Skip to content

 

৭ ধরণের শাকসবজি চাষ পদ্ধতি

৭ ধরণের শাকসবজি চাষ পদ্ধতি by খামারিয়ান

আমরা শাকসবজি প্রতিনিয়তই ফসলের জমিতে, বাগানে, হাটে বাজারে দেখতে পাই। আমরা এগুলো নিজের জমি থেকে বা বাজার থেকে সংগ্রহ করে শাকসবজির চাহিদা পূরণ করে থাকি।

পৃথিবীর অসংখ্য উদ্ভিদ শাকসবজি হিসাবে ব্যবহৃত হয়। আমাদের বাংলাদেশে প্রায় ৬০ জাতের শাকসবজির চাষাবাদ হয়।

উৎপাদন মৌসুমের উপর ভিত্তি করে এসব শাকসবজিকে তিনভাগে ভাগ করা হয়। যথা:

  1. শীতকালীন শাকসবজি
  2. গ্রীষ্মকালীন শাকসবজি
  3. বারমাসি শাকসবজি।

শীতকালীন সবজি:

টমেটো, বাঁধাকপি, ফুলকপি, শিম, গাজর ইত্যাদি।

গ্রীষ্মকালীন সবজি:

করলা, ঝিঙা, পটল, ধুন্দুল, পুঁইশাক ইত্যাদি।

বারমাসি সবজি:

বেগুন, ঢেঁড়স, পেঁপে, কাঁচকলা ইত্যাদি।

শিম, টমেটো প্ৰধানত শীতকালীন সবজি। বর্তমানে দুই একটি জাত বের হয়েছে যা গ্রীষ্মকালেও ফলন দিয়ে থাকে।

গিমা কলমি নামক কলমিশাক প্রায় সারা বছরই চাষ করা যায়।

শসা এবং খিরা মিলিয়ে শসা জাতীয় ফসল সারা বছরই পাওয়া যায়। তাই এসব সবজিকে বারমাসি সবজি বলা হয়।

আমরা এতক্ষণ বিভিন্ন শাকসবজির নাম এবং কোনগুলো কোন মৌসুমে জন্মায় তা জেনেছি। এবার শাকসবজি উৎপাদনের সাথে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াবলি সম্পর্কে জেনে নেই।

কোনো ফসল তথা শাকসবজি চাষ বা উৎপাদন করার পূর্বে নিম্নলিখিত ১০টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াবলি বিবেচনা করা প্রয়োজন:

  1. ভালো বীজ,
  2. বীজতলার জমি নির্বাচন ও তৈরি,
  3. বীজ বপন ও বীজতলার যত্ন,
  4. মূল জমি নির্বাচন ও জমি তৈরি,
  5. বীজ বপন ও রোপণ,
  6. পানি সেচ ও নিকাশ,
  7. আগাছা দমন ও মালচিং,
  8. পোকামাকড় দমন,
  9. রোগ দমন ও
  10. সময়মতো ফসল সংগ্রহ।

শাকসবজি চাষাবাদের বেশ কিছু পদ্ধতি দেশে বিদেশে চালু আছে। এগুলোর মধ্যে সচরাচর ব্যবহৃত কয়েকটি পদ্ধতি হলো পর্যায়ক্রমিক চাষ পদ্ধতি, মিশ্র ফসল পদ্ধতি, রিলে ফসল পদ্ধতি, ফালি ফসল পদ্ধতি, সারিতে ফসল চাষ পদ্ধতি ইত্যাদি।

এখান আমরা এসব শাকসবজির চাষ সম্পর্কে জানব।

(১) পালংশাক চাষ করার পদ্ধতি

পালংশাক বেশ জনপ্রিয়, পুষ্টিকর ও সুস্বাদু পাতা সবজি। এ সবজি অধিক ভিটামিন সমৃদ্ধ। বাংলাদেশে শীতকালে এর চাষ করা হয়।

পালংশাকের জাত:

পুষা জয়ন্তী, কপি পালং, গ্রিন, সবুজ বাংলা ও টকপালং। এছাড়া আছে নবেল জায়েন্ট, ব্যানার্জি জায়েন্ট, পুষ্প জ্যোতি ইত্যাদি।

মাটি:

দোআঁশ উর্বর মাটি বেশি উপযোগী। এছাড়াও এঁটেল, বেলে-দোআঁশ মাটিতেও চাষ করা যায়।

জমি তৈরি:

জমি চাষ ও মই দিয়ে মাটি মিহি করে তৈরি করতে হবে।

সারের পরিমাণ:

সারের নামশতক প্রতি
 গোবর ৪০ কেজি
 ইয়রিয়া ১ কেজি
 টিএসপি ৫০০ গ্রাম
 এমওপি ৫০০ গ্রাম

সার প্রয়োগের নিয়মাবলি:

  • ইউরিয়া ছাড়া সব সার জমির শেষ চাষের সময় প্রয়োগ করতে হয়। তবে গোবর জমি তৈরির প্রথম দিকে প্রয়োগ করাই উত্তম।
  • ইউরিয়া সার চারা গজানোর ৮-১০ দিন পর থেকে ১০-১২ দিন পর পর ২-৩ কিস্তিতে উপরি প্রয়োগ করে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে।

