Skip to content

 

সম্পূরক খাদ্য কাকে বলে? সম্পূরক খাদ্য কি? গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি ও মাছের সম্পূরক খাদ্য তৈরি

সম্পূরক খাদ্য কাকে বলে, সম্পূরক খাদ্য কি, গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি ও মাছের সম্পূরক খাদ্য তৈরি

(১) সম্পূরক খাদ্য কাকে বলে? সম্পূরক খাদ্য কি?

সম্পূরক খাদ্য কাকে বলে: মূল খাবারের পাশাপাশি আমরা অতিরিক্ত যে সকল খাবার গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি ও মাছকে দিয়ে থাকি অধিক উৎপাদন লাভের উদ্দেশ্যে সেই অতিরিক্ত খাবারকে সম্পূরক খাদ্য বলে।

সম্পূরক খাদ্য কি: খামারে থাকা পশুপাখি ও মাছ হতে অধিক উৎপাদন লাভের উদ্দেশ্যে আমরা মৌলিক খাবারের পাশাপাশি যে সকল খাবার দিয়ে থাকি সেগুলোই হলো সম্পূরক খাদ্য।

খামার ও মাছ চাষ থেকে অধিক উৎপাদন লাভের উদ্দেশ্যে আমরা যে সকল কৃত্রিম খাদ্য ব্যবহার করে থাকে সেগুলো সম্পূরক খাদ্যের অন্তর্ভুক্ত।

(২) মাছের সম্পূরক খাদ্য তৈরি

আমরা জেনেছি উদ্ভিদ তাদের পুষ্টি উপাদানগুলো মাটি, পানি ও বায়ু থেকে গ্রহণ করে থাকে। এ উপাদান গুলের অভাব হলে আমরা জমিতে সার প্রয়োগ করে থাকি। কিন্তু মাছ ও পশু পাখি কোথা থেকে তাদের পুষ্টি গ্রহণ করে থাকে? আঁশ জাতীয় খাবার ও দানাদার খাদ্য থেকে। কিন্তু এ খাবার খাওয়ার পরও মাহ, পশু পাখি থেকে কাঙ্ক্ষিত ফলন পাওয়া যায় না। তাই মাছ ও পশু পাখি থেকে দ্রুত ও অধিক উৎপাদন পেতে প্রচলিত খাবারের পাশাপাশি প্রতিদিনই কিছু অতিরিক্ত খাদ্য সরবরাহ করা হয়। এ খাদ্যই হলো সম্পূরক খাদ্য।

অধিক উৎপাদনের জন্য প্রাকৃতিক খাদ্য যোগানের পাশাপাশি পুকুরের বাইরে থেকে মাছকে কিছু খদ্য দেওয়া হয়, বাইরে থেকে দেওয়া এসব খাদ্যদ্রব্যকে মাছের সম্পূরক খাদ্য বলা হয়। চাউলের কুঁড়া, গমের ভূষি সরিষার খৈল, ইত্যাদি মাছের সম্পুরক খাদ্য তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। 

মাছের সম্পূরক খাদ্য শুধু প্রাকৃতিক খাদ্যে মাছের উৎপাদন আশানুরুপ হয় না। সার প্রয়োগ করে পর্যাপ্ত প্রকৃতিক খাদ্যের যোগান দিলে তাতেও মাছের পরিপূর্ণ পুষ্টি সাধন হয় না।

See also  গৃহপালিত পশু ও পাখির সম্পূরক খাদ্য

অধিক উৎপাদন পেতে হলে পুকুরে প্রতিদিন নিয়মিত সম্পূরক খাদ্য সরবরাহ করতে হবে। এজন্য পুকুর থেকে জাল টেনে ৩০-৪০টি মাছ ধরে গড় ওজন বের করে পুকুরের সব মাছের আনুমানিক মোট ওজন নির্ণয় করতে হবে।

