Skip to content

 

হাইব্রিড ভুট্টা চাষ পদ্ধতি

হাইব্রিড ভুট্টা চাষ পদ্ধতি

আলোচ্য বিষয়:

প্রিয় পাঠক! আজকের হাইব্রিড ভুট্টা চাষ পদ্ধতি বিষয়ক কৃষি আলেচনায় আপনাকে স্বাগতম। আমরা যেমনটা জানি ভুট্টা আমাদের দেশ দিন দিন জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে বর্তমানে (২০২২-২৩) বাংলাদেশে হেক্টরপ্রতি গড় ফলন ১১.০৮ টন। 

ভুট্টা যদিও আমাদের দেশে প্রধান খাদ্যশস্য নয় কিন্তু বর্তমানে ইহার নানাবিধ ব্যবহারের কারণে বাংলাদেশের তৃতীয় প্রধান দানাদার শস্য হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছে। বিশেষ করে গবাদি পশুর সাইলেজ তৈরিতে ভুট্টার চাষ ব্যাপকহারে বাড়ছে।

উচ্চমূল্যের ভুট্টা ফসল চাষাবাদের মাধ্যমে চাষিরা বর্তমানে অন্যান্য দানাদার ফসলের তুলনায় অনেক বেশি লাভবান হচ্ছে। তাই আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি অনুসরণ করা একান্ত জরুরি। তাই নিম্নে হাইব্রিড ভুট্টা চাষ পদ্ধতি সহজ ও সুন্দরভাবে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো।

হাইব্রিড ভুট্টা চাষ পদ্ধতি ধাপ (১)
সঠিক মৌসুম ও সমযয়ে বীজ বপন করা

  • রবি মৌসুম: ১৫০ দিনের ফসল। মধ্য কার্তিক হতে অগ্রহায়নের শেষ (নভেম্বরের শুরু হতে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি) পর্যন্ত বীজ বপনের উপযুক্ত সময়।
  • খরিপ-১ মৌসুম: ১২০ দিনের ফসল। ১লা ফাল্গুন হতে চৈত্রের মাঝামাঝি (ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি হতে মার্চের শেষ) পর্যন্ত বীজ বপনের উপযুক্ত সময়।

রবি মৌসুমে খরিপ মৌসুমের চেয়ে ৩০ দিন সময় বেশী লাগে এবং ২০-২৫ শতাংশ বেশি ফলন পাওয়া যায়।

হাইব্রিড ভুট্টা চাষ পদ্ধতি ধাপ (২)
উচ্চ ফলনশীল জাত নির্বাচন করা

হাইব্রিড ভুট্টার ফলন অন্য যে কোন দানাদার ফসলের চেয়ে অনেক বেশি। অধিকন্তু অন্য দানা ফসলের তুলনায় উৎপাদন খরচ কম এবং পরিবেশবান্ধব। এ ছাড়া সম্ভাবনাময় ফসল হিসাবে দেশের বর্তমান উৎপাদিত ভুট্টা থেকে প্রচুর পরিমাণে তেল উৎপাদন করা সম্ভব, যার বাজারমূল্য অনেক বেশি।

বর্তমানে অধিকাংশ হাইব্রিড ভুট্টার জাতের বীজ বিদেশ হতে আমদানিকৃত। আবাদকৃত বাণিজ্যিক জাতগুলের মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হলো।

বিভিন্ন হাইব্রিড ভুট্টার জাত প্রচলিত রয়েছে, যেমন- এলিট; সানসাইন; উত্তোরণ ২; ৯০০ এম, ৯০০ এম গোল্ড; প্যাসিফিক ৯৮৪; সিপি ৮০৮; পিনাকেল; ৯১২০; এন কে ৪০; মিরাকেল; ৯৮১; ৯৯৯ সুপার; পাইওনিয়ার ভি ৯২; পাইনাল; বারি হাইব্রিড ভুট্টা ৯; প্রভৃতি।

রবি মৌসুমের জন্য হাইব্রিড ভুট্টার জাত, যেমন- এন এইচ-৭৭২০; পি-৩৩৫৫; বালাজী; প্রভৃতি।