আইল নির্বাচন ও তৈরি:

  • জমিতে আইল তৈরি করেও পালংশাক চাষ করা যায়। উঁচু আইল পালংশাকের জন্য নির্বাচন করা হয়।
  • উঁচু আইলে কিছুটা আগাম পালংশাক বীজ বপন করা যায়।
  • কোদাল দিয়ে আইলের মাটি কুপিয়ে আগাছা পরিষ্কার করে জমি তৈরি করতে হবে।

সার প্রয়োগ:

পালংশাকের জমিতে নিয়ম অনুযায়ী গোবর, ইউরিয়া, টিএসপি, এমওপি সার প্রয়োগ করতে হবে।

বীজ বপনের হার:

প্রতি আইলেপ্রতি শতকেপ্রতি একরেপ্রতি হেক্টরে
৩৫-৪০ গ্রাম১১৭ গ্রাম৯-১১ কেজি২৫-৩০ কেজি

বীজ বপনের সময়:

সেপ্টেম্বর-জানুয়ারি মাস।

বীজ বপনের দূরত্ব:

১০ সেমি দূরে দূরে বীজ বপন করতে হয়। তবে ছিটিয়েও বীজ বপন করা যায়।

অঙ্কুরোদগমের সময়:

বীজ বপনের পর অঙ্কুরোদগমে প্রায় ৭-৮ দিন সময় লাগে।

বীজ বপন বা চারা রোপণ:

  • জমিতে আইলে সরাসরি বীজ ছিটিয়ে বা গর্ত তৈরি করে মাদায় বীজ বপন করা যায় অথবা বীজতলায় চারা তৈরি করে সে চারা রোপণ করেও পালংশাক চাষ করা যায়।
  • বীজ বপনের পূর্বে বীজ ২৪ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হয়।
  • নির্দিষ্ট দূরত্বে গর্ত তৈরি করে প্রতি মাদায় ২-৩ টি করে বীজ বপন করতে হয়।

পরিচর্যা:

আগাছা নিধন জমিতে আগাছা দেখা দিলেই তা তুলে ফেলতে হবে।

সার উপরিপ্রয়োগ:

সময় মতো নিয়মানুযায়ী সার উপরিপ্রয়োগ করতে হবে।

সেচ প্রয়োগ:

এ শাকের জন্য প্রচুর পানির প্রয়োজন হয়। তাই সারের উপরিপ্রয়োগের আগে মাটির ‘জো’ অবস্থা বুঝে সেচ দেওয়া প্রয়োজন। চারা রোপণের পর হালকা সেচ দেওয়া প্রয়োজন।

শূন্যস্থান পূরণ:

কোনো স্থানের চারা মরে গেলে অথবা বীজ না গজালে সেখানে ৭-১০ দিনের মধ্যে পুনরায় চারা রোপণ করতে হয়।

মাটি আলগাকরণ:

গাছের দ্রুত বৃদ্ধির জন্য মাটিতে বেশি দিন রস ধরে রাখা এবং মাটিতে যাতে সহজে আলো বাতাস প্রবেশ করতে পারে সেজন্য প্রতিবার পানি সেচের পর আইল/জমির উপরের মাটি আলগা করে দিতে হয়।

গাছ পাতলা করণ:

বীজ গজানোর ৮-১০ দিন পর প্রতি মাদায় ২টি করে চারা রেখে অতিরিক্ত চারা উঠিয়ে ফাঁকা জায়গায় রোপণ করতে হয়।

ক্ষতিকর পোকামাকড়:

পালংশাকে মাঝে মাঝে পিপীলিকা, উরচুঙ্গা, উইপোকা এবং পাতাছিদ্রকারী পোকার আক্রমণ দেখা যায়। আক্রমণ হলে আক্রান্ত গাছ তুলে ফেলতে হয়।

রোগ ব্যবস্থাপনা:

পালংশাকের প্রধান রোগের মধ্যে রয়েছে-

  • গোড়া পচা রোগ।
  • পাতার দাগ রোগ।
  • পাতা ধ্বসা রোগ।

এছাড়া পালংশাকে আরও দুইধরনের রোগ দেখা যায়। যেমন- ডাউনি মিলডিউ, পাতায় গোলাকৃতির দাগ।

ফসল সংগ্রহ:

বীজ বপনের এক মাস পর থেকে পালংশাক সংগ্রহ শুরু করা যায় এবং গাছে ফুল না আসা পর্যন্ত যে কোনো সময় সংগ্রহ করা যায়।

ফলন:

প্রতি আইলেপ্রতি শতকেপ্রতি একরেপ্রতি হেক্টরে
৮-১০ কেজি২৮-৩৭ কেজি২৮০০-৩৮০০ কেজি৭-৯ টন

(২) পুঁইশাক চাষ করার পদ্ধতি

পুঁইশাক বাংলাদেশের প্রধান গ্রীষ্মকালীন পাতাজাতীয় সবজি, তবে সারা বছর ধরেই পাওয়া যায়। এতে ভিটামিন এ, ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম পর্যাপ্ত পরিমাণে রয়েছে।

