Skip to content

সয়াবিন তেল চাষের পদ্ধতি

সয়াবিন তেল চাষের পদ্ধতি

তেল জাতীয় ফসল হিসেবে সূর্যমুুখি, সয়াবিন, সরিষা, তিল, তিশি, চিনাবাদাম ইত্যাদি চাষ করা হয়।

এ পাঠ শেষে আপনি- সয়াবিন তেল চাষের পদ্ধতি শিখতে পারবেন। সয়াবিন চাষে জমি নির্বাচন করতে পারবেন। সয়াবিনের জাতের নাম বলতে পারবেন। সয়াবিন চাষে সার প্রয়োগ; সয়াবিনের বপন সময় ও পদ্ধতির সম্পর্কে জানতে পারেবন। সয়াবিন চাষে আন্তঃপরিচর্যা; সয়াবিনের অর্থনৈতিক গুরুত্ব সম্পর্কে অবগত হতে পারবেন।

(১) সয়াবিন তেল চাষের অর্থনৈতিক গুরুত্ব

ভোজ্য তেল উৎপাদনে সয়াবিন পৃথিবীর অনেক দেশেই প্রধান ফসল হিসেবে উৎপাদিত হয়। বিশ্বে তেল উৎপাদনে সয়াবিন প্রথম স্থান অধিকার করে নিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে এর স্থান সরিষারও পরে রয়েছে।

সয়াবিন বীজে শতকরা ৪০-৪৫ ভাগ আমিষ ও ১৯-২২ ভাগ ভোজ্য তেল রয়েছে। এদেশে সয়াবিন গৌণ ফসল হিসেবে চাষ হয়। যার জন্য দেশে ভোজ্য তেলের ঘাটতি পূরণের জন্য প্রধানত: সয়াবিন তেলই আমদানি করতে হয়। তবে বাংলাদেশে সয়াবিন চাষের সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ রয়েছে।

(২) সয়াবিন তেল চাষের পদ্ধতি

সয়াবিনের ইংরেজি নাম Soybean এবং Glycine max হলো এর বৈজ্ঞানিক নাম।

সয়াবিন গাছ থেকে প্রাপ্ত, সয়াবিনের বীজ থেকে সয়াবিন তেল তৈরি হয়।

সয়াবিন তেল চাষের পদ্ধতি নিম্নে বর্ণনা করা হলো।

চিত্র- সয়াবিন গাছ (ফুল ও ফলসহ)
চিত্র- সয়াবিন গাছ (ফুল ও ফলসহ)

ক) জলবায়ু

সয়াবিন অবউষ্ণ আবহাওয়ায় জন্মাতে পছন্দ করে। এ ফসল খুব বেশি বা খুব কম তাপমাত্রার কোনটিই সহ্য করতে পারে না। উজ্জ্বল সূর্যালোক ও ছোট দিনে পুস্পায়ন হয়। ১৪-১৬ ঘন্টা অন্ধকার পেলে এ ফসলে দ্রুত পুষ্পায়ন হয়। দীর্ঘ দিনের অবস্থায় রাখলে ফুল উৎপাদিত হয়ই না।

খ) মাটি বা জমি নির্বাচন

প্রায় সব ধরনের মাটিতেই সয়াবিন চাষ করা যায়। তবে দোআঁশ, বেলে দোআঁশ ও এটেল দোআঁশ মাটি উত্তম। রবি মৌসুমে মাঝারি থেকে নিচু এবং খরিফ মৌসুমে উঁচু জমিতে সয়াবিন চাষ করা হয়।

গ) জাত

ব্রাগ, ডেভিস, সোহাগ, বাংলাদেশ সয়াবিন ৪, বারি সয়াবিন ৫, বারি সয়াবিন ৬, বিনা সয়াবিন ১ ও বিনা সয়াবিন ২ হলো সয়াবিনের অনুমোদিত জাত। এ জাতগুলো পোকা ও রোগবালাই প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন। বীজের অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা বেশি দিন টিকে থাকে। ফলন বেশি হয়।

See also  সয়াবিনের জাত ও সয়াবিন চাষ পদ্ধতি

ঘ) বপন সময়

আমাদের দেশে রবি ও খরিফ উভয় মৌসুমেই সয়াবিন বপন করা যায়। রবি মৌসুমে পৌষ মাসে (মধ্য ডিসেম্বর থেকে মধ্য জানুয়ারি) এবং খরিফ মৌসুমে মধ্য শ্রাবণ থেকে মধ্য ভাদ্র (আগস্ট) পর্যন্ত এর বীজ বপন করা হয়।

ঙ) জমি তৈরি

সাধারণত ৪-৫ টি আড়াআড়ি চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে উপরিভাগ মসৃণ করে নিতে হয়। এছাড়াও বৃষ্টি বা অন্য কোন কারণে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হতে পারে। সেজন্য পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে। শেষ মই দেবার পর ছোট ছোট প্লট তৈরি করে সয়াবিন চাষ করলে পরবর্তীতে আন্তঃপরিচর্যা করতে সুবিধা হয়।