খরিপ মৌসুমের জন্য, হাইব্রিড ভুট্টার জাত, যেমন- প্যাসিফিক-১৩৯; প্যাসিফিক-১৬৪; প্যাসিফিক-৩৩৯; প্রভৃতি।

গুণগত মানসম্পন্ন প্রোটিন সমৃদ্ধ জাত, যেমন- বারি হাইব্রিড ভুট্টা ৫।

গো-খাদ্যোপযোগি জাত, যেমন- বারি ভুট্টা ৭; বারি হাইব্রিড ভুট্টা ১৩; বারি হাইব্রিড ভুট্টা ১৭;  বিডাব্লিউএমআরআই হাইব্রিড বেবি কর্ণ ১; প্রভৃতি।

মধ্যম মাত্রার খরা সহিষ্ণু জাত, যেমন- বারি হাইব্রিড ভুট্টা ১২; বারি হাইব্রিড ভুট্টা ১৩; প্রভৃতি।

লবণাক্ততা সহিষ্ণু জাত, যেমন- বারি হাইব্রিড ভুট্টা ১৬।

অধিক তাপ সহিষ্ণু জাত, যেমন- বারি হাইব্রিড ভুট্টা ১৪; বারি হাইব্রিড ভুট্টা ১৫; বারি হাইব্রিড ভুট্টা ১৭; প্রভৃতি।

খাটো আকৃতির (হেলে পড়া প্রতিরোধী) জাত, যেমন- বারি হাইব্রিড ভুট্টা ১৪; বিডাব্লিউএমআরআই হাইব্রিড ভুট্টা ১; প্রভৃতি।

উন্নত ও উচ্চ ফলনশীল হাইব্রিড ভুট্টার নতুন জাত গুলোর মধ্যে রয়েছে, যেমন- বারি হাইব্রিড ভুট্টা-৫ থেকে শুরু করে ১৭ অবধি সবগুলো; বিডাব্লিউএমআরআই হাইব্রিড ভুট্টা ১; বিডাব্লিউএমআরআই হাইব্রিড ভুট্টা ২; বারি মিষ্ট ভুট্টা-১; প্রোফিট; শাহী; ডন-১১১; ডন-১১২; প্যাসিফিক-১৩৯; কাভেরি-৩৬৯৬, ঊত্তরণ; উত্তরন-২; উত্তরন সুপার; বিপ্লব; বিপ্লব; শক্তি; শক্তি-৩; প্যাসিফিক ২৯৩; প্যাসিফিক ৯৮৪; প্যাসিফিক ৯৯৯ সুপার; প্যাসিফিক ৫৫৫ হাইব্রিড; প্রভৃতি।

See also  হাইব্রিড ভুট্টার গুণগত মানের বীজ উৎপাদনের জন্য সেচ পদ্ধতি

হাইব্রিড ভুট্টা চাষ পদ্ধতির ক্ষেত্রে সবচেয়ে প্রথম ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে উপযুক্ত জাত নির্বাচন করতে পারা। ভুট্টার জাত নির্বাচন ভালো ফলনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যক্টর।

নিম্নক্তো তিনটি আলোচনাতে ভুট্টার জাত সম্পর্কে বিষদ আলোচনা হয়েছে। আশা করি আলোচনা তিনটি পড়লে, কোন জাতটি আপনার জন্য ভালো হবে? জাত নির্বাচনে আপনার সিদ্ধান্ত গ্রহণে ব্যপক সহায়তা করবে

https://inbangla.net/krisi/হাইব্রিড-ভুট্টার-জাত/
https://inbangla.net/krisi/উন্নত-জাতের-ভুট্টার-নাম/
https://inbangla.net/krisi/ভুট্টার-উচ্চ-ফলনশীল-জাত-কোনটি/

আমরা জানি, বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিডাব্লিউএমআরআই) বেশ কিছু রবি মেীসুমের  উচ্চফলনশীল হাইব্রিড ভুট্টার জাত অবমুক্ত করেছে।

এগুলো জাত কৃষকের মাঠে রবি মৌসুমে যথেষ্ট জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে ভবিষতে এজাতগুলোর বীজ ব্যবহার করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় করা সম্ভব।

