আমরা জানি ভুট্টা (বৈজ্ঞানিক নাম Zea mays) একপ্রকারের খাদ্য শস্য বা দানা ফসল।
এই শস্যটির আদি উৎপত্তিস্থল মেসো-আমেরিকা। ইউরোপীয়রা আমেরিকা মহাদেশে পদার্পণ করার পর এটি পৃথিবীর অন্যত্র ছড়িয়ে পড়ে।
ধান ও গমের তুলনায় ভুট্টার পুষ্টিমান বেশি। এতে প্রায় ১১% আমিষ জাতীয় উপাদান রয়েছে। আমিষে প্রয়োজনীয় এ্যামিনোএসিড, ট্রিপটোফ্যান ও লাইসিন অধিক পরিমানে আছে। এছাড়া হলদে রংয়ের ভুট্টা দানায় প্রতি ১০০ গ্রামে প্রায় ৯০ মিলিগ্রাম ক্যারোটিন বা ভিটামিন ‘এ’ থাকে।
ভুট্টার দানা মানুষের খাদ্য হিসেবে এবং ভুট্টার গাছ ও সবুজ পাতা উন্নত মানের গোখাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। হাঁস-মুরগি ও মাছের খাদ্য হিসেবেও এর যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছ। শুধু পশু, মুরগির খামার ও মাছের চাহিদা মিটানোর জন্যই বছরে প্রায় ২ লক্ষ ৭০ হাজার টন ভুট্টা দানা প্রয়োজন।
বেলে দোআশ ও দোআশ মাটি ভুট্টা চাষের জন্য উপযোগী। তবে লক্ষ্য রাখতে হয় যেন জমিতে পানি জমে না থাকে। জুমচাষেও ভুট্টার আবাদ হয়।
(১) হাইব্রিড ভুট্টা চাষের জন্য জাত নির্বাচন
বারি হাইব্রিড ভুট্টা-৫: আমিষ সমৃদ্ধ উচ্চ ফলনশীল হাইব্রিড জাত যা ২০০৪ সালে অনুমোদন করা হয়। এ জাতটির জীবনকাল রবি মৌসুমে ১৪০-১৪৫ দিন ও খরিপ মৌসুমে ৯৫-১০৫ দিন। জাতটির দানা উজ্জ্বল আকর্ষণীয় কমলা রঙের, ফ্লিন্ট প্রকৃতির এবং হাজার দানার ওজন ২৯০-৩১০ গ্রাম। হেক্টরপ্রতি ফলন রবি মৌসুমে ৯-১০ টন এবং খরিফ মৌসুমে ৭-৭.৫ টন।
বারি হাইব্রিড ভুট্টা-৭: আন্তর্জাতিক গম ও ভুট্টা উন্নয়ন কেন্দ্র হতে সংগ্রহীত ও বাছাইকৃত পিতৃ-মাতৃ লাইন হতে একমুখী সংকরায়ণ করে এ জাতটি উদ্ভাবিত হয়েছে এবং ২০০৬ সালে অবমুক্ত করা হয়। এ জাতটির জীবনকাল রবি মৌসুমে ১৩৫-১৪১ দিন ও খরিপ মৌসুমে ৯৫-১০০ দিন। জাতটির দানা আকর্ষণীয় হলুদ রঙের, ফ্লিন্ট প্রকৃতির এবং হাজার দানার ওজন ৩৭০-৩৯০ গ্রাম। হেক্টরপ্রতি ফলন রবি মৌসুমে ১০.৫-১১.৫ টন।
বারি হাইব্রিড ভুট্টা-৯: আন্তর্জাতিক গম ও ভুট্টা উন্নয়ন কেন্দ্র হতে সংগ্রহীত ও বাছাইকৃত পিতৃ-মাতৃ লাইন হতে একমুখী সংকরায়ণ করে এ জাতটি উদ্ভাবিত হয়েছে এবং ২০০৭ সালে অবমুক্ত করা হয়। এ জাতটির জীবনকাল রবি মৌসুমে ১৪৫-১৫০ দিন ও খরিপ মৌসুমে ১০৫-১১০ দিন। জাতটির দানা আকর্ষণীয় হলুদ রঙের, ডেন্ট প্রকৃতির এবং হাজার দানার ওজন ৩৭০-৩৭৫ গ্রাম। হেক্টরপ্রতি ফলন রবি মৌসুমে ১১.৫-১২.৫ টন।
বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১০: আন্তর্জাতিক গম ও ভুট্টা উন্নয়ন কেন্দ্র হতে সংগ্রহীত ও বারির নিজস্ব উদ্ভাবিত ইনব্রিড লাইনের সংকরায়ণ করে এ জাতটি উদ্ভাবিত হয়েছে এবং ২০০৯ সালে অবমুক্ত করা হয়। এ জাতটির জীবনকাল রবি মৌসুমে ১৪৫-১৫০ দিন ও খরিপ মৌসুমে ১০০-১১০ দিন। জাতটির দানা আকর্ষণীয় হলুদ রঙের, ফ্লিন্ট প্রকৃতির। হেক্টরপ্রতি ফলন রবি মৌসুমে ১০-১১.৫ টন।
বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১১: আন্তর্জাতিক গম ও ভুট্টা উন্নয়ন কেন্দ্র হতে সংগ্রহীত ও বাছাইকৃত পিতৃ-মাতৃ লাইন হতে একমুখী সংকরায়ণ করে এ জাতটি উদ্ভাবিত হয়েছে এবং ২০০৯ সালে অবমুক্ত করা হয়। এ জাতটির জীবনকাল রবি মৌসুমে ১৫০-১৫৫ দিন। জাতটির দানা হলুদ রঙের, ফ্লিন্ট প্রকৃতির। হেক্টরপ্রতি ফলন রবি মৌসুমে ১০.৫-১১.৫ টন।
বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১২: স্বল্প সেচে উৎপাদনক্ষম এবং মধ্যমাত্রার খরা সহিষ্ণু উচ্চ ফলনশীল সাদা দানা বিশিষ্ট ফ্লিন্ট প্রকৃতির জাত। এটি ২০১৬ সালে অবমুক্ত করা হয়। এ জাতটির জীবনকাল রবি মৌসুমে ১৪০-১৪৫ দিন। খরা অবস্থায় একটি মাত্র সেচ প্রয়োগে (ফল আসার আগে) জাতটির ফলন হেক্টরপ্রতি ৮.১-৮.৫ টন এবং স্বাভাবিক সেচ প্রয়োগে ফলন হেক্টরপ্রতি ১০-১১.১ টন।
বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১৩: স্বল্প সেচে উৎপাদনক্ষম এবং মধ্যমাত্রার খরা সহিষ্ণু উচ্চ ফলনশীল সাদা দানা বিশিষ্ট ফ্লিন্ট প্রকৃতির জাত। এটি ২০১৬ সালে অবমুক্ত করা হয়। এ জাতটির জীবনকাল রবি মৌসুমে ১৪৫-১৫২ দিন। খরা অবস্থায় একটি মাত্র সেচ প্রয়োগে (ফল আসার আগে) জাতটির ফলন হেক্টরপ্রতি ৮.২-৮.৯ টন এবং স্বাভাবিক সেচ প্রয়োগে ফলন হেক্টরপ্রতি ১০.১-১১.২ টন। মোচা পরিপক্ক হওয়ার পরও জাতটির গাছ ও পাতা সবুজ থাকে যা গো-খাদ্য হিসাবে ব্যবহারের উপযোগী।
বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১৪: জাতটি খরিফ মৌসুমে ফুল আসার পর্যায়ে অধিক তাপ সহিষ্ণু এবং মধ্যম ফলন ক্ষমতা সম্পন্ন। এটি ২০১৭ সালে অবমুক্ত করা হয়। এ জাতটির জীবনকাল রবি মৌসুমে ১৪০ দিন এবং খরিফ মৌসুমে ১১৫ দিন। জাতটি দানা সাদা বর্ণের এবং সেমি ডেন্ট প্রকৃতির। জাতটি পাতা ঝলসানো রোগ সহনশীল। হেক্টরপ্রতি গড় ফলন রবি মৌসুমে ১০.৮৪ টন এবং খরিফ মৌসুমে ১০.৫২ টন।
বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১৫: জাতটি খরিফ মৌসুমে ফুল আসার পর্যায়ে অধিক তাপ সহিষ্ণু এবং উচ্চ ফলন ক্ষমতা সম্পন্ন। এটি ২০১৭ সালে অবমুক্ত করা হয়। এ জাতটির জীবনকাল রবি মৌসুমে ১৪৮ দিন এবং খরিফ মৌসুমে ১২১ দিন। জাতটির দানা হলুদ বর্ণের এবং সেমি ডেন্ট প্রকৃতির। জাতটি পাতা ঝলসানো রোগ সহনশীল। হেক্টরপ্রতি গড় ফলন রবি মৌসুমে ১২.৭৫ টন এবং খরিফ মৌসুমে ১২.০৭ টন। পরিপক্ক অবস্থায় জাতটির বেশির ভাগ পাতা সবুজ থাকে বিধায় গো-খাদ্য হিসাবে ব্যবহার উপযোগী।
বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১৬: রবি মৌসুমে পরিপক্ক হতে ১৪০-১৪৫ দিন সময় লাগে। গাছ খাটো আকৃতির (১৮০-১৯০ সে.মি.) এবং মোচার উচ্চতা (৮০-৮৫ সে.মি.)। রবি মৌসুমে গাছে ৮৮ দিনে সিল্ক বের হয়, সিল্কের রং কিছুটা বেগুনী। মোচা গুলো সম্পূর্ণভাবে অগ্রভাগ পর্যন্ত খোসাদ্বারা আবৃত থাকে। দানার রং হলুদ এবং দানা সেমি-ডেন্ট প্রকৃতির, পুষ্ট ও বড় এবং সম্পূর্ণ মোচা দানা দ্বারা আবৃত থাকে। মোচা পরিপক্ক অবস্থায়ও গাছ ও পাতা সবুজ থাকে। হাজার দানার ওজন ৪২২ গ্রাম এবং প্রতি মোচায় গড়ে ৬৩২ টি দানা থাকে। জাতটি লবণাক্ততা সহিষ্ণু। সমগ্র বাংলাদেশেই জাতটি আবাদের উপযোগী। রবি মৌসুমে ১১.৫৭ টন/হেক্টর এবং লবনাক্ত এলাকায় (৮ ডিএস/মি) ৭.০৬ টন/হেক্টর ফলন দিতে সক্ষম।
