মটর ডালে ১০-১২% প্রোটিন, ১৫-২০% কার্বোহাইড্রেট, ০.৫-২% চিনি, ০.৬-১.৫% চর্বি এবং ২-৩% খনিজ পদার্থ বিদ্যমান।
এটি স্বল্পমেয়াদী হওয়ায় প্রচলিত শস্য বিন্যাসে সহজেই চাষ করা যায়। এছাড়া মটর সবুজ সার হিসেবে মাটিতে নাইট্রোজেন ও জৈব পদার্থ সংযোগ করে মাটির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি করে।
খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (FAO) একটি গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, মটর প্রতি বছর হেক্টরপ্রতি প্রায় ৬০-৬৫ কেজি নাইট্রোজেন অথবা ১৩০-১৪০ কেজি ইউরিয়া সার মাটিতে যোগ করে।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক উদ্ভাবিত বারি মটর-১, বারি মটর-২ ও বারি মটর-৩ মানে উৎকৃষ্ট ও খেতে সু-স্বাদু। তাছাড়া মটর গাছের প্রাথমিক বৃদ্ধির পর্যায়ের ডগা উৎকৃষ্ট শাক এবং সবুজ মটর উৎকৃষ্ট ও দামী সবজি হিসেবে খুবই জনপ্রিয়।
(১) মটরের জাত পরিচিতি
ক) বারি মটর-১
জাতটি আঞ্চলিক ডাল গবেষণা কেন্দ্র, মাদারীপুর কর্তৃক ২০১৩ সালে উদ্ভাবিত হয়েছে।
জাতটির বৈশিষ্ট্য:
- কান্ড-সবুজ ও গোলাকার, পাতার রং সবুজ।
- গাছ ১০০ সেমি লম্বা হয়, গাছের বড় পত্র ফলক ও টেন্ড্রিল বিদ্যমান।
- ফুল সাদা, ফলের রং কাঁচা অবস্থায় সবুজ এবং পাতা অবস্থায় ধূসর, বীজের রঙ সবুজ।
- জীবনকাল ৯৫-১০০ দিন।
- ১০০০ বীজের ওজন ৭৮.৩৩ গ্রাম।
- ফলন হেক্টরপ্রতি ১২০০-১৫০০ কেজি।
খ) বারি মটর-২
ডাল গবেষণা কেন্দ্রের সংগৃহীত জার্মপ্লাজম হতে সংগ্রহ করে অঈওঅজ প্রকল্পের মাধ্যমে ২০১০ সাল হতে মূল্যায়ন করা হয়। আমন ও বোরো ধানের মধ্যবর্তী পতিত জমিকে চাষাবাদের আওতায় আনা এবং ডাল ফসলের উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে অনেকগুলো স্বল্প জীবনকালীন লাইন বিভিন্ন অঞ্চলে মূল্যায়ন করা হয়। তন্মধ্যে এটি স্বল্পকালীন এবং রোগ প্রতিরোধী লাইন যা ২০১৪ সালে বাংলাদেশের যশোর ও পাবনা অঞ্চলে ফলন ও অভিযোজন ক্ষমতা, রোগ বালাই ও পোকান্ডমাকড় সংবেদনশীলতা এবং গুণগত মান পরীক্ষার পর জাত হিসাবে চূড়ান্তভাবে নির্বাচন করা হয় এবং ২০১৫ সালে জাতীয় বীজ বোর্ড বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদের জন্য অনুমোদন দেয়।
জাতের বৈশিষ্ট্য:
- পাতা ও কান্ড-হালকা সবুজ ও পাতায় হালকা ট্রেন্ড্রিলযুক্ত।
- ফুলের রং বেগুনী।
- গাছের গোড়ায় খয়েরী পিগমেন্ট বিদ্যমান।
- বীজ গোলাকার ও ধূসর বর্ণের
- জাতটি স্বল্পকালীন হওয়ায় পাউডারি মিলডিউ ও রাস্ট রোগ এড়াতে সক্ষম।