এজাতগুলোর মধ্য থেকে ‘বিডাব্লিউএমআরআই হাইব্রিড ভুট্টা-২’ এর উপর দিনাজপুরে  গত  ১ মে ২০২৩ একটি মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে এর ফলন হেক্টর প্রতি প্রায় ১৪ টন। যা অন্য যে কোন বাণিজ্যিক জাতের চেয়ে ভাল ফলন দিতে সক্ষম।

হাইব্রিড ভুট্টা চাষ পদ্ধতি ধাপ (৩)
বীজের হার নির্ণয় করা

হাইব্রিড ভুট্টা বীজ বপণের জন্য-

  • প্রতি শতাংশে ৮০ গ্রাম (প্রায়) বা ৩৪০টি ভুট্টা বীজ প্রয়োজন হয়।
  • প্রতি বিঘায় (৩৩ শতাংশে) ২.৫ কেজি (প্রায়) বা ১১,১৩৩ টি ভুট্টা বীজ প্রয়োজন হয়।
  • প্রতি একরে ৭.৫ কেজি (প্রায়) বা ৩৩,৪০০ টি ভুট্টা বীজ প্রয়োজন হয়।
  • প্রতি হেক্টরে ২০ কেজি (প্রায়) বা ৮৩,৩৩৩ টি ভুট্টা বীজ প্রয়োজন হয়।

বীজ গজানোর হার শতকরা ৯০ ভাগ এর উপরে বিবেচনা করা উত্তম।

বীজের আকার ছোট বা বড় হওয়ার কারণে বীজের পরিমাণ কম বা বেশি হতে পারে।

হাইব্রিড ভুট্টা চাষ পদ্ধতি ধাপ (৪)
জমি নির্বাচন এবং তৈরি করা

জমি নির্বাচন-

  • পানি দাঁড়ায় না এমন উঁচু বা মাঝারি উঁচু জমি।
  • দোঁয়াশ মাটি ভুট্টা চাষের জন্য উত্তম তবে অন্যান্য মাটিতেও ভুট্টা চাষ করা যায়।

জমি তৈরি-

  • সংরক্ষণশীল চাষ পদ্ধতি: মাটির ‘জো’ অবস্থায় বেড-নালা চাষ পদ্ধতি অথবা ষ্ট্র্রীপ টিলেজ/ফালি চাষ পদ্ধতি বা স্বল্প-চাষ পদ্ধতিতে ভুট্টা রোপন করা উত্তম।
  • সাধারণ চাষ পদ্ধতি: মাটিতে ‘জো’ থাকা অবস্থায় ৩-৪টি চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরা এবং সমান করে বীজ রোপন করা হয়।

হাইব্রিড ভুট্টা চাষ পদ্ধতি ধাপ (৫)
সঠিক মাত্রায় সার প্রয়োগ করা

নিম্নে প্রতি শতাংশে প্রতি বিঘায় প্রতি একরে প্রতি হেক্টরে ভুট্টা চাষে সারের পরিমান, সারের নাম ও প্রয়োগের সময়সহ উল্লেখ করা হলো।

ইউরিয়া সার (সাদা সার), শেষ চাষে সময়-

  • প্রতি শতাংশে: ৭৫০ গ্রাম
  • প্রতি বিঘায়: ২৫ কেজি
  • প্রতি একরে: ৭৫ কেজি
  • প্রতি হেক্টরে: ১৮৫ কেজি

ইউরিয়া, উপরি প্রয়োগ, ভূট্টা গাছের ৬ পাতার সময়-

  • প্রতি শতাংশে: ৭৫০ গ্রাম
  • প্রতি বিঘায়: ২৫ কেজি
  • প্রতি একরে: ৭৫ কেজি
  • প্রতি হেক্টরে: ১৮৫ কেজি

ইউরিয়া, উপরি প্রয়োগ, ভূট্টা গাছের ১০ পাতার সময়-

  • প্রতি শতাংশে: ৭৫০ গ্রাম
  • প্রতি বিঘায়: ২৫ কেজি
  • প্রতি একরে: ৭৫ কেজি
  • প্রতি হেক্টরে: ১৮৫ কেজি

টিএসপি (মাটি সার), শেষ চাষের সময়-

  • প্রতি শতাংশে: ১১২০ গ্রাম
  • প্রতি বিঘায়: ৩৭.৫ কেজি
  • প্রতি একরে: ১১২ কেজি
  • প্রতি হেক্টরে: ২৮০ কেজি