See also  বহুস্তর বিশিষ্ট পদ্ধতিতে সবজি চাষ

পুঁইশাক সাধারণত বসতবাড়ির আঙিনার বেড়ায় বা মাচায় জন্মাতে দেখা যায়। এছাড়া ব্যবসায়িক ভিত্তিতে চাষ করা হয়।

জাত:

পুঁইশাকের দুইটি জাতের চাষ হয়ে থাকে। যথা-

  1. লাল পুঁইশাক: পাতা ও কাণ্ড লালচে।
  2. সবুজ পুঁইশাক: পাতা ও কাণ্ড সবুজ। এছাড়াও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনিস্টিটিউট কর্তৃক উদ্ভাবিত ২টি জাত আছে। যেমন: বারি-১, বারি-২।

জমি তৈরি:

  • সাধারণত মার্চ-এপ্রিল বা চৈত্র মাস পুঁইশাক লাগানোর ভালো সময়। তবে সেচের সুবিধা থাকলে ফাল্গুন মাস হতেই এর চাষ করা যেতে পারে।
  • চারা রোপণের পূর্বে জমি ভালোভাবে চাষ ও ম‍ই দিয়ে ঝুরঝুরা করে তৈরি করে নিতে হবে। এ সবজি চাষের জন্য উর্বর বেলে-দোআঁশ ও দোআঁশ মাটি উত্তম।

সার প্রয়োগ:

পুঁইশাক চাষে গোবর বা কমপোস্ট সার ব্যবহার করা ভালো। এতে মাটির গুণাগুণ বজায় থাকবে ও পরিবেশ রক্ষা হবে।

পুঁইশাকের জন্য প্রতি শতকে বা ৪০ বর্গমিটার জমিতে নিম্নরূপ সার ব্যবহার করতে হবে।

 সারের নামশতক প্রতি
 গোবর ৪০ কেজি
 ইউরিয়া ১ কেজি
 টিএসপি ৫০০ গ্রাম
 এমওপি ৫০০ গ্রাম

সার প্রয়োগের নিয়মাবলি:

  • ইউরিয়া ছাড়া সব সার জমির শেষ চাষের সময় প্রয়োগ করতে হয়। তবে গোবর জমি তৈরির প্রথম দিকে প্রয়োগ করাই উত্তম।
  • ইউরিয়া সার চারা গজানোর ৮-১০ দিন পর থেকে ১০-১২ দিন পরপর ২-৩ কিস্তিতে উপরি প্রয়োগ করে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে।

বীজ বপন ও চারা রোপণ:

  • মার্চ-এপ্রিল মাসে পুঁইশাকের বীজ বপন করতে হয়।
  • বীজ ও শাখা কলম দিয়ে পুঁইয়ের চাষ করা যায়। তবে বীজ দিয়ে চারা তৈরি করে এবং তা রোপণ করে চাষ করাই ভালো।
  • পুঁইশাকের চারা ৬০-৮০ সেমি দূরে দূরে সারি করে ও সারিতে ৫০ সেমি দূরে দূরে রোপণ করতে হবে।
  • বর্ষার সময় পুঁইশাকের লতার কিছু অংশ কেটে মাটিতে রোপণ করা যায়।

পরিচর্যা:

  • নিড়ানি দিয়ে জমি আগাছামুক্ত রাখতে হবে।
  • খরার সময় নিয়মিত পানি সেচ দিতে হবে।
  • সেচের পর নিড়ানি দিয়ে মাটি ঝুরঝুরা করে দিতে হবে।
  • জমিতে যাতে পানি না জমে সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে।

পোকামাকড়:

এ শাকের ক্ষতিকর পোকার মধ্যে ওঁয়োপোকা উল্লেখযোগ্য। এ পোকা গাছের পাতা, কচি ডগা খেয়ে ক্ষতি করে থাকে।

ফসল সংগ্রহ ও ফলন:

  • পুঁইশাকের ডগা লম্বা হতে শুরু করলেই ডগা কেটে সংগ্রহ করতে হবে। এভাবে ডগা কেটে সংগ্রহ করলে নতুন ডগা গজাবে।
  • নতুন ডগা কয়েকবার কেটে ফসল সংগ্রহ করা যায় ভালোভাবে চাষ করলে প্রতি শতকে ১৩০-১৫০ কেজি পুঁইশাকের ফলন পাওয়া যায় ৷

(৩) বেগুন চাষ করার পদ্ধতি

বেগুন অতি পরিচিত একটি সবজি। যা সারা বছর পাওয়া যায়।

এদেশ ছাড়াও ভারত, চীন, জাপান, পাকিস্তান, ফিলিপাইন, যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ ইউরোপীয় দেশসহ অনেক দেশে এর চাষ হয়ে থাকে।

ইসলামপুরী, শিংনাথ, উত্তরা, নয়নকাজল, মুক্তকেশী, খটখটিয়া, তারাপুরী, নয়নতারা উল্লেখযোগ্য।

জাত:

