বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে বিভিন্ন ধরনের সবজির চাষ হয়। সবজির মধ্যে- টমেটো, বেগুন, মিষ্টি মরিচ, শিম, ঝাড় শিম, কামরাঙ্গা শিম, বরবটি, মটরশুঁটি, মুলা, ফুলকপি, ব্রোকলি, বাঁধাকপি, চীনাকপি, মিষ্টি কুমড়া, লাউ, করলা, ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, ধুন্দুল, চালকুমড়া, পটল, স্কোয়াশ, ঢেঁড়স, ডাঁটা, লালশাক, পালংশাক, চীনাশাক/বাটিশাক, পুঁইশাক, মিষ্টি কুমড়াশাক, লেটুস, সজিনা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
নিচে ৩১টি সবজির নাম ও ছবি, বাংলা নাম, ইংরেজি নাম এবং উচ্চারণসহ দেওয়া হলো-
(১) টমেটো
টমেটো সবজির ইংরেজি নাম হলো: Tomato (টোমাটো)।
টমেটো ভিটামিন সমৃদ্ধ একটি শীতকালীন সবজি। এতে আমিষ, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ‘এ’ এবং ভিটামিন ‘সি’ রয়েছে। জাতের প্রকারভেদে টমেটোতে সাধারণত ৩০৫ আইইউ ভক্ষণযোগ্য বিটা ক্যারোটিন রয়েছে। কম বেশি সকলের বাড়িতে বিভিন্ন তরকারিতে টোমেটোর ব্যবহার হয়েই থাকে। শুধু খাবারের স্বাদ বাড়ানোর জন্যে নয়, টমেটো দিয়ে তৈরি হয় নানা সুস্বাদু সস।
(২) বেগুন
বেগুন সবজির ইংরেজি নাম হলো: Eggplant (এগপ্ল্যান্ট)।
বেগুন সর্বাধিক জনপ্রিয় সবজি। বেগুনের ফুল সাদা হতে গোলাপী বর্ণের হয়। পাঁচটি পাপড়ি থাকে। বেগুনের ফল বেগুনী বা সাদা বর্ণের হয়। সারা বছরই এর চাষ করা যায়। তবে শীত মৌসুমে ফলন বেশি হয়। আমাদের বাংলাদেশে বহু জাতের স্থানীয় বেগুন রয়েছে। তবে ফলনের দিক থেকে এদের কোনটিই তেমন উচ্চ ফলনশীল নয়। বর্মানে স্থানীয় জাতের ব্যাপক জার্মপ্লাজম সংগ্রহ করে বাছাই প্রক্রিয়া, সংকরায়ণ ও জিন কৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে উন্নত জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। বেগুনে আছে প্রচুর পরিমানে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এবং ফাইবার, যা শরীর থেকে টক্সিন বের করে দেয়। কোলন ক্যানসারের আক্রমণ ঠেকায় বেগুন।
(৩) মিষ্টি মরিচ
মিষ্টি মরিচের ইংরেজি নাম হলো: Capsicum (ক্যাপসিকাম)।
বাংলাদেশে মিষ্টি মরিচ দেশীয় প্রচলিত সবজি না হলেও ইদানিং এর চাষ প্রসারিত হচ্ছে। বিশেষ করে বড় বড় শহরের আশেপাশে সীমিত পরিসরে কৃষক ভাইয়েরা এর চাষ করে থাকের, যা অভিজাত হোটেল ও বিভিন্ন বড় বড় মার্কেটে বিক্রি হয়ে থাকে। এ ছাড়া মিষ্টি মরিচের বিদেশে রপ্তানীর সম্ভাবনাও প্রচুর। কারণ সারা বিশ্বে টম্যাটোর পরেই দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ সবজি হচ্ছে মিষ্টি মরিচ।
