Skip to content

 

সমন্বিত বালাই দমন ব্যবস্থাপনা (আইপিএম)

সমন্বিত বালাই দমন ব্যবস্থাপনা (আইপিএম)

আলোচ্য বিষয়:

ফসলের পোকান্ডমাকড় দমনের জন্য প্রচুর পরিমাণে বিষাক্ত কীটনাশক ব্যবহার করা হয়। কীটনাশকের উপূর্যপুরি ব্যবহারের ফলে একদিকে যেমন পরিবেশগত, স্বাস্থ্যগত মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি হচেছ অন্যদিকে তেমনি ব্যবহৃত কীটনাশক সমূহের উপর সহনশীল ক্ষমতা বেড়ে যাওয়ায় পোকান্ডমাকড় দমনে এগুলি অকার্যকর হয়ে পড়ছে।

এমতাবস্থায় কীটনাশকের উপর একক নির্ভরশীলতা পরিত্যাগ করে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাকারী, অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক, সহজ, উৎপাদক এবং ভোক্তার জন্য সবচেয়ে কম ক্ষতিকারক দমন ব্যবস্থাপনা উদ্ভাবন করা একান্তভাবে প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে। যা সমন্বিত বালাই দমন ব্যবস্থাপনা বা আইপিএম নামে পরিচিত।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের কীটতত্ত্ব বিভাগের বিজ্ঞানীগণ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষতিকারক পোকান্ডমাকড় দমনে সহজ, নিরাপদ, কার্যকরী ও অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক সমন্বিত দমন ব্যবস্থা উদ্ভাবন করেছেন ও করে যাচ্ছেন।

নিম্নে উদ্ভাবিত সমন্বিত বালাই দমন ব্যবস্থাপনা (আইপিএম) প্রযুক্তিসমূহের উপর আলোকপাত করা হলো-

(১) জৈব বালাইনাশক ভিত্তিক পদ্ধতিতে সাউথ আমেরিকান টমেটো লিফ মাইনার পোকার দমন ব্যবস্থাপনা

সাউথ আমেরিকান টমেটো লিফ মাইনার পোকা, যার বৈজ্ঞানিক নাম Tuta absoluta, এটি বাংলাদেশে টমেটো ফসলের একটি বিধ্বংসী পোকা বা Invasive pest।

এ পোকার উৎপত্তিস্থল দক্ষিণ আমেরিকা হলেও আমাদের বাংলাদেশে ২০১৬ সনে উত্তরাঞ্চলের জেলা সমূহে প্রথমে এ পোকার আক্রমণ পরিলক্ষিত হয়। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে ২০১৪ সনে এবং নেপালে ২০১৬ সনে এ পোকা সনাক্ত করা হয়।

টমেটো ছাড়াও এ পোকা সোলানেসি পরিবারভূক্ত বিভিন্ন ফসল যেমন আলু, বেগুন ইত্যাদিতে আক্রমণ করতে পারে। তবে টমেটো ফসলেই এদের আক্রমণ মাত্রা সর্বাধিক।

ক) ক্ষতির প্রকৃতি

  • টমেটো ফসল এ পোকা দ্বারা পুরো মৌসুমেই (Cropping season) আক্রন্ত হতে পারে।
  • এ পোকার কীড়া পাতার উপরিভাগের মেসোফিল টিস্যু চেছে খেয়ে সুড়ঙ্গ তৈরী করে, এতে পাতা বিবর্ণ হয়ে যায়। মারাত্মক আক্রমণের ক্ষেত্রে পাতা শুকিয়ে অকালে ঝরে পড়ে।
  • এ পোকা দ্বারা ফলও আক্রান্ত হয়। কীড়া ফল ছিদ্র করার কারণে ফলে ক্ষত সৃষ্টি হয়, ছিদ্র পথে রোগ জীবানু প্রবেশ করে এবং এতে ফলে পচন ধরে।
  • এ পোকার আক্রমণে টমেটোর গুনগতমান কমে যায় এবং উৎপাদনশীলতা মারাত্মকভাবে ব্যহত হয়।
আক্রান্ত পাতা,কীড়া ও আক্রান্ত ফল
আক্রান্ত পাতা,কীড়া ও আক্রান্ত ফল

খ) দমন ব্যবস্থাপনা

কীটতত্ত্ব বিভাগ, বিএআরআই উদ্ভাবিত নিন্মোক্ত দমন ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে উক্ত পোকাটি সহজে, পরিবেশসম্মত ও লাভজনক উপায়ে দমন করা যায়।

  1. সেক্স ফেরোমন ফাঁদের ব্যবহার: সেক্স ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহারের মাধ্যমে প্রথমে এ পোকার উপস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে হবে। পোকার উপস্থিতি সনাক্ত করার পর, বিঘা প্রতি ৫-৬ টি ফেরোমন ফাঁদ স্থাপন করে এ পোকার পূর্ণাঙ্গ পুরুষ পোকা বিপুল সংখ্যায় ধরে ফেলে এ পোকার আক্রমণ কমানো সম্ভব।
  2. সয়েল রিচার্জ জমিতে প্রয়োগ: জমি তৈরীর সময়ে একবার এবং চারা রোপনের ২৫-৩০ দিন পরে আরও একবার মোট দুইবার বিঘা প্রতি ৫০০ গ্রাম হারে সয়েল রিচার্জ মাটিতে প্রয়োগ করতে হবে। এতে এ পোকার পুত্তলী ধ্বংস হবে এবং চারা গাছ ঢলেপড়া রোগের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাবে।
  3. জৈব বালাইনাশক প্রয়োগ: আক্রান্ত চারা গাছে স্পিনোসেড গ্রুপভুক্ত জৈব বালাইনাশক ট্রেসার ৪৫ এসসি (প্রতি লিটার পানিতে ০.৪ মিলি হিসাবে) এবং নতুন জৈব বালাইনাশক এন্টারিও (প্রতি লিটার পানিতে ১ গ্রাম হিসাবে) পর্যায়ক্রমিক ভাবে ৭-১০ দিন অন্তর অন্তর জমিতে স্প্রে করতে হবে। এক বার ট্রেসার স্প্রে করা হলে পরের বার এন্টারিও স্প্রে করতে হবে। এভাবে মোট ৪-৫ বার জৈব বালাইনাশক স্প্রে করার প্রয়োজন হয়।

(২) পান ফসলের ক্ষতিকারক কালো ও সাদা মাছি পোকা দমনের জৈব বালাইনাশক ভিত্তিক পদ্ধতি

পান বাংলাদেশের একটি সম্ভাবনাময় রপ্তানীযোগ্য অর্থকরী ফসল। কিন্তু কালো ও সাদা মাছি পোকার আক্রমনে পান ফসলের মারাত্মক ক্ষতিসাধিত হয়।

গ্রীষ্মকালে সাদা ও কালো মাছি পোকা পানের বরজে বেশি পরিমানে দেখা যায়। এই পোকা গুলি সাধারণত পাতার নিচে অবস্থান করে।

ফাল্গুন মাস হতে বর্ষার পূর্ব পর্যন্ত এই পোকাসমূহের আক্রমন বেশি দেখা দেয়। কিন্তু বর্ষাকালে এদের আক্রমণ কমে যায়।

ক) ক্ষতির প্রকৃতি

কালো ও সাদা মাছি পোকার নিম্ফ বা বাচ্চা ও পূর্ণ বয়স্ক দু অবস্থাতেই পান গাছের ক্ষতি করে। এরা পান পাতার রস চুষে খায়, ফলে আক্রান্ত পাতা কুচকে ও বিকৃত হয়ে যায় ও গাছ দূর্বল হয়ে যায়। মারাত্মক আক্রমনের ফলে গাছের বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায়।

কালো মাছি পোকা আক্রান্ত পান
কালো মাছি পোকা আক্রান্ত পান

খ) সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনা

কীটতত্ত্ব বিভাগ, বিএআরআই উদ্ভাবিত নিমেণাক্ত দমন ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে উক্ত পোকাসমূহ সহজে, পরিবেশসম্মত ও লাভজনক উপায়ে দমন করা যায়।

  1. বরজের ভিতর ও চারিদিকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
  2. মারাত্মকভাবে আক্রান্ত পাতা তুলে ধ্বংস করতে হবে।
  3. এ পোকা হলুদ রং এ আকৃষ্ট হয়। তাই আঠালো হলুদ রংএর ফাঁদ পেতে এদের দমন করা যেতে পারে। হলুদ ফাঁদ তৈরির জন্য একটি পাষ্টিকের বৈয়ামের উপরিভাগে মবিল বা অন্য কোন আঠালো পদার্থ মেখে পান বরজে স্থাপন করতে হবে। এর জন্য প্রতি হেক্টরে ৪০ টি ফাঁদ লাগবে।
  4. জৈব বালাইনাশক ফিজিমাইট (১০% সোডিয়াম লরিয়েল ইথার) অথবা বায়োট্রিন (০.৫% মেট্রিন) প্রতি লিটার পানিতে ১.০ মিলি হারে মিশিয়ে আক্রান্ত জমিতে গাছের পাতা ভিজিয়ে ভালভাবে স্প্রে করতে হবে।
পোকাসহ হলুদ আঠালো ফাঁদ
পোকাসহ হলুদ আঠালো ফাঁদ

(৩) আন্তঃফসল এর মাধ্যমে মুগ ফসলের ফুলের থ্রিপস (Flower thrips) এবং ফল ছিদ্রকারী (Pod borer) পোকার দমন ব্যবস্থাপনা

আমাদের বাংলাদেশে, মুগ ফসলে ফুলের থ্রিপস (Flower thrips) এবং ফল ছিদ্রকারী (Pod borer) পোকা ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে থাকে।

ক) ক্ষতির প্রকৃতি

ফুলের থ্রিপস (Megalurothrips distalis Karny, Megalurothrips usitatus Bagnall and Caliothrips indicus Bagnall) পোকা মূলত: ফুল ও কুড়ি থেকে রস চুষে খায় ফলে বেশিরভাগ ফুল ও কুড়ি কুকড়িয়ে যায় এবং এক পর্যায়ে ফুল ঝড়ে যায়।

এই পোকার আক্রমনে মুগ ফসলের ফলনের ব্যাপক ক্ষতি হয়ে থাকে। ফল ছিদ্রকারী পোকার আক্রমনের ফলে মুগ ফসলের ফুল ও ফলের ব্যাপক ক্ষতি হয়ে থাকে ফলে মুগ ফসরের ফলন অনেক কমে যায়।

খ) দমন ব্যবস্থাপনা

কীটতত্ত্ব বিভাগ, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, জয়দেবপুর, গাজীপুর কর্তৃক উদ্ভাবিত নিম্নলিখিত পরিবেশ বান্ধব, সহজ, লাভজনক এবং টেকসই উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে উক্ত পোকাসমূহ দমন করা সম্ভব।

  1. আন্তঃফসল হিসাবে মুগ ফসলের সাথে তিল (দুই সারি মুগ অত:পর দুইসারি তিল) চাষ করার মাধ্যমে মুগ ফসলের ফুলের থ্রিপস পোকার আক্রমন ৩৫% এবং ফল ছিদ্রকারী পোকা এর আক্রমণ ৪৫% পর্যন্ত হ্রাস করা সম্ভব।
  2. মুগ ফসলের সাথে আন্ত:ফসল হিসাবে তিল ফসল চাষ করলে ফুলের থ্রিপস পোকা এবং ফল ছিদ্রকারী পোকার আক্রমন কমে যাওয়ার পাশাপাশি প্রান্তিক লাভ (Marginal Benefit Cost Ratio) ২.০ পর্যন্ত হয়ে থাকে।
মুগ ফসলে আন্তঃফসল হিসাবে তিল এর চাষ
মুগ ফসলে আন্তঃফসল হিসাবে তিল এর চাষ