বারমাসী কালো ও সাদা বর্ণের জাত (ডিম বেগুন) রয়েছে। বিদেশি জাতের মধ্যে ব্ল্যাক বিউটি, ফ্লোরিডা বিউটি, উল্লেখযোগ্য।

বীজ বপন ও চারা উৎপাদন:

  • বেগুন চাষের জন্য চারা উৎপাদন একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। শীতকালীন বেগুন চাষের জন্য শ্রাবণ মাসের মাঝামাঝি হতে আশ্বিন মাস এবং বর্ষাকালীন বেগুন চাষের জন্য চৈত্র মাস পর্যন্ত বীজ বপন করা যায়।
  • বালি, কমপোস্ট ও মাটি সমপরিমাণে মিশিয়ে বীজতলা তৈরি করতে হয়।
  • বীজ গজানোর ৮-১০ দিন পর চারা তুলে দ্বিতীয় বীজতলায় রোপণ করতে হয়।

জমি নির্বাচন:

দোআঁশ ও বেলে দোআঁশ মাটি বেগুন চাষের জন্য সবচেয়ে ভালো। তবে পানি অপসারণের ভালো ব্যবস্থা থাকলে এঁটেল ও দোআঁশ মাটিতেও বেগুনের চাষ করা যায়।

জমি তৈরি:

জমি তৈরির জন্য ৪-৫ বার আড়াআড়ি চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরা করে তৈরি করতে হবে। ভালো ফসল পেতে হলে জমি গভীরভাবে চাষ করতে হবে।

সারের নাম শতক প্রতি
 গোবর ৪০ কেজি
 ইউরিয়া ১ কেজি
 টিএসপি ৫০০ গ্রাম
 এমওপি ৫০০ গ্রাম

সার প্রয়োগের নিয়মাবলি:

  • ইউরিয়া ছাড়া সব সার জমির শেষ চাষের সময় প্রয়োগ করতে হয়। তবে গোবর জমি তৈরির প্রথম দিকে প্রয়োগ করাই উত্তম।
  • ইউরিয়া সার চারা গজানোর ৮-১০ দিন পর থেকে ১০-১২ দিন পর পর ২-৩ কিস্তিতে উপরি প্রয়োগ করে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে।

চারা রোপণ:

  • এক মাস বয়সের সবল চারা কাঠির সাহায্যে তুলে নিতে হবে।
  • চারাগাছের শিকড়ের যেন ক্ষতি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
  • এর পর ৭৫ সেমি দূরত্বের সারিতে ৬০ সেমি দূরে দূরে চারা রোপণ করতে হবে।

পরিচর্যা:

  • মাটিতে রসের অভাব হলে বা মাটি শুকিয়ে গেলে ১০-১৫ দিন পর পানি সেচ দিতে হবে।
  • সেচের পর নিড়ানি দিয়ে মাটি ঝুরঝুরা করে দিতে হবে।
  • আগাছা নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে।

বেগুনের বালাই ব্যবস্থাপনা:

এ দেশে কমপক্ষে ১৬ প্রজাতির পোকা এবং একটি প্রজাতির মাকড় বেগুন ফসলের ক্ষতি করে থাকে।

বেগুনের প্রধান শত্রু ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকা। এই পোকা বেগুনের ডগা ও ফল ছিদ্র করে।

আক্রান্ত ডগা ও ফল সংগ্রহ করে ধ্বংস করে ফেলতে হবে। এছাড়াও ম্যালাথিয়ন বা সুমিথিয়ন নামক কীটনাশকের যে কোনো একটি ১০ লিটার পানিতে ১০ মিলি মিশিয়ে ছিটিয়ে দিতে হবে।

এছাড়া নিম্নলিখিত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বেগুনের বালাই দমন করা যায়-

  • কলম চারা ব্যবহারের মাধ্যমে বেগুনের উইল্টরোগ দমন করা যায়।
  • ফেরোমন ও মিষ্টিকুমড়ার ফাঁদ ব্যবহারের মাধ্যমে বেগুন জাতীয় ফসলের মাছি পোকা দমন করা যায়।
  • মুরগির পচনকৃত বিষ্ঠা ও সরিষার খৈল ব্যবহারের মাধ্যমে বিভিন্ন সবজি যেমন- বেগুন, টমেটো, শশা, বাঁধাকপি ফসলের মাটি বাহিত রোগ দমন করা যায়।
  • সঠিক সময়ে আগাছা দমন ও মালচিং করলে ফলন বহুগুণে বৃদ্ধি পায়।
  • পোকা প্রতিরোধী জাত ব্যবহারের মাধ্যমে বেগুনের ডগা ও ফলের মাজরা পোকা দমন করা যায়। যেমন- বারি বেগুন-১ (উত্তরা), বারিবেগুন-৫ (নয়নতারা), বারিবেগুন-৬, বারিবেগুন-৭ ইত্যাদিণ পোকা প্রতিরোধী জাত।
  • পোকার আক্রমণমুক্ত চারা ব্যবহার করতে হবে।
  • সুষম সার ব্যবহার করে।
  • শস্যপর্যায় অনুসরণ করে
See also  বসতবাড়িতে সবজি চাষ

