উদ্ভিদের বৃদ্ধির নিয়ন্ত্রক রাসায়নিক পদার্থ যা উদ্ভিদের বৃদ্ধি এবং বিকাশকে নিয়ন্ত্রণ করে। এগুলি উদ্ভিদের গ্রথ হরমোন হিসাবেও পরিচিত।
এখানে আমরা করলা উদ্ভিদের বৃদ্ধির নিয়ন্ত্রক রাসায়নিক পদার্থ (plant growth regulators) বা গ্রোথ হরমোন (plant growth hormones) ব্যবহার করে চাষ পদ্ধতি ও নিয়ম সম্পর্ক আলোচনা করব।
আমরা জানি যে, করলা Cucurbitaceae গোত্রভুক্ত বাংলাদেশের একটি গুরুত্ত্বপূর্ণ ও জনপ্রিয় সবজি। এর বৈজ্ঞানিক নাম Momordica charantia L. এটি উষ্ণ মন্ডল ও অব-উষ্ণ মন্ডলীয় অঞ্চলের ফসল। ইহা উষ্ণ ও শুস্ক জলবায়ুতে ভাল জন্মে। বারি করলা-১, বারি করলা-২ এবং বারি করলা-৩ জনপ্রিয় করলার জাত।
মানবপুষ্টি ও স্বাস্থের উপকারী দিক থেকে করলার জুড়ি নেই।
- সবজিটিতে পানির পরিমাণ ৯৩%, সম্পৃক্ত চর্বি ও কোলষ্টেরলের পরিমাণ খুবই কম।
- এতে ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, রিবোফ্লাবিন, আয়রন ও ক্যালসিয়াম যথেষ্ট পরিমানে আছে।
- করলাতে ’স্যাপোটেনিন’ নামক রাসায়নিক উপাদান থাকায় ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ইহা একটি উত্তম সবজি। ‘কিউকারবিটাসিন’ ও ‘মোমোরডিসিন’ রাসায়নিক উপাদান থাকার কারনে করলার পাতা ও ফল তিতা স্বাদ যুক্ত হয়।
- করলার পাতা ও ফলে বিষাক্ত কোনো ’কিউকারবিটাসিন’ না থাকার কারনে সবজিটি মানুষের জন্য নিরাপদ।
Cucurbitaceae গোত্রের করলা ব্যাতিত অন্যান্য সবজি (শশা, লাউ, ধুন্দল প্রভৃতি) তিতা স্বাদ যুক্ত হলে সেগুলো খাওয়া থেকে বিরত থাকা বাঞ্ছনীয় কেননা এগুলোতে বিষাক্ত ‘কিউকারবিটাসিন’ থাকে। বিষাক্ত ’কিউকারবিটাসিন’ যুক্ত সবজি খেলে কিডনি বিকল হয়ে মানুষ মারা যেতে পারে।
(১) করলা চাষে হরমোন প্রয়োগের কারণ ও প্রভাব
উদ্ভিদ শারীরতাত্বিক প্রক্রিয়া পরিবর্তন ও নিয়ন্ত্রনে উদ্ভিদ বৃদ্ধিনিয়ন্ত্রক রাসায়নিক দ্রব্যাদির (Plant Growth Regulators) ভূমিকা সর্বজন বিদিত।
সাধারণতঃ করলা গাছে পুরুষ ফুলের সংখ্যা স্ত্রী ফুলের চেয়ে বেশী হয়। গ্রীষ্মকালের লম্বা দিবা দৈর্ঘ্য ও প্রখর আলো করলার পুরুষ ফুলের সংখ্যা বাড়িয়ে দেয়, পরিণতিতে স্ত্রী ফুলের সংখ্যা কমে যায়।
স্ত্রী ফুলের সংখ্যা কমে যাওয়ার ফলে ফলের সংখ্যা কমে যায় এবং ফলশ্রুতিতে হেক্টরপ্রতি ফলন কমে যায়।
বৃদ্ধিনিয়ন্ত্রক দ্রব্য (জিবারেলিক এসিড-GA3 ও ন্যাপথ্যালিন এসিটিক এসিড-NAA) ব্যাবহার করলে পুরুষ ফুলের সংখ্যা কমে যায় এবং স্ত্রী ফুলের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। GA3 ও NAA ব্যাবহারে প্রতিটি ফলের ওজনও বৃদ্ধি পায়।
