Skip to content

মুলা চাষ পদ্ধতি

মুলা চাষ পদ্ধতি

মুলা রবি মৌসুমের একটি প্রধান সবজি। দেশে সকল শ্রেণির লোকের নিকট মুলা একটি সমাদৃত সবজি। সালাদ, তরকারি ও ভাজি হিসেবে এর বহুল প্রচলন রয়েছে। মুলার পাতা শাক হিসেবেও খাওয়া যায়। এতে প্রচুর ভিটামিন ‘এ’ রয়েছে।

মুলা ফসল
মুলা ফসল

শীতকালীন সবজিসমূহের মধ্যে মুলা বাংলাদেশে একটি অন্যতম সবজি। দেশে মুলা উৎপাদনের জন্য বিদেশি বীজের উপর নির্ভর করতে হয়। বাংলাদেশে আবাদকৃত বিদেশি মুলার জাত দ্বিবর্ষজীবী এবং স্থানীয় আবহাওয়ায় মাঠ পর্যায়ে এদের বীজ উৎপাদন হয় না। স্থানীয় আবহাওয়ায় বীজ উৎপাদনে সক্ষম ‘বারি মুলা- ১,২,৩,৪ নামে ৪ টি এক বর্ষজীবী মুলার জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে।

(১) মুলার জাতের নাম ও পরিচিত

ক) বারি মুলা-১ (তাসাকীসান মুলা)

১৯৮৬ সালে ‘বারি মুলা-১’ জাতটি অনুমোদন করা হয়।

বারি মুলা-১ (তাসাকীসান মুলা)
বারি মুলা-১ (তাসাকীসান মুলা)
  • মুলা দেখতে ধবধবে সাদা ও বেলুনাকৃতির হয়। পাতায় শুং থাকে না বলে শাক হিসেবে ব্যবহারের জন্য খুবই উপযোগী।
  • বীজ বপনের ৪০-৪৫ দিন পর থেকেই সংগ্রহের উপযোগী হয়।
  • প্রতি মুলার ওজন প্রায় ৯০০-১১০০ গ্রাম।
  • মুলা খেতে সুস্বাদু ও প্রায় ঝাঁঝবিহীন।
  • দেশীয় আবহাওয়ায় এ জাত প্রচুর পরিমাণ বীজ উৎপাদন করতে সক্ষম।
  • উন্নত পদ্ধতিতে চাষ করলে হেক্টরপ্রতি মুলার ফলন ৭০-৮০ টন এবং বীজের ফলন ১.০-১.৫ টন হয়।

খ) বারি মুলা-২ (পিংকী)

‘বারি মুলা-২’ নামে একটি লালচে রঙের মুলা জাত ১৯৯৬ সালে অনুমোদন করা হয়।

বারি মুলা-২ (পিংকী)
বারি মুলা-২ (পিংকী)
  • এ জাতের মুলা নলাকৃতির। এ জাতের মুলার সাধারণত কোন শাখা শিকড় হয় না এবং ভিতরে সহজে ফাঁপা হয় না।
  • বীজ বপনের ৪০-৪৫ দিন পর সংগ্রহের উপযোগী হয় এবং প্রায় ৭৫ দিন পর্যন্ত তা খাওয়ার উপযোগী থাকে।
  • প্রতি মুলার ওজন ৮০০-৯৮৮ গ্রাম।
  • মুলা খেতে সুস্বাদু এবং একটু ঝাঁঝালো।
  • স্থানীয় আবহাওয়ায় বীজ উৎপাদন করা যায়। উন্নত পদ্ধতিতে চাষ করলে হেক্টরপ্রতি ফলন ৫৫-৬০ টন এবং ৯০০-১১০০ কেজি বীজ পাওয়া যায়।

গ) বারি মুলা-৩ (দ্রুতি)

‘বারি মুলা-৩’ জাতটি ১৯৯৮ সালে অনুমোদন করা হয়।

বারি মুলা-৩ (দ্রুতি)
বারি মুলা-৩ (দ্রুতি)
  • এ জাতের মুলার রং সাদা এবং আকৃতি অনেকটা নলাকার।
  • এ জাতের মুলা ৪০-৪৫ দিনের মধ্যেই খাবার উপযুক্ত হয়।
  • বাংলাদেশের আবহাওয়ায় দ্রুতি জাতের মুলার বীজ উৎপাদন করা যায়।
  • উন্নত পদ্ধতিতে চাষ করলে হেক্টরপ্রতি মুলার ফলন ৪০-৪৫ টন ও ১.২-১.৩ টন বীজ পাওয়া যায়।

ঘ) বারি মুলা-৪

বারি মুলা-৪
বারি মুলা-৪
  • মুলা নলাকৃতি ধবধবে সাদা বর্ণের। পাতা খাঁজ কাটা বিশিষ্ট।
  • মুলা লম্বায় ৩০-৩৫ সেমি। প্রতিটি মুলার গড় ওজন ৭০০-৮০০ গ্রাম।
  • জাতটি দেশিয় আবহাওয়ায় ১.২-১.৫ টন/হেক্টর বীজ উৎপন্ন করে।
  • বাংলাদেশের সর্বত্র শীতমৌসুমে এই জাতটি চাষ করা যায়।
  • আশ্বিন-কার্তিক মাসে বীজ বপন করা হয়। জীবনকাল ৬০-৭০ দিন (বীজ বপনের পর) এবং হেক্টরপ্রতি গড় ফলন ৬৫-৭০ টন।