(৪) প্রধান সবজি ও মসলা ফসলে ডাইমেথইয়েট, কুইনালফস এবং ফেনিট্রোথিয়নের জন্য অপেক্ষমান (Pre Harvest Interval, PHI) সময় নির্ধারণ

ধনিয়া ও ফুলকপিতে ডাইমথোয়েট প্রয়োগের অপেক্ষমান সময় নির্ধারণ করা হয়েছে ৯ দিন যা শিম এবং বাঁধাকপির জন্য ৮ দিন এবং বেগুনের জন্য ৭ দিন।

অন্যদিকে ফুলকপিতে কুইনালফস প্রয়োগের অপেক্ষমান সময় নির্ধারণ করা হয়েছে ৮ দিন যা শিমের ক্ষেত্রে ৭ দিন এবং টমেটোর ক্ষেত্রে ৪ দিন।

লালশাকে ফেনিট্রোথিযয়ন প্রয়োগের অপেক্ষমান সময় নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ দিন যা টমেটোর ক্ষেত্রে ৬দিন।

(৫) আকর্ষণ ও মেরে ফেলা পদ্ধতির মাধ্যমে বিভিন্ন ফল যেমন আম, পেয়ারা, কমলা ও কুলের মাছি পোকা দমন

আম, পেয়ারা, কমলা, কুল ইত্যাদি ফলে মাছি পোকার আক্রমণে ব্যাপক ক্ষতি হয়ে থাকে।

মূলত মাছি পোকার কীড়া ফলের ভিতরে ঢুকে ক্ষতি করে থাকে বিধায় কীটনাশক ব্যবহার করে এই পোকা দমন করা খুবই কঠিন। এমতাবস্থায় বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের কীটতত্ত্ব বিভাগ অতি সম্প্রতি আকর্ষণ ও মেরে ফেলার মাধ্যমে করলা গাছে পুরুষ পোকা আকৃষ্টকরণ জেল করলা গাছে স্ত্রী মাছি পোকার ফাঁদ মাছি পোকা দমনের একটি সহজ পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছে।

এ প্রযুক্তির প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো একই সাথে পূর্ণাঙ্গ স্ত্রী ও পুরুষ মাছি পোকা আকর্ষণ করে মেরে ফেলে এবং প্রযুক্তিটি কার্যকর, সহজ ও পরিবেশবান্ধব।

ইতোপূর্বে ফেরোমন ফাঁদভিত্তিক দমন ব্যবস্থাপনায় শুধুমাত্র পুরুষ মাছি পোকা ফাঁদে আকৃষ্ট হয়ে মারা যেতো। কিন্তুু নতুন এই পদ্ধতির মাধ্যমে পুরুষ ও স্ত্রী উভয় পোকা আকৃষ্ট হয়ে মারা যায়।

ক) পুরুষ মাছি

পুরুষ মাছি পোকা আকর্ষণ করার জন্য মিথাইল ইউজিনল ফেরোমন ও জৈব বালাইনাশক মিশ্রিত জেল বা পেষ্টের মত একটি পদার্থ বাগানের সীমানা লাইনে অবস্থিত গাছের কান্ডে (মাটি হতে ৩-৪ ফুট উপরে) ১০-১২ মিটার দূরে দূরে অল্প পরিমাণে লাগিয়ে দিতে হবে। এই ভাবে সারা বাগানের সীমানা লাইনের গাছ গুলিতে লাগিয়ে দেওয়ার ফলে অন্য বাগানেরসহ ঐ বাগানেরও পুরুষ মাছি পোকাসমূহ সীমানা লাইনের গাছে পেস্টের মধ্যে আকৃষ্ট হয়ে মারা যাবে।

আম গাছে পুরুষ পোকা আকৃষ্টকরণ জেল
আম গাছে পুরুষ পোকা আকৃষ্টকরণ জেল
আকৃষ্ট পুরুষ মাছি পোকা
আকৃষ্ট পুরুষ মাছি পোকা

খ) স্ত্রী মাছি

স্ত্রী মাছি পোকাকে আকৃষ্ট করে মেরে ফেলার জন্য বাগানের ভিতরের গাছ গুলোতে ১০-১২ মিটার দূরে দূরে জৈব বালাইনাশক মিশ্রিত এক প্রকার পোকার খাবার সহ একটি ফাঁদ গাছের ডালে ঝুলিয়ে দিতে হবে। গাছ অনেক বড় হলে একই গাছে পরিমাণ মতো উক্ত খাবারের ফাঁদ স্থাপন করা যেতে পারে। এভাবে বাগানের ভিতরে থাকা সকল স্ত্রী পোকা খাবারের লোভে আকৃষ্ট হয়ে পাত্রের কাছে ছুটে যাবে এবং মারা যাবে।

এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে অল্প খরচে এবং পরিবেশ সম্মত উপায়ে আম, পেয়ারা, কমলা, কুল ইত্যাদি ফসলের মাছি পোকা কার্যকরীভাবে দমনের মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব।

স্ত্রী মাছি পোকার ফাঁদ
স্ত্রী মাছি পোকার ফাঁদ

(৬) আকর্ষণ ও মেরে ফেলা পদ্ধতির মাধ্যমে কুমড়া জাতীয় ফসলের মাছি পোকা দমন

কুমড়া জাতীয় প্রায় ১৬টি সবজি, যেমন মিষ্টি কুমড়া, লাউ, করলা, কাঁকরল, চাল কুমড়া, ঝিঙ্গা, চিচিংগা, ধুন্দুল, পটল, তরমুজ ইত্যাদির ফলে মাছি পোকার আক্রমণ ব্যাপক ক্ষতি করে থাকে।

মুলত মাছি পোকার কীড়া ফলের ভিতরে ঢুকে ক্ষতি করে থাকে বিধায় কীটনাশক ব্যবহার করে এই পোকা দমন করা খুবই কঠিন।

আম, পেয়ারা ইত্যাদি ফসলের মাছি পোকা দমনের আর্কষণ করে মেরে ফেলা পদ্ধতির অনূরূপ বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের কীটতত্ত্ব বিভাগের বিজ্ঞানীগণ অতি সম্প্রতি কুমড়া জাতীয় সবজির মাছি পোকা দমনের একটি সহজ পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছে।

ইতোপূর্বে ফেরোমন ফাঁদভিত্তিক দমন ব্যবস্থাপনায় শুধুমাত্র পুরুষ মাছি পোকাকে আকৃষ্ট হয়ে মারা যেতো। কিন্তু নতুন এই পদ্ধতির মাধ্যমে পুরুষ ও স্ত্রী উভয় পোকা আকৃষ্ট হয়ে মারা যায়।

ক) পুরুষ মাছি দমন

পুরুষ মাছি পোকা আকর্ষণ করার জন্য কিউলিউর ফেরোমন ও জৈব বালাইনাশক মিশ্রিত জেল বা পেস্টের মত একটি পদার্থ বাগানের সীমানা লাইনে অবস্থিত গাছের লতানো কান্ডে বা মাচার বাঁশে (মাটি হতে ২-৩ ফুট উপরে) ১০-১২ মিটার দূরে দূরে অল্প পরিমাণে লাগিয়ে দিতে হবে। এই ভাবে সারা বাগানের সীমানা লাইনে কিউলিউর ফেরোমন ও জৈব বালাইনাশক মিশ্রিত জেল লাগিয়ে দেওয়ার ফলে অন্য বাগানেরসহ ঐ বাগানেরও পুরুষ মাছি পোকাসমূহ সীমানা লাইনের গাছে পেস্টের মধ্যে আকৃষ্ট হয়ে মারা যাবে।

করলা গাছে পুরুষ পোকা আকৃষ্টকরণ জেল
করলা গাছে পুরুষ পোকা আকৃষ্টকরণ জেল

খ) স্ত্রী মাছি দমন

স্ত্রী মাছি পোকাকে আকৃষ্ট করে মেরে ফেলার জন্য বাগানের ভিতরের গাছ গুলোতে ১০-১২ মিটার দূরে দূরে জৈব বালাইনাশক মিশ্রিত এক প্রকার পোকার খাবার সহ একটি ফাঁদ গাছের ডালে ঝুলিয়ে দিতে হবে। এর ফলে বাগানের ভিতরে থাকা সকল স্ত্রী পোকা খাবারের লোভে আকৃষ্ট হয়ে ফাঁদের কাছে ছুটে যাবে এবং মারা যাবে। এই প্রযুক্তি প্রয়োগ করে অল্প খরচে এবং পরিবেশ সম্মত উপায়ে কুমড়া জাতীয় ফসলের মাছি পোকা কার্যকরীভাবে দমনের মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব।

করলা গাছে স্ত্রী মাছি পোকার ফাঁদ
করলা গাছে স্ত্রী মাছি পোকার ফাঁদ

(৭) ফলজ ও বনজ বৃক্ষের জায়ান্ট মিলিবাগ দমন ব্যবস্থাপনা

সম্প্রতি বাংলাদেশে জায়ান্ট মিলিবাগ বিভিন্ন ফলজ ও বনজবৃক্ষে মারাত্বক ক্ষতিকারক পোকা হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে। এই পোকা বিভিন্ন ফলজ উদ্ভিদ যেমন- কাঁঠাল, আম, লেবু, নারিকেল এবং বনজ বৃক্ষ যেমন- রেইন ট্রি, কড়ই গাছে আক্রমণ করে।

স্ত্রী নিম্ফ পোকা পুষ্পমঞ্জুরী, কচি পাতা, শাখা প্রশাখা ও ফলের বোঁটা থেকে রস শোষণ করে ফলে গাছের আক্রান্ত অংশ শুকিয়ে যায় যা ফল ধরার ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব ফেলে এবং অনেক ফল ঝরে যায়।

বিগত ২০১৪ সনে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট ও গার্হস্থ অর্থনীতি কলেজের বৃক্ষ সমূহে এই পোকার ব্যাপক আক্রমণ পরিলক্ষিত হয় যা বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়াতে আলোড়ন সৃষ্টি করে।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের কীটতত্ত্ব বিভাগের বিজ্ঞানীগণ এ পোকা দমনে একটি সহজ প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে পোকা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে যাবার পূর্বেই অতি সহজেই একত্রে মেরে ফেলা যায় অন্যদিকে এটি অত্যন্ত কার্যকরি, সহজ ও অর্থনৈতিকভাবে সাশ্রয়ী।

সাধারণত আক্রমণের সময়ানুযায়ী ২টি পদ্ধতিতে এ পোকা দমন করা যায়।

ক) মার্চ-এপ্রিল মাসে পূর্ণাঙ্গ স্ত্রী পোকা ধ্বংস করা

এপ্রিল-মে মাসে পূর্ণাঙ্গ স্ত্রী পোকাগুলো মাটিতে ডিম পাড়ার জন্য দলবদ্ধভাবে গাছ থেকে মাটিতে নেমে আসে তখন এরা বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহ হতেই গাছের গোড়ায় মাটি থেকে ১ মিটার উচুঁতে ৩-৪ ইঞ্চি চওড়া প্লাস্টিকের পিচ্ছিল ব্যান্ড (Wrapping tape) গাছের চতুর্দিকে আবৃত করে দিলে এরা উপর থেকে নেমে আসতে বাধাপ্রাপ্ত হয়। অনেক সময় প্লাস্টিকের পিচ্ছিল ব্যান্ড এর উপরের অংশে স্ত্রীপোকাসমূহ জমা হয়। এ অবস্থায় এদের সহজেই পিটিয়ে বা একসাথে করে আগুনে পুড়িয়ে মারা সম্ভব অথবা জমাকৃত পোকার উপর সংস্পর্শ কীটনাশক স্প্রে করে দমন করা যায়।