বারি হাইব্রিড ভুট্টা–১৭: জাতটি খরিপ মৌসুমে ফুল আসার পর্যায়ে অধিক তাপ সহিষ্ণু (দিনের তাপমাত্রা ৩৫ডিগ্রি সে. এবং রাতের তাপমাত্র ২৩ ডিগ্রি সে.)। রবি ও খরিপ মৌসুমে পরিপক্ক হতে যথাক্রমে১৪০-১৫০ দিন ও ১১০-১১৫ দিন সময় লাগে। রবি ও খরিপ মৌসুমে জাতটির উচ্চতা যথাক্রমে ২২০-২৩০ সে.মি. ও ১৭০-১৮০ সে.মি.। জাতটির দানা হলুদ বর্ণের এবং সেমি ডেন্ট প্রকৃতির। মোচার মাথায় সিল্কে হাল্কা এন্থোসায়ানিন বিদ্যমান। টাসেল গ্লুমে গাঢ় এন্থোসায়ানিন এবং টাসেলের প্রশাখার অগ্রভাগ বাকানো প্রকৃতির। মোচা শক্তভাবে খোসা দ্বারা আবৃত থেকে বিধায় বৃষ্টির পানিতে দানা নষ্ট হবার সম্ভাবনা কম। এই হাইব্রিড জাতটি বাংলাদেশে খরিপ মৌসুমে এবং অধিকতাপ প্রবণ এলাকায় ভুট্টার উৎপাদন ও চাষাবাদ বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে। বি ও খরিপ মৌসুমে জাতটির গড় ফলন যথাক্রমে ১১.০-১২.০ টন/হেক্টর এবং ৮.৫-৯.৫ টন/হেক্টর।
বারি মিষ্টি ভুট্টা-১: থাইল্যান্ড থেকে সংগৃহীত জার্মপ্লাজম হতে বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এ জাতটি নির্বাচন করা হয় এবং ২০০২ সালে অনুমোদিত হয়। মিষ্টি ভুট্টা কাঁচা অবস্থায় খাওয়া হয়। তাই দানা যখন নরম থাকে তখনই মোচা সংগ্রহ করতে হয়। সিল্ক বের হবার ২০-২৫ দিনের মধ্যে অর্থাৎ বপনের মাত্র ১১৫-১২০ দিনে খাওয়ার উপযোগী মোচা সংগ্রহ করা যায়। এর হলুদ দানা প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-এ সমৃদ্ধ। জাতটির ফলন রবি মৌসুমে হেক্টরপ্রতি ১০-১০.৫ টন (খোসা ছাড়ানো কচি মোচা) এবং প্রায় ২৫টন/হেক্টর সবুজ গো-খাদ্য পাওয়া যায়।
বিডাব্লিউএমআরআই হাইব্রিড ভুট্টা-১: খাটো প্রকৃতির হাইব্রিড যার মোচা তুলনামূলকভাবে নিচের দিকে অবস্থিত হওয়ায় ঝড়-বাতাসে সহজে হেলে ও ভেঙ্গে পড়ে না। গাছের উচ্চতা ১৬৫-১৮০ সে.মি. ও মোচার উচ্চতা ৬৫-৭৫ সে.মি.। সিল্কে মধ্যম মাত্রায় অ্যান্থোসায়ানিন বিদ্যমান। সিল্কের রং হালকা গোলাপী বর্ণের। জাতটির দানা হলুদ বর্ণের এবং সেমি ডেন্ট প্রকৃতির। দানাগুলো পুষ্ট ও বড় আকৃতির (১০০০ দানার ওজন ৩৮৫ গ্রাম)। মোচার অগ্রভাগ পর্যন্ত খোসা দ্বারা শক্তভাবে আবৃত থাকায় বৃষ্টির পানিতে নষ্ট হবার সম্ভাবনা কম থাকে। সমগ্র বাংলাদেশেই জাতটি আবাদের উপযোগী। এটি ভুট্টার উচ্চ ফলনশীল জাত। রবি মৌসুমে উপযুক্ত পরিবেশে হেক্টর প্রতি ফলন ১১.০-১৩.০ টন।
বিডাব্লিউএমআরআই হাইব্রিড ভুট্টা-২: গাছের উচ্চতা ২২০-২৪০ সে.মি. ও মোচার উচ্চতা ১০০-১৩০ সে.মি.। সিল্কের অ্যান্থোসায়ানিন না থাকায় হালকা সবুজবর্ণের হয়ে থাকে। জাতটির দানা হলুদ বর্ণের এবং ডেন্ট প্রকৃতির। দানাগুলো পুষ্ট ও বড় আকৃতির ১০০০ দানার ওজন ৪০০-৪৬০ গ্রাম। মোচার অগ্রভাগ পর্যন্ত খোসা দ্বারা শক্তভাবে আবৃত থাকায় বৃষ্টির পানিতে নষ্ট হবার সম্ভাবনা কম থাকে। সমগ্র বাংলাদেশেই জাতটি আবাদের উপযোগী। এটি ভুট্টার উচ্চ ফলনশীল জাত। রবি মৌসুমে উপযুক্ত পরিবেশে হেক্টর প্রতি ফলন ১২.০-১৪.০ টন।
বিডাব্লিউএমআরআই হাইব্রিড বেবিকর্ণ-১: গাছে সংগ্রহ উপযোগী প্রথম বেবি মোচা গড়ে ৯৭ দিনে এবং বাকি মোচাগুলোও পরবর্তী ৭ দিনের মধ্যেই সংগ্রহ করা যায়। রবি মৌসুমে গাছ ও মোচার উচ্চতা যথাক্রমে ১৭০-১৮৫ সে.মি. এবং ৭০-৭৫ সে.মি.। প্রতিটি গাছ থেকে ৩-৪ টি কচি মোচা পাওয়া যায় যাদের মোট ওজন ৩৪.৪ গ্রাম। বেবিমোচার সিল্কের রং মাঝারী গোলাপী বর্ণের, খোসা ছাড়ানো কচি মোচা হলুদ থেকে ক্রীম বর্ণের। কচি মোচা সংগ্রহের সময় গাছ ও পাতা সবুজ অবস্থায় থাকে বিধায় সম্পূর্ন গাছকে সবুজ গো-খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যায়। কর্ণের TSS এর পরিমাণ ১২.২ ব্রিক্স। সমগ্র বাংলাদেশেই জাতটি আবাদের উপযোগী।রবি মৌসুমে হেক্টর প্রতি অপরিপক্ক বা কচি খোসা ছাড়ানো মোচার ফলন ২.৩০-২.৬৫ টন। জাতটি থেকে হেক্টর প্রতি ৪১.৩-৪৪.০ টন সবুজ গো-খাদ্য পাওয়া যায়।
(২) বিনা চাষ ও উপযুক্ত সেচের মাধ্যমে হাইব্রিড ভুট্টা চাষ পদ্ধতি
ভুট্টা বাংলাদেশের একটি সম্ভাবনাময় ও লাভজনক ফসল। বন্যার পানি দেরিতে নামলে সে জমিতে ধান চাষ করা সম্ভব হয় না কিন্তু এই প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে অল্প সময়ের মধ্যে ভুট্টা চাষ করা যায়।
সাধারণত মাঝারী উঁচু বা মাঝারী নিচু জমি এজন্য বেশি উপযুক্ত।
এই প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে একদিকে যেমন উৎপাদন খরচ কম হয়, অন্য দিকে মাটির ভৌত গুণাবলী ঠিক রাখা যায়।
হাইব্রিড ভুট্টার উৎপাদনের জন্য অধিক সেচের প্রয়োজন হয়। সাধারণত চারটি সেচের মাধ্যমে ভুট্টা উৎপাদন করা হয়। এই প্রযুক্তির ক্ষেত্রে ছয়টি সেডের প্রয়োজন হয়। সেচের খরচ বেশি হলেও চাষের খরচ না থাকায় এটি লাভজনক।
বিষয় | বিবরণ |
ফসল | ভূট্টা |
জাত | বারি হাইব্রিড ভুট্টা-৫ |
জমি ও মাটি | মাঝারী উঁচু বেলে মাঝারী বেলে-আঁশ মাটি |
বপন সময় | মধ্য-আশ্বিন থেকে মধ্য-অগ্রাহায়ণ |
সার প্রয়োগ পদ্ধতি | সকল সার (জৈব ও অজৈব) এবং তিন ভাগের এক ভাগ ইউরিয়া জমি শেষ চাষের সময় বাকি ইউরিয়া সমান ২ ভাগে চারা গজানের ৩০ এবং ৬০ দিন পর ভুট্টার সারির পাশে প্রয়োগ করতে হবে। |
সেচ প্রয়োগ | বীজ ২য় সপ্তাহ থেকে ফাল্গুনের ২য় সপ্তাহ |
ফসল সংগ্রহ | দানার জন্য ভুট্টা সংগ্রহের ক্ষেত্রে মোচা চক্চক্ খড়ের রং ধারণ করলে এবং পাতা কিছুটা হলদে হলে সংগ্রহের উপযুক্ত হয়। এ অবস্থায় মোচা থেকে ছড়ানো বীজের গোড়ায় কালো দাগ দেখা যাবে। ভুট্টা গাছের মোচা ৭৫-৮০% পরিপক্ক হলে ভুট্টা সংগ্রহ করা যাবে। বীজ হিসেবে মোচার মাঝামাঝি অংশ থেকে বড় ও পুষ্ট দানা সংগ্রহ করতে হবে। |
ফলন | ১০-১২ টন/হেক্টর |
সারের নাম | পরিমাণ |
ইউরিয়া | ৫৪৩ কেজি/হেক্টর |
টিএসপি | ২৭৫ কেজি/হেক্টর |
এমপি | ২০০ কেজি/হেক্টর |
জিপসাম | ২২২ কেজি/হেক্টর |
জিংক সালফেটমনোহাইড্রেট | ১৪ কেজি/হেক্টর |