(৪) শিম (Bean)
শিম সবজির ইংরেজি নাম হলো: Bean (বীন)।
শিম সবজি হিসেবে সর্বত্র বাণিজ্যিকভাবে ও বসতবাড়িতে চাষাবাদ হয়। শিমে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ‘সি’, ও ক্যারোটিন বিদ্যমান। শিমে প্রোটিনের সমৃদ্ধতা এবং আঁশ জাতীয় উপাদান সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। শিম শীতকালীন সবজি হলেও বর্তমানে গ্রীষ্মকালে এর চাষ সম্প্রসারিত হয়েছে।
(৫) ঝাড় শিম
ঝাড় শিম সবজির ইংরেজি হলো: Jack Bean (জ্যাক বীন)।
খাট ঝোপালো টাইপের গাছ। এটি একটি উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ সবজি। প্রতিটি শিমের ওজন ৪-৮ গ্রাম। শিম সবুজ, কিছুটা বাঁকা। থোকায় থোকায় শিম ধরে। সারিতে ঘন করে গাছ লাগানো যায়। শীতকালে প্রায় সর্বত্র অঞ্চলেই এর চাষ করা যায়।
(৬) কামরাঙ্গা শিম
কামরাঙ্গা শিম সবজির ইংরেজি হলো: Winged bean (উইনজেড বীন)।
কামরাঙা শিম বরবটি ও দেশি শিমের মতো লতা জাতীয় উদ্ভিদ। এ শিম গাছের ফুল, ফল, লতা, পাতা, শিকড় সব অংশই খাওয়া যায়। এ শিমের আদি স্থান পশ্চিম আফ্রিকা। কারও মতে এ সবজি ভারতে প্রথমে চাষ শুরু হয়। দক্ষিণ ও পূর্ব দক্ষিণ এশিয়ায় কামরাঙা শিম আবাদ তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি।
(৭) বরবটি
বরবটি সবজির এর ইংরেজি হলো: Yardlong bean (ইয়ার্ডলং বীন)।
বরবটি আমিষ সমৃদ্ধ একটি সবজি। প্রায় সারা বছরই এটি ফলানো যায়। তবে খরিপ তথা গ্রীষ্মকালে ভাল হয়। সবজিটি প্রোটিন, ভিটামিন ’এ’, থায়ামিন, রিবোফ্লাবিন, ভিটামিন’সি’, ফোলেট, লৌহ, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, পটাসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়ামের উত্তম উৎস। তাছাড়া বরবটির গাছ নাইট্রোজেন ফিক্সেশনের মাধ্যমে জমির উবর্রতা বাড়ায়।
(৮) মটরশুঁটি
মটরশুঁটি সবজির এর ইংরেজি হলো: Pea (পী)।
প্রতিটি মটরশুঁটির মধ্যে বেশ কয়েকটি গোলাকার বীজ থাকে। এটি মূলত সবজি হিসেবে রান্নায় ব্যবহৃত হলেও এটি এক প্রকারের ফল। শুকনো মটরশুটি ছিলে ভেঙে দ্বিখণ্ডিত করে মটর ডাল তৈরি করা হয়। মটরশুঁটি খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে। ভিটামিন বি১, বি২, বি৩ এবং বি৬ এর উৎস মটরশুঁটি শরীরের হোমোসাইস্টাইন লেভেল কমায়। এক কাপ মটরশুঁটিতে অন্তত ১০ মিলিগ্রাম পলিফেলন থাকে, তাই এটি পাকস্থলির ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে দারুণ কার্যকর। তবে এটি অতিরিক্ত পরিমাণে সেবন করলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে।