বড় মাছের জন্য পুকুরে অবস্থিত মাছের মোট ওজনের শতকরা ৩-৫ ভাগ হারে প্রতিদিন খাবার দেওয়া উচিত। অর্থাৎ কোনো পুকুরে সব মাছের মোট ওজন ১০০ কেজি হলে ঐ পুকুরে দৈনিক ৩-৫ কেজি হারে খাবার দিতে হবে। আর পোনা মাছকে দেহের ওজনের শতকরা ৫-১০ ভাগ হারে প্রতিদিন খাবার দেওয়া প্রয়োজন।

চিত্র- পুকুরে সম্পূরক খাদ্য দেওয়া হচ্ছে

কার্প জাতীয় মাছের জন্য কার্প জাতীয় মাছ যেমন- রুই, কাতলা, মৃগেল, সিলভার কার্প ইত্যাদি চাষের ক্ষেত্রে ফিশমিল, চালের কুঁড়া, সরিষার খৈল, আটা ও ভিটামিন, খনিজ মিশ্রণ একত্রে মিশিয়ে খাদ্য তৈরি করা যায়। এজন্য খৈল ১২ ঘণ্টা আগে ভিজিয়ে রাখতে হয়। ভিজা খৈল, ফিশমিল, কুঁড়া এবং আটা একত্রে মিশিয়ে ছোট ছোট বলের মতো বানিয়ে পুকুরে দেওয়া হয়।

প্রয়োজনীয় মোট খাবার দুইভাগে ভাগ করে এক ভাগ সকালে অন্য ভাগ বিকালে দিতে হয়। প্রতিদিন একই সময়ে নির্দিষ্ট জায়গায় খাদ্য দিতে হয়। এতে মাছের খাদ্য গ্রহণে সুবিধা হয়।

বড় মাছ ও পোনা মাছের জন্য সম্পূরক খাদ্যের তালিকায় ব্যবহৃত উপাদান ও পরিমাণ ছক আকারে দেখানো হলো।

কার্প জাতীয় মাছের জন্য মাছের সম্পূরক খাদ্য তৈরির তালিকা-

উপাদানবড় মাছপোনা মাছ
ফিশমিল১০ কেজি২১ কেজি
চালের কুঁড়া৫৩ কেজি২৮ কেজি
সরিষার খৈল৩০ কেজি৪৫ কেজি
আটা৬ কেজি৫ কেজি
ভিটামিন ও খনিজ মিশ্রণ১ কেজি১ কেজি
মোট১০০ কেজি১০০ কেজি

চিংড়ির জন্য সম্পূরক খাদ্যের তালিকা-

উপাদানপরিমাণ
চালের কুঁড়া বা গমের ভুসি৫০০ গ্রাম
সরিষার খৈল১৫০ গ্রাম
শুঁটকির গুঁড়া/ফিশমিল২৫০ গ্রাম
লবণ৯৫ গ্রাম
শামুক-ঝিনুকের খোলসের গুঁড়া৩ গ্রাম
ভিটামিন মিশ্রণ২ গ্রাম
মোট১০০০ গ্রাম

(৩) গরু-ছাগলের সম্পূরক খাদ্য তৈরি

আমাদের দেশে খড়, ভুসি, কুঁড়া, চাল, গম, খৈল, গাছের পাতা, ঘাস, আগাছা ইত্যাদি গরু-ছাগলের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। কিন্তু এগুলো সুষমভাবে খাওয়ানো হয় না এজন্য গবাদিপশু থেকে কাঙ্ক্ষিত উৎপাদন পাওয়া যায় না। তাই গবাদিপশুকে সম্পূরক খাদ্য দেওয়া হয়।

See also  গৃহপালিত পশু ও পাখির সম্পূরক খাদ্য

শর্করা, আমিষ, চর্বি, খনিজ পদার্থ ও পানি এ ৬টি উপাদান বিবেচনায় রেখে সম্পূরক খাদ্য তৈরি করা হয়।

আমাদের দেশে জন্মায় এমন কিছু ঘাস যেমন- ইপিল ইপিল, নেপিয়ার, পারা, জার্মান, গিনি ইত্যাদি এবং খেসারি, কাউপি, মাষকলাই, ভূট্টা প্রভৃতি গরু-ছাগলেকে খাওয়ানো হয়।