এই কারণের করলা চাষে হরমোন প্রয়োগ করা হয়।
(২) হরমোন প্রয়োগে করলা চাষের পদ্ধতি ধারাবাহিক বর্ণনা
ক) উৎপাদন মৌসুম
বীজ বপনের সময় ফেব্রুয়ারি-মার্চ।
খ) জমি তৈরি ও বীজ বপন
- প্রথমে জমি ভালভাবে চাষ ও মই দিয়ে জমি প্রস্তুত করতে হবে।
- তারপর নির্দিষ্ট দূরত্বে মাদা তৈরি করতে হবে, মাদা ১৫ সে.মি. উঁচু হওয়া বাঞ্ছনীয়।
- পাশাপামি দুটো মাদার মধ্যে ২ মিটার দূরত্ব রাখতে হবে।
- করলার বীজের খোসা বেশী শক্ত বিধায় বপনের পূর্বে বীজ ২৪ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখলে অঙকুরোদগম তরান্বিত হয়।
- জিবারেলিক এসিড (GA3)এর ১০ পিপিএম দ্রবণে বীজ ১২-১৮ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখলে শতকরা ৯০ ভাগেরও বেশী অঙকুরোদগম হয়।
- বীজ সরাসরি মাদায় বপন করা যায়। প্রতি মাদায় ৫-৬ টি বীজ লাগাতে হয়। পরে মাদা প্রতি ২ টি চারা রেখে দিতে হয়।
- আবার বীজ পলিব্যাগে অথবা প্লাস্টিক পটে তৈরি করে নেয়া যায়। ২-৩ পাতা বিশিষ্ট চারা (১৪-১৬ দিন বয়স্ক) মাঠে প্রতি মাদায় ২ টি করে লাগাতে হয়।
- বীজ অথবা চারা সারি করেও লাড়ানো যায়। সারি থেকে সারির দূরত্ব হবে ২.০ মিটার এবয় চারা থেবে চারার দ্যরত্ব হবে ১.২ মিটার।
গ) বৃদ্ধিনিয়ন্ত্রক দ্রব্য, তার মাত্রা ও প্রয়োগ
ন্যাপথ্যালিন এসিটিক এসিড (NAA) করলার ফলন বৃদ্ধির জন্য খুবই কার্যকরী বৃদ্ধিনিয়ন্ত্রক দ্রব্য।
- ppm ১৫০-২০০ NAA নিদিষ্ট মাত্রায় নিদিষ্ট বয়সের চারায় স্প্রে করতে হবে।
- করলার চারা ১৪-১৫ দিন পরে ২ পাতা বিশিষ্ট হলে NAA প্রয়োগ করতে হবে।
- পরে চার থেকে ছয় দিন পরে একই হরে ঐ বৃদ্ধিনিয়ন্ত্রক দ্রব চারার পাতায় প্রয়োগ করতে হবে।
ঘ) সারের পরিমান ও প্রয়োগ পদ্ধতি
সারের নাম | পরিমান (প্রতি হেক্টর) |
গোবর/কম্পোস্ট | ৫ টন |
ইউরিয়া | ২৬০ কেজি |
ট্রিপল সুপার ফসফেট (টিএসপি) | ২০০ কেজি |
মিউরিয়েট অব পটাশ (এমওপি) | ১৬০ কেজি |
জিপসাম | ১১০ কেজি |
জিংকসালফেট | ১১ কেজি |
বোরিক এসিড | ১২ কেজি |
- গোবর/কম্পোস্ট, টিএসপি, জিপসাম, জিংকসালফেট ও বোরিক এসিড এর সবটুকু এবং ইউরিয়া ও এমওপি এ দুটি সারের তিনভাগের এক ভাগ মাদায় প্রয়োগ করতে হবে।
- বাকি ইউরিয়া ও এমওপি এ দুটি সার চারা লাগানোর ২০ দিন পর থেকে সমান ৪-৫ কিস্তিতে ২০ দিন পর পর মাদা (চারা)’র চারপাশে মাটির সাথে মিশিয়ে প্রয়োগ করতে হবে।
ঙ) অন্যান্য পরিচর্যা
- বাউনী দেয়া করলার প্রধান পরিচর্যা।