(৯) মুলা
মুলা সবজির ইংরেজি হলো: Radish (রেডিস)।
মুলা রবি মৌসুমের একটি প্রধান সবজি। মূলা অনেক বৈচিত্রময়, আকারে আলাদা, গন্ধযুক্ত, বিভিন্ন রং এবং পরিপক্ব হওয়ার সময়ের বিভিন্নতা রয়েছে। দেশে সকল শ্রেণির লোকের নিকট মুলা একটি সমাদৃত সবজি। সালাদ, তরকারি ও ভাজি হিসেবে এর বহুল প্রচলন রয়েছে। মুলার পাতা শাক হিসেবেও খাওয়া যায়। এতে প্রচুর ভিটামিন ‘এ’ রয়েছে।
(১০) ফুলকপি
ফুলকপি সবজির ইংরেজি হলো: Cauliflower (কাউলিফলোয়ার)।
ফুলকপি শীতের এক প্রধান জনপ্রিয় সবজি হল ফুলকপি। ফুলকপি চারিদিকে পাতা দ্বারা আংশিক ঢাকা থাকে। সাধারণতঃ ফুলকপির পুষ্পাক্ষ অর্থাৎ সাদা অংশটুকুই খাওয়া হয় আর সাদা অংশের চারপাশে ঘিরে থাকা ডাঁট এবং পুরু, সবুজ পাতা দিয়ে স্যুপ রান্না করা হয় অথবা ফেলে দেওয়া হয়। ফুলকপি খুবই পুষ্টিকর একটি সবজি; তরকারি হিসেবে,স্যুপ তৈরি করে ও বড়া ভেজে ফুলকপি খাওয়া হয়।
(১১) বাঁধাকপি
বাঁধাকপি সবজির ইংরেজি হলো: Cabbage (ক্যাবেজ)।
শীতের সবজি বলতে যেগুলোর কথা মাথায় আসে, তার মধ্যে অবশ্যই থাকে বাঁধাকপি। বাঁধাকপি খাওয়া যায় কাঁচা, রান্না করে ও শুকিয়ে। বাংলাদেশে ১৯৬০-এর দশকে এর চাষ শুরু হয়। বাঁধাকপির ওজন সাধারণত ৫০০ থেকে ১,০০০ গ্রাম (১ থেকে ২ পাউন্ড) পর্যন্ত হয়। মসৃণ-পাতাযুক্ত, দৃঢ় মাথা যুক্ত সবুজ বাঁধাকপি সবচেয়ে প্রচলিত। বাঁধাকপি একটি অন্যতম পুষ্টিকর পাতা জাতীয় সবজি। এত প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘এ’ রয়েছে।
(১২) ব্রোকলি
ব্রোকলি সবজির ইংরেজি হলো: Broccoli (ব্রোকলি)।
ব্রোকলি বা সবুজ ফুলকপি হলো একটি কপিজাতীয় সবজি। শীতকালীন সবজি হিসেবে ব্রোকলি বর্তমানে বাংলাদেশে দিন দিন প্রচুর জনপ্রিয় হচ্ছে। ব্রোকলির পুষ্পমঞ্জুরীর বর্ণ মখমলীয় সবুজ এবং প্রাথমিক অবস্থায় বোঁটা মোটা ও মাংসল থাকে এবং এর শাখামঞ্জুরীও ভক্ষণযোগ্য যা মাসাধিক কাল ধরে সংগ্রহ করা যায়। ফসল রোপণ থেকে বীজ সংগ্রহ পর্যন্ত প্রায় ১৩৫-১৪০ দিন সময় লাগে। ব্রোকলিতে লেবুর দ্বিগুণ ও আলুর সাত গুণ ভিটামিন সি থাকে। এছাড়াও এতে ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ফোলেট, আঁশ আছে। অস্বীকার করার উপায় নেই যে ফুলকপি এবং ব্রোকলি উভয়ই সুপার স্বাস্থ্যকর।
(১৩) চীনাকপি
চীনাকপি সবজির ইংরেজি হলো: Napa Cabbage (নাপা ক্যাবেজ)।
