Skip to content

 

বীজ প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণের আধুনিক পদ্ধতি

বীজ প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণের আধুনিক পদ্ধতি

(১) বীজ প্রক্রিয়াজাতকরণ

ফসল কাটার পর ফসলের দানাকে বীজে পরিণত করা এবং পরবর্তী বপনের পূর্ব পর্যন্ত বীজের উন্নতমান ও অঙ্কুরোদগম ক্ষমতাকে বজায় রাখার জন্য বীজের সর্বপ্রকার পরিচর্যাকে বীজ প্রক্রিয়াজাতকরণ বলে।

বীজ শুকিয়ে মান ও আকার অনুযায়ী ভাগ করা এবং সর্বশেষ সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা বীজ প্রক্রিয়াজাতকরণের গুরুত্বপূর্ণ কার্যকলাপ।

বীজকে সুষ্ঠুভাবে প্রক্রিয়াজাত করলে যে সুফল পাওয়া যায়-

  1. বীজের বিশুদ্ধতা বৃদ্ধি পায়;
  2. বীজ দেখতে আকর্ষণীয় হয়;
  3. বীজের অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা বাড়ে।

(২) বীজ সংরক্ষণের আধুনিক পদ্ধতি ও শর্তসমূহ

বীজের উৎপাদন, শুকানো, প্রক্রিয়াজাতকরণ, মান নিয়ন্ত্রণ, বিপণন যাবতীয় কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করাকেই বীজ সংরক্ষণ বলে।

বীজ উৎপাদন থেকেই বীজ সংরক্ষণের শুরু। জমিতে এর বপন বা রোপণের মাধ্যমে বীজ সংরক্ষণ প্রক্রিয়া বিপণন যাবতীয় কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করাকেই বোঝায়।

(৩) সংরক্ষণের জন্য বীজ উৎপাদন

বীজ শস্য উৎপাদনের জন্য নিম্নোক্ত বিষয়গুলো মনে রাখা দরকার-

  1. কেবল বীজের জন্যই ফসলের চাষ করা;
  2. নির্বাচিত জমির আশপাশের জমিতে ঐ নির্দিষ্ট বীজ ফসলের অন্য জাতের আবাদ না করা;
  3. বীজ উৎপাদনের জন্য নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান থেকে বীজ সংগ্রহ করা;
  4. বীজের চারা বৃদ্ধিকালে জমি থেকে ভিন্ন জাতের গাছ তুলে ফেলা;
  5. বীজের ক্ষেত ঘন ঘন পরিদর্শন করা যাতে করে, আগাছা দমন, ভিন্ন জাতের গাছ তোলা ও রোগবালাই ও পোকান্ডমাকড়ের উপদ্রব ইত্যাদি সম্পর্কে সঠিক ব্যবস্থা নেওয়া যায়;
  6. ফসলের পরিপক্বতার দিকে দৃষ্টি রাখা;
  7. পরিষ্কার পরিচ্ছন্নভাবে ফসল কাটা, মাড়াই করা ও ঝাড়া।

(৪) বীজ শুকানোর ২টি পদ্ধতি

বীজকে দীর্ঘায়ু ও পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য বীজকে শুকানো প্রয়োজন। বীজের জীবনীশক্তি ও অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা বাড়াতে বীজ শুকানোর কোনো বিকল্প নেই।

প্রকৃতপক্ষে বীজের আর্দ্রতা একটি স্ট্যান্ডার্ড মাত্রায় আনার জন্যই বীজ শুকানো হয়। ক্ষেত থেকে যখন ফসল কাটা হয় তখন এর আর্দ্রতা থাকে ১৮% থেকে ৪০% পর্যন্ত। এই আর্দ্রতা বীজের জীবনীশক্তি নষ্ট করে ফেলে।

See also  বাংলাদেশের বীজ, কীটনাশক ও সার কোম্পানির নামের তালিকা

তাই বীজকে পরবর্তী মৌসুমে ব্যবহারের নিমিত্তে বীজের আর্দ্রতাকে ১২% বা তার নিচে নামিয়ে আনা আবশ্যক। আর এ জন্যই বীজ শুকানোর প্রয়োজন হয়।