এমওপি (পটাশ/লাল সার), শেষ চাষের সময়-

  • প্রতি শতাংশে: ৮০০ গ্রাম
  • প্রতি বিঘায়: ২৭ কেজি
  • প্রতি একরে: ৮১ কেজি
  • প্রতি হেক্টরে: ২০০ কেজি

জিপসাম (গন্ধক সার), শেষ চাষের সময়-

  • প্রতি শতাংশে: ৯০০ গ্রাম
  • প্রতি বিঘায়: ৩০ কেজি
  • প্রতি একরে: ৯০ কেজি
  • প্রতি হেক্টরে: ২১২ কেজি

জিংক সালফেট (দস্তাসার), শেষ চাষের সময়-

  • প্রতি শতাংশে: ৬০ গ্রাম
  • প্রতি বিঘায়: ২ কেজি
  • প্রতি একরে: ৬ কেজি
  • প্রতি হেক্টরে: ১৫ কেজি

বোরিক এসিড (বোরন সার), শেষ চাষের সময়-

  • প্রতি শতাংশে: ২৫ গ্রাম
  • প্রতি বিঘায়: ৮০০ গ্রাম
  • প্রতি একরে: ২.৫ কেজি
  • প্রতি হেক্টরে: ৬ কেজি
See also  বেবী কর্ণ চাষ পদ্ধতি (ভুট্টার জাত বিশেষ)

জৈব সার, চাষের সময়-

  • প্রতি শতাংশে: ২৫ কেজি
  • প্রতি বিঘায়: ২০ মন
  • প্রতি একরে: ৬০ মন
  • প্রতি হেক্টরে: ১৫০ মন

ডলোচুন, জমিতে অম্লভাব বেশি হলে বীজ লাগানোর ৭ দিন আগে চাষের সময় ব্যবহার করা উচিৎ-

  • প্রতি শতাংশে: ৪ কেজি
  • প্রতি বিঘায়: ১৩২ কেজি
  • প্রতি একরে: ১০ মন
  • প্রতি হেক্টরে: ২৫ মন

হাইব্রিড ভুট্টা চাষ পদ্ধতি ধাপ (৬)
সারি এবং বীজ রোপনের দূরত্ব নির্ধারণ করা

সারি এবং বীজ রোপনের দূরত্ব-

  • সারি থেকে সারির দূরত্ব ৬০ সে:মি: এবং বীজ থেকে বীজের দূরত্ব ২০ সে:মি:।
  • বীজ ৫-৭ সে:মি: মাটির গভীরে স্থাপন করতে হবে (মাটির রসের উপর ভিত্তি করে)।

সারির শূণ্যস্থান পূরণে বিশেষ করণীয়-

বীজ বপনের দিনেই ২-৩ বর্গমিটার জমি পর্যাপ্ত জৈব সার মিশিয়ে নরম করে নিন এবং ৫-৬ সে:মি: পর পর ১টি করে বীজ পুতে রাখুন। ৫-৬ দিন পর সারির শূণ্য স্থানে মাটি ভিজা অবস্থায় সাবধানে চারা উঠিয়ে বসিয়ে দিন এবং হালকা সেচ দিন।

হাইব্রিড ভুট্টা চাষ পদ্ধতি ধাপ (৭)
সময়মত আগাছা পরিষ্কার করা

সংরক্ষণশীল চাষ পদ্ধতি: বেড-নালা অথবা ষ্ট্রীপ টিলেজ/ফালি চাষ পদ্ধতিতে চাষ করলে প্রয়োজনে আগাছা নাশক ব্যবহার করতে হবে।

সাধারণ চাষ পদ্ধতি:

চারা গাছের ৩-৫ পাতা অবস্থায় ১ম বার আগাছা পরিষ্কার করতে হবে-

  • রবি মৌসুমে: বীজ লাগানোর ৩০-৩৫ দিন পর।
  • খরিপ মৌসুমে: বীজ লাগানোর ২০-২৫ দিন পর।

গাছের ৪-১০ পাতা অবস্থায় ২য় বার আগাছা পরিষ্কার করতে হবে এবং ড্রেন ও চারার গোড়ায় মাটি দিয়ে কেলি তৈরি করতে হবে-