ফসল সংগ্রহ ও ফলন:

  • চারা রোপণের ৩০-৪০ দিনের মধ্যে গাছে ফুল আসে।
  • বেগুনের ফল বীজ শক্ত হওয়ার আগেই সংগ্রহ করতে হয়।
  • সাধারণত প্রতি শতকে বা ৪০ বর্গমিটার জমিতে ১৪০ কেজি বেগুন উৎপন্ন হয়। উত্তরা বেগুন ২৫০ কেজি পর্যন্ত ফলন দেয়।

বিপণন:

বেগুন ফসল সংগ্রহের পর ঠাণ্ডা ও খোলা জায়গায় কয়েক দিন সংরক্ষণ করা যায়। তবে বস্তায় বেশিক্ষণ রাখা ঠিক হবে না। এতে বেগুন তার স্বাভাবিক রং হারাতে পারে এবং পচে যেতে পারে। 

(৪) মিষ্টি কুমড়া চাষের পদ্ধতি

কুমড়া অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি সবজি। এ জাতীয় সবজির কিছু গ্রীষ্মকালীন ও কিছু শীতকালীন জাত আছে যা বাংলাদেশে জন্মায়। আবার কিছু জাত আছে সারা বছরই সংরক্ষণ করে সবজির চাহিদা পূরণ করা যায়।

কুমড়া জাতীয় সবজির মধ্যে মিষ্টিকুমড়া, চালকুমড়া ও লাউ প্রধান।

মিষ্টি কুমড়ায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘এ’ থাকে। এর ফল কাঁচা ও পাকা উভয় অবস্থায়ই খাওয়া যায়। তবে এর প্রধান ব্যবহার পাকা অবস্থায়।

কুমড়ার পাতা ও কচি ডগা খাওয়া যায়। মিষ্টিকুমড়া সচরাচর বৈশাখী, বর্ষাতি ও মাঘী এ তিন শ্রেণিতে বিভক্ত।

চাষের সময়:

বৈশাখী কুমড়ার বীজ মাঘ মাস, বর্ষাতি কুমড়ার বীজ বৈশাখ এবং মাঘী কুমড়ার বীজ শ্রাবণ মাসে বপন করতে হয়।

মাদা তৈরি ও সার প্রয়োগ:

  • মাদার জন্য সাধারণত ৩-৪ মিটার দূরত্বে ৮০-১০০ ঘন সেমি আকারের গর্ত তৈরি করতে হবে।
  • প্রতি গর্তে গোবর বা কমপোস্ট ৫ কেজি, ইউরিয়া ১৩০ গ্রাম, টিএসপি ২০০ গ্রাম, এমওপি ১৫০ গ্রাম, জিপসাম ৯০ গ্রাম ও দস্তা সার ৫ গ্রাম দিতে হবে।
  • ইউরিয়া ছাড়া অন্যান্য সার বীজ বোনার ৮-১০ দিন আগে গর্তের মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে।
  • ইউরিয়া দুইভাগে বীজ বোনার ১০ দিন পর প্রথমবার ও ৩৫দিন পর দ্বিতীয়বার উপরি প্রয়োগ করতে হবে।
  • মাদার চারপাশে অগভীর একটি নালা কেটে সার নালার মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে।

বীজ বপন:

মাদা তৈরি হতে ১০-১২ দিন পর প্রতি মাদায় ২-৩ টি বীজ মাদার মাঝখানে রোপণ করতে হবে।

পরিচর্যা:

  • আগাছা থাকলে তা পরিষ্কার করে চারা গাছের গোড়ায় কিছুটা মাটি তুলে দিতে হবে।
  • মাঝে মাঝে নিড়ানি দিয়ে গাছের গোড়ার মাটি আলগা করে দিতে হবে।
  • গোড়ার কাছাকাছি কিছু খড় ১৫-২০ দিন পর বিছিয়ে দিতে হবে।
  • ফল ধরা শুরু করলে ফলের নিচেও খড় বিছিয়ে দিতে হবে।
  • বৈশাখী কুমড়া মাটিতে হয়, অন্যান্য কুমড়ার জন্য মাচার ব্যবস্থা করতে হয়।
  • গাছের লতাপাতা বেশি হলে কিছু লতাপাতা ছেঁটে দিতে হবে।

পোকা ও রোগ দমন:

  • কুমড়া জাতীয় গাছের বিভিন্ন পোকার মধ্যে লাল পোকা, কাঁটালে পোকা এবং ফলের মাছি উল্লেখযোগ্য। এ পোকা দমনের জন্য সেভিন ডায়াজিনন প্রয়োগ করা যেতে পারে।
  • আর এ জাতীয় সবজির রোগের মধ্যে পাউডারি মিলডিও, ডাউনি মিলডিও ও এনথ্রাকনোজ প্রধান। দুই সপ্তাহ পর পর ডায়াথেন এম ৪৫ প্রয়োগ করতে হবে।

ফসল সংগ্রহ ও ফলন:

মিষ্টিকুমড়া কচি অবস্থা থেকে শুরু করে পরিপূর্ণ পাকা অবস্থায় খাওয়া যায়। তাই কচি অবস্থা থেকেই ফসল সংগ্রহ শুরু হয়। কুমড়া বেশ পাকিয়ে সংগ্রহ করলে অনেকদিন ঘরে রাখা যায়। শতক প্রতি ফলন ৮০-১০০ কেজি হতে পারে।

(৫) চালকুমড়া চাষ করার পদ্ধতি

গ্রামবাংলায় ঘরের চালে এ সবজি গাছ উঠানো হয় বলে এটি চাল কুমড়া নামে পরিচিত। তবে জমিতে মাচায় ফলন বেশি হয়।

কচি ফল (জালি) তরকারি হিসাবে এবং পরিপক্ব ফল মোরব্বা ও হালুয়া তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।

চাল কুমড়ার জাত:

বাংলাদেশে কুমড়ার কোনো অনুমোদিত জাত নেই। তবে বারি কর্তৃক উদ্ভাবিত বারি চালকুমড়া-১ নামের জাতটি বাংলাদেশের সব অঞ্চলে চাষ করা যায়।

মাটি:

দোআঁশ মাটিতে এটি চাষ করা হয়। তবে উপযুক্ত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কাদা মাটি ছাড়া যে কোনো মাটিতে চাষ করা যায়।

চাষের সময়:

ফেব্রুয়ারি-মে।

মাদা তৈরি:

  • জমি ভালোভাবে চাষ করে মই দিয়ে ঢেলা ভেঙে সমান করতে হবে।
  • জমিতে মাদার উচ্চতা হবে ১৫-২০ সেমি, প্রস্থ হবে ২.৫ মিটার এবং লম্বা জমির সুবিধামতো নিতে হবে। এভাবে পর পর মাদা তৈরি করতে হবে।
  • এরূপ পাশাপাশি দুইটি মাদার মাঝখানে ৬০সেমি প্রশস্ত সেচ ও নিকাশ নালা থাকবে।
  • পারিবারিক বাগানে চাল কুমড়ার চাষ করতে হলে মাদায় বোনার পর চারা গজালে তা মাচা, ঘরের চাল কিংবা কোনো বৃক্ষের উপর তুলে দেওয়া হয়।

মাদায় সার প্রয়োগ:

প্রতি মাদায় গোবর ১০ কেজি, টিএসপি ২০০ গ্রাম, এমওপি ৫০ গ্রাম দিতে হবে।

মাদায় গর্ত তৈরি:

মিষ্টিকুমড়া চাষের নিয়মের অনুরূপ।

মাদার গর্তে বীজবপন:

  • প্রতি মাদায় সারিতে ৪-৫ টি বীজ বপন করতে হবে।
  • ৫-৭ দিনের মধ্যেই বীজগুলো গজাবে।
  • চারা গজানোর কয়েকদিন পর প্রতি মাদায় ২-৩ টি সবল গাছ রাখতে হবে।

পরিচর্যা:

  • মাদা শুকিয়ে গেলে সেচ দিতে হবে।
  • বর্ষার পানি জমলে তা নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে।
  • গাছের বৃদ্ধির জন্য মাচা দিতে হবে।
  • মাদার আগাছা পরিষ্কার করতে হবে।
  • গাছের গোড়ায় মাটি উঠিয়ে দিতে হবে।

বালাই ব্যবস্থাপনা:

  • ফলের মাছি পোকা, রেড পামকিন বিটল, ইপিল্যাকনা বিটল, লাল মাকড় প্রভৃতি পোকা ফলের ক্ষতি করে থাকে। কীটনাশক প্রয়োগ করে এসব পোকা দমন করা যায়।
  • এছাড়া পাউডারি মিলডিও পাতার উপরে সাদা পাউডার এবং ডাউনি মিলডিউ পাতার নিচে ধূসর বেগুনি রং প্রভৃতি রোগ পাতার ক্ষতি করে গাছকে দুর্বল করে ফেলে। ছত্রাক নাশক বা বোর্দো মিক্সার প্রয়োগ করে এসব রোগ থেকে রেহাই পাওয়া যায়।
See also  বহুস্তর বিশিষ্ট পদ্ধতিতে সবজি চাষ

(৬) লাউ চাষ করার পদ্ধতি

বাংলাদেশে লাউ একটি জনপ্রিয় সবজি। লাউয়ের চেয়ে এর শাক বেশি পুষ্টিকর।

লাউয়ের জাত:

বাংলাদেশে লাউয়ের অনেক জাত চোখে পড়ে। ফলের আকার-আকৃতি এবং গাছের লতানোর পরিমাণ থেকেও জাতগুলো পাথর্ক্য করা যায়।

যাহোক দেশীয় উন্নত এবং গবেষণালব্ধ কিছু জাতের নাম নিম্নে উল্লেখ করা হলো-

  1. দেশীয় জাত: গাঢ় সবুজ থেকে হালকা সবুজ।
  2. উন্নত জাত: বারিলাউ-১, বারিলাউ-২।
  3. হাইব্রিড জাত: গোলাকার বা লম্বা হালকা সবুজ।

মাটি:

প্রায় অনেক মাটিতেই লাউ ভালো উৎপাদিত হয়। তবে দোআঁশ মাটিতে লাউয়ের ফলন ভালো হয়। বেলে মাটিতে জৈব পদার্থ যোগ করে প্রয়োজনীয় সেচ দিয়ে সহজে লাউ চাষ করা যায়।

বীজ বপনের সময়:

আগস্ট-নভেম্বর।

(মাটি তৈরি, মাদা তৈরি, মাদায় সার প্রয়োগ ও মাদায় গর্ত তৈরি প্রভৃতি উপরে বর্ণিত চালকুমড়া চাষের বর্ণনার অনুরূপ।)

বীজ বপন:

প্রতি মাদায় ৪-৫টি বীজ বপন করতে হবে। ৪-৫ দিনের মধ্যেই বীজ অঙ্কুরিত হবে।

বাউনি ও মাচা তৈরি:

গাছ যখন ১৫-২০ সেন্টিমিটার বড় হয় তখন গাছের গোড়ার পাশে বাঁশের ডগা কঞ্চিসহ মাটিতে পুঁতে দিতে হয়।

পরিচর্যা:

চারা একটু বড় হলে প্রতি মাদায় ২টি করে চারা রেখে বাকিগুলো তুলে ফেলতে হবে। মাটি নিড়ানি দিয়ে আলগা করে ঝুরঝুরা করতে হবে। প্রতিদিন লাউগাছে প্রয়োজনীয় পরিমাণ পানি দিতে হবে।

বালাই ব্যবস্থাপনা:

এ সবজিতে রেড পামকিন বিটল পোকার আক্রমণ হতে পারে। এ পোকা দেখা দেওয়ার সাথে সাথে ধরে মেরে ফেলতে হবে। এছাড়া কিছু প্রজাতির ঘাসের মাধ্যমে লাউয়ের ‘মোজাইক ভাইরাস’ রোগ হতে পারে।

ফসল সংগ্ৰহ:

ফল তোলা বা সংগ্রহ করার উপযুক্ত পর্যায় হবে যখন- ফলের গায়ে প্রচুর গুং এর উপস্থিতি থাকবে। ফলের গায়ে নখ দিয়ে চাপ দিলে খুব সহজেই নখ ডেবে যাবে। পরাগায়ণের ১২-১৫ দিন পর ফল সংগ্রহের উপযোগী হয়।

ফলন:

বারি লাউ-১ এবং বারি লাউ-২ চাষ করলে যথাক্রমে হেক্টর প্রতি ৩৫-৪৫ টন (১৪০-১৮০ কেজি/শতক) পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়।

(৭) শিম চাষ করার পদ্ধতি

শিম বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় সবজি। শিমে প্রচুর পরিমাণে আমিষ থাকে। এটি শীতকালীন সবজি।

মাটি:

দোআঁশ মাটি শিম চাষের জন্য উত্তম। তবে উত্তম ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সব ধরনের মাটিতে শিম চাষ করা যায়।

জাত:

বারি শিম-১, বারি শিম-২, বারি শিম-৩, বারি শিম-৪, ইপসা শিম, ঘৃত কাঞ্চন, কার্তিকা, নলডক, বাঘনখা, বারমাসি প্রভৃতি শিমের জনপ্রিয় জাত।

বীজ বপনের সময়:

  • মধ্য জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বীজ বোনার উপযুক্ত সময়।
  • জমি তৈরি বেশি জমিতে আবাদ করলে জমি কয়েকটি চাষ ও ম‍ই দিয়ে ঢেলা ভেঙে সমান করতে হবে। তবে বসতবাড়ির আশে পাশে, পুকুর পাড়ে, পথের ধারে ও জমির আইলে সাধারণত শিমের চাষ করা হয়।
  • মাদা তৈরি জমিতে মাদা (গর্ত) ৪৫ সেমি X ৪৫ সেমি X ৪৫ সেমি আকারে তৈরি করতে হবে।
  • এক মাদা থেকে আরেক মাদার দূরত্ব ২.৫-৩ মিটার।

সার প্রয়োগ

  • প্রতিটি মাদা পচা আবর্জনা সার দিয়ে পূরণ করতে হবে।
  • তারপর প্রতিটি মাদায় খৈল গুঁড়া, ছাই, টিএসপি, মিউরেট অব পটাশ মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে।
  • মাদাটি এমনভাবে ভরতে হবে যেন মাটি থেকে ভরাটকৃত মাদার উচ্চতা ১০ সেমি হয়।
  • শিম ফসলটিতে নাইট্রোজেন সারের দরকার হয় না। কারণ এটি লিগুম পরিবারের ফসল। এদের শিকড়ে নডিউল বা গুটি তৈরি হয় যাতে প্রচুর বায়ুমণ্ডলীয় নাইট্রোজেন জমা থাকে।

বীজ বপন:

  • সার প্রয়োগের ৭-৮ দিন পর প্রতি মাদায় ৫-৬ টি বীজ বপন করতে হবে।
  • চারা গজানোর পর প্রতি মাদায় ২টি সুস্থ ও সবল চারা রেখে বাকিগুলো তুলে ফেলতে হবে।
  • পরিচর্যা গাছ ঠিকমতো বাড়ার জন্য মাচা দিতে হবে।
  • গাছের গোড়ার মাটি শক্ত হলে নিড়ানি দিয়ে তা আলগা করতে হবে।
  • মাটিতে রসের অভাব হলে পানি সেচ দিতে হবে।
  • বর্ষায় যাতে গাছের গোড়ায় পানি না জমে সে জন্য গোড়ার মাটি উঠিয়ে দিতে হবে।
  • চারা বড় হতে থাকলে ১৫-২০ দিন পর পর ২-৩ কিস্তিতে ৬০ গ্রাম টিএসপি ও ৬০ গ্রাম এমওপি সার উপরি প্রয়োগ করতে হবে।

বালাই ব্যবস্থাপনা:

  • শিম গাছে জাব পোকা, থ্রিপস, পড বোরার ইত্যাদির আক্রমণ হতে পারে।
  • জাব পোকা নতুন ডগা, পাতা, ফুল ও ফল ইত্যাদির রস চুষে খায়।
  • নিমের বীজের শাঁস পিষে পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করে এদের দমন করা যায়।
  • ভাইরাস আক্রান্ত গাছগুলো মাটিসহ উঠিয়ে গভীর গর্তে পুঁতে দিতে হবে।

ফসল সংগ্ৰহ:

  • জাত ভেদে বীজ বপনের ৯৫-১৪৫ দিন পর শিম গাছ থেকে শিম উঠানো যায়।
  • বীজ হিসাবে শিম সংগ্রহ করতে শিম যখন গাছে শুকিয়ে হলদে বর্ণ হয়, তখন সংগ্রহ করা হয়।
  • শিম থেকে বীজ বের করে পরিষ্কার ও শুষ্ক পাত্রে নিমের শুকনা পাতার গুঁড়াসহ সংরক্ষণ করতে হবে।
  • জাতভেদে শিমের ফলনের তারতম্য হয়ে থাকে। যেমন- বারি শিম-১ জাতের শিমের বীজ হেক্টরপ্রতি ২-৩ টন (৮-১২ কেজি/শতক) উৎপাদিত হয়।
  • সবজি হিসাবে শিম পুরা মৌসুমে উঠানো যায়। আশ্বিন-কার্তিক মাসে শিম ধরে। শিম গাছ ৪ মাসেরও বেশি সময় ধরে ফলন দেয় ।

এতক্ষণ আমারা ৭ ধরণের শাকসবজি চাষ পদ্ধতি জানলাম, এখন আমরা শাকসবজির গুরুত্ব সম্পর্কে কিছু আলোচনা করব।

শাকসবজিতে প্রচুর পুষ্টি বিদ্যমান। বিশ্বের উন্নত দেশসমূহে সবজির উৎপাদন ও ব্যবহার অতি উচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।

আধুনিক পদ্ধতিতে শাকসবজি চাষ করে একদিকে পারিবারিকভাবে চাহিদা মেটানো যায় এবং অন্য দিকে উদ্বৃত্তগুলো বিক্রি করে বাড়তি আয়ও করা যায়।

কাজেই খাদ্য, ভিটামিন, খনিজ ও অর্থকরী ফসল হিসাবে শাকসবজি চাষ করা খুবই জরুরি।

খাদ্য মান হিসাবে শাকসবজি:

শাকসবজিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, বি ও সি থাকে। এ ছাড়া আমিষ, ক্যালরি ও খনিজ পদার্থের উৎস হিসাবেও শাকসবজির গুরুত্ব অনেক।

ভেষজ গুণাগুণ হিসাবে শাকসবজি:

শাকসবজির ভেষজ গুণাগুণ হিসাবে অনেক অবদান রয়েছে। যেমন- শশা হজমে ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার কাজ করে। রসুনে বাত রোগ সারে ইত্যাদি।

অর্থনৈতিক দিক থেকে শাকসবজি:

মানবদেহের জন্য শাকসবজি অত্যাবশ্যক। সুস্থ ও সবল দেহ নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য প্রত্যেককে পর্যাপ্ত পরিমাণে শাকসবজি গ্রহণ করতে হয়। কাজেই শাকসবজি উৎপাদনে একদিকে পরিবারের চাহিদা মেটানো যায় অন্যদিকে এগুলো বিক্রি করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবানও হওয়া যায়।

শাকসবজি চাষ করে পতিত জমির ব্যবহার করা যায়, বৈদেশিক মুদ্রা আয়, বেকার সমস্যার সমাধান, নতুন শিল্পের সৃষ্টি ও বিকাশ ঘটে এবং মহিলা ও পারিবারিক শ্রমশক্তিকে কাজে লাগানো যায়।

অতএব উপরের আলোচনা হতে বলা যায় যে, বাংলাদেশে শাকসবজি উৎপাদন সব দিক দিয়ে বিশেষভাবে লাভজনক এবং গুরুত্বপূর্ণ।

[সূত্র: এনসিটিবি]

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/krisi

Everything related to animal and plants in the Bangla language!View Author posts

You cannot copy content of this page