বরিক এসিড | ১২ কেজি/হেক্টর |
গোবর (টন/হেক্টর) | ৬ কেজি/হেক্টর |
(৩) গুটি ইউরিয়া সার ব্যবহার করে হাইব্রিড ভুট্টা চাষ পদ্ধতি
ইউরিয়া সারের অপচয় সর্বাধিক। প্রয়োগকৃত ইউরিয়া সারের মাত্র শতকরা ২৫-৩০ ভাগ ফসলের কাজে লাগে। বাকি ইউরিয়া সার চুয়ানো ও উদ্ধায়নের মাধ্যমে অপচয় হয়।
গুটি ইউরিয়া একটি ধীর গতি সম্পন্ন ও সুষম মাত্রায় নাইট্রোজেন সরবরাহকারী সার যা গাছ চাহিদা মাফিক ও প্রয়োজনীয় নাইট্রোজেন গ্রহণ করতে পারে। এর ফলে সারের কার্যকারিতাও বৃদ্ধি পায়।
ইউরিয়া সারের ন্যায় ৩টি ইউরিয়ার উপরি প্রয়োগের প্রয়োজন পড়ে না ফলে সময় ও অর্থের সাশ্রয় হয়। জমিতে আগাছার উপদ্রব হয় না এবং পরিবেশ দূষণমুক্ত থাকে।
সর্বোপরি গুটি ইউরিয়া ব্যবহার করলে সাধারণ সারের তুলনায় ১০-২০% ইউরিয়া সার কম লাগে। ইউরিয়া সারের জন্য বায়িত অর্থের ১০-২০% সাশ্রয় হয়।
এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট এর সরেজমিন গবেষণা বিভাগ কয়েকটি কৃষি পরিবেশ অঞ্চলে ভুট্টার ওপর গুটি ইউরিয়ার প্রভাব নিয়ে গবেষণা করে। এতে ১০% কম সারেই আশানুরূপ ফলন পাওয়া যায়। এতে কৃষক আর্থিকভাবে লাভবান হয়।
চাষ পদ্ধতি
বিষয় | উৎপাদন প্রযুক্তি |
ফসল | হাইব্রিড ভূট্টা |
জাত | বারি হাইব্রিড ভূট্টা ৫/এন কে ৪০ |
বপন দূরত্ব | ৭৫ সেমি x ২৫ সেমি |
বপন কাল | নভেম্বর মাস |
গুটি ইউরিয়া প্রয়োগ পদ্ধতি | গুটি ইউরিয়া ছাড়া অন্যান্য সব সার জমিতে সমান মাটির সাথে মিশিয়ে উত্তমরূপে আমি বস্তুত করতে হবে। গুটি ইউরিয়া বপনের ১৫-২০ দিন পর গোড়া থেকে ৮-১০ সেমি দূরত্বে এবং ৭-৮ সেমি মাটির গভীরে ভূট্টার সারির উভয় পার্শ্বে প্রয়োগ করতে হবে। |
সারের নাম ও পরিমাণ
অঞ্চল ভিত্তিক সারের মাত্রা | গুটি ইউরিয়া (হেক্টর প্রতি কেজিতে) | টিএসপি (হেক্টর প্রতি কেজিতে) | এমপি (হেক্টর প্রতি কেজিতে) | জিপসাম (হেক্টর প্রতি কেজিতে) |
টাংগাইল (কৃষি পরিবেশ অঞ্চল-৮) | ৪৮৫ | ২৫০ | ১৮০ | ১৯০ |
রাজশাহী (কৃষি পরিবেশ অঞ্চল-২৫) | ৩৮০ | ২০০ | ২৮০ | ১৪০ |
পাবনা (কৃষি পরিবেশ অঞ্চল-১১) | ৪৮৫ | ২০০ | ১৬০ | ১৬৫ |
রংপুর (কৃষি পরিবেশ অঞ্চল-৩) | ৫৪০ | ২০০ | ১৬০ | ১৬৫ |
কুমিল্লা (কৃষি পরিবেশ অঞ্চল-১৯) | ৪৮৫ | ২০০ | ১৪০ | ১৪০ |
(৪) হাইব্রিড ভুট্টা চাষ পদ্ধতিতে বোরন সারের প্রভাব
বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে ভুট্টা দানা গঠিত না হওয়ার কারণসমূহ সরেজমিনে পরিদর্শন করে মাটি ও গাছ পরীক্ষার মাধ্যমে বোরনের ঘাটতি পরিলক্ষিত হয়। মাটিতে বোরনের অপ্রাপ্যতার কারণে ভুট্টার নানাহীন বা কম দানাযুক্ত মোচা উৎপন্ন হয়। নানা ভালভাবে পুষ্ট হয় না ও দানা ছোট হয়। এতে ভুট্টার ফলন হ্রাস পায়।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট এর সরেজমিন গবেষণা বিভাগ, রংপুর এলাকায় গবেষণার মাধ্যমে দেখা যায় যে, অনুমোদিত মাত্রায় অন্যান্য সারের সাথে হেক্টরপ্রতি ২ কেজি বোরন প্রয়োগ করলে হাইব্রিড ভুট্টার ফলন দ্বিগুণ পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। এতে কৃষকগণ আর্থিকভাবে লাভবান হয়।
চাষ পদ্ধতি
বিষয় | উৎপাদন প্রযুক্তি |
ফসল | হাইব্রিড ভূট্টা |
জাত | বারি হাইব্রিড ভূট্টা-৫ |
বপন দূরত্ব | ৭৫ সেমি x ২৫ সেমি |
বপন কাল | ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ |
সার প্রয়োগ পদ্ধতি | জমি চাষের পূর্বে সব গোবর দিয়ে ভালভাবে চাষ করতে হবে। ইউনিয়নের এক স্বীয়াংশ ও অন্যান্য সব সার শেষ চাষের সময় প্রয়োগ করতে হবে। বাকি ইউরিয়া সমান দুই ভাগ করে চারার ৮-১০ পাতা পর্যায়ে বা বীজ গজানোর ৩০-৩৫ দিন পর প্রথম ভাগ এবং দ্বিতীয় ভাগ ফুল আসার আগে গোড়ায় লাইন বরাবর প্রয়োগ করতে হবে। |
বোরন সার প্রয়োগ ছাড়া ফলন | ৫.৪ টন/হেক্টর |
বোরন প্রয়োগে ফলন | ১০.৪ টন/হেক্টর |
সারের নাম ও পরিমাণ
সারের নাম | পরিমাণ |
ইউরিয়া সার | ৫০০-৫৫০ কেজি/হেক্টর |
টিএসপি সার | ২৪০-২৬০ কেজি/হেক্টর |
এমপি | ১৮০-২২০ কেজি/হেক্টর |
জিপসাম | ২৪০-২৬০ কেজি/হেক্টর |
জিংক সালফেট | ১০-১৫ কেজি/হেক্টর |
বোরিক এসিড | ১২ কেজি/হেক্টর |
গোবর | ৩-৪ টন/হেক্টর |
(৫) হাইব্রিড ভুট্টা চাষে রোগ ব্যবস্থাপনা
ক) ভুট্টার বীজ পচা এবং চারা গাছের রোগ দমন
বীজ পচা এবং চারা নষ্ট হওয়ার কারণে সাধারণত ক্ষেতে ভুট্টা গাছের সংখ্যা কমে যায়।
নানা প্রকার বীজ ও মাটি বাহিত ছত্রাক যেমন পিথিয়াম, রাইজোকটনিয়া, ফিউজেরিয়াম, পেনিসিলিয়াম ইত্যাদি বীজ বপন, চারা ঝলসানো, রোগ ও শিকড় পচা রোগ ঘটিয়ে থাকে।
জমিতে রসের পরিমান বেশী হলে এবং মাটির তাপমাত্রা কম থাকলে বপনকৃত বীজের চারা বড় হতে অনেক সময় লাগে। ফলে এ সময়ে ছত্রকের আক্রমনের মাত্রা বেড়ে যায়।
প্রতিকার:
- সুস্থ্য, সবল ও ক্ষতমুক্ত বীজ এবং ভুট্টার বীজ পচা রোগ প্রতিরোধী বর্ণালী ও মোহর জাত ব্যবহার করতে হবে।
- উত্তমরূপে জমি তৈরী করে পরিমিত রস ও তাপমাত্রায় (১৩সে. এর বেশী) বপন করতে হবে।
- থিরাম বা ভিটাভেক্স (০.২৫%) প্রতি কেজি বীজে ২.৫-৩.০ গ্রাম হারে মিশিয়ে বীজ শোধন করলে ভুট্টার বীজ পচা রোগের আক্রমণ অনেক কমে যায়।
খ) ভুট্টার পাতা ঝলসানো রোগ দমন
হেলমিনথোসপরিয়াম টারসিকাম ও হেলমিনথোসপরিয়াম মেইডিস নামক ছত্রাকদ্বয় এ রোগ সৃষ্টি করে।
প্রথম ছত্রাকটি দ্বারা আমাদের দেশে ভুট্টার পাতা ঝলসানো রোগ বেশী হতে দেখা যায়। হেলমিনথোসপরিয়াম টারসকাম দ্বারা আক্রান্ত গাছের নিচের দিকের পাতায় লম্বাটে ধূসর বর্ণের দাগ দেখা যায়। পরবর্তীতে গাছের উপরের অংশে তা বিস্তার লাভ করে। রোগের প্রকোপ বেশী হলে পাতা আগাম শুকিয়ে যায় এবং গাছ মরে যায়।
এ রোগের জীবানু গাছের আক্রান্ত অংশে অনেক দিন বেঁচে থাকে জীবাণুর বীজকণা বা কনিডিয়া বাতাসের সাহায্যে অনেক দূর পর্যন্ত সুস্থ্য গাছে ছড়াতে পারে। বাতাসের আদ্রতা বেশী হলে এবং ১৮-২৭ ডিগ্রী সে. তাপমাত্রায় এ রোগের আক্রমণ বেড়ে যায়।
প্রতিকার:
- রোগ প্রতিরোধী জাতের (মোহর) চাষ করতে হবে।