  • রবি মৌসুমে: বীজ লাগানোর ৫৫-৬৫ দিন পর।
  • খরিপ মৌসুমে: বীজ লাগানোর ৩৫-৪৫ দিন পর।

ফুল আসার সময় ৩য় বার আগাছা পরিষ্কার এবং চারার গোড়ায় মাটি তুলে দিয়ে কেলি ঠিক করে দিতে হবে-

  • রবি মৌসুমে: বীজ লাগানোর ৮০-১০০ দিন পর।
  • খরিপ মৌসুমে: বীজ লাগানোর ৫৫-৬৫ দিন পর।

হাইব্রিড ভুট্টা চাষ পদ্ধতি ধাপ (৮)
সিময়মত সেচ প্রদান করা

চারা গাছের ৪-৬ পাতা অবস্থায় ১ম বার সেচ দিতে হবে-

  • রবি মৌসুমে: বীজ লাগানোর ৩০-৪৫ দিন পর
  • খরিপ মৌসুমে: বীজ লাগানোর ২০-২৫ দিন পর

গাছের ৮-১০ পাতা অবস্থায় ২য় বার সেচ দিতে হবে-

  • রবি মৌসুমে: বীজ লাগানোর ৫৫-৬৫ দিন পর
  • খরিপ মৌসুমে: বীজ লাগানোর ৩৫-৪৫ দিন পর

ফুল আসার সময় ৩য় বার সেচ দিতে হবে-

  • রবি মৌসুমে: বীজ লাগানোর ৮০-১০০ দিন পর
  • খরিপ মৌসুমে: বীজ লাগানোর ৫৫-৬৫ দিন পর

দানা বাঁধার সময় শেষ বার সেচ দিতে হবে-

  • রবি মৌসুমে: বীজ লাগানোর ৯৫-১১৫ দিন পর
  • খরিপ মৌসুমে: বীজ লাগানোর ৭০-৭৫ দিন পর মাটির ‘জো’ বুঝে।

হাইব্রিড ভুট্টা চাষ পদ্ধতি ধাপ (৯)
প্রয়োজনমত পোকা দমন ব্যবস্থা গ্রহণ করা

ক) কাটুই পোকা

লক্ষণ-

  • চারা অবস্থায় কচিকান্ডের গোড়া কেটে দেয়
  • কাটা চারা গাছ জমিতে পড়ে থাকতে দেখা যায়

দমন ব্যবস্থা-

  • সেচ দিলে পোকা মাটির উপরে উঠে আসে এবং পাখিতে খেয়ে ফেলে
  • দিনের বেলায় কাটা গাছের গোড়ার কাছাকাছি মাটিতে পোকা লুকিয়ে থাকে, মাটি খুঁড়ে পোকা বের করে মেরে ফেলতে হবে
  • ডার্সবান/ক্যারাটে/ডেসিস ২.৫ ইসি ১ লিটার পানিতে ২ এমএল মিশিয়ে মাটিসহ চারাগাছ স্প্রে করতে হবে

খ) পাতা খেকো লেদা পোকা

লক্ষণ-

চারা অবস্থায় লেদা পোকা, বিছা পোকা, ফড়িং কচি পাতা খেয়ে ঝাঁঝরা করে ফেলে

দমন ব্যবস্থা-

  • আক্রান্ত গাছ/পাতা থেকে পোকা ধরে মেরে ফেলতে হবে
  • রিপকর্ড/মেলাথিয়ন ৫৭ ইসি ১ লিটার পানিতে ২ এমএল মিশিয়ে গাছের উপরি ভাগে ভালভাবে স্প্রে করতে হবে

গ) ডগার মাজরা পোকা

লক্ষণ-

  • গাছের কচি কান্ড ছিদ্র করে কীড়া ভিতরে ঢুকে নরম অংশ খেয়ে ফেলে
  • মাইজ মরা লক্ষণ দেখা যায় ডগার মাজরা