দুই প্রকারে বীজ শুকানো যায়। যথা

  1. প্রাকৃতিক বা স্বাভাবিক বাতাসে শুকানো এবং
  2. উত্তপ্ত বাতাসে শুকানো।

বীজের চারিপার্শ্বস্থ বাতাসের আর্দ্রতা যদি বীজের আর্দ্রতা থেকে বেশি হয় তবে বাতাস থেকে আর্দ্রতা বীজের মধ্যে প্রবেশ করে যতক্ষণ পর্যন্ত না বীজ ও বাতাসের আর্দ্রতা সমান হয়।

বীজের আর্দ্রতা প্রয়োজনীয় মাত্রায় রাখতে হলে চারিপার্শ্বস্থ বাতাসকে শুকনো রাখা প্রয়োজন।

বীজ শুকানোর সময় নির্ভর করে-

  1. বীজের আর্দ্রতার মাত্রা
  2. বাতাসের তাপমাত্রা ও আর্দ্রতার মাত্রা
  3. বাতাসের গতি এবং
  4. বীজের পরিমাণের উপর।

মনে রাখতে হবে যে-

  1. বেশি তাপমাত্রায় বীজ শুকালে বীজের সমূহ ক্ষতি হয়। যেমন- বীজের জীবনীশক্তি ও অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা হ্রাস পায়।
  2. অপর্যাপ্ত তাপে বীজ শুকালেও একই রকম ক্ষতি হয়। অর্থাৎ বীজের জীবনীশক্তি ও অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা হ্রাস পায়।

পরিমিত তাপে দক্ষতার সাথে বীজ শুকালে-

  1. সর্বোচ্চ মানের বীজ পাওয়া যায়।
  2. বীজ দীর্ঘকাল সংরক্ষণ করা যায়।
  3. বীজের ব্যবসায় আর্থিক লাভের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।

(৫) বীজের গুণগত মান পরীক্ষার ৩টি পদ্ধতি

বীজের মান নিয়ন্ত্রণ বলতে কৃষিতাত্ত্বিক কলাকৌশল প্রয়োগ করে বীজ উৎপাদন হয়েছে কী না, সঠিকভাবে ফসল কর্তন, মাড়াই ও ঝাড়াই হয়েছে কিনা, সঠিকভাবে বীজ শুকিয়ে নির্দিষ্ট আর্দ্রতায় আনা হয়েছে কী না বোঝায়।

প্রতিটি কাজেই বীজের গুণাগুণ নিয়ন্ত্রণের সুযোগ রয়েছে।

বীজের মান নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে একটি বীজের নমুনার মধ্যে-

  1. বিশুদ্ধ বীজ
  2. ঘাসের বীজ
  3. অন্যান্য শস্যের বীজ ও
  4. পাথর থাকে।

এদের মধ্যে বিশুদ্ধ বীজের শতকরা হার বের করাই বীজের বিশুদ্ধতা পরীক্ষা।

ক) বীজের অঙ্কুরোদগম পরীক্ষা

নমুনা বীজের শতকরা কতটি বীজ গজায় তা বের করাই বীজের অঙ্কুরোদগম পরীক্ষা।

যখন বীজের আর্দ্রতা ৩৫-৬০% বা তার উপর হয় তখন অঙ্কুরোদগম শুরু হয়। এর হার শতকরায় প্রকাশ করা হয়।

পরীক্ষার পদ্ধতি-

  1. ১০০ টি বীজ গুণে একটি বেলে মাটিপূর্ণ মাটির পাত্রে রেখে পানি দ্বারা ভিজিয়ে রাখতে হবে।
  2. প্রতিদিন দেখতে হবে পানি যেন শুকিয়ে না যায়।
  3. নির্ধারিত সময় পরে বীজের অঙ্কুরোদগম শুরু হবে।
  4. যতটি বীজ গজাবে ততটি হবে বীজের অঙ্কুরোদগম হার।
See also  আলুর বীজ উৎপাদন পদ্ধতি ও আলুর বীজ শোধন পদ্ধতি

খ) বীজের আর্দ্রতা পরীক্ষা

বীজ থেকে আর্দ্রতা বের করে দিয়ে তাতে কতটুকু আর্দ্রতা আছে তা জানার পদ্ধতিকে বীজের আর্দ্রতা পরীক্ষা বলা হয়। তা শতকরা হারে নিম্নোক্ত সূত্র দ্বারা প্রকাশ করা হয়।