- আক্রান্ত ফসলে টিল্ট ২৫০ ইসি (০.০৪%) ১৫ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।
- ভুট্টা উঠানোর পর জমি থেকে আক্রান্ত গাছ সরিয়ে অথবা পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
গ) ভুট্টার মোচা ও দানা পচা রোগ দমন
মোচা ও দানা পচা রোগ ভুট্টার ফলন, বীজের গুনাগুন ও খাদ্যমান কমিয়ে দেয়।
বিভিন্ন প্রকার ছত্রাক যথা ডিপ্লোডিয়া মেডিস, ফিউজেরিয়াম মনিলিফরমি প্রভৃতি এ রোগ ঘটায়।
আক্রান্ত মোচার খোসা ও দানা বিবর্ণ হয়ে যায়। দানা পুষ্ট হয় না, কুঁচকে অথবা ফেটে যায়। অনেক সময় মোচাতে বিভিন্ন দানার মাঝে বা উপরে ছত্রাকের উপস্থিতি খালি চোখেই দেখা যায়।
ভুট্টা গাছে মোচা আসা থেকে পাকা পর্যন্ত বৃষ্টিপাত বেশী থাকলে এ রোগের আক্রমণ বাড়ে। পোকা বা পাখির আক্রমনে বা কান্ড পচা রোগে গাছ মাটিতে পড়ে গেলে এ রোগ ব্যাপকতা লাভ করে। এ রোগের জীবাণু বীজ অথবা আক্রান্ত গাছের পরিত্যক্ত অংশে বেঁচে থাকে। একই জমিতে বার বার ভুট্টার চাষ করলে এ রোগ দ্রুত বিস্তার লাভ করে।
প্রতিকার:
- এ রোগের প্রাদুর্ভাব এড়াতে একই জমিতে বার বার ভুট্টা চাষ করা ঠিক নয়।
- জমিতে পোকা ও পাখির আক্রমন রোধ করতে হবে।
- ভুট্টা পেকে গেলে তাড়াতাড়ি কেটে ফেলতে হবে।
- কাটার পর ভুট্টার পরিত্যক্ত অংশ পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
ঘ) ভুট্টার কান্ড পচা রোগ দমন
বিভিন্ন প্রজাতির ছত্রাক যথা ডিপ্লোডিয়া মেডিস, ফিউজেরিয়াম মনিলিফরমি-এর কারণে এ রোগ ঘটে থাকে।
প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে গাছের কান্ড পচে যায় এবং গাছ মাটিতে ভেঙ্গে পড়ে।
আমাদের দেশে খরিফ মৌসুমে এ রোগ বেশী হয়ে থাকে। জমিতে নাইট্রোজেনের পরিমাণ বেশী এবং পটাশের পরিমাণ কম হলে ছত্রাক জনিত কান্ড পচা রোগ বেশী হয়।
প্রতিকার:
- ছত্রাকনাশক ভিটাভেক্স-২০০ দিয়ে বীজ শোধন করে লাগাতে হবে।
- সুষম হারে সার ব্যবহার করতে হবে, বিশেষ করে নাইট্রোজেন ও পটাশ পরিমিত মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে।
- ভুট্টা কাটার পর পরিত্যক্ত অংশ পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
- শিকড় ও কান্ড আক্রমকারী পোকা-মাকড় দমন করতে হবে।
- আক্রান্ত জমিতে অনুমোদিত ছত্রাকনাশক ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।
(৬) আন্তঃফসল হিসেবে ‘বিভিন্ন সবজি ফসলে’র সাথে হাইব্রিড ভুট্টা চাষ পদ্ধতি
সাধারণত কৃষকেরা এককভাবে ভুট্টার আবাদ করে থাকে। ভুট্টার জীবন কাল যেহেতু দীর্ঘ তাই বপনের ৬০ দিনের মধ্যে সহজেই ভুট্টার সারির মাঝে স্বল্পকালীন সবজির চাষ করা যায়। এতে অল্প সময়ে কৃষকেরা আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারে। অন্যদিকে পরিবারের পুষ্টির চাহিদা মেটে।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট এর সরেজমিন গবেষণা বিভাগ দেশের বিভিন্ন কৃষি পরিবেশ অঞ্চলে (কৃষি পরিবেশ অঞ্চল-৩, ৮, ৯ ও ১৯) কৃষকের মাঠে ভুট্টার সাথে বিভিন্ন সবজির আন্তঃফসল চাষের গবেষণার ফলাফলে দেখা যায় যে, এতে মোট উৎপাদন বৃদ্ধি পায় ও জমির সদ্ব্যবহার নিশ্চিত হয়।
চাষ পদ্ধতি
বিষয় | উৎপাদন প্রযুক্তি |
ফসল | হাইব্রিড ভূট্টা+মটরশুটি+ঝাড়শিম |
বপনের সময় | নভেম্বর মাস |
বপণ দূরত্ব | ভূট্টা বণন ৭৫ সেমি ও ২০ সেমি |
ভূট্টা | বারি হাইব্রিড ভূট্টা |
মটরশুটি | বারি মটরশুটি-৩ |
ঝাড়শিম | বারি ঝাড়শিম-১ |
বপণ পদ্ধতি | দুই সারি ভূট্টার মাঝে দুই সারি মটরশুটি/ঝাড়শিম |
সার প্রয়োগ পদ্ধতি | জমি চাষের পূর্বে গোবর সমানভাবে ছিটিয়ে ভালভাবে চাষ করতে বউ রে এক তৃতীয়াংশ ও অন্যান্য সব সার শেষ ভাগের সময় ভালভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। বাকি ইউরিয়া সমান দুই ভাগে ভাগ করে চারা যখন ৮-১০ পাতা পর্যায়ে ৩০-৩৫ দিন পর প্রথম এবং গাছের গোড়ায় লাইন বরাবর প্রয়োগ করতে হবে। |
ফলন (টন/হেক্টর) | একক ভূট্টা: ৮.৮ টন/হেক্টর ভূট্টা+মটরশুটি: ১১.৫ টন/হেক্টর ভূট্টা+ঝাড়শিম: ১১.৪ টন/হেক্টর |
আয়-ব্যয় (শতকরা) | একক ভূট্টা চাষের তুলনায়- শুধু ভূট্টা চাষে: ১০০ টাকা আয় হলে ভূট্টা+মটরশুটি: ৩০% বেশি লাভ অর্থ্যাৎ ১৩০ টাকা আয় ভূট্টা+ঝাড়শিম: ২৫% বেশি লাভ অর্থ্যাৎ ১২৫ টাকা আয় |
সারের নাম ও পরিমাণ
সারের নাম | পরিমাণ |
ইউরিয়া সার | ৫০০-৫৫০ কেজি/হেক্টর |
টিএসপি সার | ২৪০-২৬০ কেজি/হেক্টর |
এমপি সার | ১৮০-২২০ কেজি/হেক্টর |
বরিক এসিড | ১২ কেজি/হেক্টর |
জিপসাম সার | ২৪০-২৬০ কেজি/হেক্টর |
জিংক সালফেট | ১০-১৫ কেজি/হেক্টর |
গোবর | ৩-৫ টন/হেক্টর |
(৭) আন্তঃফসল হিসেবে ‘আলু’র সাথে হাইব্রিড ভুট্টা চাষ পদ্ধতি
আন্তঃফসল হিসেবে আলুর সাথে হাইব্রিড ভুট্টা চাষ একটি লাগসই ও লাভজনক প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষক একই জমি হতে আলু এবং ভুট্টা পেতে পারে।
আলুর সাথে আন্তঃফসল হিসেবে হাইব্রিড ভুট্টা চাষ করলে আলুর ফলন কমে না বরং হেক্টরপ্রতি প্রায় ৮-৯ টন ভুট্টা দানা পাওয়া যায়।
যে সমস্ত এলাকায় আলুর চাষ হয় সে সমস্ত এলাকাতে এ প্রযুক্তি ব্যবহার করা সম্ভব। হাইব্রিড ভুট্টা চাষ করতে যে সার প্রয়োজন হয় সে সারেই আলু ভুট্টা আন্তঃফসল চাষ করা সম্ভব। এতে বাড়তি সারের প্রয়োজন হয় না।
চাষ পদ্ধতি
বিষয় | বিবরণ |
ফসল | আলু+হাইব্রিড ভূট্টা |
রোপণের দূরত্ব | আলু: ৭৫ সেমি x ২০ সেমি হাইব্রিড ভূট্টা: ৭৫ সেমি x ২৫ সেমি |
সার প্রয়োগ পদ্ধতি | ইউরিয়া সারের এবং তৃতীয়াংশ, সমুদয় গোবর সার এবং অন্যান্য সারের অর্ধেক শেষ চাষের সময় প্রয়োগ করতে হয়। ছটা লাগানোর পূর্বে ইউরিয়া সারের এক তৃতীয়াশ এবং অন্যান্য সারের অবশিষ্টাংশ দু’সারি আলুর মধ্যবর্তী নালীতে ছিটিয়ে ছোট কোদাল নিয়ে হালকাভাবে ফেলে দিতে হবে। ইউরিয়া সারের বাকি এক তৃতীয়াংশ আলু উঠানোর পর ভুট্টাকে উপরি প্রয়োগ করতে হয়। |
ফসল | আলু: ২৭-২৮ টন/হেক্টর; হাইব্রিড ভূট্টা: ৮-৯ টন/হেক্টর |
সারের নাম ও পরিমাণ
সারের নাম | পরিমাণ |
ইউরিয়া | ৫৫০-৫৭০ কেজি/হেক্টর |
টিএসপি | ২৭৫-২৯৫ কেজি/হেক্টর |
এমপি | ২৮০-৩০০ কেজি/হেক্টর |