দমন ব্যবস্থা-

  • সুঁচ/স্পোক দিয়ে খুঁচিয়ে পোকা মেরে ফেলতে হবে
  • রগর/রেক্সিয়ন/টাফগর ৪০ ইসি ১ লিটার পানিতে ২ এমএল মিশিয়ে গাছের উপরিভাগে স্প্রে করতে হবে
  • ডগার ভাঁজে ৩-৪ দানা ফুরাডান জাতীয় (কার্বফুরান) কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে
See also  ২০টি হাইব্রিড ভুট্টার জাত

ঘ) মোচার মাজরা পোকা

লক্ষণ-

  • কচি মোচার আগার অংশে ছিদ্র করে
  • কীড়া ভিতরে ঢুকে দানা খেয়ে ফেলে

দমন ব্যবস্থা-

  • আক্রান্ত মোচা হতে কীড়া নিডিল বা চিকন কাঠি দিয়ে খুঁচিয়ে পোকা বের করে মেরে ফেলতে হবে
  • আক্রান্ত গাছ ও মোচা ক্ষেত থেকে তুলে পুড়িয়ে ফেলতে হবে
  • শিমবুস/রিপকর্ড ১০ ইসি বা এনডোসালফেন ৩৫ ইসি ১ লিটার পানিতে ২ এমএল মিশিয়ে মোচার উপরি ভাগে স্প্রে করতে হবে

ঙ) অন্যান্য ক্ষতিকারক প্রাণী

লক্ষণ-

মোচা বের হওয়ার পর থেকে পাখি (টিয়া, কাক) শিয়াল ও মানুষের উপদ্রব হতে পারে

দমন ব্যবস্থা-

মোচা বের হওয়ার পর হতে সংগ্রহ পর্যন্ত পাহারার ব্যবস্থা করতে হবে

হাইব্রিড ভুট্টা চাষ পদ্ধতি ধাপ (১০)
মোচা সংগ্রহ করা

  • মোচার খোসা খড়ের রং ধারণ করলে এবং পাতা কিছুটা হলদে রং হলে মোচা সংগ্রহের সময় হয়েছে বুঝতে হবে।
  • শরীরবৃত্ত্বীয় ভাবে পরিপক্ক দানায় শতকরা ২০-২৫ ভাগ আর্দ্রতা থাকে।
  • মোচা হতে দু’একটি দানা ছাড়িয়ে দানার মুখে কাল দাগ দেখা গেলে মোচা সংগ্রহ শুরু করতে হবে।
  • বর্ষার কারণে মোচা সংগ্রহ করা সম্ভব না হলে মেচার সামান্য নিচে গাছের কান্ড আলতোভাবে মোচাসহ মাটির দিকে ঝুলিয়ে দিতে হবে যাতে মোচার ভিতর পানি প্রবেশ না করতে পারে।
  • শুকনো আবহাওয়ায় মোচা সংগ্রহ করতে হবে, মোচা সংগ্রহের পর ঠান্ডা, শুকনা ও ছায়াযুক্ত স্থানে ছড়িয়ে রাখতে হবে।

হাইব্রিড ভুট্টা চাষ পদ্ধতি ধাপ (১১)
মোচা হতে দানা সংগ্রহ করা

  • সংগৃহীত মোচার উপরিভাগের খোসা ছাড়িয়ে ফেলতে হবে, তবে মাঠ থেকে মোচা সংগ্রহ করার সময়ই মোচা থেকে খোসা ছাড়িয়ে ফেলা ভাল।
  • মোচাগুলো ভালভাবে ৩-৪ দিন রৌদ্রে শুকাতে হবে।
  • শক্তি-চালিত মাড়াই যন্ত্র্রের সাহায্যে মোচা থেকে দানা সংগ্রহ করতে হবে এতে খরচ এবং সময় কম লাগে।
  • তবে হস্ত-চালিত মাড়াই যন্ত্র দ্বারাও মোচা থেকে দানা সংগ্রহ করা যায়।হাইব্রিড ভুট্টা উৎপাদনের উত্তম কলাকৌশল

হাইব্রিড ভুট্টা চাষ পদ্ধতি ধাপ (১২)
ভুট্টার দানা পরিষ্কার করা এবং শুকানো

যন্ত্র বা হস্তচালিত ঝাড়াই মেশিন অথবা কুলা বা চালুনি দিয়ে দানা ভালভাবে পরিষ্কার করতে হবে।