- বাধাহীনভাবে বাইতে না পারলে করলার গাছে ফলনশীলতার পূর্ণ বিকাশ ঘটে না। তাই করলায় বাউনী দেয়া প্রয়োজন।
- বাঁশ ও কঞ্চির সাহায্যে অথবা অন্য উপায়েও বাউনী দেয়া যেতে পারে।
চ) পোকামাকড় ও রোগবালাই দমন
- করলার গাছ চারা অবস্থায় রেড পামকিন বীটল ও এপিলাকনা বীটল দ্বারা আক্রান্ত হয়।
- এ পোকাদ্বয় দমনের জন্য সেভিন/কার্বারিল-৮৫ ডব্লিইপি ২ গ্রাম ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে গাছে ৭ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।
- গাছে ফল আসার সময় ফলের মাছি পোকার উপদ্রব মারাত্মক আকারে দেখা দেয়।
- সেক্স ফেরোমেন ও বিষটোপের যৌথ ব্যাবহারে এ পোকার অক্রমন থেকে ফসলকে রক্ষা করা যায়।
- বিষটোপের জন্য থেতলানো ১০০ গ্রাম মিষ্টি কুমড়ার সাথে ০.২৫ গ্রাম সেভিন/কার্বারিল-৮৫ ডব্লিইপি পাওডার মিশিয়ে ব্যাবহার করতে হয়।
- বিষটোপ ৩-৪ দিন পরপর পরিবর্তন করতে হয়।
- সেক্স ফেরোমেন স্ট্রিপ ‘কিউ ফেরো’ নামে বাজারে পাওয়া যায়।
- ফেরোমেন স্ট্রিপ ফাদে ঝুলিয়ে ফাদের নীচে সাবান মিশ্রিত পানি রাখলে ফেরোমেনের গন্ধে পুরুষ পোকা আকৃষ্ট হয়ে সাবান মিশ্রিত পানিতে পড়ে মারা যায়। এতে ফলের মাছি পোকার অক্রমন বহুলাংশে কমে যায়।
ছ) ফলনের ওপর বৃদ্ধিনিয়ন্ত্রক দ্রব্যের প্রভাব
- ন্যাপথ্যালিন এসিটিক এসিড (NAA) ব্যাবহার করলে পুরুষ ফুলের সংখ্যা কমে যায় এবং স্ত্রী ফুলের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। ফলশ্রুতিতে গাছপ্রতি ফলের সংখ্যা ও প্রতিটি ফলের ওজন বৃদ্ধি পায় এবং করলার ফলন বাড়ে।
- বৃদ্ধিনিয়ন্ত্রক দ্রব্য (গ্রোথ হরমোন) সঠিকভাবে প্রয়োগ করলে প্রতি করলা গাছে ফলের সংখ্যা ৩০-৩৫% কৃাদ্ধ পায়। এতে ফলন প্রায় ২৫%-৩০% বৃদ্ধি পায়।
জ) খরচ ও নিট মুনাফা
২০২৩ সালের হিসাব মতে, প্রতি হেক্টরে প্রায় ২.৩০ লক্ষ টাকা খরচ করে নিট মুনাফা প্রায় ৫ লক্ষ টাকা আয করা যায়। হেক্টর প্রতি ন্যাপথ্যালিন এসিটিক এসিড (NAA) বরে জন্য খরচ হয় ৫০০০.০০- ৬০০০.০ টাকা। প্রতি শতাংশে ১০০০.০০ টাকা খরচ করে ২০০০.০০ টাকা আয় করা সম্ভব।
(৩) জিবারেলিক এসিড প্রয়োগে করলার বীজের অঙ্কুরোদগম হার বৃদ্ধিকরন পক্রিয়া
বীজের মধ্যে ভ্রূন সুপ্ত অবস্থায় থাকে। প্রয়োজনীয় উপাদান পাইলে সমগ্র ভ্রূন বা কিছু অংশ বীজত্বক বিদীর্ণ করে অপরিনত উদ্ভিদের প্রকাশ ঘটায়। ভ্রূনের এ জাগরণকে অঙ্কুরোদগম বলে।
উদ্ভিদের জীবনে এ অঙ্কুরোদগম একটি গুরুত্বপূর্ন ধাপ। ফসলের মাঠে কাঙ্খিত পরিমাণ গাছ পাওয়ার ক্ষেত্রে বীজের অঙ্কুরোদগম অগ্রনী ভূমিকা পালন করে।