জিপসাম | ২২০-২৩০ কেজি/হেক্টর |
দস্তা সার | ১৫-১৮ কেজি/হেক্টর |
বরিক এসিড | ৫-৬ কেজি/হেক্টর |
গোবর (টন) | ১০ টন/হেক্টর |
আয়-ব্যয়ের ধারণা
বপন পদ্ধতি | মোট আয় | মোট ব্যয় | নীট লাভ |
একক আলু | ৩২৮০০০ থেকে ৩২৮০০০ টাকা | ৭৮০০০ থেকে ৭৯০০০ টাকা | ২৪৬০০০ থেকে ২৪৯০০০ টাকা |
একক ভূট্টা | ১২২০০০ থেকে ১২৬০০০ টাকা | ৪৪০০০ থেকে ৪৫০০০ টাকা | ৭৮০০০ থেকে ৮১০০০ টাকা |
আন্ঃফসল (আলু-ভূট্টা) | ৪৫০০০০ থেকে ৪৫৭০০০ টাকা | ১০০০০০ থেকে ১০২০০০ টাকা | ৩৫০০০০ থেকে ৩৫৫০০০ টাকা |
(৮) আন্তঃফসল হিসেবে ‘গাজর’ এর সাথে হাইব্রিড ভুট্টা চাষ পদ্ধতি
যে সব জমিতে রবি মৌসুমে ভুট্টা চাষ করা হয় সে সব জমিতে ভুট্টার সাথে আন্তঃফসল হিসেবে গাজর চাষ করা যায়।
চাষ পদ্ধতি
বিষয় | বিবরণ |
ফসল | ভুট্টা+গাজর |
জাত | হাইব্রিড ভুট্টা+সিনোরা জাপান/স্থানীয় জাত |
জমি ও মাটি | মাঝারী উঁচু, বেলে দোআঁশ মাটি |
বিবরণ | বপন/রোপণের সময় অগ্রহায়ণের প্রথম হতে তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত (মধ্য-নভেম্বর হতে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ) |
বপন পদ্ধতি | ভুট্টার জোড়া সারির সাঝে ১৫০ সেমি দূরত্ব রেখে মধ্যবর্তী স্থানে ৪ সারি গাজর বীজ বপন করতে হবে। এ পর্যায়ে ভুট্টার সারির দূরত্ব ৩৭.৫ সেমি এবং গাছের দূরত্ব ২৫ সেমি রাখতে হবে। এ পদ্ধতিতে ভুট্টা গাছের সংখ্যার কোন তারতম্য হয় না। গাজরের বীজ ৩০ সেমি ব্যবধানে সারিতে বুনতে হবে। বীজ খুব ছোট বিধায় ছাই বা গুড়া মাটির সাথে মিশিয়ে বপন করা ভাল। বীজ গজানোর পর পর্যায়ক্রমে চারা পাতলা করে দিতে হবে, যেন শেষ পর্যন্ত গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ৭-১০ সেমি বজায় থাকে। |
বীজের হার | ভূট্টা: ৩০ কেজি/হেক্টর গাজর: ৫ কেজি/হেক্টর |
সার প্রয়োগ পদ্ধতি | এক তৃতীয়াংশ ইউরিয়া, সমুদয় টিএসপি, এমপি ও গোবর সার শেষ চাষের সময় প্রয়োগ করতে হবে। চারা গজানোর ৩০ দিন (আট পাতার সময়) ও ৬০ দিন (পুরুষ ফুল আসার সময়) পর বাকি ইউরিয়া সমান দুই ভাগ করে ভুট্টার সারির পাশে প্রয়োগ করতে হবে। |
ভুট্টা গাছ পাতলাকরণ | চারা গজানোর ১৫-২০ দিন পর প্রতি গোছায় একটি গাছ রেখে বাকি গাছ ভুলে ফেলতে হবে। |
সেচ প্রয়োগ | চারা গজানোর ৩০, ৬০ ও ৯০ দিন পর সেচ প্রয়োগ করতে হবে। |
ফসল তোলার সময় | গাজর: মধ্য মাঘ থেকে মধ্য-ফাল্গুন (জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি)। ভুট্টা: ফাল্গুনের শেষ থেকে চৈত্রের ১ম সপ্তাহ (মধ্য-মার্চ থেকে মার্চের শেষ সপ্তাহ)। |
ফলন | ভুট্টা: ৬-৭ টন/হেক্টর গাজর: ৫-৭ টন/হেক্টর আয় ও ব্যয়ের অনুপাত: ৩.৫০ঃ১.০০ |
সারের নাম ও পরিমাণ
গাজর+ভুট্টা ফসলে নিম্নরূপ হারে সার প্রয়োগ করতে হয়।
সারের নাম | পরিমাণ |
ইউরিয়া | ৫০০-৫৫০ কেজি/হেক্টর |
টিএসপি | ২৪০-২৬০ কেজি/হেক্টর |
এমপি | ২০০-২২০ কেজি/হেক্টর |
জিপসাম | ২৪০-২৬০ কেজি/হেক্টর |
জিংক সালফেট (প্রয়োজনবোধে) | ১০-১৫ কেজি/হেক্টর |
বরিক এসিড (প্রয়োজনবোধে) | ৫-৭ কেজি/হেক্টর |
গোবর | ৫ টন/হেক্টর |
(৯) আন্তঃফসল হিসেবে ‘ঝাড়শিম’ এর সাথে হাইব্রিড ভুট্টা চাষের পদ্ধতি
বাংলাদেশের জয়দেবপুর, ঈশ্বরদী এবং যশোরে অবস্থিত গবেষণা মাঠে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে এ আন্তঃফসল প্রযুক্তিটি উদ্ভাবন করা হয়েছে।
সেচযুক্ত উঁচু এবং মাঝারি উঁচু জমির দোআঁশ মাটিতে যেসব স্থানে ভুট্টার চাষ করা হয় সেখানে হাইব্রিড ভুট্টার সাথে আন্তঃফসল হিসেবে ঝাড়শিম চাষ করা যায়।
ভুট্টা থেকে দানা, গো-খাদ্য এবং জ্বালানি পাওয়া যায়। একই সাথে ঝাড়শিম থেকে সবজি পাওয়া যায়।
চাষ পদ্ধতি
বিষয় | বিবরণ |
ফসল | হাইব্রিড ভুট্টা+ঝাড়শিম |
জাত | হাইব্রিড ভুট্টা+বারি ঝাড়শিম-১ |
জমি ও মাটি | মাঝারি বা মাঝারি উঁচু, বেলে দোআঁশ মাটি |
বপণ/রোপণের সময় | অগ্রহায়ণের প্রথম হতে তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত (মধ্য-নভেম্বর হতে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ) |
বপণ পদ্ধতি | ভুট্টার স্বাভাবিক সারির ক্ষেত্রে সারি থেকে সারির দূরত্ব ৭৫ সেমি এবং গাছ হতে গাছের দূরত্ব ২৫ সেমি থাকে। ২ সারি ভুট্টার মাঝে ২ সারি ঝাড়শিম বপন করতে হয়। এক্ষেত্রে কাড়শিমের সারি থেকে সারির দূরত্ব ৩০ সেমি এবং ভুট্টার সারি হতে ঝাড়শিমের সারির দূরত্ব ২২.৫ সেমি হয়। |
ভুট্টার জোড়া সারির ক্ষেত্রে | ভুট্টার জোড়া সারির ক্ষেত্রে ভুট্টার জোড়া সারির মাঝে ১৫০ সেমি দূরত্ব রেখে মধ্যবর্তী স্থানে ৪টি সারি কাশিম বীজ বপন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ভুট্টার সারির দূরত্ব ৩৭.৫ সেমি এবং গাছের দূরত্ব ২৫ সেমি রাখতে হবে। ঝাড়শিমের বীজ ৩০ সেমি ব্যবধানে সারিতে বপন করতে হবে। উভয় ক্ষেত্রেই ঝাড়শিমের গাছ হতে গাছের দূরত্ব ১০ সেমি রাখতে হবে। |
বীজের হার | ভুট্টা: ২৫ কেজি/হেক্টর ঝাড়শিম: ৩০ কেজি/হেক্টর |
সার প্রয়োগ পদ্ধতি | এক তৃতীয়াংশ ইউরিয়া এবং বাকি সব সার শেষ চাষের সময় প্রয়োগ করতে হবে। অবশিষ্ট ইউরিয়া সার সমান দু’ভাগ করে চারা গজানোর ৩০ ও ৬০ দিন পরে ভুট্টার সারির পাশ দিয়ে প্রয়োগ করতে হবে। |
সেচ প্রয়োগ | চারা গজানোর ৩০, ৬০ ও ৯০ দিন পরে সেচ দিতে হবে। |
ফসল তোলার সময় | ভুট্টা: মধ্য-চৈত্র থেকে শেষ পর্যন্ত (এপ্রিল প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত)। ঝাড়শিম: বপনের ৫৫, ৬৫ ও ৭৫ দিন পর সবুজ শুটি তুলতে হবে। |
ফলন | ভুটা: ৮-৯ টন/হেক্টর ঝাড়শিম: ৫-৬ টন/হেক্টর |
আয় ও ব্যয়ের অনুপাত | ভুট্টার স্বাভাবিক সারির ক্ষেত্রে: ৩.৫৯ঃ১.০০ অর্থ্যাৎ ১০০ টাকা খরচে ৩৫৯ টাকা আয়। ভুট্টার জোড়া সারির ক্ষেত্রে: ৩.৬৫ঃ১.০০ অর্থ্যাৎ ১০০ টাকা খরচে ৩৬৫ টাকা আয়। |
সারের নাম ও পরিমাণ
সারের নাম | পরিমাণ |
ইউরিয়া | ৫৪০-৫৫৫ কেজি/হেক্টর |
টিএসপি | ২৫০-২৭০ কেজি/হেক্টর |
এমপি | ১৯০-২০০ কেজি/হেক্টর |
জিপসাম | ১০০-১১০ কেজি/হেক্টর |
(১০) আন্তঃফসল হিসেবে ‘পালং শাক ও লাল শাক’ এর সাথে হাইাব্রিড ভুট্টা চাষের পদ্ধতি