এটিও একধরণের বাঁধাকপি তবে, আমাদের চিরপরিচিত বাঁধাকপির চেয়ে এটা বেশি সুস্বাদু, কোমল, পুষ্টিকর, সহজপাচ্য এবং দ্রুত বর্ধনশীল বাঁধাকপি। চীনা বাঁধাকপি এখন বাংলাদেশে চাষ করা যায়। বাঁধাকপির মতো দেখতে হলেও আসলে স্বাদে হুবহু বাঁধাকপির মতো নয়। গন্ধে বাঁধাকপি, স্বাদেও খানিকটা তা-ই, তবে এত নরম ও রসালো যে ওকে শাকের সাথে তুলনা করা যায়।
(১৪) মিষ্টি কুমড়া
মিষ্টি কুমড়া সবজির ইংরেজি হলো: Pumpkin (পাম্পকিন)।
মিষ্টিকুমড়া এক প্রকার ফল জাতীয় সবজি। এটি মিষ্টি লাউ নামেও পরিচিত। মিষ্টিকুমড়া গাছের উৎপত্তিস্থল মধ্য আমেরিকা কিংবা দক্ষিণ আমেরিকার উত্তরাংশ। মিষ্টিকুমড়ার আকার পেটমোটা গোল এবং পাকা অবস্থায় এর ভিতরের অংশ উজ্জ্বল কমলা বর্ণের হয়ে থাকে। এতে ভিটামিন এ এবং বিটা ক্যারোটিন আছে। এটি প্রধানত তরকারি রান্না করে খাওয়া হয়। এটি খেতে একটু মিষ্টি স্বাদযুক্ত।
(১৫) লাউ
লাউ সবজির ইংরেজি হলো: Bottle Gourd (বটল গোর্ড)।
লাউ সাধারণত শীতকালে বসতবাড়ির আশেপাশে চাষ করা হয়। তবে এখন গ্রীষ্মকালিন বা সারাবছর উৎপাদনশীল জাত বিএআরআই কর্তৃক উদ্ভাবিত হওয়ায় এখন সারাবছর লাউ উৎপাদিত হচ্ছে। লাউয়ের পাতা ও ডগা শাক হিসেবে এবং ফল তরকারি ও ভাজি হিসেবে খাওয়া যায়।
(১৬) করলা
করলা সবজির ইংরেজি হলো: Bitter Gourd (বিটার গোর্ড)।
করলা (করল্লা, উচ্ছা, উচ্ছে) এক প্রকার ফল জাতীয় সবজি। পরিণত ফল লম্বাটে, রঙ কাঁচা অবস্থায় সবুজ, পাকলে কমলা বা লাল। করলা কেটে লবণ জলে ডুবিয়ে রাখলে তিক্ততা কমে। দক্ষিণ এশীয় এই সবজি এখন সারা পৃথিবীতে বিশেষ করে ক্রান্তীয় অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। করলার স্বাদ তেতো হলেও এটি ওষুধের মতো কাজ করে। করলা উচ্চরক্তচাপ ও চর্বি কমায়। এতে থাকা ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বক ও চুল ভালো রাখে। করলা তেতো স্বাদযুক্ত এবং এর শরীর কাঁটার মত ওয়ার্টে ভরা।
(১৭) ঝিঙ্গা
ঝিঙ্গা সবজির ইংরেজি হলো: Ridge Gourd (রিজ গোর্ড)।
ঝিঙ্গা বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় গ্রীষ্মকালীন সবজি। সবজি হিসাবে খাবারের জন্য কচি অবস্থায় সংগ্রহ করা হয়। এর প্রতি ১০০ গ্রাম ভক্ষণযোগ্য অংশের মধ্যে রয়েছে ০.৫ গ্রাম প্রোটিন, ৩৩.৬ মাইক্রো গ্রাম বিটা-ক্যারোটিন, ৫ মিগ্রা ভিটামিন সি, ১৮ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম এবং ২৭ মিলিগ্রাম ফসফরাস।
(১৮) চিচিঙ্গা
চিচিঙ্গা সবজির ইংরেজি হলো: Snake Gourd (স্নেইক গোর্ড)।
‘চিচিঙ্গা বা কইডা বা কুুুশি বা হইডা হচ্ছে ঝিঙের মত কিন্তু আরও লম্বা বা কখনো সাপের মত পেঁচানো, অপেক্ষাকৃত নরম সবজি। এটি ঝিঙে, লাউ, শশা, কুমড়ো ইত্যাদির মতই কিউকারবিটেসি পরিবারের সদস্য।