অঙ্কুরোদগমের ক্ষেত্রে বীজের পারিপার্শ্বিক অবস্থার গুরুত্ব অপরিসীম।
পারিপার্শ্বিক অবস্থার মধ্যে আছে কতগুলো বাহ্যিক এবং কতগুলো অভ্যন্তরীণ। বাহ্যিক উপাদানগুলোর মধ্যে রয়েছে পানি, অক্সিজেন, তাপমাত্রা ও আলো এবং অভ্যন্তরীণ উপাদানগুলোর মধ্যে রয়েছে বীজে সঞ্চিত খাদ্যেন পরিমান, বিভিন্ন ফাইটোহরমোন (যেমন-অক্সিন, জিবারেলিন, অ্যাবসিসিক এসিড), বীজের সুপ্তিকাল (Seed dormant period) এবং বীজের অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা।
ক) করলা বীজের অঙ্কুরোদগম সমস্যা
- করলার বীজত্বক পুরু হওয়ার কারনে ইমবিবিশন (Imbibition) প্রক্রিয়ায় বীজে পানির প্রবেশ ধীরগতিতে ঘটে। এর ফলে বীজের টারজিডিটি (Turgidity) বা রসস্ফিতী অবস্থা অর্জন দেরীতে হয়। এসব কারনে বীজের অঙ্কুরোদগম বিলম্বে ঘটে এবং মাঠে বীজ গজানোর হার কাঙ্খিত পরিমানে হয় না। প্রয়োজনীয সংখ্যক গাছের অভাবে করলার ফলন বহুলাংশে কমে যায় এবং কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
- অনেক সময় করলার বীজ শুকানোর পরে বীজে কাঙ্খিত পরিমান (৬-৮% আদ্রতা) এর চেয়ে বেশী পরিমান আদ্রতা (moisture) থাকার কারনে বা বীজ বেশী শুকিয়ে ফেললে বীজের গুণগত মান কমে যায়। এ সকল কারনে বীজের অঙ্কুরোদগম হার কম হয়।
- করলার বীজে অনেক সময় বিভিন্ন ফাইটোহরমোন বিশেয করে জিবারেলিক এসিড ও অ্যাবসিসিক এসিডের পরিমান ভারসাম্য অনুপাতে থাকে না। বীজ উৎপাদন প্রক্রিয়ায় হেরফের হলে অর্থাৎ করলার বীজ উৎপাদন নীতি সঠিকভাবে অনুসরন না করলে জিবারেলিক এসিড ও অ্যাবসিসিক এসিডের এরুপ অবস্থার সৃষ্টি হয়। এ কারনে বীজ গজায় না। মাঠে বপনের পর বীজ প্রতিকূল পরিবেশ অর্থাৎ স্ট্রেসের সম্মুখীন হলেও এর অঙ্কুরোদগম বিঘ্নিত হয়।
খ) অঙ্কুরোদগমে জিবারেলিক এসিডের প্রভাব
- জিবারেলিক এসিড বীজের কোষের অভিস্রবনিক চাপ বাড়িয়ে দেয়। ফলশ্রুতিতে বীজে পানি বাহিরের পরিবেশ থেকে দ্রত এবং পর্যাপ্ত পরিমানে প্রবেশ করে। পানি বীজত্বক নরম করতে ও একে সহজে বিদীর্ণ করতে সাহায্য করে। যথেষ্ট পরিমানে পানি বীজে প্রবেশ করার ফলে বীজের কোষ রসস্ফিতী লাভ করে যার ফলে ভ্রূন শক্ত হয়ে অঙ্কুরোদমের সময় বীজত্বক ভেদ করে অঙ্কুরোদম ঘটায়।
- জিবারেলিক এসিড মাঠে বীজ গজানোর হার, ভ্রূনের বৃদ্ধি ও চারার সতেজতা বাড়িয়ে দেয়। মাঠে কাঙ্খিত পরিমান করলা গাছের নিশ্চয়তা পায় কৃষক। ফলে তারা এ ফসলের কাঙ্খিত পরিমান ফলন লাভ করতে সক্ষম হয়।