প্রতিটি গাভীকে নিম্নোক্ত হারে দৈনিক সুষম খাদ্য খাওয়াতে হবে-

উপাদানপরিমাণ
সবুজ কাঁচা ঘাস১৫-২০ কেজি
শুকনা খড়৩-৫ কেজি
দানাদার খাদ্য মিশ্রণ২-৩ কেজি
লবণ৫৫-৬০ গ্রাম
  • দানাদার খাদ্যের ক্ষেত্রে প্রথম ৩ লিটার দুধের জন্য ২ কেজি দানাদার খাদ্য দিতে হবে। পরবর্তী প্রতি ৩ লিটার দুধের জন্য ১ কেজি অতিরিক্ত দানাদার খাদ্য দিতে হবে।
  • যদি গরুকে শুধু সবুজ ঘাস ও খড় খাওয়ানো হয় তবে প্রতি ১০০ কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ৩ কেজি ঘাস এবং ১ কেজি খড় নিতে হবে।
  • আবার শুধু ঘাস খাওয়ালে প্রতি ১০০ কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ৬ কেজি ঘাস দিতে হবে।
  • শুধু খড় খাওয়ালে প্রতি ১০০ কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ৩ কেজি খড় নিতে হবে।

সম্পূরক খাদ্য হিসেবে দানাদার খাদ্য মিশ্রণ-

উপাদানপরিমাণ
চালের কুঁড়া২ কেজি
গমের ভুসি৫ কেজি
ভুট্টা ভাঙা১.৮ কেজি
তিল বা বাদামের খৈল১ কেজি
লবণ১০০ গ্রাম
খনিজ মিশ্রণ১০০ গ্রাম
মোট১০ কেজি

(২) হাঁস-মুরগির সম্পূরক খাদ্য তৈরি

বাংলাদেশে গ্রামীণ পরিবেশে ছাড়া অবস্থায় যেসব হাঁসমুরগি পালা হয় সেগুলো নিজেরা যতটুকু সম্ভব খাবার খায় এবং এদেরকে শুধু চালের কুঁড়া সরবরাহ করা হয়। এতে হাঁস-মুরগি পুষ্টিহীনতায় ভোগে। এছাড়া খামারে খাবার উপযুক্ত মাত্রায় সরবরাহ না করলেও হাঁস-মুরগি পুষ্টিহীনতায় ভোগে। ফলে হাঁস-মুরগি থেকে কাঙ্ক্ষিত ফলন যেমন- ডিম, মাংস পাওয়া যায় না। এজন্য হাঁস-মুরগি ৬টি পুষ্টি উপাদান (শর্করা, আমিষ, চর্বি, ভিটামিন, খনিজ, পানি) সমৃদ্ধ খাবার হিসেবে সরবরাহ করা হয়। এটাই হাঁস-মুরগির সম্পূরক খাদ্য।

See also  গৃহপালিত পশু ও পাখির সম্পূরক খাদ্য

সম্পূরক খাদ্যে দানা জাতীয় ও আঁশ জাতীয় খাদ্য রাখতে হয়। নিচে বাড়ন্ত মুরগির সম্পূরক খাদ্যের তালিকা দেখানো হলো।

৮–১৬ সপ্তাহ বয়সের বাড়ন্ত মুরগির জন্য সম্পূরক খাদ্যের তালিকা-

উপাদানপরিমাণ
গম ভাঙা৫০ ভাগ
গমের ভূমি১০ ভাগ
চালের কুঁড়া১৬ ভাগ
শুঁটকি মাছের গুঁড়া৯ ভাগ
তিলের খৈল১২ ভাগ
ঝিনুকের গুঁড়া২.৫ ভাগ
লবণ০.৫ ভাগ
মোট১০০ ভাগ

[সূত্র: এনসিটিবি]

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/krisi

Everything related to animal and plants in the Bangla language!View Author posts

You cannot copy content of this page