- প্রতি পডে ৫-৭টি বীজ বিদ্যমান।
- শুটি হিসেবে জীবন কাল ৫০-৫৫ দিন।
- ১০০০টি বীজের ওজন ২৪০-২৭০ গ্রাম।
- ফলন (সবুজ পড হিসাবে) ৪২০০-৪৫০০ কেজি/হেক্টর।
- ফলন (শুকনো অবস্থায়) ১২০০-১৪০০ কেজি/হেক্টর।
গ) বারি মটর-৩
প্রস্তাবিত লাইনটি ডাল গবেষণা কেন্দ্রের সংগৃহীত জার্মপ্লাজম হতে সংগ্রহ করে অঈওঅজ প্রকল্পের মাধ্যমে ২০১০ সাল হতে পুণরায় মূল্যায়ন করা হয়। আমন ধান কাটার পর বা আমন ধানের জমিতে সাথী ফসল হিসাবে জমিকে চাষাবাদের আওতায় এনে মটরের উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে অনেকগুলো লাইন ২০১৫ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন অঞ্চলে সাথী ফসল হিসেবে মূল্যায়ন করা হয়। তন্মধ্যে এটি উচ্চফলনশীল, কর্দমাক্ত জমিতে চাষোপযোগী (সাথী ফসল হিসেবে) এবং রোগ প্রতিরোধী লাইন হিসেবে নির্বাচন করা হয়।
এটি ২০১৪ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত সালে বাংলাদেশের যশোর, জামালপুর, ফরিদপুর ও পাবনা অঞ্চলে ফলন ও অভিযোজন ক্ষমতা, রোগ বালাই ও পোকান্ডমাকড় সংবেদনশীলতা এবং গুণগত মান মূল্যায়ন কর হয়।
দীর্ঘদিন পরীক্ষার পর লাইনটি একটি সম্ভাবনাময় লাইন হিসেবে নির্বাচিত হওয়ায় জাত হিসেবে মুক্তায়নের জন্য প্রস্তাব করা হয় এবং ২০১৭ সালে এটি বারি মটর-৩ হিসেবে অবমুক্ত করা হয়। মটরের সম্ভাবনাময় জাত হিসাবে এর মাধ্যমে দেশের একটি বিশাল পতিত জমি চাষাবাদের আওতায় আনা সম্ভব হবে এবং দেশের ডালের ঘাটতি পূরণে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারবে।
জাতের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য:
- গাছ খাড়া প্রকৃতির ও লম্বা।
- বীজ সবুজাভ সাদা বর্ণের ও তুলনামূলক বড়।
- ফুলের রং সাদা।
- চারা অবস্থায় গোড়া পচা রোগ সহনশীল।
- পাউডারি মিলডিউ ও রাস্ট রোগ সহনশীল।
- মধ্যম আকৃতির বীজ (১০০০ বীজের ওজন ৯৫-১০৫ গ্রাম)।
- আমন ধানের সাথে সাথী ফসল হিসেবে খুবই উপযোগী।
- জীবনকাল ১০১-১০৫ দিন।
- সবুজ ফলের ফলন ৫৬০০-৬০০০ কেজি/হেক্টর।
- বীজের ফলন ২০১০-২২৯০কেজি/হেক্টর।
(২) মটর ডাল চাষ পদ্ধতির বর্ণনা
ক) মাটি ও জলবায়ু
- প্রায় সব ধরনের মাটিতেই মটর চাষ করা যায়। তবে দোআঁশ থেকে এঁটেল দোআঁশ মাটিতে ভালো হয়।
- মাটির পিএইচ সাধারণত ৬.০-৭.৫ হলে চাষের জন্য ভালো।
- এটি চাষে ১৩-১৮০ সে. তাপমাত্রা প্রয়োজন।
- বাৎসরিক গড় বৃষ্টিপাত ৬০০-১০০০ মি.মি.হলে ভালো হয়। অতিবৃষ্টি মটরের জন্য ক্ষতিকর।
খ) ফসল বিন্যাস