যে সব জমিতে বরি ভুট্টা চাষ করা হয় সে জমিতে ভুট্টার সাথে আন্তঃফসল হিসেবে পালং শাকের পর লাল শাকের চাষ করা যায়।
চাষ পদ্ধতি
বিষয় | বিবরণ |
ফসল | ভুট্টা+পালং শাক+লাল শাক |
জাত | ভূট্টা: হাইব্রিড ভূট্টা; পালং শাক: কপি পালংশাক; লাল শাক: বারি লাল শাক -১; |
জমি ও মাটি | মাঝারী উঁচু বেলে ও দোআঁশ মাটি |
বপন/রোপণ | অগ্রহায়ণের প্রথম সপ্তাহ হতে তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত (মধ্য-নভেম্বর হতে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ) |
বপন পদ্ধতি | ভুট্টার স্বাভাবিক সারির (৭৫ সেমি x ২৫ সেমি) মাঝখানে ৩ সারি পালং শাক বপন করতে হবে। পালং শাকের সারির মাঝে ১৫ সেমি দূরত্ব হবে। এক্ষেত্রে ভুট্টা সারি হতে পালং শাকের সারির দূরত্ব হবে ২২.৫ সেমি। পালং শাকের বীজ বপনের পূর্বে ২০-২৪ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে নিলে চারা গজানোর হার ভাল হয়। বপনের ৪০-৪৫ দিন পর পালং শাক তুলতে হবে। পালং শাক উঠানোর পর একই পদ্ধতিতে তিন সারি লাল শাক বুনতে হবে। সেক্ষেত্রে সারি থেকে সারির দূরত্ব ১৫ সেমি হবে। |
বীজের হার | ভূট্টা: ৩০ কেজি/হেক্টর; পালং শাক: ৪০ কেজি/হেক্টর; লাল শাক: ২.৫ কেজি/হেক্টর; |
ভুট্টা গাছ পাতলাকরণ | চারা গজানোর ১৫-২০ দিন পর প্রতি গোছায় একটি গাছ রেখে বাকি গাছ তুলে ফেলতে হবে। |
সার প্রয়োগ পদ্ধতি | এক তৃতীয়াংশ ইউরিয়া, সমুদয় টিএসপি, এমপি ও গোবর সার শেষ চাষের সময় প্রয়োগ করতে হবে। চারা গজানোর ৩০ দিন (৮ পাতার সময়) ও ৬০ দিন (পুরুষ ফুল আসার সময়) পর বাকি ইউরিয়া সমান ২ ভাগ করে ভুট্টার সারির পাশে প্রয়োগ করতে হবে। |
সেচ প্রয়োগ | চারা লাগানোর ৩০, ৬০ ও ৯০ দিন পর সেচ প্রয়োগ করতে হবে। |
ফসল তোলার সময় | পালং শাক: বপনের ৪০-৪৫ দিন পর; চাল শাক: বপনের ৩০ দিন পর; ভূট্টা: বপনের ১৪০-১৫০ দিন পর অর্থাৎ ফাল্গুনের শেষ সপ্তাহ থেকে চৈত্রের ১ম সপ্তাহ (মধ্য- মার্চ থেকে মার্চের শেষ সপ্তাহ। |
ফলন | ভুট্টা: ৭-৮ টন/হেক্টর পালং শাক: ৫-৭ টন/হেক্টর লাল শাক: ১.৫-২.০০ টন/হেক্টর |
আয় ও ব্যয়ের অনুপাত | ৪ঃ১ অর্থ্যাৎ ১০০ টাকা খরচে ৪০০ টাকা আয় হয় |
সারের নাম ও পরিমাণ
সারের নাম | সারের পরিমাণ/হেক্টর |
ইউরিয়া | ৫০০-৫৫০ কেজি |
টিএসপি | ২৪০-২৬০ কেজি |
এমপি | ২০০-২২০ কেজি |
জিপসাম | ২৪০-২৬০ কেজি |
জিংক সালফেট (প্রয়োজনবোধে) | ১০-১৫ কেজি |
বরিক এসিড (প্রয়োজনবোধে) | ৫-৭ কেজি |
গোবর | ৫ টন |
(১১) রিলে ফসল হিসেবে ‘মুখীকচু’ এর সাথে হাইব্রিড ভুট্টা চাষ পদ্ধতি
বাংলাদেশে হাইব্রিড ভুট্টার চাষ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। মধ্য নভেম্বর হতে শেষ নভেম্বর পর্যন্ত এটা বপন করা হয় এবং মে মাস পর্যন্ত মাঠে থাকে।
অপর পক্ষে এদেশে মুখী কচু একটি গুরুত্বপূর্ণ সবজী। এটা ফেব্রুয়ারি/মার্চ মাসে রোপণ করা হয় এবং তা আগস্ট/সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মাঠে থাকে।
এ দুটি গুরুত্বপূর্ণ ফসল আমাদের শস্য পর্যায়ে খাপ খাওয়াতে হলে রিলে ফসলের বিকল্প নেই।
চাষ পদ্ধতি
বিষয় | বিবরণ |
ফসল | হাইব্রিড ভুট্টা এবং মুখ |
রোপণ দূরত্ব | ভূট্টা: ৭৫ সেমি x ২৫ সেমি; মুখী কচু (জোড়া সারি): ২৭.৫ সেমি x ২০ সেমি x ২৭.৫ সেমি x ৪৫ সেমি। |
রোপণ পদ্ধতি | ভুট্টা বপনের ১১০ থেকে ১২০ দিন পর দু’সারি ভুট্টার মাঝে জোড়া সারি মুখী কচু লাগোতে হয়। |
ইউরিয়া | ৫৫০-৫৭০ কেজি/হেক্টর |
টিএসপি | ২৭৫-২৯৫ কেজি/হেক্টর |
এমওপি | ২৮০-৩০০ কেজি/হেক্টর |
জিপসাম | ২২০-২৩০ কেজি/হেক্টর |
দস্তা সার | ১৫-১৮ কেজি/হেক্টর |
বরিক এসিড | ৫-৬ কেজি/হেক্টর |
কচুর জন্য অতিরিক্ত ইউরিয়া | ২১৫-২২০ কেজি/হেক্টর |
সার প্রয়োগ পদ্ধতি | ইউরিয়া সারের এক তৃতীয়াংশ এবং অন্যান্য সারের সবটুকু শেষ চাষের সময় প্রযোগ করতে হয়। বারি ইউরিয়া সমান ২ কিস্তিতে ফুট। বীজ গজানোর ৩- ৩৫ দিন এবং ৬০-৬৫ দিন পর উপরি প্রয়োগ করে সেচ দিতে হয় (যদি মাটিতে রস না থেকে)। অতিরিক্ত ইউরিয়া সমান ২ ভাগে ভাগ করে মুখীক লাগানার ৪০ এবং ৮০ দিন পর কচুতে উপরি প্রয়োগ করতে হয়। |
ফলন (টন/হেক্টর) | হাইব্রিড ভুট্টা: ৮-৯; মুখীকচু: ২০-২৫; |
ফসল সংগ্রহ (ভুট্টা) | ভুট্টার মোচা চকচকে ঘড়ের রং ধারণ করে এবং পাতা কিছুটা হলদে রং হয় (বীজ বপনের ১৪৫-১৫০ দিন পর) তখন দানার জন্য মোচা সংগ্রহের উপযুক্ত সময়। পরবর্তী সময় মোচা রোদে শুকিয়ে তা থেকে বীজ ছাড়িয়ে বাজারজাত করতে হয়। |
ফসল সংগ্রহ (মুখীকচু) | মুখীকচু গাছগুলো যখন শুকিয়ে যেতে থাকে তখনি কচু উঠানোর সময়। এতে প্রায় ৬-৭ মাস সময় লাগে। অবশ্য আগাম বাজার ধরতে হলে আরো ২-১ মাস আগে মুখীকচু উঠিয়ে বাজারজাত করা যেতে পারে। |
সারের নাম | পরিমাণ |
ইউরিয়া | ৫৫০-৫৭০ কেজি/হেক্টর |
টিএসপি | ২৭৫-২৯৫ কেজি/হেক্টর |
এমওপি | ২৮০-৩০০ কেজি/হেক্টর |
জিপসাম | ২২০-২৩০ কেজি/হেক্টর |
দস্তা সার | ১৫-১৮ কেজি/হেক্টর |
বরিক এসিড | ৫-৬ কেজি/হেক্টর |
কচুর জন্য অতিরিক্ত ইউরিয়া | ২১৫-২২০ কেজি/হেক্টর |
আয়-ব্যয়ের ধারণা
বপন পদ্ধতি | মোট আয় (টাকা/হেক্টর) | মোট ব্যয় (টাকা/হেক্টর) | নীট মুনাফা (টাকা/হেক্টর) | আয়-ব্যয় অনুপাত |
একক ভূট্টা | ১০৫০০০-১১২০০০ | ৪০০০০-৪২০০০ | ৬৫০০০-৬৮০০০ | ২ঃ৬৩-২ঃ৬৭ |
একক কচু | ২১০০০০-২২০০০০ | ৪৫০০০-৪৭০০০ | ১৬৫০০০-১৬৮০০০ | ৪ঃ৬৭-৪ঃ৬৮ |
রিলে ফসল (ভূট্টা+কচু) | ২৮০০০০-৩২০০০০ | ৫৫০০০-৫৭০০০ | ২২৫০০০-২৬৩০০০ | ৫ঃ০১-৫ঃ৬১ |
(১২) হাইব্রিড ভুট্টা-৫ এর বীজ উৎপাদনের জন্য উপযুক্ত বপন সময়
বাংলাদেশে দানা জাতীয় ফসলসমূহের মধ্যে ধান ও গমের পরেই ভুট্টার স্থান।
ইদানিংকালে পোল্ট্রি শিল্পের উন্নয়নের ফলে পোল্ট্রি ফিড হিসেবে ভুট্টার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এ চাহিদা পূরণে কৃষকেরা হাইব্রিড ভুট্টা চাষে আগ্রহী।
বর্তমানে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে বেশ কিছু হাইব্রিড ভুট্টার জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। তন্মধ্যে বারি হাইব্রিড ভুট্টা-৫ অন্যতম।