সূত্র

আর্দ্রতার শতকরা হার = (নমুনা বীজের ওজন (− নমুনা বীজ শুকানোর পর ওজন) ÷ (নমুনা বীজের ওজন × ১০০) শতাংশ।

গ) বীজের জীবনীশক্তি পরীক্ষা

এই পরীক্ষার জন্য বীজ গজানোর একটি প্রতিকূল অবস্থা সৃষ্টি করা হয়। এই প্রতিকূল অবস্থায় যে বীজ বেশি গজাবে সে বীজেরই জীবনীশক্তি বেশি বলে প্রতীয়মান হবে।

(৬) বীজ বিপণন পক্রিয়া

বীজ বিপণন বীজ প্রযুক্তির একটি উল্লেখযোগ্য অংশ। বীজ বিপণন বলতে বীজ সংগ্রহ, প্যাকেজ করা, বিক্রিপূর্ব সংরক্ষণ, বিজ্ঞপ্তি, বিক্রি এসব কাজকে এক কথায় বিপণন বলে।

বীজ বিপণনকালে ক্রেতাদের নিম্নোক্ত তথ্য প্রদান করতে হবে-

  1. বীজের জাত নির্ধারণ
  2. বীজের পরিমাণ নির্ধারণ
  3. বীজ অনুমোদনপ্রাপ্ত বা প্রত্যায়িত কী না
  4. বীজের অঙ্কুরোদগমের হার
  5. বীজের বিশুদ্ধতার হার
  6. বীজ বপনের পদ্ধতি
  7. সংরক্ষণের নির্দেশ
  8. বীজের আর্দ্রতা
  9. বীজের মূল্য
  10.  বীজের জীবনকাল 
  11. বীজ উৎপাদনকারী সংস্থার নাম 
  12.  বীজ অনুমোদন সংস্থার নাম

(৭) বীজ সংরক্ষণের গুরুত্ব

বীজ ভীষণ অনুভূতিপ্রবণ। একটু অসতর্কতার জন্য বিপুল পরিমাণে বীজ নষ্ট হয়।

কৃষকেরা তার নিজস্ব অভিজ্ঞতা অনুযায়ী বীজ সংরক্ষণ করেন। একটাই উদ্দেশ্য সামনের মৌসুমে যাতে সুস্থসবল বীজ বাজারে বিক্রি করতে পারেন।

কিন্তু তবুও কীভাবে বীজের জীবনীশক্তি যাতে নষ্ট না হয় সেদিকে লক্ষ রেখেই বীজ সংরক্ষণের পদ্ধতির উদ্ভাবন হয়েছে।

ফসল বাছাই মাড়াই ও পরিবহনকালেই বীজ বেশি নষ্ট হয়। ইঁদুর, পাখি, ছত্রাক, আর্দ্রতা ইত্যাদির কারণে প্রায় দশ ভাগ ফসল নষ্ট হয়।

এতদ্ব্যতীত বীজের সাথের ধুলাবালি, নুড়ি পাথরও বীজের গুণাগুণ নষ্ট করে।

বীজ সংরক্ষণের প্রাথমিক উদ্দেশ্য হলো বীজের গুণগতমান রক্ষা করা এবং যেসব বিষয় বীজকে ক্ষতি করতে পারে সেগুলো সম্পর্কে সতর্ক হওয়া ও প্রতিরোধের ব্যবস্থা করা।

(৮) বীজ সংরক্ষণের ৫টি পদ্ধতি

বাংলাদেশে বীজ সংরক্ষণের অনেক পদ্ধতি আছে। এক এক ফসলের বীজের জন্য এক এক রকম পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।

যেমন দানাজাতীয় শস্য-ধান, গম, ভুট্টা, বীজের জন্য ধানগোলা, ডোল মাটির পাত্র, চটের বস্তা, পলিব্যাগ ও বেড ব্যবহার করা হয়।