ভুট্টার দানা কয়েকদিন ভালভাবে রৌদ্রে এমনভাবে শুকাতে হবে যাতে দাঁত দিয়ে দানা চাপদিলে ‘কট’ করে ভেঙ্গে যায়।

এ সময় দানায় শতকরা ১০-১২ ভাগ আর্দ্রতা থাকে যা সংরক্ষনের জন্য উত্তম, সম্ভব হলে আর্দ্রতা মাপক যন্ত্রের সাহায্য নিতে হবে।

হাইব্রিড ভুট্টা চাষ পদ্ধতি ধাপ (১৩)
ভুট্টার ফলন পরিমাপ

যথাযথ যত্নে চাষ করলে রবি মৌসুমে গড়ে ভুট্টার ফলন হয়-

  • বিঘা প্রতি ৪০-৪২ মন,
  • একর প্রতি ১২০-১২৫ মন বা ৪.৮-৫ টন,
  • হেক্টর প্রতি ৩০০ মন বা ১২ টন পর্যন্ত।

তবে, ভাল ফলন নির্ভর করে হাইব্রিড জাত, বীজ বপনের সময় এবং ফসল ব্যবস্থাপনার উপর।

খরিপ মৌসুমে হেক্টর প্রতি ফলন ২-৩ টন পর্যন্ত কম হবে।

হাইব্রিড ভুট্টা চাষ পদ্ধতি ধাপ (১৪)
ভালোভাবে ভুট্টার দানা সংরক্ষণ করা

  • কংক্রিটের মেঝেতে বা চাটাই বা পলিথিনের উপরে ৮-১০ ঘন্টা দানা বিছিয়ে রেখে ঠান্ডা করতে হবে।
  • পরিষ্কার ছিদ্রমুক্ত ড্রাম অথবা প্লাষ্টিকের বস্তা বা ব্যাগের ভিতরে মোটা পলিথিনের ব্যাগে ভুট্টার দানা ঢুকিয়ে এমন ভাবে রাখতে হবে যেন ভিতরে খালি জায়গা বা বাতাস না থাকে এবং বায়ুরোধী করে মুখ বন্ধ করতে হবে।
  • ড্রাম বা বস্তা, বাঁশ অথবা কাঠের তৈরি পাটাতনের উপর রাখতে হবে। 
  • সংরক্ষিত ভুট্টার দানা বিভিন্ন পোকা যেমন – ভুট্টার শুড় পোকা, সরুই পোকা, ইত্যাদি দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে এজন্য প্রতি সপ্তাহে একবার দেখতে হবে এবং ব্যাগের চারপাশ পরিষ্কার করতে হবে।
  • দেশে প্রচলিত বাঁশের গোলায় একসাথে অনেক ভুট্টার দানা সংরক্ষণ করা যায়, এটা সাশ্রয়ী ও সহজতর, এবং কৃষক ৪-৬ মাস পর্যন্ত এভাবে সংরক্ষণ করতে পারে।

আজকের এই হাইব্রিড ভুট্টা চাষ পদ্ধতি আলোচনাটি এখানেই সমাপ্ত হচ্ছে। আশা করি আমরা হাইব্রিড ভুট্টা চাষ পদ্ধতি বিষয়ে অনেক কিছু জানতে ও বুঝতে পারলাম। এই পোষ্টটি যদি আপনার কোন উপকারে এসে থাকে বা কোন মতামত থেকে থাকে দয়া করে কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করে জানাবেন। আপনাদের কমেন্ট পেলে আমার উৎসাহিত বোধ করি।

আমরা নিয়মিত কৃষি বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য ও আলোচনা আমাদের এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে তুলে ধরে থাকি। আপনি যদি একজন খামারি বা কৃষক হয়ে থাকেন তবে এই ওয়েবসাইটটি আপনার জন্যই। তাই আশা করি আমাদের ওয়েবসাইটি বুকমার্ক/সেভ করে রাখবেন ও নতুন নতুন কৃষি বিষয়ক তথ্য পেতে নিয়মিত ভিজিট করবেন। ধন্যবাদ।

[সূত্র: বিএআরআই ও সিমিট, বাংলাদেশ]

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/krisi

Everything related to animal and plants in the Bangla language!View Author posts

You cannot copy content of this page