যদিও দানা উৎপাদনের জন্য ভুট্টা সারা বৎসরই চাষ করা যায়। কিন্তু মানসম্পন্ন বীজ উৎপাদনের জন্য বপন সময় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সে লক্ষ্যে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্টিটিউট এর কৃষিতত্ত্ব বিভাগ কর্তৃক গবেষণার মাধ্যমে দেখা যায় যে, মধ্য-সেপ্টেম্বর থেকে মধ্য-ডিসেম্বর বারি হাইব্রিড ভুট্টা-৫ এর বীজ উৎপাদনের জন্য নির্ধারিত ইনব্রিড লাইন বপন করলে মানসম্পন্ন বীজের কাঙ্ক্ষিত ফলন পাওয়া যায়।
চাষ পদ্ধতি
বিষয় | বিবরণ |
ফসল | ভুট্টা |
জাত | বারি হাইব্রিড ভুট্টা-৫ |
উদ্দেশ্য | বীজ উৎপাদন |
জমি ও মাটি | উঁচু বা মাঝারী উঁচু বেলে দো-আঁশ এবং এঁটেল দো-আঁশ মাটি |
ইনব্রিড লাইন | বি আই এল ২০ (স্ত্রী) এবং বি আই এল ২২ (পুরুষ) |
বপন সময় | মধ্য-সেপ্টেম্বর থেকে মধ্য-ডিসেম্বর পর্যন্ত |
স্ত্রী ও পুরুষের লাইনের অনুপাত | ৪ঃ২ |
বপন পদ্ধতি | সারি থেকে সারির দূরত্ব ৭৫ সেমি এবং বীজ থেকে বীজের দূরত্ব ২০ সেমি। তবে ফুল ফোটার সামঞ্জস্যতার জন্য বি আই এল ২০ (পুরুষ) এর অর্ধেক সারিতে বীজ একই দিনে বপন করতে হবে এবং বাকি অর্ধেক পুরুষ সারিতে বীজ তিন দিন পর বপন করতে হবে। |
সার প্রয়োগ পদ্ধতি | তিন ভাগের এক ভাগ ইউরিয়া এবং অন্যান্য সব সার জমিতে শেষ চাষের সময় এবং বাকি অর্ধেক ইউরিয়া সমান ২ ভাগ করে চারা বপনের ৪০ দিন এবং ৭০ দিন পর ভুট্টার সারির পাশে প্রয়োগ করতে হবে। |
সেচ | ৪ বার (প্রথম সেচ বীজ বপনের পর, দ্বিতীয় সেচ- বপনের ২০-২৫ দিন পর, তৃতীয় সেচ- বপনের ৫০-৫৫ দিন পর এবং চতুর্থ সেচ- বপনের ৮৫-৯০ দিন পর)। |
টাসেল ভাঙ্গা | স্ত্রী গাছে টাসেল (পুরুষ ফুল) বের হওয়ার সাথে সাথে ভাঙ্গতে হবে এবং তা নিরাপদ দূরত্বে ফেলতে হবে। |
অন্যান্য পরিচর্যা | প্রয়োজন অনুযায়ী আগাছা দমন, সারিতে মাটি তুলে দেওয়া এবং প্রয়োজনমত কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে। |
ফসল সংগ্ৰহ | গাছের পাতা খড়ের বর্ণ ধারণ করলে এবং বীজ পরিপক্ক হওয়া সাপেক্ষে মোচা সংগ্রহ করতে হবে। |
কর্তন পরবর্তী পরিচর্যা | মোচা সংগ্রহ করার পর খোসা ছাড়িয়ে রৌদ্রে ভালভাবে শুকিয়ে মাড়াই করে পরিষ্কার করতে হবে। বীজের আর্দ্রতা ১০-১১% না হওয়া পর্যন্ত শুকাতে হবে। |
ফলন | হাইব্রিড ভুটা: ১.৯৩-২.৩৪ টন/হেক্টর; অবীজ বা দানা (পুরুষ): ১.৪৩-২.০৬ টন/হেক্টর; বীজের অংকুরোদগম ক্ষমতা: শতকরা ৯০ ভাগ। |
সারের নাম ও পরিমাণ
সারের নাম | পরিমাণ |
ইউরিয়া | ৫০০-৫৫০ (কেজি/হেক্টর) |
টিএসপি | ২৬০-২৭০ (কেজি/হেক্টর) |
এমওপি | ২০০-২২০ (কেজি/হেক্টর) |
জিপসাম | ২২০-২৬০ (কেজি/হেক্টর) |
জিংক সালফেট | ১৪-১৬ (কেজি/হেক্টর) |
(১৩) গো-খাদ্য হিসাবে ভুট্টা উৎপাদনের জন্য কর্তন সময়
ভুট্টার বহুমুখী ব্যবহারের জন্য বাংলাদেশে ফসলটি বেশ জনপ্রিয়। ভুট্টার দানা মানুষের এবং হাঁস-মুরগির খাবার হিসেবে ব্যবহার হয়। ভুট্টার সবুজ গাছ উৎকৃষ্ট গো-খাদ্য এবং শুকনা গাছ গ্রামে-গঞ্জে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
ইদানিংকালে আমাদের দেশে গবাদি পশুর খামার বৃদ্ধির ফলে পৌষ থেকে চৈত্র মাস পর্যন্ত মানসম্পন্ন সবুজ ঘাসের যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। এক্ষেত্রে দ্রুত বর্ধনশীল ভুট্টার গাছ সঠিক সময়ে কর্তনের মাধ্যমে সবুজ ঘাসের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব।
এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্টিটিউট এর কৃষিতত্ত্ব বিভাগ কর্তৃক গবেষণার মাধ্যমে ভাল ফলন ও মান সম্পন্ন গো-খাদ্য হিসেবে ভুট্টা উৎপাদনের জন্য উপযুক্ত কর্তন সময় নির্ধারণ করা হয়েছে।
চাষ পদ্ধতি
বিষয় | বিবরণ |
ফসল | ভুট্টা |
জাত | বারি হাইব্রিড ভুট্টা-৩ ও বারি হাইব্রিড ভুট্টা-৫ |
উদ্দেশ্য | গো-খাদ্য হিসেবে সবুজ ঘাস উৎপাদন |
জমি ও মাটি | উঁচু বা মাঝারী উঁচু বেলে দো-আঁশ এবং এঁটেল দো-আঁশ মাটি |
বপন সময় | মধ্য-নভেম্বর |
বপন পদ্ধতি | সারির থেকে সারির দূরত্ব ৪০ সেমি এবং বীজ থেকে বীজের দূরত্ব ২০ সেমি |
সার প্রয়োগ পদ্ধতি | অর্ধেক ইউরিয়া এবং অন্যান্য সব সার জমিতে শেষ চাষের সময় মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে এবং বাকি অর্ধেক ইউরিয়া বপনের ৪০ দিন পর ভুট্টার সারির পাশে প্রয়োগ করতে হবে। |
সেচ | ৩ বার (প্রথম সেচ বীজ বপনের পর দ্বিতীয় সেচ- বপনের ২০-২৫ দিন পর তৃতীয় সেচ- বপনের ৫০-৫৫ দিন পর। |
কর্তন সময় | বপনের ৮০ দিন পর। |
সবুজ ঘাসের ফলন (টন/হেক্টর) | ৪২-৪৪ |
সারের নাম ও পরিমাণ
সারের নাম | পরিমাণ |
ইউরিয়া | ৩৫০-৩৬০ কেজি/হেক্টর |
টিএসপি | ২৫০-২৭০ কেজি/হেক্টর |
এমওপি | ২০০-২২০ কেজি/হেক্টর |
জিপসাম | ২২০-২৩০ কেজি/হেক্টর |
জিংক সালফেট | ১৪-১৬ কেজি/হেক্টর |
পুষ্টিমান (শুষ্ক ওজনের ভিত্তিতে)
উপাদান | শতকার হার |
শুষ্ক পদার্থ | ১০.৬৬-১১.০৮% |
জৈব পদার্থ | ৮৮.৩০-৯০.০৯% |
এডিএফ | ৩৮.৬৭-৪০.৩২% |
অ্যাশ | ৯.৮৮-১১.৭০% |
অশোধিত আমিষ | ৯.৭৩-১৩.৫২% |
(১৪) হাইব্রিড ভুট্টা চাষের বিষয়ে কিছু কথা
আমাদের দেশে ভুট্টার চাষ শুরু হয়েছিল ভুট্টার কম্পোজিট জাতের বীজ দিয়ে সেই ১৯৭৫ সনে।
কয়েকটি উত্তম ইনব্রিড লাইনের মধ্যে মুক্ত পর-পরাগায়ন করে পাওয়া বীজ তখন ভুট্টার আবাদের জন্য ব্যবহার করা হতো। ফলে এসব বীজের মান উত্তম না হওয়ায় ভুট্টার ফলন কখনো উৎসাহব্যঞ্জক হয়নি। এ কারণে ভুট্টার আবাদি জমির পরিমাণ এবং উৎপাদন দু’টিই যেমন কমেছে তেমনি কমেছে এর ফলনও। প্রচলিত ভুট্টা জাতের ব্যবহারের ফলে ১৯৬৭-৬৮ সন থেকে ১৯৮৬-৮৭ সন পর্যন্ত ভুট্টার আবাদি এলাকা, উৎপাদন ও হেক্টর প্রতি ফলন তিনটিই শতকরা ২.১০ ভাগ, ৩.৫৯ ভাগ এবং ০.৬৯ ভাগ হ্রাস পেয়েছে। ভুট্টা চাষে সে সময় কৃষকদের মনোযোগও আকর্ষণ করা সম্ভব হয়নি।
বিএআরআই ১৯৮৬ সনে তিন তিনটি ভুট্টার হাইব্রিড জাত আবাদের জন্য অবমুক্ত করে। অতঃপর ধীরে ধীরে প্রাইভেট বীজ কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে এ দেশে আসতে থাকে বিদেশি হাইব্রিড ভুট্টার নানা রকম জাতের বীজ।