আউশ/পাট→পতিত→মটর।
রোপা আমন→মটর-মুগ→রোপা আউশ।
গ) বপনের সময়
- রিলে ফসলের ক্ষেত্রে আমন ধান কাটার ১০-১৫ দিন পূর্বে মাটির রস্ থাকা অবস্থায় বীজ বপন করতে হবে।
- কার্তিক মাসের মধ্যে দুই সপ্তাহ মটরের বীজ বপন করা উত্তম।
ঘ) জমি চাষ
একক ফসল হিসেবে আবাদের ক্ষেত্রে ২-৩ টি চাষ ও মই দিতে হবে।
ঙ) বীজ প্রাইমিং ও বীজ হার
জমিতে আর্দ্রতা কম থাকলে বীজকে ৮-১০ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রেখে বীজের গায়ের পানি শুকিয়ে বীজ বপন করলে সহজেই বীজ অঙ্কুরিত হয়।
চ) বীজেরপরিমাণ
জাতভেদে বীজের আকার আকৃতি এবং বপন পদ্ধতির উপর বীজের পরিমাণ নির্ভর করে-
জাতের নাম | বপনপদ্ধতি | বীজের পরিমাণ (কেজি/হেক্টর) |
বারি মটর-১ | চাষ করে | ৬৫-৭০ |
বারি মটর-১ | আমন ধানের সাথে সাথী ফসল হিসাবে | ৭০-৭৫ |
বারি মটর-২ | চাষ করে | ২২৫-২৩০ |
বারি মটর-৩ | চাষ করে | ৮০-৯০ |
বারি মটর-৩ | আমন ধানের সাথে সাথী ফসল হিসাবে | ৯০-১০০ |
এখানে উল্লেখ্য যে, বারি মটর-২ বড় দানার হওয়ায় সাথী ফসল হিসাবে চাষের উপযোগিতা নেই।
ছ) বীজ শোধন
- বীজ বপনের পূর্বে বীজ শোধন করলে মাটি ও বীজ বাহিত অনেক জীবাণুর আক্রমণ হতে রক্ষা পাওয়া যায়।
- মাটি ও বীজ বাহিত অনেক জীবাণুর সংক্রমণ হতে রক্ষার জন্য মটর বীজ বপনের পূর্বে অবশ্যই প্রোভেক্স ২০০ ডব্লিউ পি (কার্বোক্সিন+থিরাম) ২.৫-৩.০ গ্রাম প্রতি কেজি বীজে মিশিয়ে শোধন করতে হবে।
জ) বপন পদ্ধতি
- সারিতে ও ছিটিয়ে বপন করা যায়। সারিতে বপন করতে হলে রিলে ফসল হিসাবে চাষ করা যাবে না। রিলে ফসল হিসেবে ছিটিয়ে বপন করতে হয়। তবে পর্যাপ্ত রস থাকতে হবে।
- সারিতে বপন করতে হলে জমি তৈরির পরে ৪০ সেমি দূরত্বে সারি করে ৫-৬ সেমি পরপর বীজ বপন করতে হবে। তবে সারতে মটর-২ এর ক্ষেত্রে সারি থেকে সারির দূরত্ব ২০ সেমি।
ঝ) সারের পরিমাণ
জমি ঊর্বর হলে সারের পরিমাণ কম লাগবে। কিন্তু অনুর্বর এবং অধিক ফলন পেতে হলে হেক্টরপ্রতি নিম্ন হারে সার প্রয়োগ করতে হবে-
সারের নাম | হেক্টর প্রতি (কেজি) | বিঘা প্রতি (কেজি) |
ইউরিয়া | ৩০ -৪০ | ৪-৫ |
টিএসপি | ৮০ -৯০ | ১১ -১৩ |
এমওপি | ৪০ -৪৫ | ৫-৬ |
জিপসাম (প্রয়োজনবোধে) | ৫০ -৫৫ | ৭-৮ |
বোরন (প্রয়োজনবোধে) | ৭-১০ | ১-১.৫ |
অণুজীব সার | সুপারিশমতো | সুপারিশমতো |
ঞ) অন্তর্বর্তীকালীন পরিচর্যা
- মটর চাষ করতে তেমন সেচের প্রয়োজন হয় না। তবে বপনের পূর্বে পর্যাপ্ত রস না থাকলে অঙ্কুরোদগম নিশ্চিত করতে হালকা সেচ দিতে হবে।