যেহেতু এ পোকাটির বহিরাবরণ ওয়াক্সি পাউডার জাতীয় পদার্থ দিয়ে সুরক্ষিত থাকে সেহেতু পরীক্ষিত কীটনাশক ছাড়া এটি দমন করা দুরূহ। এ ক্ষেত্রে প্রথমে ক্লোরপাইরিফস (ডারসবান ২০ ইসি বা এ জাতীয় কীটনাশক প্রতি লিটার পানিতে ৩ মিলি হারে) এবং তার ২-৩ দিন পর কার্বারিল জাতীয় কীটনাশক (সেভিন ৮৫ এসপি বা মিপসিন ৭৫ ডব্লিউপি প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে) আক্রান্ত অংশে স্প্রে করতে হবে। প্রতি ১৫ দিন অন্তর ২-৩ বার এভাবে স্প্রে করলে এ পোকা সম্পূর্ণভাবে দমন করা সম্ভব।

খ) নভেম্বর মাসে সদ্য প্রস্ফুটিত নিম্ফ ধ্বংস করা

নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ হতেই এ পোকার নিম্ফসমূহ গাছ বেয়ে উপরে উঠে তাই উক্ত সময় গাছের গোড়ায় মাটি থেকে ১ মিটার উঁচুতে ৩-৪ ইি চওড়া প্লাস্টিকের পিচ্ছিল ব্যান্ড (Wrapping tape) গাছের চতুর্দিকে আবৃত করে দিলে এরা বার বার উঠার ব্যর্থ চেষ্টা করে পরিশ্রান্ত হয়ে মারা যায়। অনেক সময় প্লাস্টিকের পিচ্ছিল টেপ এর নিচের অংশে নিম্ফ সমূহ জমা হয়। এ অবস্থায় এদের সহজেই পিটিয়ে বা একসাথে করে আগুনে পুড়িয়ে মারা সম্ভব অথবা জমাকৃত পোকার উপর সংস্পর্শ কীটনাশক স্প্রে করে দমন করা যায়।

ব্যান্ডের নিচে একত্রিত নিম্ফসমূহকে মেরে ফেলার জন্য কার্বারিল (সেভিন) ৮৫ এসপি প্রতি লিটার পানিতে ৩ গ্রাম হারে মিশিয়ে ১০ দিন অন্তর বাইন্ডিং টেপের নিচে জায়েন্ট মিলিবাগের নিম্ফ বাইন্ডিং টেপের নিচে স্প্রে করে মিলিবাগ দমন গাছের কান্ডে বাইন্ডিং টেপ বাইন্ডিং টেপের নিচে জায়েন্ট মিলিবাগের নিম্ফ ২-৩ বার ভালভাবে স্প্রে করতে হবে। এসময় নিম্ফ সমূহকে গাছে উঠা হতে নিবৃত করতে পারলে এ পোকার আক্রমণ পুরোপুরিভাবে দমন করা সম্ভব।

গাছের কান্ডে বাইন্ডিং টেপ
গাছের কান্ডে বাইন্ডিং টেপ
বাইন্ডিং টেপের নিচে জায়েন্ট মিলিবাগের নিম্ফ (ছবি-১)
বাইন্ডিং টেপের নিচে জায়েন্ট মিলিবাগের নিম্ফ (ছবি-১)
বাইন্ডিং টেপের নিচে জায়েন্ট মিলিবাগের নিম্ফ (ছবি-২)
বাইন্ডিং টেপের নিচে জায়েন্ট মিলিবাগের নিম্ফ (ছবি-২)
বাইন্ডিং টেপের নিচে স্প্রে করে মিলিবাগ দমন
বাইন্ডিং টেপের নিচে স্প্রে করে মিলিবাগ দমন

(৮) আমের ফুল ও ফল ঝরা রোধে টেকসই ব্যবস্থাপনা

আম একটি জনপ্রিয় ফল। সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে আমের উৎপাদন মারাত্বকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। সঠিক সময়ে ও মাত্রায় সার, সেচ, পোকামাকড়, রোগবালাই ব্যবস্থাপনা না করায় আমের ফুল ও ফল ঝরে যায় এবং সামগ্রিকভাবে আমের উৎপাদন ব্যহত হয়।

সুস্থ আমের মুকুল
সুস্থ আমের মুকুল
আমের হপার পোকা
আমের হপার পোকা
হপার আক্রান্ত আমের মুকুল
হপার আক্রান্ত আমের মুকুল
পোকা আক্রান্ত আমবিহীন মুকুল
পোকা আক্রান্ত আমবিহীন মুকুল

ক) দমন ব্যবস্থাপনা

আম উৎপাদনকারী বাংলাদেশের ১৪টি জেলার ২০টি উপজেলায় কৃষক পর্যায়ে সমন্বিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে আমের ফুল ও ফল ঝরা রোধের মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধির সমন্বিত প্যাকেজ উদ্ভাবন করা হয়েছে যা নিম্নে দেওয়া হলো।

  1. ফসল সংগ্রহের পর আগস্ট মাসে রোগক্রান্ত মরা ও অপ্রয়োজনীয় ডালপালা, শাখা প্রশাখা এবং পরগাছা ছেটে গাছে পর্যাপ্তÍ আলো বাতাসের ব্যবস্থা করতে হবে।
  2. সেপ্টেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহ হতে নিম্নে বর্ণিত উপায়ে সার প্রয়োগ করতে হবে।
  3. আমের মুকুল আসার ৭-১০ দিনের মধ্যে অথবা মুকুলের দৈর্ঘ্য ১ থেকে দেড়িইঞ্চি হলে (অবশ্যই ফুল ফুটে যাবার আগে) আমের হপার পোকা দমনের জন্য ইমিডাক্লোপ্রিড (কনফিডর) ৭০ ডব্লিউ জি বা অন্য নামের অনুমোদিত কীটনাশক প্রতি লিটার পানিতে ০.২ গ্রাম হারে অথবা সাইপারমেথ্রিন (রিপকর্ড) ১০ ইসি বা অন্য নামের অনুমোদিত কীটনাশক প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলি হারে বা অন্যান্য অনুমোদিত কীটনাশক এবং এনথ্রাকনোজ রোগ দমনের জন্য ম্যানকোজেব (ইন্ডোফিল) এম-৪৫ নামক বা অন্যান্য অনুমোদিত ছত্রাকনাশক প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে একত্রে মিশিয়ে আম গাছের মুকুল, পাতা, শাখা প্রশাখা ও কান্ডে ভালভাবে ভিজিয়ে স্প্রে করতে হবে। এরপর ৪-৫ সপ্তাহের মধ্যে আম মটরদানা আকৃতির হলে একই ধরনের কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক উল্লিখিত মাত্রায় একত্রে মিশিয়ে মুকুল পাতা ও কান্ড ও শাখা প্রশাখা ভিজিয়ে আর একবার স্প্রে করতে হবে। আম গাছে হপার পোকা এবং এনথ্রাকনোজ রোগের হাত থেকে মুকুল রক্ষা করার জন্য উপরোক্ত পদ্ধতিতে ২ (দুই) বার কীটনাশক এবং ছত্রাকনাশকের একত্রে প্রয়োগ করাই যথেষ্ট।
  4. আম গাছে ভরা মুকুলের (Full bloom) সময় থেকে শুরু করে ১৫ দিন অন্তর আম গাছের গোড়ায় ৪ বার সেচ দিতে হবে।

খ) গাছে সার প্রয়োগ

চারা রোপণের পর গাছের সুষ্ঠু বৃদ্ধির জন্য নিয়মিত সার প্রয়োগ করা আবশ্যক। গাছ বৃদ্ধির সাথে সাথে সারের পরিমাণও বাড়াতে হবে। বয়স ভিত্তিতে গাছ প্রতি সারের পরিমাণ নিম্নে দেখানো হলো।

সারের নামগাছের বয়স ১-৪ (বছর)গাছের বয়স ৫-৭ (বছর)গাছের বয়স ৮-১০ (বছর)গাছের বয়স ১১-১৫ (বছর)গাছের বয়স ১৬-২০ (বছর)গাছের বয়স ২০+ (বছর)
গোবর (কেজি)২৬.২৫৩৫৪৩.৭৫৫২.৫০৭০৮৭.৫০
ইউরিয়া (গ্রাম)৪৩৭.৫০৮৭৫১৩১২.৫০১৭৫০২৬২৫৩৫০০
টিএসপি (গ্রাম)৪৩৭.৫০৪৩৭.৫০৮৭৫৮৭৫১৩১২.৫০১৭৫০
এমওপি(গ্রাম)১৭৫৩৫০৪৩৭.৫০৭০০৮৭৫১৪০০
জিপসাম (গ্রাম)১৭৫৩৫০৪৩৭.৫০৬১২.৫০৭০০৮৭৫
জিংক সালফেট (গ্রাম)১৭.৫০১৭.৫০২৬.২৫২৬.২৫৩৫৪৩.৭৫
বরিক এসিড৩৫৩৫৫২.৫০৫২.৫০৭০৮৭.৫০

বয়স ভেদে নির্ধারিত সম্পূর্ণ পরিমাণ গোবর, টিএসপি, জিপসাম, জিংক সালফেট এবং বরিক এসিড এবং অর্ধেক ইউরিয়া ও অর্ধেক এমওপি সার সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে প্রয়োগ করতে হবে। অবশিষ্ট ইউরিয়া ও এমওপি সার সমান দুই ভাগ করে এক ভাগ মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময়ে যখন ফল মটর দানার মতো হয় তখন এবং অবশিষ্ট ইউরিয়া ও এমওপি সার মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে প্রয়োগ করতে হবে।

এখানে উল্লেখ্য যে, গাছের চারিদিকে গোড়া থেকে কমপক্ষে ১ থেকে ১.৫ মি. দূরে হালকাভাবে কুপিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে সার প্রয়োগ করতে হবে। গাছের বয়স বেশি হলে এই দূরত্ব বাড়তে পারে। সার প্রয়োগের পর হালকা সেচ দিতে হবে।

(৯) কচু ফসলের সাধারণ কাটুই পোকা (Spodoptera litura) এর সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনা

সাধারণ কাটুই পোকা (Spodoptera litura) কচু ফসলের একটি মারাত্মক ক্ষতিকারক পোকা। বিগত কয়েক বছর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে কচু ফসলে এ পোকার ব্যাপক আক্রমণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

সাধারণ কাটুই পোকা আক্রান্ত কচু পাতা
সাধারণ কাটুই পোকা আক্রান্ত কচু পাতা

ক) ক্ষতির প্রকৃতি

এই পোকার কীড়া সাধারণত গাছের পাতা অথবা সবুজ অংশ খায়। পূর্ণবয়স্ক কীড়া খুব দ্রুত সম্পূর্ণ পাতা খেয়ে ফেলে। গাছের সমস্ত পাতায় বড় বড় ছিদ্র হয় এবং পাতা নষ্ট হয়ে যায়। অনেক সময় গাছ মরে যায়। এ পোকা কচুর লতিতেও আক্রমণ করে ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে থাকে।