(১৯) ধুন্দুল
ধুন্দুল সবজির ইংরেজি হলো: Luffa (লুফ্ফা)।
ধুন্দল বা ধুঁধুঁল বা ধুন্দুল ঝিঙের মতো এরাও একই গণের উদ্ভিদ। তবে সব্জির থেকেও ধুন্দলের ছোবড়া বেশি বিখ্যাত। অপরিপক্ক ফল, কচিপাতা এবং ফুলের মুকুল সবজিরূপে খাওয়া হয়। এর বীজ থেকে ভোজ্য তেল বের করা যেতে পারে। তেল মেশানো খোল খাবার হিসাবে খরগোশ এবং ক্যাটফিশকে খাওয়ানো যেতে পারে বা এটি সার হিসাবেও ব্যবহার করা যেতে পারে। বঙ্গদেশীয় স্নান প্রসাধন সামগ্রীর মধ্যে গা ঘষার জন্যে ধুঁধুঁল ছোবড়ার ব্যবহার সম্ভবতঃ অতি প্রাচীন। পাকা ধুঁধুঁল ফলকে শুকিয়ে ছোবড়া তৈরি হয়। এর মধ্যের সংবাহী শিরাগুলি (ভ্যাস্কুলার বান্ডল), বিশেষ করে কাষ্ঠল জাইলেম তন্তুর জন্যে ধুঁধুঁল ছোবড়া একটু খরখরে (কিন্তু খুব শক্ত নয়, তাই প্রসাধন সামগ্রী হিসাবে উপযুক্ত)।
(২০) চালকুমড়া
চালকুমড়া সবজির ইংরেজি হলো: Wax Gourd (ওয়াক্স গোর্ড)।
চালকুমড়া বা জালিকুমড়া বা চালকুমরা এক প্রকার ফল জাতীয় সবজি। চালকুমড়া উদ্ভিদ লতা জাতীয়। এর ফল বিশালাকার যেটা সবজি হিসেবে খাওয়া হয় বা মোরব্বা বানিয়ে খাওয়া হয়। চালকুমড়া প্রধানত সবজি হিসেবে তরকারি বা ভাজি রান্না করে খাওয়া হয়। এছাড়া মোরব্বা তৈরির জন্যও এটি জনপ্রিয়। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতে অনেক সময় চালকুমড়ার জুস বা পানীয় খাওয়া হয়; যাকে ‘চালকুমড়ার চা’ বলা হয়ে থাকে। এর পাতা ও ডগা দিয়ে শাক রান্না করেও খাওয়া হয়। দক্ষিণ ভারতে চালকুমড়া ও দই-মাখন সহযোগে এক প্রকার তরল খাদ্য তৈরি করার প্রচলন আছে।
(২১) পটল
পটল সবজির ইংরেজি হলো: Pointed Gourd (পয়েন্টেড গোর্ড)।
পটল একটি প্রধান গ্রীষ্মকালীন সবজি। পটলের দোলমা, ডালনা, আলু-পটল, দই পটল, পটল পোস্ত, পটল-সরষে, পটল-চিংড়ি বিভিন্নভাবে এর রাননা করে খাওয়া হয়ে থাকে। পটল হজমশক্তি বাড়ায়। কাশি, জ্বর, রক্তদুষ্টি কমায়। কৃমি সাড়ায় এবং শরীর ঠান্ডা রাখে। মুখের দুর্গন্ধ দূর করে।
(২২) স্কোয়াশ
স্কোয়াশ সবজির ইংরেজি হলো: Squash (স্কোয়াশ)।
জুকিনি স্কোয়াশ, যাকে কোর্জেট নামেও ডাকা হয়, একটি সুস্বাদু ও জনপ্রিয় বিদেশী সবজি। বাংলাদেশে জুকিনি স্কোয়াশ একটি উচ্চমূল্যের সবজি ফসল। স্কোয়াশ মূলত একটি শীতকালীন সবজি হলেও আজকাল সারা বছরই সৌখিন ছাদবাগানীরা এটি চাষ করছেন। এটিকে কুমড়া সবজির এর বিকল্প সবজি হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। স্কোয়াশের একেকটি গাছের গোড়ায় আট থেকে ১০টি পর্যন্ত ফল বের হয়। কয়েক দিনের মধ্যেই খাওয়ার উপযোগী হয় এটি। পূর্ণবয়স্ক একটি স্কোয়াশ গাছ অল্প জায়গা দখল করে। এক বিঘা জমিতে যে পরিমাণ কুমড়া লাগানো যায়, তার চেয়ে দ্বিগুণ স্কোয়াশ লাগানো সম্ভব।