১৯৯৩ সন থেকে এদেশে ভুট্টা চাষের জন্য হাইব্রিড ভুট্টা বীজের ব্যবহার মোটামুটি শুরু হয়ে যায়।
বাড়তে থাকে ভুট্টার আবাদি জমি, বাড়তে থাকে মোট উৎপাদন এবং হেক্টর প্রতি ফলনও। ১৯৮৭-৮৮ সনের সাথে ২০০৩-০৪ সনের তুলনা করলে স্পষ্টতই দেখা যায় যে, ভুট্টার আবাদি এলাকা, মোট উৎপাদন ও হেক্টর প্রতি ফলন বেড়েছে যথাক্রমে ১৯.৮৩, ৩৪.৪০ এবং ১৪.৫৬ ভাগ।
দেশের ভুট্টা চাষের ইতিহাসটাই যেন পাল্টে যাচ্ছে দিন দিন। মাঠে ভুট্টা গাছ আর এর দানাসমৃদ্ধ হলদে মোচার দাপট দেখলে কে বলবে যে, সুদূর মেক্সিকোতে এর জন্মস্থান। এ দেশের জল-হাওয়া-মৃত্তিকায় চমৎকার মানিয়ে নিয়েছে ভুট্টা।
গত এক দশকে হাইব্রিড ভুট্টার আবাদি এলাকা, উৎপাদন ও হেক্টর প্রতি ফলন উল্লেখযোগ্য রকমভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
হেক্টর প্রতি ফলনের দিক থেকে ভুট্টার স্থান দানাশস্যগুলোর মধ্যে প্রথম, কিন্তু আবাদি এলাকা ও মোট উৎপাদনের দিক থেকে এটি ধান ও গমের পর এখন তৃতীয় স্থানে রয়েছে। ২০০২-০৩ সনে এ দেশে মোট ভুট্টার উৎপাদন ছিল মাত্র ১.৭৫ লাখ টন। ২০১২-১৩ সনে সে ভুট্টার ফলন দাঁড়িয়েছে ২১.৭৮ লাখ টনে।
গত দশ-এগার বছরে এ দেশে ভুট্টার ফলন বৃদ্ধি পেয়েছে ১২ গুণেরও অধিক।
২০১৩ সনে বাংলাদেশের ৩.১২ লাখ হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়েছে, যা ২০১০ সনে ছিল ২.৮৩ লাখ হেক্টর। বাংলাদেশে হেক্টর প্রতি ভুট্টার ফল বেশ ভালো। ২০১৩ সনে যেখানে বিশ্বে ভুট্টার হেক্টর প্রতি গড় উৎপাদন ৪.৯ মেট্রিক টন, বাংলাদেশে তা ৫.৩৭ মেট্রিক টন।
ভুট্টা হলো আমাদের দেশের একমাত্র ফসল যার প্রতিটি জাতই এখন হাইব্রিড। অর্থাৎ এ দেশের মাঠে ভুট্টার এখন শতকরা একশত ভাগই হাইব্রিড ভুট্টা জাতের আবাদ করা হচ্ছে।
বিদেশি জাতের বীজ পেতে সহজ হয়। কোম্পানিগুলো বিদেশি জাতের বীজ ও চাষাবাদ পদ্ধতি নিয়ে কৃষকের দোড়গোড়ায় পৌঁছে যায়। দেশি জাতের বীজ এতটা সুলভ নয়, তাছাড়া এ নিয়ে প্রচার প্রচারণাও এত বেশি হয়।
দেশের অনেক এলাকাতেই হাইব্রিড ভুট্টার আবাদের বিস্তৃতি ঘটছে। বৃহত্তর রংপুর, দিনাজপুর, বগুড়া ও কুষ্টিয়া ছাড়াও দেশের অনেক জেলাতে এখন এর আবাদ করা হচ্ছে। রাজশাহী, মানিকগঞ্জ ও কুমিল্লা জেলার ধানী জমিতে এখন ভুট্টার আবাদ শুরু হয়েছে। গম কোনো কোনো এলাকায় ধান আবাদের বদলে মানুষ ভুট্টা চাষ শুরু করেছে। ভুট্টার প্রতি কৃষকের বাড়তি আগ্রহের কারণ একাধিক। এ কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে একই খরচে ভুট্টার ফলন গম ও ধানের চেয়ে অনেক বেশি।
হাঁস-মুরগি, গো-মহিষাদি এবং মৎস্যের খাবার হিসেবে ভুট্টার অনেক বেশি চাহিদা থাকায় ভুট্টা বিক্রয় করে বেশি মুনাফা অর্জন করা যায়।
ভুট্টা আবাদের জন্য হেক্টর প্রতি খরচ বেশ কম অথচ লাভ এতে বেশি-
- এক হিসেবে দেখা গেছে যে, এক কেজি ভুট্টা আবাদ করতে খরচ হয় ৪.১২ টাকা অথচ এক কেজি ভুট্টা বিক্রি করে পাওয়া যায় ৭.৮০ টাকা।
- কোনো বছর তাপমাত্রা বৃদ্ধি ঘটলে গমের আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয় অথচ তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে ভুট্টা চাষ খুব একটা ক্ষতিগ্রস্ত হয় না।
- ভুট্টা চাষের বড় সুবিধা হলো রোগবালাইয়ের আক্রমণ কম ঘটে এবং কীটপতঙ্গের আক্রমণের ফলে ক্ষতি কম হয়।
- ভুট্টা আবাদ করতে কম সেচের প্রয়োজন হয় কিন্তু অধিক সারের প্রয়োজন হয়, যা বাজার থেকে কিনে নিয়ে প্রয়োগ করা সম্ভব।
- বাজারে ভুট্টার চাহিদা অধিক হওয়ায় ভুট্টা বিক্রি করে কৃষকের হাতে নগদ অর্থ আসে এবং কৃষক সরাসরি লাভবান হয়।
আমাদের ভুট্টা গবেষণা ভালোই এগিয়েছে। তবে বিদেশ থেকে আমদানি করা হাইব্রিড জাতগুলোর সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে হলে আমাদের গবেষণার কৌশল খানিকটা পাল্টাতে হবে। বিভিন্ন উত্তম হাইব্রিড জাতগুলোর কয়েক বংশধর স্ব-পরাগায়ন করা হলে স্ব-পরাগায়িত বংশধর থেকে উত্তম ইনব্রিড লাইন বাছাই করা সম্ভব হতে পারে। এসব ইনব্রেড লাইনের সাথে আমাদের অন্যান্য ইনব্রিড লাইনের সংযুক্তি ক্ষমতা যাচাই-বাছাই করে পাওয়া সম্ভব উত্তম মানের হাইব্রিড। আমাদের বিজ্ঞানীদের সৃষ্ট হাইব্রিড ভুট্টা বীজ ব্যবহার বাড়লে ভুট্টা ফসল উৎপাদনের খরচও খানিকটা হ্রাস পাবে বলে হাইব্রিড ভুট্টা চাষ আরো লাভজনক হয়ে উঠবে।
বিদেশি কোনো কোনো হাইব্রিড ভুট্টার জাতের ফলন দেশি হাইব্রিড জাতগুলোর চেয়ে বেশি।
হাইব্রিড ফসল নিয়ে আমাদের নাক সিটকানোর দিন শেষ হয়েছে। ভুট্টা ছাড়াও বহু সবজি ফসলে এখন হাইব্রিড জাতের বীজই উৎপাদনের অন্যতম ভরসা। ভুট্টার ক্ষেত্রে হাইব্রিড জাতগুলো এতটাই সফল যে, দেশের কোন কোন এলাকার মানুষের কাছে হাইব্রিড ভুট্টা মহা আশীর্বাদ হিসেবে দেখা দিয়েছে। অনেক এলাকার মানুষের জীবন ধারাই বদলে দিয়েছে হাইব্রিড ভুট্টার চাষ।
হাইব্রিডের বিপক্ষে যারা সোচ্চার তাদের জন্য বাস্তবে এর ফলন ও মানুষের জীবনযাত্রার ওপর ভুট্টার হাইব্রিডের কি দারুণ প্রভাব তা পর্যবেক্ষণ করা বড় জরুরি বলে বিবেচনা করি। চরের ধূ ধূ বালুতে হাইব্রিড ভুট্টা কতটা প্রাণচাঞ্চল্য ফিরিয়ে এনেছে না দেখলে তা বিশ্বাস করা কঠিন। ভুট্টার চাষ এসব এলাকার মানুষের জীবনযাত্রায় বহুমাত্রিক প্রভাব নিয়ে এসেছে।
হাইব্রিড ভুট্টার চাষ এক নবযুগের সূচনা করেছে।
এমনি কি আমিরিকাতেও, মুক্তপরাগী ভুট্টার জাত নিয়ে যখন কিছুতেই আর ফলন বৃদ্ধি করা সম্ভব হচ্ছিল না তখন ভুট্টার হাইব্রিড জাত সৃষ্টি আমেরিকাতে এক নতুন মাত্রা নিয়ে যেন হাজির হয়। অল্প কিছু দিনের ভেতরই সেখানে হাইব্রিড এতটাই জনপ্রিয় হয়ে উঠে যে ১৯৩৪ সনে যেখানে মাত্র শতকরা এক ভাগ জমিতে ভুট্টার হাইব্রিড আবাদ করা হয় সেখানে চল্লিশের দশকে এসে তা শতকরা ৭৮ ভাগ জমি দখল করে নেয়। পঞ্চাশের দশকে এসে হাইব্রিড ভুট্টা যুক্তরাষ্ট্রের বেশির ভাগ জমি দখল করে। এখন যুক্তরাষ্ট্রে ৯৯ শতাংশ জমিতেই আবাদ করা হচ্ছে নানা রকম হাইব্রিড ভুট্টা।
[সূত্র: বিএআরআই, বিডব্লিউএমআরআই ও এআইএস]