- বীজ অভ্যন্তরস্থ জীবারেলিক এসিড ও অ্যাবসিসিক এসিডের পরিমানের ভারসাম্যতা বীজের অঙকুরোদগমকে প্রভান্বিত করে। উপযুক্ত পরিমান জিবারেলিক এসিডের উপস্থিতির কারনে আলফা অ্যামাইলেজ এনজাইম বীজের মধ্যে নুতনভাবে ইৎপন্ন হয়। আলফা অ্যামাইলেজের উপস্থিাতিতে বীজের স্টার্চ ভেঙ্গে গ্লুকোজে পরিণত হয়। গ্লুকোজ থেকে উৎপন্ন শক্তি (ATP) নিয়ে ভ্রূন বীজত্বক ভেদ করে বেরিয়ে আসে।
- বীজে এ্যাবসিসিক এসিড বেশী পরিমানে থাকলে জিবারেলিক এসিড কাজ করতে পারে না। ইহা আরএনএ (RNA) সংশ্লেষনে বাঁধা দেওয়ায় আলফা এ্যামাইলেজ এনজাইম তৈরি হতে পারে না। ফলে এ এনজাইমের অভাবে স্টার্চ ভেঙ্গে গ্লুকোজে পরিণত হতে না পারায় অঙকুরোদগমের সময় শক্তির অভাবে ভ্রূনের বৃদ্ধি হতে পারে না বিধায় অঙ্কুরোদগম ব্যহত হয়।
- বীজ গজানোর সক্ষমতা জিবারেলিক এসিড ও অ্যাবসিসিক এসিডের ভারসাম্যপূর্ণ অর্থাৎ তুলনামুলক পরিমানের উপর নির্ভর করে। যখন জিবারেলিক এসিড ও অ্যাবসিসিক এসিডের পরিমানের অনুপাত ১ বা এর চেয়ে কম হয় তখন বীজ অঙকুরোদগমে ব্যর্থ হয়। জিবারেলিক এসিড ও এ্যাবসিসিক এসিডের পরিমানের অনুপাত ১ এর চেয়ে বেশী হলেই বীজ অঙকুরোদগমে সক্ষম হয়।
- জিবারেলিক এসিড প্রয়োগে উৎপন্ন চারা হৃষ্টপুষ্ট হয়, কখনও বিকৃত হয় না। এ সব চারা থেকে সবল গাছ জন্মায় এবং ফলন বেশী পাওয়া যায়।
গ) জিবারেলিক এসিডের উৎস এবং এর দ্রবনের ঘনত্ব
- উৎকৃষ্ট মানের জিবারেলিক এসিড নামকরা কোম্পানির হতে হবে। ভালো কোম্পানির মধ্যে মার্ক (জার্মানি), সিগমা-অ্যালড্রিস (ইউএস) ও বিডি (ইংল্যান্ড) উল্লেখযোগ্য।
- জিবারেলিক এসিডের ১০ পিপিএম ঘনত্বের দ্রবন বীজ ভেজানোর জন্য ব্যবহার করতে হবে।
ঘ) জিবারেলিক এসিডের মূল দ্রবন প্রস্তুত প্রনালী
- উৎকৃষ্ট মানের জিবারেলিক এসিড সংগ্রহ করে এর ১ গ্রাম ১ লিটার পানিতে দ্রবীভূত করতে হবে।
- জিবারেলিক এসিড পানিতে দ্রবীভূত হয় না বিধায় ইথাইল অ্যালকোহল দ্রবনে দ্রভীভূত করে নিতে হয়।
- প্রথমে প্রয়োজনীয় পরিমান ইথাইল অ্যালকোহল নিয়ে এর মধ্যে ১ গ্রাম জিবারেলিক এসিড ভালোভাবে মিশিয়ে দ্রবীভূত করতে হবে।
- পরে ঐ পাত্রে প্রয়োজনীয় পরিমান পানি যোগ করে ১ লিটার পুরা করলেই জিবারেলিক এসিডের ১০০০ পিপিএম দ্রবন প্রস্তুত হবে। এটাই মূল দ্রবন।
- জিবারেলিক এসিড দ্রবীভূত করার ক্ষেত্রে ইথাইল অ্যালকোহলের পরিবর্তে সোডিয়াম হাইড্রক্সাইডও ব্যবহার করা যায়। বাজারে দানাদার সোডিয়াম হাইড্রক্সাইড কিনতে পাওয়া যায়।
- ১ লিটার বা এর চেয়ে বেশী পানি ধরে এমন পাত্রে অল্প পানি নিয়ে এর মধ্যে ১ গ্রাম জিবারেলিক এসিড ঢালতে হবে।
- পরে সোডিয়াম হাইড্রক্সাইডের ৩-৪টি দানা এ পাত্রে নিয়ে ভালোভাবে নেড়ে জিবারেলিক এসিড মিশিয়ে নিতে হবে।
