহ ডাল ভেঙ্গে থোকায় থোকায় লিচু সংগ্রহ করা হয়।
  • বৃষ্টির পর পরই গাছ থেকে ফল সংগ্রহ করা উচিত নয়। কারণ এতে ফল পচে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
  • ফল সংগ্রহের সময় ফলবান ও ফল বিহীন বিশেষ করে লিচু মাকড়াক্রান্ত পাতাসহ ডাল ভেঙ্গে দিতে হয়।
  • যথাযথ পরিচর্যা পেলে লিচু গাছ ১০০ বছর পর্যন্ত লাভজনক ফল দিতে পারে।
  • একটি পূর্ণ বয়স্ক লিচু গাছ থেকে বছরে ৫০০০-১০০০০ (১০০-১৫০ কেজি) লিচু সংগ্রহ করা যায়।
See also  আধুনিক পদ্ধতিতে লিচু চাষে সেচ পদ্ধতি

জ) অন্যান্য নিয়ম

রপ্তানিযোগ্য লিচু
রপ্তানিযোগ্য লিচু

লিচু রপ্তানির জন্য এর গুণগতমান ভালো হওয়া দরকার। সেজন্য উৎপাদন এবং ফল সংগ্রহোত্তর নিয়মসমূহ যথাযথ পালন করা দরকার। নিচে রপ্তানির জন্য লিচু উৎপাদন ও ফল সংগ্রহোত্তর কিছু করণীয় দেয়া হলো।

i) লিচু চাষের ক্ষেত্রে

  • বোরন ও দস্তার অভাব থাকলে অন্যান্য অনুমোদিত সারের সাথে প্রতিটি গাছে ২০ গ্রাম জিঙ্ক সালফেট এবং ১০ গ্রাম বরিক এসিড (লিচুর আঁটি শক্ত হওয়ার পর্যায়ে) গাছের গোড়ায় মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে।
  • ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত নিয়মিত রিং বেসিন পদ্ধতিতে গাছের গোড়ায় সেচ দিতে হবে।
  • লিচুর পোকা দমনের জন্য ফল মটর দানার আকার হলে নাইলনের তৈরি জাল দিয়ে লিচুর গোছা বেঁধে দিতে হবে।

ii) লিচু ফল সংগ্রহের পর

  1. লিচু পাকার পর পাতা ও বোঁটাসহ সম্ভব হলে কাচি বা সিকেচার দিয়ে কেটে সংগ্রহ করে একটি ছায়াযুক্ত স্থানে রাখতে হবে।
  2. নষ্ট ও কাঁচা লিচু বাদ দিয়ে ভালো মানের ফল গোছা আকারে ঝুড়িতে যথেষ্ট পরিমাণ পাতা দিয়ে রাখতে হবে।
  3. এরপর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কোল্ড স্টোরেজের প্যাকিং কক্ষে আনতে হবে।
  4. এখানে আর একবার ফল বাছাই করতে হবে।
  5. ফলের সাথে ৫ থেকে ১০ মিলিমিটার বোঁটা রেখে ছিদ্রযুক্ত পলিইথাইলিন ব্যাগে করোগেটেড ফাইবার কার্টুনে ভরে ১৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা ও ৯৫% আপেক্ষিক আর্দ্রতায় ২৪ ঘণ্টা রাখতে হবে।
  6. এভাবে ১ কেজি লিচুর জন্য ৪টি ব্যাগের প্রয়োজন।
  7. তারপর কার্টুনগুলো ঠান্ডাযুক্ত গাড়িতে করে রপ্তানির জন্য বিমানবন্দরে পাঠাতে হবে।

(৩) চাষে পোকা-মাকড় ও বাদুর দমন ব্যবস্থাপনা

ক) ফল ছিদ্রকারী পোকা

লিচুর ভিতরে ফল ছিদ্রকারী পোকা
লিচুর ভিতরে ফল ছিদ্রকারী পোকা

ফল ছিদ্রকারী পোকা লিচুর অন্যতম প্রধান শত্রু।

ফলের বাড়ন্ত অবস্থায় পূর্ণ বয়স্ক পোকা ফলের বোঁটার কাছে খোসার নিচে ডিম পাড়ে। ডিম থেকে কীড়া বের হয়ে বোঁটার নিকট দিয়ে ফলের ভিতরে ঢুকে বীজ খেতে থাকে। এতে অনেক অপরিপক্ক ও পরিপক্ক ফল ঝরে যায়।

এছাড়া, বীজ খাওয়ার দরুণ করাতের গুড়ার মত পদার্থ উৎপন্ন হয় এবং বোঁটার কাছে জমে থাকে। এতে ফল খাওয়ার অনুপযোগী হয়ে পড়ে এবং বাজার মূল্য হ্রাস পায়।

দমন ব্যবস্থা:

  1. বাগান পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
  2. আক্রান্ত ফল বাগান থেকে কুড়িয়ে মাটির গভীরে পুঁতে ফেলতে হবে।
  3. এ পোকা দমনের জন্য রিপকর্ড/সিমবুশ/সুমিসাইডিন/ডেসিস প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলি হারে মিশিয়ে ফলের মার্বেল অবস্থা থেকে শুরু করে ১৫ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।
  4. তবে মনে রাখতে হবে ফল সংগ্রহের অন্তত ১৫ দিন পূর্বে শেষ স্প্রে করতে হবে।

খ) লিচুর মাইট বা মাকড়

মাইট আক্রান্ত লিচুর পাতা
মাইট আক্রান্ত লিচুর পাতা

লিচু গাছের পাতা, ফুল ও ফলে এর আক্রমণ দেখা যায়।

আক্রান্ত পাতা কুঁকড়িয়ে যায় এবং এর নিচের দিকে লাল মখমলের মত হয়ে যায় এবং দুর্বল হয়ে মরে যায়।

আক্রান্ত ডালে ফুল, ফল বা নতুন পাতা হয় না এবং আক্রান্ত ফুলে ফল হয় না।

দমন ব্যবস্থা:

  1. ফল সংগ্রহের সময় মাকড় আক্রান্ত পাতা ডালসহ ভেঙ্গে পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
  2. মাকড় নাশক ভারটিম্যাক প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলি পরিমাণ মিশিয়ে নতুন পাতায় ১৫ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করলে ভাল ফল পাওয়া যায়।

গ) বাদুর

লিচুর প্রধান শত্রু বাদুর।

এরা পরিপক্ক ফলে আক্রমণ করে। ফল বৃদ্ধিপ্রাপ্ত অবস্থায় এক রাতের অসাবধানতায় এরা সমস্ত ফল বিনষ্ট করে ফেলতে পারে।

মেঘলা রাতে বাদুরের উপদ্রব ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়।

দমন ব্যবস্থা:

  1. বাদুর তাড়ানোর জন্য রাতে পাহাড়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
  2. সমস্ত গাছ জালের সাহায্যে ঢেকে দিয়েও বাদুরের আক্রমণ রোধ করা যায়।
  3. বাগানে গাছের উপর দিয়ে শক্ত ও চিকন সুতা বা তার টাঙ্গিয়ে রাখলে বাদুরের চলাচল বাঁধাগ্রস্ত হয়।

[সূত্র: বিএআরআই]

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/krisi

Everything related to animal and plants in the Bangla language!View Author posts

You cannot copy content of this page