খ) দমন ব্যবস্থাপনা

কীটতত্ত্ব বিভাগ, বারি কর্তৃক সাম্প্রতিক কালে উদ্ভাবিত নিম্নোক্ত আইপিএম পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে উপরোক্ত পোকাসমূহ সহজে পরিবেশসম্মতভাবে দমন করা সম্ভব।

  1. আক্রান্ত পাতা হাত বাছাই: ডিমের গাদা ও কীড়াসহ আক্রান্ত পাতা হাত দিয়ে সংগ্রহ করে ধ্বংস করতে হবে।
  2. ফেরোমন ফাঁদের ব্যবহার: কচুর জমিতে চারা রোপনের দুই সপ্তাহ পরে ২০ মিটার দূরে দূরে সেক্স ফেরোমন ফাঁদ স্থাপন করতে হবে।
  3. উপকারী পোকা অবমুক্তকরণ: প্রতি সপ্তাহে একবার করে কীড়া নষ্টকারী পরজীবী পোকা, ব্রাকন হেবিটর (হেক্টরপ্রতি এক বাংকার বা ৮০০-১২০০টি পূর্ণাঙ্গ পোকা) কচুর জমিতে মুক্তায়িত করতে হবে।
  4. জৈব বালাইনাশকের ব্যবহার: আক্রমণের মাত্রা বেশি হলে জৈব বালাইনাশক এসএনপিভি প্রতি লিটার পানিতে ০.২ গ্রাম হারে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
কচুর জমিতে স্থাপিত সেক্স ফেরোমন ফাঁদ
কচুর জমিতে স্থাপিত সেক্স ফেরোমন ফাঁদ

(১০) মরিচের ফলছিদ্রকারী পোকা এর সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনা

বিগত কয়েক বছর থেকে দেশের বিভিন্ন মরিচ উৎপাদনকারী এলাকায় ফলছিদ্রকারী পোকার ব্যাপক আক্রমণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সাধারণত দুই ধরণের ফলছিদ্রকারী পোকা (Spodoptera litura Ges Helicoverpa armigera) মরিচ ফসলের ক্ষতি করে থাকে। এ পোকার কীড়া ফলের বৃন্তের কাছে ছোট ছোট ছিদ্র করে ফলের মধ্যে ঢুকে পড়ে ভিতরের অংশ খায়। ক্ষতিগ্রস্ত ফলের ভিতরে পোকার বিষ্ঠা ও পচন দেখা দেয়। আক্রান্ত ফল অসময়ে পেকে যায়। আক্রান্ত ফলে ছিদ্র দেখে সহজেই এই পোকার উপস্থিতি বোঝা যায়।

কীটতত্ত্ব বিভাগ, বারি কর্তৃক সাম্প্রতিক কালে উদ্ভাবিত নিম্নোক্ত আইপিএম পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে উপরোক্ত পোকা সমূহ সহজে পরিবেশসম্মতভাবে দমন করা সম্ভব।

ফলছিদ্রকারী পোকা আক্রান্ত মরিচ
ফলছিদ্রকারী পোকা আক্রান্ত মরিচ

ক) ফেরোমন ফাঁদের ব্যবহার

মরিচের জমিতে চারা রোপণের দুই সপ্তাহ পরে দুই ধরনের ফলছিদ্রকারী পোকার ফেরোমন ফাঁদ ২০ মিটার দূরে দূরে পর্যায়ক্রমিক ভাবে স্থাপন করতে হবে।

খ) উপকারী পোকা অবমুক্তকরণ

প্রতি সপ্তাহে একবার করে কীড়া নষ্টকারী পরজীবী পোকা, ব্রাকন হেবিটর (হেক্টরপ্রতি এক বাংকার বা ৮০০-১,২০০টি পূর্ণাঙ্গ পোকা) এবং ডিম নষ্টকারী পরজীবী পোকা, ট্রাইকোগ্রামা (হেক্টরপ্রতি এক গ্রাম পরজীবী পোকা আক্রান্ত ডিম, যেখানে হতে ৪০,০০০ হতে ৪৫,০০০ পূর্ণাঙ্গ ট্রাইকোগ্রামা বের হয়ে আসবে) মরিচের জমিতে মুক্তায়িত করতে হবে।

গ) জৈব বালাইনাশকের ব্যবহার

আক্রমণের মাত্রা বেশি হলে জৈব বালাইনাশক এসএনপিভি প্রতি লিটার পানিতে ০.২ গ্রাম হারে এবং এইচএনপিভি প্রতি লিটার পানিতে ০.১ গ্রাম হারে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

সমন্বিত পদ্ধতিতে মরিচের ব্যবস্থাপনা ফলছিদ্রকারী পোকা
সমন্বিত পদ্ধতিতে মরিচের ব্যবস্থাপনা ফলছিদ্রকারী পোকা

(১১) কপি জাতীয় ফসলের বিভিন্ন পাতা-খেকো পোকার সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনা

বিভিন্ন পাতা খেকো পোকা যেমন- সাধারণ কাটুই পোকা বা প্রোডেনিয়া ক্যাটারপিলার এবং সুুরুই পোকা বা ডায়ামন্ডব্যাক মথ বাঁধাকপির মারাত্মক ক্ষতিসাধন করে থাকে। অনুরূপভাবে সাধারণ কাটুই পোকা বা প্রোডেনিয়া ক্যাটারপিলার ফুলকপি উৎপাদনেরও বড় অন্তরায়।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের কীটতত্ত্ব বিভাগ কর্তৃক উদ্ভাবিত নিম্নোক্ত আইপিএম পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে উক্ত পোকাসমূহ কার্যকরীভাবে, কম খরচে ও পরিবেশসম্মত উপায়ে দমন করা সম্ভব।

সুরুই পোকা আক্রান্ত বাঁধাকপির পাতা
সুরুই পোকা আক্রান্ত বাঁধাকপির পাতা

ক) যান্ত্রিক উপায়ে দমন

সাধারণ কাটুই পোকা এবং ডায়ামন্ডব্যাক মথ এর ডিম/কীড়া আক্রমণের প্রথমাবস্থায় দু-একটি পাতায় দলবদ্ধভাবে থাকে। উক্ত সময় আক্রান্ত পাতার পোকাগুলিকে ২-৩ বার হাত বাছাই করে মেরে ফেললে এই সব পোকা অনেকাংশে দমন করা সম্ভবপর হয়।

খ) সাধারণ কাটুই পোকার জন্য সেক্স ফেরোমন ফাঁদের ব্যবহার

সেক্স ফেরোমন ব্যবহার করে প্রচুর পরিমাণে সাধারণ কাটুই পোকার পুরুষ পোকা আকৃষ্ট করা সম্ভব। পানি ফাঁদের মাধ্যমে উক্ত ফেরোমন ব্যবহার করে আকৃষ্ট পোকা সমূহকে মেরে ফেলা যায়। সেক্স ফেরোমন ফাঁদ বাঁধাকপি/ফুলকপির জমিতে চারা লাগানোর ১ সপ্তাহের মধ্যে ৩০ মিটার দূরে দূরে স্থাপন করতে হবে।

গ) আক্রমণের মাত্রা বেশি হলে

জৈব বালাইনাশক এসএনপিভি প্রতি লিটার পানিতে ০.২ মিগ্রা পরিমাণ মিশিয়ে জমিতে স্প্রে করতে হবে।

ঘ) উপকারী পোকামাকড় অবমুক্তকরণ

সম্ভবপর হলে প্রতি সপ্তাহে একবার করে ডিম নষ্টকারী পরজীবী পোকা, ট্রাইকোগ্রামা কাইলোনিজ (হেক্টরপ্রতি এক গ্রাম পরজীবী পোকা আক্রান্ত ডিম, যেখান থেকে ৪০,০০০ হতে ৪৫,০০০ পূর্ণাঙ্গ ট্রাইকোগ্রামা বের হয়ে আসবে) ও কীড়া নষ্টকারী পরজীবী পোকা, ব্রাকন হেবিটর (হেক্টরপ্রতি এক বাংকার বা ৮০০-১২০০টি পূর্ণাঙ্গ পোকা) পর্যায়ক্রমিকভাবে বাঁধাকপি/ফুলকপির জমিতে মুক্তায়িত করতে হবে।

ঙ) এলাকা ভিত্তিক সমন্বিত উদ্যোগ

উপরোক্ত পদ্ধতিটির সামগ্রিক সফলতার জন্য সংশ্লিষ্ট এলাকার সকল চাষীদের সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ খুবই জরুরি।

(১২) সরিষা ফসলের সাধারণ কাটুই পোকা (প্রোডেনিয়া ক্যাটারপিলার) এর সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনা

সাধারণ কাটুই পোকা (প্রোডেনিয়া ক্যাটারপিলার) সরিষা ফসলের একটি মারাত্মক ক্ষতিকারক পোকা। বিগত কয়েক বছর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরিষায় এ পোকার ব্যাপক আক্রমণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

কীটতত্ত্ব বিভাগ, বারি কর্তৃক সাম্প্রতিক কালে উদ্ভাবিত নিম্নোক্ত আইপিএম পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে উপরোক্ত পোকাসমূহ সহজে পরিবেশসম্মতভাবে দমন করা সম্ভব।

ক) ফেরোমন ফাঁদের ব্যবহার

সেক্স ফেরোমন ব্যবহার করে প্রচুর পরিমাণে সাধারণ কাটুই পোকার পুরুষ পোকা আকৃষ্ট করা সম্ভব। পানি ফাঁদের মাধ্যমে উক্ত ফেরোমন ব্যবহার করে আকৃষ্ট পোকাসমূহকে মেরে ফেলা যায়। ফাঁদ প্রতি একটি ফেরোমন টোপ পানি ফাঁদের প্লাস্টিক পাত্রের মুখ হতে ৩-৪ সেমি নিচে একটি সরু তার দিয়ে স্থাপন করতে হবে।

ফেরোমনের গন্ধে আকৃষ্ট হয়ে পুরুষ মাছি পোকা প্লাস্টিক পাত্রের ভিতরে প্রবেশ করে ও সাবান পানিতে পড়ে আটকে যায় এবং মারা যায়। সেক্স ফেরোমন ফাঁদ সরিষার জমিতে বীজ বপনের ২-৩ সপ্তাহ পরে ২০ মিটার দূরে দূরে স্থাপন করতে হবে। সাধারণত সরিষার জমিতে ফেরোমন ফাঁদ একবার স্থাপন করলে পুরো মৌসুমে আর পরিবর্তন করার প্রয়োজন হয় না।

সরিষা জমিতে স্থাপিত সেক্স ফেরোমন ফাঁদ
সরিষা জমিতে স্থাপিত সেক্স ফেরোমন ফাঁদ

খ) উপকারী পোকা অবমুক্তকরণ

প্রতি সপ্তাহে একবার করে কীড়া নষ্টকারী পরজীবী পোকা, ব্রাকন হেবিটর (হেক্টরপ্রতি এক বাংকার বা ৮০০-১,২০০টি পূর্ণাঙ্গ পোকা) সরিষার জমিতে মুক্তায়িত করতে হবে।

আক্রমণের মাত্রা বেশি হলে জৈব বালাইনাশক এসএনপিভি প্রতি লিটার পানিতে ০.২ গ্রাম হারে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

(১৩) সমন্বিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে শিমের মাজরা পোকা দমন

বিভিন্ন মাজরা পোকা শিমের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে থাকে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের কীটতত্ত্ব বিভাগ কর্তৃক উদ্ভাবিত নিম্নোক্ত আইপিএম পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে উক্ত পোকাসমূহ দমন করা সম্ভব।