- আগের মতো ঐ পাত্রে প্রয়োজনীয় পরিমান পানি যোগ করে ১ লিটার পুরা করলেই জিবারেলিক এসিডের ১০০০ পিপিএম দ্রবন প্রস্তুত হবে।
- অনেক সময় অল্প পরিমান বীজের জন্য অল্প পরিমান দ্রবনের প্রয়োজন হতে পারে। এ ক্ষেত্রে ১০০০ পিপিএম জিবারেলিক এসিডের দ্রবন তৈরির জন্য ১০০ মিলি লিটার পানিতে ১০০ মিলিগ্রাম জিবারেলিক এসিড মিশাতে হবে।
- ১০ মিলি পানিতে ১০ মিলিগ্রাম জিবারেলিক এসিড মিশ্রিত করলেও জিবারেলিক এসিডের ১০০০ পিপিএম দ্রবন তৈরি হবে।
ঙ) মূল দ্রবন থেকে জিবারেলিক এসিডের ১০ পিপিএম দ্রবন প্রস্তুত প্রনালী
এক হেক্টর জমিতে ৮-১০ কেজী করলার বীজ প্রয়োজন হয়। এ হিসেবে এক একর জমিতে রোপনের জন্য ৩-৪ করলার বীজ প্রয়োজন হবে।
উদারণস্বরূপ,
৪ কেজি বীজ ভেজানোর জন্য ৫ লিটার পানি লাগবে। তাহলে আমাদের মূল দ্রবন (যার ঘনত্ব ১০০০ পিপিএম) থেকে ১০ পিপিএম ঘনত্বের ৫ লিটার দ্রবন তৈরি করে নিতে হবে।
এখন আমাদের ১০ পিপিএম ঘনত্বের ৫ লিটার দ্রবন তৈরির জন্য কতটুকু মূল দ্রবন লাগবে সেটা আমাদের বের করে নিতে হবে।
এটা নির্ণয়ের জন্য আমাদেরকে নিম্নের সূত্র ব্যবহার করতে হবে।
সূত্রটি হলো, S1 x V1 = S2 x V2
এখানে,
S1 = মূল দ্রবনের ঘনত্ব, ১০০০ পিপিএম।
V1 = মূল দ্রবনের আয়তন যা আমাদেরকে বের করতে হবে।
S2 = কাঙ্খিত জিবারেলিক এসিডের ঘনত্ব, ১০ পিপিএম।
V2 = ৫ লিটার (৫০০০ মিলি) দ্রবন যা আমাদের প্রয়োজন।
অতএব, আমরা পাই,
V1 = (S2 x V2)/S1
V1 = (১০ x ৫০০০)/১০০০
V1 = ৫০ মিলি
এখন,
জিবারেলিক এসিডের মূল দ্রবন থেকে ৫০ মিলি লিটার দ্রবন নিয়ে ৫ লিটার অথবা তার অধিক ধারন ক্ষমতা সম্পন্ন পাত্রে নিতে হবে। পরে পাত্রের বাকী অংশ বাড়তি পানি (৪৫০ মিলিলিটার) দ্বারা পূর্ণ করে নিলেই ১০ পিপিএম জিবারেরিক এসিডের দ্রবন পাওয়া যাবে।
মূল দ্রবন থেকে বীজের পরিমান অনুসারে যতটুকু পানির প্রয়োজন হবে তার ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পরিমান ১০ পিপিএম দ্রবন উপরের নিয়মে প্রস্তুত করে নেওয়া যায়।
চ) জিবারেলিক এসিডের দ্রবনে বীজ ভেজানোর পদ্ধতি
- ৫ লিটার অথবা তার অধিক ধারন ক্ষমতা সম্পন্ন পাত্রে ৩-৪ কেজী বীজ নিয়ে তার মধ্যে ১০ পিপিএম জিবারেলিক এসিডের প্রয়োজন মত দ্রবন নিয়ে ১২-১৮ ঘন্টা বীজ ভিজিয়ে রাখার পর দ্রবন থেকে উঠিয়ে ভেজা বীজ রৌদ্রে না শুকিয়ে
ছায়ায় শুকিয়ে নিতে হবে। - পরবর্তীতে ছায়ায় শুকানো বীজ মাঠে মাদায় রোপন করতে হবে অথবা পলিভ্যাগে বসিয়ে চারা তৈরি কওে নিতে হবে।
[সূত্র: বিএআরআই]