চ) সার প্রয়োগ

  • মাটির উর্বরতাভেদে সারের মাত্রা ভিন্ন হয়। সাধারণতঃ সয়াবিনের জন্য প্রতি হেক্টর জমিতে ৫০-৬০ কেজি ইউরিয়া, ১৫০- ১৭৫ কেজি টিএসপি, ১০০-১২০ কেজি এমওপি ও ৮০-১১৫ কেজি জিপসাম সার ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও প্রতি হেক্টরে ২০ টন হারে পচা গোবর বা কম্পোস্ট সার প্রয়োগ করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়।
  • সব অজৈব ও জৈব সার ছিটানোর পর শেষ চাষ ও মই দিয়ে মাটি মসৃণ করার পর বীজ বপন করতে হয়।
  • রাইজোবিয়াম ব্যাকটেরিয়া বাতাস থেকে মুক্ত নাইট্রোজেন সংগ্রহ করে সয়াবিন গাছের শিকড়ে গুটি (nodule) তৈরি করে। জীবাণুসারের সাথে সয়াবিন বীজ মিশিয়ে বপন করলে শিকড়ে সহজে নডিউল তৈরি হয় এবং নাইট্রোজেন যোগ হয়।
  • জীবাণুসার ব্যবহার করলে ফলনও অনেক বৃদ্ধি পায়। কোন জমিতে সয়াবিন প্রথম চাষ করলে তাতে অবশ্যই জীবাণুসার ব্যবহার করা উচিত। জীবাণুসার ব্যবহার করা হলে ইউরিয়া সার সাধারণত ব্যবহার করার প্রয়োজন হয় না। একটি পাত্রে এক কেজি পরিমাণ বীজ নিয়ে ভিজা হাতে বীজ এমনভাবে নাড়াচাড়া করতে হবে যাতে সকল বীজের গা ভিজে যায়। এরপর এই ভিজা বীজের মধ্যে ১৫-২০ গ্রাম জীবাণুসার ছিটিয়ে দিয়ে নাড়াচাড়া করতে হবে যাতে সব বীজের গায়ে জীবাণুসার লেগে যায়। জীবাণুসার মিশানোর পর সাথে সাথেই বীজ বপন করতে হয়। বেশিক্ষণ রোদে রাখলে জীবাণুসারের গুণাগুণ নষ্ট হয়ে যায়।
See also  সয়াবিনের জাত ও সয়াবিন চাষ পদ্ধতি

ছ) বীজহার

প্রতি হেক্টর জমিতে সাধারণতঃ ৫০-৭০ কেজি বীজ লাগে। বীজের অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা ৮০% এর কম নয় এরকম বীজ বপন করা উচিত।

জ) বীজশোধন

বীজশোধক দ্বারা শোধন করে নিয়ে বপন করলে মাটি ও বীজবাহিত অনেক রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

ঝ) বপন পদ্ধতি

  • ছিটিয়ে বা সারিতে উভয় পদ্ধতিতেই বীজ বপন করা যায়। তবে সারিতে বপন করাই উত্তম।
  • সারিতে বপন করলে সারি থেকে সারির দূরত্ব রবি মৌসুমে ৩০ সে.মি, খরিফ মৌসুমে ৪০ সে.মি. এবং সারিতে বীজ থেকে বীজের দূরত্ব ৪-৫ সে.মি. দিতে হয়।
  • রশি ধরে সারি বরাবর ৩-৪ সে.মি. গভীর লাইন টেনে বীজ বপন করতে হয়।
  • বীজ বপন শেষে ছিটিয়ে বুনলে মই দিয়ে এবং সারির বেলায় হাত দিয়ে বীজ ভালোভাবে ঢেকে দিতে হয়।