ক) যান্ত্রিক উপায়ে দমন

সাধারণত মাজরা পোকা শিমের ফুল ও পরবর্তীকালে ফলে আক্রমণ করে থাকে। গবেষণায় পরিলক্ষিত হয়েছে যে, এক দিন পর পর আক্রান্ত ফুল ও ফল হাত বাছাই করে ধ্বংস করে ফেললে এই পোকা অনেকাংশে দমন করা সম্ভবপর হয়।

খ) উপকারী পোকামাকড় অবমুক্তকরণ

প্রতি সপ্তাহে একবার করে ডিম নষ্টকারী পরজীবী পোকা, ট্রাইকোগ্রামা কাইলোনিজ (হেক্টরপ্রতি এক গ্রাম পরজীবী পোকা আক্রান্ত ডিম, যেখানে থেকে ৪০,০০০ হতে ৪৫,০০০ পূর্ণাঙ্গ ট্রাইকোগ্রামা বের হয়ে আসবে) ও কীড়া নষ্টকারী পরজীবী পোকা, ব্রাকন হেবিটর (হেক্টরপ্রতি এক বাংকার বা ৮০০-১২০০টি পূর্ণাঙ্গ পোকা) পর্যায়ক্রমিকভাবে শিমের জমিতে মুক্তায়িত করতে হবে।

গ) বিষাক্ত কীটনাশকের প্রয়োগ বন্ধ বা সীমিত ব্যবহার

একান্ত প্রয়োজনে সর্বশেষ ব্যবস্থা হিসেবে কেবলমাত্র পরিমিত মাত্রায় নির্দিষ্ট ক্ষমতা সম্পন্ন জৈব কীটনাশক (স্পাইনোসেড ৪৫এসসি প্রতি লিটার পানিতে ০.৪ মিলি হিসাবে) ব্যবহার করা যেতে পারে।

ঘ) এলাকা ভিত্তিক সমন্বিত উদ্যোগ

উল্লিখিত পদ্ধতিটির সামগ্রিক সফলতার জন্য সংশ্লিষ্ট এলাকার সকল শিম চাষীদের সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ খুবই জরুরি।

(১৪) উপকারী পোকা বা বন্ধু পোকার ব্যপকভিত্তিক উৎপাদন

ফসলের বিভিন্ন ক্ষতিকারক পোকা দমনে বন্ধু পোকা ব্যবহারের মাধ্যমে কীটনাশকের যথেচ্ছচার ব্যবহার কমিয়ে এনে নিরাপদ ফসল উৎপাদন নিশ্চিত করা সম্ভব। সে উদ্দেশ্য বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এর কীটতত্ত্ব বিভাগ, এদের ব্যাপক ভিত্তিক উৎপাদন কৌশল উদ্ভাবন করেছে যা নিম্নরূপ।

ক) ডিম নষ্টকারী পরজীবী পোকা, ট্রাইকোগ্রামা এর উৎপাদন

অনিষ্টকারী পোকার ডিম নষ্টকারী পরজীবী পোকা হিসেবে পৃথিবীব্যাপী বিভিন্ন প্রজাতির ট্রাইকোগ্রামা এর ব্যাপক ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এর কীটতত্ত্ব বিভাগ, এদের ব্যাপক ভিত্তিক উৎপাদন কৌশল উদ্ভাবন করেছে যার মাধ্যমে বর্তমানে দেশে বেশ কয়েকটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এগুলোকে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করছে এবং বাজারজাত করছে।

সাধারণত গুদামজাত ধানের পোকা, সুরুই পোকার (Corcyra cephalonica) ডিমের উপর ট্রাইকোগ্রামা এর পরজীবায়নের মাধ্যমে ব্যাপকভিত্তিক উৎপাদন করা হয়ে থাকে।

ট্রাইকোগ্রামা
ট্রাইকোগ্রামা

খ) কীড়া নষ্টকারী পরজীবী পোকা ব্রাকন হেবিটর (Bracon hebetor) এর উৎপাদন

অত্যন্ত বিধ্বংসী ব্রাকন হেবিটর সাধারণত মাজরা বা বিটল জাতীয় শত্রু পোকার নরম ও শুং বিহীন কীড়ায় পরজীবায়ন করে ধ্বংস করে থাকে এবং অনিষ্টকারী পোকার কীড়া নষ্টকারী পরজীবী পোকা হিসেবে সুপরিচিত।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এর কীটতত্ত্ব বিভাগ, এদের ব্যাপক ভিত্তিক উৎপাদন কৌশল উদ্ভাবন করেছে যার মাধ্যমে বর্তমানে দেশে বেশ কয়েকটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এগুলো বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করছে এবং বাজারজাত করছে। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ব্রাকন হেবিটর এর উৎপাদন ওয়াক্স মথ (Galleria mellonella) এর কীড়ায় সম্পন্ন করা হয়।

ব্রাকন
ব্রাকন

(১৫) কুলের ফল ছিদ্রকারী উইভিল পোকার সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনা

ফল ছিদ্রকারী উইভিল পোকা কুল গাছের মারাত্মক ক্ষতিকারক পোকা। বিগত কয়েক বছর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে কুলের উন্নতজাত সমূহে এ পোকার ব্যাপক আক্রমণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত নিম্নোক্ত পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে উক্ত পোকাসমূহ দমন করা সম্ভব।

ফলের ভিতরে পূর্ণাঙ্গ পোকা
ফলের ভিতরে পূর্ণাঙ্গ পোকা
ফলের ভিতরে পোকার কীড়া
ফলের ভিতরে পোকার কীড়া

ক) পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন চাষাবাদ

কুল বাগানের আশে পাশের ঝোপ জঙ্গল এবং বাগানের আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। কুল গাছে অসময়ের ফুল ও কুঁড়ি নষ্ট করে ফেলতে হবে। কুল গাছে প্রাথমিক পর্যায়ে আক্রান্ত ফলগুলো সংগ্রহ করে (পূর্ণ বয়স্ক পোকা আক্রান্ত ফল থেকে বের হওয়ার পূর্বে) কীড়া বা পুত্তুলি বা পূর্ণ বয়স্ক পোকাসহ ধ্বংস করে ফেলতে হবে।

খ) কীটনাশক ব্যবহার

গাছে ফুল ধরার আগে কার্বারিল ৮৫ ডব্লিউপি জাতীয় কীটনাশক (প্রতি লিটার পানিতে ১.৫ গ্রাম) একবার এবং পরাগায়নের পর ফলধারণ শুরু হওয়ার সাথে সাথে একবার সাইপারমেথ্রিন ১০ইসি জাতীয় কীটনাশক (প্রতি লিটার পানিতে ১.০ মিলি হারে) স্প্রে করতে হবে।

(১৬) জৈব বালাই ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে শিমের প্রধান ক্ষতিকর পোকা (মাজরা ও জাব পোকা) দমন

জাব ও বিভিন্ন মাজরা পোকা শিমের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে থাকে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের কীটতত্ত্ব বিভাগ কর্তৃক উদ্ভাবিত নিম্নোক্ত জৈব বালাই ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে উক্ত পোকাসমূহ দমন করা সম্ভব।

মাজরা পোকা আক্রান্ত শিমের ফুল
মাজরা পোকা আক্রান্ত শিমের ফুল
মাজরা পোকা আক্রান্ত শিমের ফুল ও ফল
মাজরা পোকা আক্রান্ত শিমের ফুল ও ফল
জাব পোকা আক্রান্ত শিমের ডগা
জাব পোকা আক্রান্ত শিমের ডগা

ক) পোকা হাত দিয়ে পিষে মেরে ফেলা

প্রাথমিক অবস্থায় আক্রান্ত পাতা ও ডগার জাব পোকা হাত দিয়ে পিষে মেরে ফেলা যায়। ডিটারজেন্ট মিশ্রিত পানি (প্রতি ১০ লিটার পানিতে ৫ গ্রাম গুঁড়া সাবান মেশাতে হবে) স্প্রে করেও এ পোকার আক্রমণ অনেকাংশে কমানো যায়।

এছাড়াও আক্রমণের মাত্রা বেশি হলে আক্রান্ত স্থানে বায়োনিম প্লাস ১ মিলি প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ৭ দিন অন্তর অন্তর ২-৩ বার স্প্রে মাধ্যমে এ পোকা সহজে দমন করা যায়। যান্ত্রিক উপায়ে দমন: সাধারণত মাজরা পোকা শিমের ফুল ও পরবর্তীকালে ফলে আক্রমণ করে থাকে।

গবেষণায় পরিলক্ষিত হয়েছে যে, এক দিন পর পর আক্রান্ত ফুল ও ফল হাত বাছাই করে ধ্বংস করে ফেললে এই পোকা অনেকাংশে দমন করা সম্ভবপর হয়।

খ) উপকারী পোকামাকড় অবমুক্তকরণ

প্রতি সপ্তাহে একবার করে ডিম নষ্টকারী পরজীবী পোকা, ট্র্রাইকোগ্রামা কাইলোনিজ (হেক্টরপ্রতি এক গ্রাম পরজীবী পোকা আক্রান্ত ডিম, যেখানে থেকে ৪০,০০০ হতে ৪৫,০০০ পূর্ণাঙ্গ ট্রাইকোগ্রামা বের হয়ে আসবে) ও কীড়া নষ্টকারী পরজীবী পোকা, ব্রাকন হেবিটর (হেক্টরপ্রতি এক বাংকার বা ৮০০-১২০০টি পূর্ণাঙ্গ পোকা) পর্যায়ক্রমিকভাবে শিমের জমিতে মুক্তায়িত করতে হবে।

গ) বিষাক্ত কীটনাশকের প্রয়োগ বন্ধ বা সীমিত ব্যবহার

একান্ত প্রয়োজনে সর্বশেষ ব্যবস্থা হিসেবে কেবলমাত্র পরিমিত মাত্রায় নির্দিষ্ট ক্ষমতা সম্পন্ন জৈব কীটনাশক (স্পাইনোসেড ৪৫ এসসি প্রতি লিটার পানিতে ০.৪ মিলি হিসাবে) ব্যবহার করা যেতে পারে।

ঘ) এলাকা ভিত্তিক সমন্বিত উদ্যোগ

উল্লিখিত পদ্ধতিটির সামগ্রিক সফলতার জন্য সংশ্লিষ্ট এলাকার সকল শিম চাষীদের সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ খুবই জরুরি।

(১৭) বেগুনের বিভিন্ন ধরনের শোষক পোকার সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনা

বেগুন বাংলাদেশের একটি অন্যতম জনপ্রিয় সবজি যা সারা বৎসর ধরে চাষাবাদ হয়ে থাকে। প্রায় ১৫টি প্রজাতির পোকান্ডমাকড় বেগুনে আক্রমণ করে, এর মধ্যে শোষক পোকা উভয় মৌসুমে বিশেষ করে গ্রীষ্মে মারাত্বক ক্ষতিসাধন করে থাকে।

শোষক পোকাগুলির মধ্যে সাদা মাছি, জ্যাসিড, জাব পোকা এবং থ্রিপস অন্যতম। বাংলাদেশ কৃষি গবেসণা ইনস্টিটিউটের কীটতত্ত্ব বিভাগ কর্তৃক উদ্ভাবিত নিন্মোক্ত আইপিএম পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে উক্ত পোকাসমূহ কার্যকরীভাবে কম করচে ও পরিবেশ সম্মত উপায়ে দমন করা সম্ভব।

ক) আঠালো ফাঁদের ব্যবহার

জাব ও থ্রিপস পোকা বিভিন্ন ধরনের আঠালো ফাঁদে সহজে আকৃষ্ট হয়। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের কীটতত্ত্ব বিভাগ ২ (দুই) ধরনের আঠালো ফাঁদ উদ্ভাবন করেছে।