- মটর চাষে তেমন আগাছা পরিষ্কার করা লাগে না। চাষ দিয়ে বপন করতে ২০-২৫ দিন পরে একটা নিড়ানী দিলে পরে আর আগাছা দমন করা প্রয়োজন হয় না।
ট) ফসল সংগ্রহ ও কর্তন
- সবজি হিসাবে সবুজ ফল ৬০-৭০ দিনের মধ্যেই (বারি মটর-২) এবং বারি মটর-৩ এর ক্ষেত্রে ৮০-৯৫ দিনের মধ্যে সংগ্রহ করা যায়।
- ডাল হিসেবে সংগ্রহ করতে চাইলে পরিপক্ক অবস্থায় (জাত ভেদে) যখন শতকরা ৮০ ভাগ গাছ শুকনো খড়ের মত রং ধারণ করে তখন গাছসহ কেটে সংগ্রহ করতে হবে।
- সব ফল পেকে যাওয়ার আগেই কাটতে হবে, তা না হলে ফল ফেটে বীজ ঝরে যাবে।
- সকালের দিকে ফসল সংগ্রহের উপযুক্ত সময় কারণ এই সময় কুয়াশা দ্বারা ফল ভিজে নরম হয়, যার ফলে ফল ফেটে বীজ ঝরে পড়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
ঠ) মাড়াই, ঝাড়াই ও সংরক্ষণ
- ফসল সংগ্রহ করার পর রৌদ্রে শুকিয়ে বীজ ৮-৯% আর্দ্রতায় (যাতে দাঁত দিয়ে কাটলে কট্ কট্ শব্দ হয়) বায়ু নিরোধ পাত্রে গুদামজাত করতে হবে।
- দেশি পদ্ধতিতে মাটির পাত্রে, টিনে বা ড্রামে এমনভাবে সংরক্ষণ করতে হবে যাতে বাতাস/কীট-পতঙ্গ ঢুকতে না পারে। পলিথিন/পলিথিনযুক্ত বস্তায়ও বীজ সংরক্ষণ করা যায়। তবে সব ক্ষেত্রেই বীজের পাত্র/বস্তা মেঝে থেকে উঁচুতে রাখতে হবে।
- বেশি পরিমাণ বীজ গুদামজাত করতে হলে প্রতি ১০০ কেজি বীজের জন্য ২ টি ফসটক্সিন ট্যাবলেট ব্যবহার করে ডালের শুঁসড়ী পোকা নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
(৩) মটর চাষে রোগ ও পোকা ব্যবস্থাপনা
ক) পাউডারী মিলডিউ
Erysiphe polygoni নামক ছত্রাক দ্বারা এই রোগ সৃষ্টি হয়। এ রোগের আক্রমণ হলে পাতায় সাদা পাউডারের মত ছোট ছোট দাগ দেখা যায়। ধীরে ধীরে এ দাগ কান্ড, ফুল ও ফলে বিস্তার লাভ করে। রোগের আক্রমণ বেশি হলে সমস্ত গাছ আক্রান্ত হয় ও মারা যায়।
রোগের প্রতিকার:
সালফার জাতীয় বালাইনাশক থিওভিট ৮০ ডব্লিউ পি অথবা কমুলাস ডি এফ জাতীয় ঔষুধ প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে ৭-১০ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করলে এ রোগের আক্রমণ প্রতিহত করা যায়।
খ) মরিচা রোগ (Rust)
Uromyces fabae নামক ছত্রাকের আক্রমণে মরিচা রোগ হয়ে থাকে। পাতার নিচের দিকে, কান্ডে ও ফলের উপর মরিচা রঙের ছোট ছোট দাগ দেখা যায় এবং ফল পাকার পুর্বেই গাছ শুকিয়ে খড়ের মত রং ধারণ করে। উচ্চ আপেক্ষিক আর্দ্রতা, কুয়াশাচ্ছন্ন বা মেঘাচ্ছন্ন আবহাওয়া এবং রাতের তাপমাত্রা ২০-২২ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে এ রোগ সহজেই বিস্তার লাভ করে।