ঞ) আন্তঃপরিচর্যা

  1. আগাছা দমন ও চারা পাতলাকরণ: আগাছার প্রকোপ দেখা গেলে চারা গজানোর ২০-২৫ দিন পর একবার তা নিড়ানী দিয়ে পরিষ্কার করতে হয়। এ সময় চারা ঘন থাকলে পাতলা করে দিতে হয়। প্রতি বর্গমিটারে কাঙ্খিত গাছের সংখ্যা রবি মৌসুমে ৫০-৬০ টি এবং খরিফ মৌসুমে ৪০-৫০ টি রাখা উত্তম।
  2. সেচ ও নিকাশ: ২-৩ বার সেচ দেয়ার প্রয়োজন হয়। বৃষ্টি না হলে ১ম সেচ চারা গজানোর ২০-৩০ দিন পর এবং ২য় সেচ ৫০-৫৫ দিন পর দিতে হয়। তবে রবি মৌসুমে মাটিতে রস কম থাকলে গাছে ফুল ধরা ও শুটি (pod) গঠনের সময় সম্পূরক সেচ লাগতে পারে। খরিফ মৌসুমে সাধারণত সেচের প্রয়োজন হয় না। কোনো কারণে জমিতে পানি জমে থাকলে নিকাশের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
  3. পোকা দমন: সয়াবিন ফসলে বিছাপোকা ও কান্ডের মাছি পোকার আক্রমণ দেখা যায়। বিছাপোকার মথের ডিম ফোটার পর প্রথম অবস্থায় শুককীটগুলো দলবদ্ধভাবে পাতার নিচের দিকে অবস্থান করে এবং পাতা খেয়ে ঝাঁঝড়া করে ফেলে। এ অবস্থায় আক্রান্ত পাতা সংগ্রহ করে বিছাপোকা মেরে ফেলতে হয়। কান্ডের মাছি পোকা কান্ড ছিদ্র করে ভিতরের নরম অংশ খায়। সেজন্য আক্রান্ত অংশ বা সম্পূর্ণ গাছ মরে যায়। অনুমোদিত কীটনাশক প্রয়োগ করে উভয় পোকাই দমন করা সম্ভব।
  4. রোগ দমন: সয়াবিন ফসলে গোড়া পচা এবং পাতার হলুদ বা মোজাইক রোগ পরিলক্ষিত হয়। গোড়া পচা রোগ ছত্রাকের কারণে হয়। জমি সঠিকভাবে চাষ না দিলে এবং স্যাঁতস্যাতে থাকলে এ রোগের প্রকোপ দেখা দেয়। অনুমোদিত ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করে এ রোগ দমন করা যায়। পাতার হলুদ বা মোজাইক রোগ ভাইরাসের কারণে হয়। এ রোগ দেখা গেলে আক্রান্ত গাছ তুলে ফেলে মাটিতে পুঁতে দিতে হবে অথবা আগুনে পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
See also  সয়াবিনের জাত ও সয়াবিন চাষ পদ্ধতি

ট) ফসল কর্তন, শুকানো ও মাড়াই

  • জাত ও মৌসুমভেদে সয়াবিন বীজ বপন থেকে শুরু করে কর্তন পর্যন্ত ৯০-১২০ দিন সময় লাগে।
  • ফসল পরিপক্ক হলে শুটিসহ গাছগুলো হলুদ হয়ে আসে এবং পাতা ঝরে পড়তে দেখা যায়। এ অবস্থায় ফসল কেটে ২/১ দিন রোদে ভালোভাবে শুকিয়ে লাঠি দ্বারা আঘাত করে দানাগুলো আলাদা করা হয়। পরে দানাগুলো পরিষ্কার করে রোদে শুকিয়ে নিয়ে সংরক্ষণ করা হয়।

ঠ) ফলন

১.৩-২.৮ টন/হেক্টর। 

প্রিয় পাঠক, উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে আমরা সয়াবিন তেল চাষের পদ্ধতি সম্পর্কে একটা স্পষ্ট ধারণা অর্জন করলাম।

সয়াবিনের ইংরেজি নাম হলো Soybean এবং বৈজ্ঞানিক নাম হলো Glycine max এ ফসল খুব বেশি বা খুব কম তাপমাত্রা কোনটিই সহ্য করতে পারে না। দোআঁশ, বেলে দোআঁশ ও এটেল দোআঁশ মাটি সয়াবিন চাষের জন্য উত্তম। ব্রাগ, ডেভিস, সোহাগ ইত্যাদি এর অনুমোদিত জাত।

সয়াবিন ফসলে বিছাপোকা ও কান্ডের মাছি পোকার আক্রমণ দেখা যায়। সয়াবিন ফসলে গোড়া পচা এবং পাতার হলুদ বা মোজাইক রোগ পরিলক্ষিত হয়। গোড়া পচা রোগ ছত্রাকের কারণে হয়। জমি সঠিকভাবে চাষ না দিলে এবং স্যাঁতস্যাতে থাকলে এ রোগের প্রকোপ দেখা দেয়। অনুমোদিত ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করে এ রোগ দমন করা যায়। পাতার হলুদ বা মোজাইক রোগ ভাইরাসের কারণে হয়।

এ ফসল চাষ করতে সাধারণতঃ ৫০-৭০ ক বীজ লাগে। এ ফসলের বীজ পেল থেকে শুরু করে কর্তন পর্যন্ত ৯০-১২০ দিন সময় লাগে। প্রতি হেক্টরে এ ফসলের ফলন ১.৩-২.৮ টন হয়ে থাকে।

তেল উৎপাদনের দিক থেকে সয়াবিন বিশ্বে প্রথম স্থান অধিকার করে আছে। সয়াবিন বীজে শতকরা ৪০-৪৫ ভাগ আমিষ ও ১৯-২২ ভাগ ভোজ্য তেল রয়েছে। এদেশে সয়াবিন গৌণ ফসল হিসেবে চাষ হয়। যার জন্য দেশে ভোজ্য তেলের ঘাটতি পূরণের জন্য প্রধানত: সয়াবিন তেলই আমদানি করতে হয়। তবে বাংলাদেশে সয়াবিন চাষের সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ রয়েছে।

[সূত্র: ওপেন স্কুল]

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/krisi

Everything related to animal and plants in the Bangla language!View Author posts