জাব পোকার জন্য হলুদ আঠালো এবং থ্রিপস পোকার জন্য সাদা আঠালো ফাঁদ। চারা রোপণের ২-৩ সপ্তাহের মধ্যে বেগুনের মাঠে ১৫-২০ মিটার দূরে দূরে একটি সাদা ফাঁদের পর একটি হলুদ ফাঁদ স্থাপন করে জাব ও থ্রিপস পোকা আঠালো ফাঁদে ধরা পড়ে মারা যাবে।

খ) বোটানিক্যাল কীটনাশক ব্যবহার

আঠালো ফাঁদ ব্যবহারের পাশাপাশি ৭-১০ দিন পর পর এজাডিরাকটিন (বায়োনিম প্লাস ১ ইসি বা অন্য নামে) ১ মিলি লিটার হারে ৩-৪ বার স্প্রে করে এই পোকা গুলো দমন করা যায়।

হলুদ আঠালো ফাঁদে আকৃষ্ট জাব পোকা
হলুদ আঠালো ফাঁদে আকৃষ্ট জাব পোকা
সাদা আঠালো ফাঁদে আকৃষ্ট থ্রিপস পোকা
সাদা আঠালো ফাঁদে আকৃষ্ট থ্রিপস পোকা
বায়োনিম প্লাস প্রয়োগকৃত প্লটে উৎপাদিত বেগুন
বায়োনিম প্লাস প্রয়োগকৃত প্লটে উৎপাদিত বেগুন

(১৮) বাঁধাকপি ও ফুলকপি ফসলের সাধারণ কাটুই পোকার সমন্বিত ব্যবস্থাপনা

বাঁধাকপি ও ফুলকপির একটি প্রধান অনিষ্টকারী পোকা। ডিম থেকে কীড়া বের হয়ে পাতায় একত্রে গাদা করে থাকে এবং পাতার বিভিন্ন অংশ গোলাকার করে খেয়ে বড় হতে থাকে। এভাবে খাওয়ার ফলে পাতা জালের মতো হয়ে যায় এবং তা দূর থেকে দেখেই চেনা যায়। কাছে গেলে ঐ জালের মত হয়ে যাওয়া পাতায় অনেক কীড়া দেখতে পাওয়া যায়। কয়েক দিনের মধ্যে এরা ক্ষেতে ছড়িয়ে পড়ে এবং বড় বড় ছিদ্র করে পাতা খেয়ে ফেলে।

সাধারণ কাটুই পোকা
সাধারণ কাটুই পোকা
পোকা আক্রান্ত বাঁধাকপি
পোকা আক্রান্ত বাঁধাকপি

দমন ব্যবস্থাপনা:

  1. যেহেতু পোকার দল প্রথম দিকে দলবদ্ধ অবস্থায় থাকে সেজন্য প্রতিটি গাছ যত্ন নিয়ে দেখলেই পাতায় কীড়া খাওয়া চিহ্ন সহজেই চোখে পড়ে। ঐ অবস্থায় আক্রান্ত পাতা কীড়াসহ গাছ থেকে ছিড়ে নিয়ে পা দিয়ে পিষে মাজরা পোকা আক্রান্ত শিমের ফুল মাজরা পোকা আক্রান্ত শিমের ফুল ও ফল জাব পোকা আক্রান্ত শিমের ডগা হলুদ আঠালো ফাঁদে আকৃষ্ট জাব পোকা সাদা আঠালো ফাঁদে আকৃষ্ট থ্রিপস পোকা বায়োনিম প্লাস প্রয়োগকৃত প্লটে উৎপাদিত বেগুন মেরে ফেলতে হবে এবং ছড়িয়ে পড়া বড় কীড়াগুলোকে ধরে ধরে মেরে ফেলতে হবে। এভাবে অতি সহজেই এ পোকা দমন করা যায়।
  2. প্রতি সপ্তাহে একবার করে কীড়া নষ্টকারী পরজীবী পোকা, ব্রাকন হেবিটর (হেক্টরপ্রতি এক বাংকার বা ৮০০-১২০০টি হিসাবে) পর্যায়ক্রমিকভাবে মুক্তায়িত করলে এ পোকার আক্রমণের হার অনেকাংশে কমে যায়।
  3. চারা লাগানোর এক সপ্তাহের মধ্যেই জমিতে ফেরোমন ফাঁদ পাততে হবে। ফেরোমন ফাঁদ পাতার পরও যদি আক্রমণের চিহ্ন পরিলক্ষিত হয় তবে জৈব বালাইনাশক এসএনপিভি প্রতি লিটার পানিতে ০.২ গ্রাম হারে মিশিয়ে
    ১০-১২ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।
বাঁধাকপির জমিতে স্থাপিত সেক্স ফেরোমন ফাঁদ
বাঁধাকপির জমিতে স্থাপিত সেক্স ফেরোমন ফাঁদ

(১৯) কলার পাতা ও ফলের বিটল পোকা এর সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনা

কলার পাতা ও ফলের বিটল পোকা (Nodostoma viridipennis Mots.) সারা বাংলাদেশব্যাপী কলা চাষে যথেষ্ট ক্ষতি করে থাকে। পূর্বে অমৃতসাগর কলাতেই এর আক্রমণের হার সর্বাধিক হতো। তবে বর্তমানে প্রায় সব জাতের কলাতেই এ পোকার প্রাদুর্ভাব দেখা যায়।

বিশেষত বর্ষা মৌসুমে কোন ধরনের দমন ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে শতকরা ১০০ ভাগ পর্যন্ত কলা এ পোকার দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। তবে শুষ্ক মৌসুম বা শীতকালে আক্রমণের হার বেশ কম হতে দেখা যায়। কারণ উক্ত সময় বেশির ভাগ পোকা কীড়া অবস্থায় মাটির নিচে শীতনিদ্রা যায়। কলার মুড়ি ফসলে আক্রমণের হার সর্বাধিক হয়ে থাকে।

কীটতত্ত্ব বিভাগ, বারি কর্তৃক উদ্ভাবিত নিম্নোক্ত আইপিএম পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে উপরোক্ত পোকা সহজে পরিবেশসম্মতভাবে দমন করা সম্ভব।

পূর্ণাঙ্গ বিটল পোকা
পূর্ণাঙ্গ বিটল পোকা
বিটল আক্রান্ত কলা
বিটল আক্রান্ত কলা

ক) পর্যায়ক্রমিক ফসলের চাষ

যে সমস্ত বাগানে পোকার আক্রমণ হার অত্যন্ত বেশি সেখানে পরবর্তী বছর জমি উত্তমরূপে চাষ করে অন্য ফসল আবাদ করা একান্ত বাঞ্ছনীয়। তৃতীয় বছর উক্ত জমিতে পুনরায় কলা চাষ করা যেতে পারে। পলিথিন

খ) ব্যাগিং

কলার মোচা বের হওয়ার সাথে সাথে ও ছড়িতে কলা বের হওয়ার পূর্বেই ১০৫ সেমি লম্বা ও ৭৫ সেমি প্রস্থের দু’মুখ খোলা একটি পলিথিন ব্যাগের একমুখ মোচার ভিতর ঢুকিয়ে বেঁধে দিতে হবে, অন্য মুখ খোলা রাখতে হবে। বাতাস চলাচলের জন্য পলিথিন ব্যাগটিতে ২০-৩০টি ছোট ছোট ছিদ্র রাখা বাঞ্ছনীয়। পলিথিন ব্যাগিং দ্বারা এ পোকা দমন অত্যন্ত কার্যকরী ও নিরাপদ বলে প্রতীয়মান হয়েছে।

কলার কাঁদির পলিথিন ব্যাগিং
কলার কাঁদির পলিথিন ব্যাগিং
পোকামুক্ত কলার কাঁদি
পোকামুক্ত কলার কাঁদি

গ) কীটনাশক দ্বারা পোকা দমন

মোচা বের হওয়ার ৫ দিন আগে একবার, মোচা বের হওয়ার সাথে সাথে একবার, ছড়িতে প্রথম কলা বের হওয়ার পর একবার এবং সম্পূর্ণ কলা বের হওয়ার পর আরো একবার, মোট চারবার অনুমোদিত কীটনাশক স্প্রে করলে এই পোকা দমন সম্ভব। কীটনাশক, ডায়াজিনন ৬০ ইসি (প্রতি লিটার পানিতে ২ মিলি) বা সেভিন ৮৫ ডাব্লিওপি (প্রতি লিটার পানিতে ১.৫ গ্রাম) বা মিপসিন ৭৫ ডাব্লিও পি (প্রতি লিটার পানিতে ১ গ্রাম) স্প্রে করে ভাল ফল পাওয়া যায়।

(২০) টমেটো ও বেগুনের ড্যাম্পিং অফ বা চারা গাছ ঢলে পড়া রোগ দমনে কৃষকদের করণীয়

টমেটো শীতকালীন সবজি ও বেগুন সারা বছর চাষাবাদের উপযোগী সবজি হিসেবে বাংলাদেশে খুবই জনপ্রিয়। গ্রামাঞ্চলে এমন কোন বাড়ী পাওয়া যাবে না যেখানে আঙিনায় এ দুটি সবজির গাছ দেখা যাবে না। কিন্তু এ দুটি সবজির চারা তৈরিতে কৃষক ভাইদের ড্যাম্পিং অফ বা চারা গাছ ঢলে পড়াজনিত সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। নিচে এই রোগের কারণ, লক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে বর্ণনা করা হলো।

ক) টমেটো ও বেগুনের ড্যাম্পিং অফ বা চারা গাছ ঢলে পড়া রোগের কারণ

ফাইটোপথোরা, পিথিয়াম, ফিউজারিয়াম, রাইজোকটোনিয়া, স্কেলেরোশিয়াম ইত্যাদি প্রজাতির মাটি বাহিত ছত্রাকের কারণে বীজতলাতে এই রোগ হয়।

খ) টমেটো ও বেগুনের ড্যাম্পিং অফ বা চারা গাছ ঢলে পড়া রোগের লক্ষণ

  • আক্রান্ত অঙ্কুরিত চারার রং ফ্যাকাসে সবুজ হয়।
  • কান্ডের নিচের দিকে মাটি বরাবর বাদামী রঙের পানি ভেজা দাগ পড়ে।
  • আক্রান্ত জায়গায় চারার গোড়া পচে যায় ও চারা মারা যায়।
টমেটো ও বেগুনের ড্যাম্পিং অফ বা চারা গাছ ঢলে পড়া রোগের লক্ষণ
টমেটো ও বেগুনের ড্যাম্পিং অফ বা চারা গাছ ঢলে পড়া রোগের লক্ষণ

গ) টমেটো ও বেগুনের ড্যাম্পিং অফ বা চারা গাছ ঢলে পড়া রোগের ব্যবস্থাপনা

বীজতলা তৈরিকরণ এবং সুস্থ ও সবল চারা উৎপাদন-

  1. জমি উত্তমরূপে চাষ করতে হবে এবং চাষ দিয়ে ৫ দিন প্রখর রোদে জমি ফেলে রাখতে হবে।
  2. অতঃপর বীজতলার মাটি সমান করে কাঠের শুকনো গুঁড়ো ৩ ইি বা ৬ সেমি পুরুস্তরে তৈরি করে বীজতলার উপরে সমানভাবে বিছিয়ে দিয়ে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে বীজতলার মাটি শোধন করতে হবে।
  3. বীজতলাতে বীজ বোনার আগে বীজকে প্রোভেক্স-২০০ (প্রতি কেজি বীজে ২.৫ গ্রাম) নামক ছত্রাকনাশক দ্বারা বীজ শোধন করে লাগাতে হবে।
  4. প্রতিরোধী জাত যেমন বারি টমেটে-১৬, বারি টমেটে-১৭ চাষ করতে হবে।
  5. বীজতলার পানি নিষ্কাশনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা থাকতে হবে ও পাতলা করে বীজ বুনতে হবে।
কাঠের গুঁড়া পোড়ানো বীজতলা
কাঠের গুঁড়া পোড়ানো বীজতলা