রোগের প্রতিকার:
আক্রান্ত জমিতে প্রোপিকোনাজোল (টিল্ট ২৫০ইসি) অথবা হেক্সাকোনাজোল (ফলিকুর ২৫০ ইসি বা কনটাফ ৫ ইসি) প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলি মিশেয়ে ৭-১০ দিন পর পর ২-৩ টি স্প্রে করে এ রোগ দমন করা যায়।
গ) বিছাপোকা
বিছাপোকার ছোট কীড়াগুলো প্রাথমিক অবস্থায় পাতার উল্টোপাশে গাদাগাদি করে অবস্থান করে ডিম পাড়ে এবং পাতার সবুজ অংশ খেয়ে ঝাঝরা করে ফেলে, এতে করে পাতা জালের মত হয়ে শুকিয়ে যায়।
রোগের প্রতিকার:
কীড়াযুক্ত পাতা সংগ্রহ করে কীড়া ধ্বংস করতে হবে এবং প্রয়োজনে সাইপারমেথ্রিন জাতীয় কীটনাশক (যেমন- রিপকর্ড ১০ ইসি বা অন্য নামের) প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলি লিটার হারে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
ঘ) গুদামজাত ডালে পোকা ও কীড়া
পূর্ণবয়স্ক পোকা ও কীড়া উভয়ই গুদামজাত ডালের ক্ষতি করে। এ পোকার কীড়া ডালের দানার খোসা ছিদ্র করে ভিতরে ঢুকে শাঁস খেতে থাকে। ফলে দানা হাল্কা হয়ে যায়। এতে বীজের অঙ্কুরোদ্গম ক্ষমতা নষ্ট হয় এবং খাওয়ার অনুপযুক্ত হয়ে পড়ে।
রোগের প্রতিকার:
- গুদামজাতকরণের পূর্বে দানা ভালভাবে পরিষ্কার করতে হবে।
- ডালের দানা শুকিয়ে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ কমিয়ে ৮-৯% এর নিচে আনতে হবে।
- বীজের জন্য টন প্রতি ৩০০ গ্রাম ম্যালাথিয়ন বা সেভিন ১০% গুড়া মিশিয়ে পোকার আক্রমণ প্রতিরোধ করা যায়।
- ফসটক্সিন ট্যাবলেট ২টি বড়ি প্রতি ১০০ কেজি গুদামজাত ডালে ব্যবহার করতে হবে। এ বড়ি আবদ্ধ পরিবেশে ব্যবহার করতে হবে।
(৪) ডাল সংরক্ষণের পদ্ধতি সমূহ
ক) ডাল সংরক্ষণের পাত্র
নিচের পাত্রসমূহে ডাল সংরক্ষণ করা যেতে পারে-
- পরিথিনযুক্ত ছালার বস্তা
- পলিথিনযুক্ত বস্তা
- টিনের ড্রাম
- প্লাস্টিকের ড্রাম
খ) সংরক্ষণের জন্য ডাল শুকানোর পদ্ধতি
- ডালবীজ সব সময়ই পরিষ্কার ও শক্ত খোলায় অথবা প্লাষ্টিকের শিটে পাতলা করে ছড়িয়ে দিয়ে শুকাতে হবে।
- কোন সময় বৃষ্টি হলে বীজ পুণরায় শুকিয়ে নিতে হবে।
- সংরক্ষণের জন্য আর্দ্রতা কমিয়ে ৮-৯% এ আনতে হবে।
- শুকানো ডাল দাঁতের নিচে রেখে কামড় দিলে যদি ‘কট’ শব্দ হয় তবেই বুঝা যাবে বীজ সংরণ করার উপযোগী হয়েছে।
গ) সংরক্ষণ পাত্রে ডাল ভরা ও রক্ষণাবেক্ষণ পদ্ধতি
- শুকানো ডাল বীজ সংরক্ষণ পাত্রে ভরে ভালভাবে মুখ বদ্ধ করতে হবে।
- শুকানোর পর ডাল বীজ ঠান্ডা করে তারপর সংরক্ষণ পাত্রে ভরতে হবে।