নিম্নে ফসল সংরক্ষণের পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

ক) বীজ শুকানো ও চটের বস্তায় সংরক্ষণ

  • বীজ শুকানো অর্থ হচ্ছে বীজ থেকে অতিরিক্ত আর্দ্রতা সরানো এবং পরিমিত মাত্রায় আনা। বীজে আর্দ্রতার মাত্রা ১২-১৩% হলে ভালো হয়।
  • বাংলাদেশে বীজ শুকানো হয় রোদে বা সূর্যতাপে। এই আর্দ্রতা ১২-১৩ – শতাংশ নামাতে বীজগুলোকে প্রায় তিনদিন প্রখর রোদে শুকাতে হয়। ঠিকমতো শুকিয়েছে কিনা তা বীজে কামড় দিয়ে পরখ করতে হবে।
  • বীজে কামড় দেওয়ার পর যদি ‘কট’ করে আওয়াজ হয় তবে মনে করতে হবে বীজ ভালোমতো শুকিয়েছে।
  • অতঃপর বীজগুলোকে চটের বস্তায় নিয়ে গোলা ঘরে রাখা হয়।
  • বীজ পোকার উপদ্রব থেকে রক্ষার জন্য বীজের বস্তায় নিমের পাতা, নিমের শিকড়, আপেল বীজের গুঁড়া, বিশকাটালি ইত্যাদি মেশানো হয়।
See also  পিঁয়াজ ও সরিষার বীজ উৎপাদন পদ্ধতি

খ) ধান গোলায় সংরক্ষণ

  • ধান সংরক্ষণের জন্য ধানের গোলা ব্যবহার হয়ে থাকে। ধানগোলার আয়তন বীজের পরিমাণের উপর নির্ভর করে নির্মাণ করা হয়।
  • বীজ রাখার আগে ধানগোলার ভিতরে ও বাইরে গোবর ও মাটির মিশ্রণের প্রলেপ দিয়ে বীজ রাখার উপযুক্ত করতে হবে।
  • বীজগুলো এমনভাবে ভরতে হবে যেন এর ভিতর কোনো বাতাস না থাকে। সেই জন্য ধানগোলার মুখ বন্ধ করে এর উপর গোবর ও মাটির মিশ্রণের প্রলেপ দিতে হবে।

গ) ডোলে সংরক্ষণ

  • ডোল আকারে ধানগোলার চেয়ে ছোট। ডোল ধানগোলার চেয়ে কম ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন বীজ পাত্র।
  • এটি বাঁশ বা কাঠ দিয়ে গোলাকার করে তৈরি করা হয়।
  • ধানগোলার মতোই ডোলের বাইরে ও ভিতরে গোবর ও মাটির মিশ্রণের প্রলেপ দিয়ে ভালোভাবে শুকিয়ে বীজ রাখার উপযুক্ত করা হয়।

ঘ) পলিথিন ব্যাগে সংরক্ষণ

  • আজকাল পাঁচ কেজি ধারণক্ষমতা সম্পন্ন পলিথিন ব্যাগে বীজ সংরক্ষণ করা হয়।
  • এই ব্যাগ আরডিআরএস কর্তৃক উদ্ভাবিত। সাধারণ পলিথিনের চেয়ে বীজ রাখার পলিথিন অপেক্ষাকৃত মোটা হয়।
  • শুকনো বীজ এমনভাবে পলিথিন ব্যাগে রাখতে হবে যাতে কোনো ফাঁক না থাকে এবং ব্যাগ থেকে সম্পূর্ণ বাতাস বেরিয়ে আসে।
  • অতঃপর ব্যাগের মুখ তাপের সাহায্যে এমনভাবে বন্ধ করতে হবে যেন বাইরে থেকে ভিতরে বাতাস প্রবেশের সুযোগ না থাকে।

ঙ) মটকায় সংরক্ষণ

  • মটকা মাটি নির্মিত একটি গোলাকার পাত্র। গ্রাম বাংলায় এটি বহুল পরিচিত। এটি বেশ পুরু এবং মজবুত।
  • মটকার বাইরে মাটি বা আলকাতরার প্রলেপ দেওয়া হয়।
  • গোলা ঘরের মাচার নির্দিষ্ট স্থানে মটকা রেখে এর ভিতর শুকনো বীজ পুরোপুরি ভর্তি করা হয়।
  • অতঃপর ঢাকনা দিয়ে বন্ধ করে উপরে মাটির প্রলেপ দিয়ে বায়ুরোধক করা হয়।

[সূত্র: এনসিটিবি]

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/krisi

Everything related to animal and plants in the Bangla language!View Author posts

You cannot copy content of this page