(২১) টমেটো ও বেগুনের ঢলে পড়া/ব্যাক্টেরিয়াল উইল্ট ও শিকড়ে গিঁট কৃমি/রুট নট নেমাটোড রোগ এবং তার সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনা

টমেটো শীতকালীন সবজি ও বেগুন সারা বছর চাষাবাদের উপযোগী সবজি হিসেবে বাংলাদেশে খুবই জনপ্রিয়। গ্রামাঞ্চলে এমন কোন বাড়ী পাওয়া যাবে না যেখানে আঙিনায় এ দুটি সবজির গাছ দেখা যাবে না। কিন্তু এ দুটি সবজির ফলন আশাব্যঞ্জক নয়। কম ফলনের কারণগুলোর মধ্যে এ দুটি সবজির রোগ বালাই অন্যতম।

টমেটোতে এ পর্যন্ত ২০ টির ও বেশি রোগ চিহ্নিত করা হয়েছে এবং বেগুনের এক ডজনেরও বেশি রোগ শনাক্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে ড্যাম্পিং অফ বা চারা গাছ ঢলে পড়া, ব্যাক্টেরিয়া জনিত ঢলে পড়া ও শিকড়ের গিঁট কৃমি রোগসমূহ সবচেয়ে ক্ষতিকর এবং এসব রোগের জীবাণু সমূহ মাটি বাহিত। এসব রোগের ফলে চাষীরা টমেটো এবং বেগুন চাষের উৎসাহ দিন দিন হারিয়ে ফেলছে।

নিচে এ দুটি সবজির কয়েকটি মারাত্মক মাটি বাহিত রোগের কারণ, লক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে বর্ণনা করা হলো।

ক) টমেটো ও বেগুনের ঢলে পড়া রোগের কারণ ও লক্ষণ

রালস্টোনিয়া সোলানেসিয়েরাম নামক ব্যাক্টেরিয়ার আক্রমণে এই রোগ সৃষ্টি হয়। টমেটো, আলু, বেগুন এর আক্রমণ বেশি পরিলক্ষিত।

গাছ বৃদ্ধির যে কোন সময় এ রোগ হতে পারে এবং ব্যাপক ক্ষতি করে। আক্রান্ত গাছের পাতা সবুজ অবস্থাতেই ঝিমুতে শুরু করে। বিকালে ঝিমুতে দেখলেও সকালে গাছটি সুস্থ মনে হয়। এভাবে ৩/৪ দিন যাওয়ার পর গাছটি আর সকালে সতেজ হবে না এবং গাছটি সবুজ অবস্থাতেই মারা যাবে। মাটি থেকে তুললেও রোগের কোন লক্ষণ শিকড়েও দেখা যাবে না।

এ রোগ চেনার সহজ উপায় হলো ব্লেড বা ছুরি দিয়ে একটানে কেটে পরিষ্কার কাচেঁর গ্লাসের পানিতে কান্ডটির কাটা প্রান্ত ডুবিয়ে রাখতে হবে। এ অবস্থায় গ্লাসটি নাড়ানো যাবে না। দুই থেকে তিন মিনিট অপেক্ষা করলেই দেখা যাবে দুধের মত সাদা সুতার মত ব্যাক্টেরিয়া কান্ডের ডুবানো প্রান্ত হতে অবিরত বের হচ্ছে।

টমেটো ঢলে পড়া রোগের লক্ষণ
টমেটো ঢলে পড়া রোগের লক্ষণ

খ) টমেটো ও বেগুনের শিকড়ে গিঁট কৃমি/রুট নট নেমাটোড রোগের কারণ ও লক্ষণ

মেলোয়যোগাইনি ইনকগনিটা ও মেলোয়ডোগাইনি জাভনিকা নামক কৃমির আক্রমণে টমেটো, বেগুন ও অন্যান্য শাক সবজিতে এ রোগ হয়ে থাকে।

গাছ বৃদ্ধির শুরুতে কৃমি দ্বারা আক্রান্ত হলে এবং আক্রমণের ব্যাপকতা বেশি হলে গাছ নিস্তেজ ও খাটো হয়ে যায়। পাতাগুলো হলদে সবুজ হতে হলুদ রঙের হয়। অনেক ক্ষেত্রেই পাতা হঠাৎ করেই ঝরে পড়ে। এ রোগ চেনার সবচেয়ে লক্ষণীয় বৈশিষ্ট্য হলো গাছ তুললে শিকড়ে অসংখ্য ছোট বড় গিঁট দেখা যায়। সাধারণত আক্রান্ত স্থলের কোষের আকার খুব দ্রুত বৃদ্ধি মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্থ হয়। গাছে ফুল ধরার ক্ষমতা আশংকাজনকভাবে কমে যায় এবং ফল ধরে না বললেই চলে।

টমেটো শিকড়ে গিঁট কৃমি রুট নট নেমাটোড রোগের লক্ষণ
টমেটো শিকড়ে গিঁট কৃমি রুট নট নেমাটোড রোগের লক্ষণ

গ) রোগ দুটির সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনা

i) বীজতলা তৈরিকরণ এবং সুস্থ ও সবল চারা উৎপাদন

  • জমি উত্তমরূপে চাষ করতে হবে এবং চাষ দিয়ে ৫ দিন প্রখর রোদে জমি ফেলে রাখতে হবে।
  • অতঃপর বীজতলার মাটি সমান করে কাঠের গুকনো গুড়া ৩ ইি বা ৬ সেমি পুরুস্তরে তৈরি করে বীজতলার উপরে
  • সমানভাবে বিছিয়ে দিয়ে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে বীজতলার মাটি শোধন করতে হবে।
  • বীজতলাতে বীজ বোনার আগে বীজকে প্রোভেক্স-২০০ (প্রতি কেজি বীজে ২.৫ গ্রাম) নামক ছত্রাকনাশক দ্বারা বীজ শোধন করে লাগাতে হবে।
  • প্রতিরোধী জাত যেমন বারি টমেটে-১৬, বারি টমেটে-১৭ চাষ করতে হবে।
  • বীজতলার পানি নিষ্কাশনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা থাকতে হবে ও পাতলা করে বীজ বুনতে হবে।

ii) জমি তৈরিকরণ ও চারা রোপণ

  • হেক্টর প্রতি ৫ টন অর্ধ-পচা মুরগির বিষ্ঠা জমিতে প্রয়োগ করে জমি উত্তমরুপে চাষ করে মাটির ভালভাবে মিশিয়ে দিয়ে কমপক্ষে ১৫ দিন মুরগির বিষ্ঠা পচাতে হবে।
  • ব্যাক্টেরিয়া জনিত ঢলে পড়া রোগের প্রভাব জানা থাকলে হেক্টরপ্রতি ২০ কেজি স্টেবল ব্লিচিং পাউডার শেষ চাষের সময় মাটিতে প্রয়োগ করা হইলে শুধুমাত্র ব্যাক্টেরিয়া জনিত ঢলে পড়া রোগের প্রকোপ হ্র্রাস পায়।
  • শিকড়ে গিঁট কৃমি রোগের জন্য চারা লাগানোর সময় ফুরাডন ৫ জি নামক কৃমিনাশক ৪৫ কেজি/হেক্টর হারে প্রয়োগ করলে টমেটো ও বেগুনের শিকড়ে গিট কৃমি/রুট নট নেমাটোড সার্থক ভাবে দমন করা যায়।

iii) চারা রোপণের পর করণীয়

  1. ব্যাক্টেরিয়া জনিত ঢলে পড়া রোগের লক্ষণ দেখা দিলে সাথে সাথে জমিতে ভাসানো সেচ দেওয়া বন্ধ করতে হবে। আক্রান্ত গাছ সংগ্রহ করে পুড়িয়ে ফেরতে হবে এবং আক্রান্ত স্থান স্টেবল ব্লিচিং পাউডার দিয়ে শোধন করতে হবে।
  2. জমিতে ছত্রাক জনিত ঢলে পড়া রোগের লক্ষণ দেখা দিলে অটোস্টিন নামক ছত্রাকনাশক (০.২% হারে ১২-১৫ দিন পর পর তিন বার) দিয়ে গাছের গোড়ার মাটি ভালভাবে ভিজিয়ে দিতে হবে।

(২৩) মসুর এর গোড়া পচা রোগ ও তার সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনা কৃষকদের করণীয়

মসুর বাংলাদেশে প্রধান ডাল জাতীয় ফসল আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় মসুর ডাল একটি অন্যতম উপাদান।

বাংলাদেশে মসুরের হেক্টরপ্রতি ফলন অন্যান্য দেশের তুলনায় অত্যন্ত কম। কম উৎপাদনের কারণগুলোর মধ্যে রোগবালাই একটি অন্যতম প্রধান কারণ।

মসুরের বিভিন্ন রোগবালাই এর মধ্যে গোড়া পচা একটি প্রধান রোগ। এই রোগের মসুরের ফলন ১০০% পর্যন্ত নষ্ট হইতে পারে। এ রোগ গাছের চারা বয়সে বেশি সংক্রমিত হয়।

ক) মসুর এর গোড়া পচা রোগের লক্ষণ

  • চারা অবস্থায় এ রোগ হলে গাছ হঠাত ঢলে পড়ে এবং মারা যায়।
  • আক্রান্ত গাছের পাতা ক্রমান্বয়ে হলুদ রং ধারণ করে। গাছ নেতিয়ে পড়ে এবং শুকিয়ে মারা যায়।
  • মাটি ভেজা থাকলে আক্রান্ত গাছের গোড়ায় আক্রান্ত স্থানে সাদা রং এর ছত্রাকের মাইসেলিয়া এবং সরিষার দানার মতো স্কেলেরোসিয়াম গুটি দেখা যায়।
রোগমুক্ত প্লট
রোগমুক্ত প্লট
রোগের লক্ষণ
রোগের লক্ষণ