- আলকাতরার প্রলেপযুক্ত উন্নত মাটির বা টিনের পাত্রের মুখ তুষ মিশ্রিত কাদা মাটি দিয়ে ভালোভাবে বন্ধ করতে হবে যাতে পোকা বা আর্দ্রতা ভিতরে প্রবেশ করতে না পারে।
- সংরক্ষণ পাত্র ঠান্ডা জায়গায় ইট, কাঠ বা মাচার উপরে রাখতে হবে।
- সংরক্ষণ পাত্রের চার পাশে সব সময় পরিষ্কার রাখতে হবে যাতে পোকা ও ইঁদুরের আক্রমণ না হয়।
- যদি কোন কারণে পাত্র ভেঙ্গে অথবা ফেটে যায় তবে ডাল বীজ আবার শুকিয়ে অন্য পাত্রে একই নিয়মে সংরক্ষণ করতে হবে।
ঘ) পলিথিনযুক্ত ছালার বস্তা ব্যবহার
- ডাল বীজ সংরক্ষণে পলিথিনযুক্ত ছালার বস্তা খুবই উপযোগী। পুরু পলিথিন ব্যাগ পাটের বস্তার ভিতরে ভরে এ ধরনের বস্তা তৈরি করা হয়।
- বস্তার মধ্যে ডাল বীজ ভরে প্রথমে পলিথিনের মুখটি মুড়িয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে ছালার ব্যাগের মুখ রশি দিয়ে শক্ত করে বেঁধে দেওয়া হয়।
- বস্তার ভিতরে পলিথিন থাকায় বাইরের বাতাস বা আর্দ্রতা ভিতরে প্রবেশ করতে পারে না। এতে বীজ সংরক্ষণকালে দ্বিতীয়বার শুকানোর প্রয়োজন হয় না।
- এ ধরনের ছালার বস্তা ২-৩ বৎসর ব্যবহার করা যায়। প্রয়োজনে বস্তার ভিতরের পলিথিন ব্যাগ পরিবর্তন করে তা পুণরায় ব্যবহার করা যায়।
ঙ) পলিথিনযুক্ত মাটির পাত্র ব্যবহার
- উন্নত পাত্রের ভিতরে পুরু পলিথিন ব্যাগ প্রবেশ করিয়ে ডাল সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা যায়।
- ডাল ফসলের বীজ পলিথিন ব্যাগের মধ্যে রেখে পলিথিনের মুখ মোমবাতির শিখায় পুড়িয়ে সীল করে দেওয়া হয়। পরে পাত্রের মুখ তুষ মিশ্রিত কাদামাটি দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়।
- পাত্রের ভিতরে পলিথিন থাকায় বাইরের বাতাস বা আর্দ্রতা ভিতরে প্রবেশ করতে পারে না। এ ধরনের পাত্রে ডাল বীজ এক বৎসর পর্যন্ত ভালো থাকে। সংরক্ষণকালে দ্বিতীয়বার শুকানোর প্রয়োজন পড়ে না।
- এ ধরনের পাত্র ৩-৪ বৎসর ব্যবহার করা যায়। শুধু প্রয়োজনে পলিথিন ব্যাগটি পরিবর্তন করতে হয়।
চ) টিনের উন্নত পাত্র ব্যবহার
- সাধারণত এমএস শিট দ্বারা এ ধরনের পাত্র তৈরি করা হয়। পাত্রের মুখ বন্ধ করার জন্য গোলাকার ঢাকনার চারদিকে সিল করার ব্যবস্থা থাকে। ফলে সিলিং পদার্থ বা তুষ মিশ্রিত কাদামাটি দিয়ে বন্ধ করলে বাইরের বাতাস বা আর্দ্রতা ভিতরে প্রবেশ করতে পারে না।
- এ ধরনের পাত্রে ডাল এক বৎসরেরও বেশি সময় ভালোভাবে সংরক্ষণ করা যায়।
- এ পাত্র ১০-১২ বৎসর পর্যন্ত ব্যবহার করা যায়।
[সূত্র: বিএআরআই]