(২৩) ঢেঁড়স
ঢেঁড়স সবজির ইংরেজি হলো: Okra বা Lady’s Fingers (ওকরা বা লেডি’স ফিঙ্গারস)।
ঢেঁড়শের ফল সবজি হিসাবে ব্যবহার করা হয়। কাঁচা অবস্থাতেই ফল পেড়ে নেয়া হয়। ঢেঁড়শ ভর্তা, ভাজি এবং তরকারি হিসেবে খাওয়া হয়ে থাকে। বাঙালিদের মধ্যে ঢেঁড়স ভাজি খুব জনপ্রিয় তবে আবার কেউ কেউ আছেন ঢেঁড়স একদমই খেতে পছন্দ করেনা বা খাননা।
(২৪) ডাঁটা
ডাঁটা সবজির ইংরেজি হলো: Amaranth (আমরান্থ)।
সুস্বাদু ও পুষ্টিকর শাকের মধ্যে অন্যতম ডাঁটাশাক। বাজারে সারা বছরই এটা পাওয়া যায়। ইলিশ বা চিংড়ি যেকোনোটি দিয়ে ভাজি করা ডাঁটাশাক অনেকের অতিপ্রিয় তরকারি। ডাঁটাশাক খাওয়া যায় আরও নানাভাবে। ডাঁটাশাক একপ্রকার লতাজাতীয় উদ্ভিদ। গাছের পাতা ও ডাঁটা শাক হিসেবে খাওয়া হয়। এর মোটা রসাল ডাঁটা ও পাতায় মৃদু সুগন্ধ আছে। পাতা খানিকটা খসখসে। এই শাক দুই ধরনের। একটির পাতা সবুজ ও ডাঁটা হালকা সবুজ। অন্যটির পাতাও সবুজ, তবে কাণ্ড বা ডাঁটা লালচে বেগুনি রঙের। ডাঁটাশাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, ফলিক অ্যাসিড; যা ত্বকের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
(২৫) লালশাক
লালশাক সবজির ইংরেজি হলো: Red Amaranth (রেড আমরান্থ)।
লালশাক দেখতে লালচে-গোলাপি ধরনের হয়ে থাকে। হিমোগ্লোবিনে পূর্ণ এই শাক। আমাদের বাংলাদেশে অতি পরিচিত শাকগুলোর মধ্যে লালশাক অন্যতম। এই লাল শাক আমাদের শরীরে রক্ত তৈরি করে সবচেয়ে বেশি। লাল শাক এক প্রকারের পাতা সবজি, যার পাতা সবজি হিসেবে খাওয়া হয়। এই শাক আগে শুধুমাত্র শীতকালে পাওয়া গেলেও বর্তমানে এটি সারাবছরই পাওয়া যায়। এর রং লাল এবং রান্নার পর এটি থেকে লাল রং বের হতে দেখা যায়। গাছের কাণ্ড থেকে ভেঙে নিয়ে আসার পর ভাঙা কাণ্ড হতে পুনরায় নতুন গাছ গজায়। লালশাক ভাজি খেতে অনেক সুস্বাদু।
(২৬) পালংশাক
পালংশাক সবজির ইংরেজি হলো: Spinach (স্পিনাচ)।
পালং একটি খুবই জনপ্রিয় শাক ও সবজি। পালং শাকে রয়েছে মিনারেল, ভিটামিন, ফাইটো নিউট্রিয়েন্টস থেকে শুরু করে পিগমেন্টস। বিশেষত পালংশাকে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, যা চোখের ভেতর ও বাইরের অংশে পুষ্টি জোগায়। এটি অকাল অন্ধত্ব থেকে চোখকে রক্ষা করে। পালংশাককে একরকম ‘সুপার ফুড’ বলা যায়।
(২৭) চীনাশাক/বাটিশাক
চীনাশাক/বাটিশাক এর ইংরেজি হলো: Pak Choi (পাক চৈ)।