খ) মসুর এর গোড়া পচা রোগের সমন্বিত দমন ব্যবস্থা

i) জমি নির্বাচন, মাদা তৈরিকরণ ও বীজ বপন/চারা রোপণ

  1. মসুর চাষের জন্য এমন জমি নির্বাচন করতে হবে যে জমিতে পানি নিষ্কাশনের সুব্যবস্থা থাকতে হবে যাতে স্যাঁতস্যাঁতে না থাকে।
  2. ফসলের পরিত্যক্ত অংশ পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
  3. জমি উত্তমরূপে চাষ করতে হবে এবং চাষ দিয়ে প্রখর রোদে জমি ৫ দিন ফেলে রাখতে হবে।
  4. আংশিক পচা মুরগির বিষ্ঠা ৫ টন/হেক্টর হারে বীজ বপনের কমপক্ষে ২১ দিন পূর্বে প্রয়োগ করে মাটির সাথে ভালভাবে পচাতে হবে। মুরগির বিষ্ঠা না পাওয়া গেল ট্রাইকোডারমা বায়োফানজিসাইড ট্রাইকো-কমপোস্ট ৩ টন/হেক্টর হারে জমি শেষ চাষের সময় মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে।
  5. অতঃপর প্রোভেক্স (০.২৫%) নামক ছত্রাকনাশক দ্বারা বীজ শোধন করে বীজ বপন করতে হবে।

ii) বীজ বপন/চারা রোপণের পর করণীয়

  1. বীজ বপণের পর রোগের লক্ষণ দেখা দিলে প্রোভেক্স ০.২৫% হারে পানিতে মিশিয়ে ১২-১৫ দিন পর পর দুইবার গাছের গোড়ায় মাটি ভালভাবে ভিজিয়ে দিলে এই রোগের আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষা করা সম্ভব।
  2. চারা লাগানোর ৩ মাস পরে বা গাছে ফলন আসার ২-৩ সপ্তাহ পূর্বে
    দ্বিতীয় বার ১০-১৫ গ্রাম ফুরাডান ৫ কেজি প্রতি গাছের গোড়ার
    চারদিকে রিং করে প্রয়োগ করতে হবে এবং মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে
    হবে।
  3. মিষ্টি কুমড়া গাছে পাউডারী মিলডিউ রোগের লক্ষণ দেখা দিলে এ রোগ
    দমনে সালফার জাতীয় বালাইনাশক যেমন- থিওভিট ৮০ ডব্লিউপি
    অথবা কুমুলাস-ডিএফ অথবা বেকিং সোডা ২ গ্রাম/লিটার হারে পানিতে
    মিশিয়ে ১০-১২ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করা।
  4. আংশিক পচা মুরগির বিষ্ঠা ৫ টন/হেক্টর হারে বীজ বপনের কমপক্ষে ২১ দিন পূর্বে প্রয়োগ করে মাটির সাথে ভালভাবে পচাতে হবে। অতঃপর প্রো-ভেক্স (০.২৫%) নামক ছত্রাকনাশক দ্বারা বীজ শোধন করে বীজ বপন করতে হবে।
  5. চারা গাজানোর ২০-২৫ দিন পর একবার এবং ৩৫-৪০ দিন পর দ্বিতীয় বার প্রোভেক্স ০.২৫% হারে পানিতে মিশিয়ে গাছের গোড়ায় মাটি ভালভাবে ভিজিয়ে দিলে এই রোগ ভালভাবে দমন করার পাশাপাশি মসুরের ফলন স্বাভাবিক এর চেয়ে ২৮-৪৩% বৃদ্ধি করা সম্ভব।
  6. এছাড়া ফসলের পরিত্যক্ত অংশ পুড়িয়ে ফেলতে হবে এবং প্রোভেক্স (০.২৫%) দ্বারা বীজ শোধন করে বপন করতে হবে। অতঃপর চারা গাজানোর ২০-২৫ দিন পর একবার এবং ৩৫-৪০ দিন পর দ্বিতীয় বার প্রোভেক্স ০.২৫% হারে পানিতে মিশিয়ে গাছের গোড়ায় মাটি ভালভাবে ভিজিয়ে দিলে এই রোগের আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষা করা সম্ভব।

(২৪) ছোলার গোড়া পচা বা কলার রট এবং ঢলে পড়া রোগ ও তার সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনায় কৃষকদের করণীয়

ছোলা বাংলাদেশের দ্বিতীয় প্রধান ডাল জাতীয় ফসল। কিন্তু বাংলাদেশে ছোলার গড় ফলন অন্যান্য দেশের তুলনায় খুবই কম। বিভিন্ন কারণের মধ্যে রোগবালাই অন্যতম প্রধান কারণ।

ছোলা বিভিন্ন ধরনের রোগবালাই দ্বারা আক্রান্ত হয় তবে মাটিবাহিত রোগ যেমন ঢলে পড়া ও গোড়া পচা অন্যতম। এই রোগের কারণে ছোলার ৫৫-৯৫% পর্যন্ত গাছ মারা যেতে পারে। এ রোগ গাছের চারা বয়স থেকে পূর্ণাঙ্গ গাছ আবার সংক্রমিত হতে পারে।

ক) ছোলার গোড়া পচা বা কলার রট রোগের কারণ ও লক্ষণ

স্কেলেরেসিয়াম রলফসি নামক মাটিতে বসবাসকারী এক প্রকার ছত্রাকের আক্রমণে এ রোগের সৃষ্টি হয়।

  • চারা অবস্থায় এই রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যায়।
  • রোগে আক্রান্ত গাছ প্রথমে হলদে হয়ে যায় অতঃপর আস্তে আস্তে নেতিয়ে পড়ে এবং শুকিয়ে মারা যায়।
  • চারা গাছের শিকড় ও কান্ডের সংযোগস্থলে এই রোগের আক্রমণ হলে আক্রান্ত স্থানে কালো দাগের সৃষ্টি হয়। আস্তে আস্তে দাগ বৃদ্ধি পেয়ে আক্রান্ত অংশে পচন হয় এবং গাছ মারা যায়।
  • স্যাতস্যাতে আবহাওয়ায় আক্রান্ত স্থানে ছত্রাকের সাদা রং এর মাইসেলিয়া এবং সরিষার দানার মত স্কেলেরোসিয়া দেখা যায়।

খ) ছোলার ঢলে পড়া বা উইল্ট রোগের কারণ ও লক্ষণ

ফিউজারিয়াম অক্সিসপোরাম নামক ছত্রাক এ রোগ সংগঠিত হয়।

  • গাছের বৃদ্ধির যে কোন অবস্থায় এই রোগ দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে।
  • চারা অবস্থায় আক্রান্ত হলে গাছ হঠাৎ করে ঢলে পড়ে কিন্তু গাছের পাতার রঙের কোন পরিবর্তন হয়।
  • পূর্ণ বয়স্ক গাছ এই রোগে আক্রান্ত হলে প্রথমে গাছের পাতা হলুদ হয় এবং আস্তে আস্তে গাছ নেতিয়ে পড়ে এবং পরিশেষে গাছ মারা যায়।
  • রোগে আক্রান্ত গাছের কান্ড লম্বালম্বিভাবে চিড়লে কান্ডের কেন্দ্রস্থলের ভাসকুলার বান্ডেলের মাঝ বরাবর অংশ কালচে রং ধারণ করে।
  • আক্রান্ত গাছের শিকড় ও কান্ডের সংযোগস্থলে অনেক সময় লালচে বাদামী রঙের পচন দেখা যায়।
  • আক্রান্ত গাছ টান দিয়ে সহজেই উঠানো যায়।
ছোলার ঢলে পড়া রোগের লক্ষণ
ছোলার ঢলে পড়া রোগের লক্ষণ

গ) ছোলার ঢলে পড়া এবং গোড়া পচা রোগের সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনা

i) জমি নির্বাচন, মাদা তৈরিকরণ ও বীজ বপন/চারা রোপণ

  1. ছোলা চাষের জন্য এমন জমি নির্বাচন করতে হবে যে জমিতে পানি নিষ্কাশনের সুব্যবস্থা থাকতে হবে যাতে স্যাঁতস্যাঁতে না থাকে।
  2. ফসলের পরিত্যক্ত অংশ পুড়িয়ে ফেলতে হবে
  3. জমি উত্তমরূপে চাষ করতে হবে এবং চাষ দিয়ে প্রখর রোদে জমি ৫ দিন ফেলে রাখতে হবে।
  4. আংশিক পচা মুরগির বিষ্ঠা ৫ টন/হেক্টর হারে বীজ বপনের কমপক্ষে ২১ দিন পূর্বে প্রয়োগ করে মাটির সাথে ভালভাবে পচাতে হবে। মুরগির বিষ্ঠা না পাওয়া গেলে ট্রাইকোডারমা বায়োফানজিসাইড, ট্রাইকো-কমপোস্ট ৩ টন/হে. হারে জমি শেষ চাষের সময় মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে।
  5. অতঃপর প্রোভেক্স (০.২৫%) নামক ছত্রাকনাশক দ্বারা বীজ শোধন করে বীজ বপন করতে হবে।

ii) বীজ বপন/চারা রোপণের পর করণীয়

বীজ বপনের পর রোগের লক্ষণ দেখা দিলে অটোস্টিন নামক ছত্রাকনাশক ০.২% হারে পানিতে মিশিয়ে ১২-১৫ দিন পর পর দুইবার গাছের গোড়ায় মাটি ভালভাবে ভিজিয়ে দিলে এই রোগের আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষা করা সম্ভব।

ছোলার গোড়া পচা ও ঢলে পড়া রোগের সমন্বিত দমন
ছোলার গোড়া পচা ও ঢলে পড়া রোগের সমন্বিত দমন
নিয়ন্ত্রিত জমি (ছবি-১)
নিয়ন্ত্রিত জমি (ছবি-১)
নিয়ন্ত্রিত জমি (ছবি-২)
নিয়ন্ত্রিত জমি (ছবি-২)

(২৫) শসার কিউকামবার মোজাইক ভাইরাস রোগের সমন্বিত দমন

ক) রোগের কারণ

কিউকাম্বার মোজাইক ভাইরাস (Cucumber mosaic virus) নামক এক প্রকার ভাইরাস দ্বারা এই রোগ হয়।

খ) রোগের লক্ষণ

  • রোগের শুরুতে গাছের কচি পাতায় হাল্কা সবুজ ও হাল্কা হলুদাভ রং এর মোজাইক (হাল্কা মোজাইক) লক্ষণ দেখা দেয়।
  • পরবর্তীতে পাতায় সবুজ ও হলুদ রং-এর মোজাইক লক্ষণ স্পষ্টভাবে দেখা যায়।
  • আক্রান্ত গাছের পাতা উপরের দিকে কুঁচকে যাওয়া, পাতার আকৃতি ছোট হওয়া, হলদেটে হওয়া ও ফল বিকৃত হওয়া এ রোগের প্রধান লক্ষণ।
  • গাছের বৃদ্ধির প্রাথমিক পর্যায়ে আক্রান্ত হলে গাছ খর্বা কৃতির হয় এবং ফল আকারে অনেক ছোট ও বিকৃত হয়। ফলে ফলন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
রোগের প্রাথমিক লক্ষণ (হাল্কা মোজাইক)
রোগের প্রাথমিক লক্ষণ (হাল্কা মোজাইক)
হলুদাভ ও কুঁকড়ানো পাতা ও বিকৃত ফল
হলুদাভ ও কুঁকড়ানো পাতা ও বিকৃত ফল
মোজাইক ও মটলিং লক্ষণ
মোজাইক ও মটলিং লক্ষণ

গ) দমন ব্যবস্থা

  1. পোকা প্রতিরোধী নেটের ভিতর চারা উৎপাদন করা (অধিক সতর্কতার জন্য নেটের ভিতর হলুদ আঠাল পলিথিন ফাঁদ ব্যবহার করা যেতে পারে।
  2. সুস্থ সবল রোগমুক্ত চারা বাছাই করে রোপণ করা।
  3. জমিতে চারা রোপণের পর হলুদ আঠাল পলিথিন ফাঁদ ব্যবহার করা এবং বায়োনিম (Bio-neem) প্রতি লিটার পনিতে ২ মিলি লিটার বাইমিডাক্লোপ্রিড (Imidacloprid) গ্রুপের কীটনাশক প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলি লিটার হারে চারা রোপণের এক মাস পর থেকে শুরু করে ১২দিন অন্তর ৩/৪ টি স্প্রে করে শসার কিউকামবার মোজাইক ভাইরাস রোগের আক্রমণ অনেকাংশে দমন করা সম্ভব।
হলুদ আঠাল পলিথিন ফাঁদ
হলুদ আঠাল পলিথিন ফাঁদ

[সূত্র: বিএআরআই]

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/krisi

Everything related to animal and plants in the Bangla language!View Author posts

You cannot copy content of this page