চীনাশাক সারা বছরই চীনাশাক চাষ করা হয়। তবে বীজ উৎপাদনের জন্য শীতকালে এর চাষ করতে হয়। শাকটি খুব সুস্বাদু।
বাটিশাক বাংলাদেশের নতুন সবজি। তবে চীন, জাপান ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ব্যাপকভাবে আবাদ হয়ে থাকে। এ সবজির বৈশিষ্ট্য হলো এর পাতার বোঁটা দীর্ঘ, চ্যাপ্টা, সাদা রঙের এবং পাতার ফলক হালকা সবুজ রঙের ও গোলাকৃতি। বাংলাদেশে শীতকালসহ বছরের যেকোনো সময় বাটিশাক আবাদ করা যায়।
(২৮) পুঁইশাক
পুঁইশাকের ইংরেজি হলো: Malabar Spinach বা Vine Spinach বা Basella Spinach (মালাবার স্পিনাচ বা ভাইন স্পিনাচ বা বাসেল্লা স্পিনাচ)।
পুঁই এক প্রকার লতা জাতীয় উদ্ভিদ। পুঁই গাছের পাতা ও ডাঁটি শাক হিসেবে খাওয়া হয় বলে সচরাচর একে পুঁই শাক হিসাবে উল্লেখ করা হয়। বাংলাদেশে, পশ্চিমবঙ্গে, আসামে এবং ত্রিপুরায় সর্বত্র এর চাষ হয়ে থাকে। এর ভাজি এ সব এলাকার মানুষের প্রিয় সহযোগী খাদ্য।
(২৯) মিষ্টি কুমড়াশাক
মিষ্টি কুমড়াশাকের সবজির ইংরেজি হলো: Pumpkin Leaf (পাম্পকিন লীফ)।
সবজি হিসেবে মিষ্টি কুমড়া জনপ্রিয়। আবার কেউ কেউ এমন রয়েছেন যে, মিষ্টি কুমড়া খুব একটা পছন্দ করেন না। মিষ্টি কুমড়া যেমন উপকারী তার শাক, বীজ, ফুল কোনটির উপকারিতাই কম নয়। অনেক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সপ্তাহে অন্তত দুই থেকে তিন দিন মিষ্টি কুমড়া শাক খাওয়ার উপদেশ দিয়ে থাকেন। মিষ্টি কুমড়া শাক খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে, চোখের সমস্যা ভাল হয়।
(৩০) লেটুস
লেটুস সবজির ইংরেজি হলো: Lactuca (লেটুস)।
লেটুসকে পাতাযুক্ত সবজি হিসাবে চাষ করা হয়, তবে কখনো কখনো এর কাণ্ড ও বীজের জন্যও চাষ করা হয়। লেটুস প্রায়শই সালাদে ব্যবহৃত হয়। এটি অন্যান্য ধরনের খাবার যেমন স্যুপ, স্যান্ডউইচ ও র্যাপেও দেখা যায়। এটা গ্রিল করাও যায়। এর একটি জাত সেলটুস (অ্যাসপারাগাস লেটুস), কাণ্ডের জন্য চাষ করা হয়, যা কাঁচা বা রান্না করে খাওয়া হয়। পাতাযুক্ত সবুজ হিসাবে এর ব্যবহার ছাড়াও বহু শতাব্দী ধরে ধর্মীয় ও ঔষধি কারণেও এর চাষ করা হয়।
(৩১) সজিনা
সজিনা সবজির ইংরেজি হলো: Moringa Drumstick (মরিংগা ড্রামস্টিক)।
সজিনা একটি জনপ্রিয় এবং পুষ্টিকর সবজি। বাংলাদেশের প্রায় সব জায়গায় সজিনার চাষাবাদ হয়। সজিনার পাতা, ফুল ও অপরিপক্ক ফল সবজি হিসাবে ব্যবহৃত হয়। সজিনা ভিটামিন ‘এ’, ভিটামিন ‘সি’ এবং খনিজ পদার্থ যেমন ক্যালসিয়াম, ফসফরাস এবং আয়রন সমৃদ্ধ সবজি।
[সূত্র: বিএআরআই]