(২) মুলা চাষ পদ্ধতি বর্ণনা

ক) মাটি

দোআঁশ ও বেলে দোআঁশ মাটি মুলা চাষের জন্য সবচেয়ে ভাল। অধিক পরিমাণ জৈব সার ও প্রয়োজনীয় রাসায়নিক সার ব্যবহার করে অধিকাংশ উঁচু জমির মাটিতে এর চাষ করা যায়।

খ) বীজের হার ও বীজ বপন

  • আশ্বিন থেকে কার্তিক মাস (মধ্য-সেপ্টেম্বর থেকে মধ্য-নভেম্বর) মুলার বীজ বপন করা যায়। হেক্টরপ্রতি ২.৫-৩.০ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়।
  • সাধারণত মুলার বীজ ছিটিয়ে বপন করা হয়। কিন্তু বীজ সারিতে বপন করা ভাল। এতে বীজের পরিমাণ কম লাগে এবং পরবর্তী পরিচর্যা করা সহজ হয়।

গ)সার প্রয়োগের পরিমাণ ও পদ্ধতি

মুলার জমিতে নিম্নরূপ হারে সার প্রয়োগ করতে হবে-

সারের নামসারের পরিমাণ/হেক্টর
ইউরিয়া৩০০-৩৫০ কেজি
টিএসপি২৫০-৩০০ কেজি
এমপি২১৫-২৩৫ কেজি
গোবর বা কম্পোস্ট৮-১০ টন
  • শেষ চাষের সময় সবটুকু গোবর বা কম্পোস্ট সারের এক তৃতীয়ংশ সমানভাবে ছিটিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে।
  • বাকি ইউরিয়া ও এমপি সার সমান অংশে যথাক্রমে বীজ বপনের তৃতীয় ও প ম সপ্তাহে ২ কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হবে।

ঘ) বোরন সার প্রয়োগ

সুষম সারসহ মুলার জমিতে প্রতি হেক্টরে ১০-১৫ কেজি বরিক এসিড/বোরাক্স প্রয়োগ করে মুলার বীজের ফলন বড়ানো যায়।

ঙ) অন্তর্বর্তীকালীন পরিচর্যা

  • বীজ বপনের ৭-১০ দিনের মধ্যে ৩০ সেমি দূরত্বে একটি ভাল গাছ রেখে বাকি গাছ উঠিয়ে ফেলতে হবে।
  • মাটিতে রস কম থাকলে বপনের ৭-১০ দিনের মধ্যেই একটি সেচ দিতে হয়। সাধারণত ২ সপ্তাহ পর পর ২-৩ বার সেচ দিলে মুলার ফলন ভাল হয়।
  • গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য জমি আগাছামুক্ত রাখতে হবে। এজন্য নিড়ানি দিয়ে আগাছা পরিষ্কার করে মাটির চটা ভেঙ্গে দিতে হবে।

চ) মুলার মূল ও পাতা কর্তন পদ্ধতি, বীজ উৎপাদন

  • মুলার বয়স ৪০-৪৫ দিন হলে জমি থেকে সমস্ত মুলা উঠিয়ে জাতের বিশুদ্ধতা, আকৃতি ইত্যাদি বিবেচনা করে বাছাই করতে হবে।
  • বাছাইকৃত মুলার মূলের এক চতুর্থাংশ ও পাতার দুই তৃতীয়াংশ কেটে ফেলতে হবে। মূলের কাটা অংশ ডায়থেন এম-৪৫ (২ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে) এর দ্রবণে ডুবিয়ে নিতে হবে। পরে প্রস্তুত করা বেডে সারি পদ্ধতিতে (৬০ × ৪৫ সেমি) কর্তন কৃত মুলা গর্তে স্থাপন করে পাতার নিচ পর্যন্ত মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। এ পদ্ধতিতে পূণরায় রোপণকৃত গাছ থেকে অধিক পরিমাণে বীজ পাওয়া যায়।
  • বীজ-ফসলের জমিতে সর্বদা রস থাকতে হবে। গাছে ফুল আসার পর হেক্টরপ্রতি ১০০ কেজি ইউরিয়া ও ২০০ কেজি এমপি সার বেডে ছিটিয়ে ভালভাবে মিশিয়ে দিতে হবে।
  • প্রতিকূল আবহাওয়ায় বীজ-ফসল যাতে মাটিতে পড়ে না যায় সেজন্য ঠেকনা দিতে হবে।
  • মুলার বীজ ফসলে জাব পোকা দেখা দেওয়া মাত্র ম্যালাথিয়ন ২ মিলি প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রয়োগ করতে হবে। বীজ বপনের পর ৪-৫ মাসের মধ্যেই বীজ সংগ্রহের উপযুক্ত হয়।

ছ) সহচর সবজি হিসেবে মুলার চাষ

মুলা একটি উপকারী সহচর সবজি হিসাবে অন্য সবজির সাথে চাষ করা যায়। কারণ সম্ভবত মুলার কটু গন্ধ বিভিন্ন কীট-পতঙ্গক যেমন- জাবপোকা, শসা পোকা, টমেটো হরণওয়ার্মস, ক্ষুদ্র জীবাণু এবং পিপড়াদেরকে বাধা প্রদান করে।

মুলা একটি ফাঁদ ফসলের মত কাজ করতে পারে, যা কীটপতঙ্গকে প্রলোভিত করে প্রধান ফসল থেকে দূরে রাখে।

জ) মুলা চাষে রোগ-বালাই

মুলা দ্রুত বর্ধনশীল সবজি হলেও, রোগ-বালাই সাধারণত মুলার জন্য কোন সমস্যাই না, কিন্তু কিছু পোকামাকড় এখানে উপদ্রব সৃষ্টি করতে পারে।

  • শুয়োপোকা এবং গোবরে পোকা (ডেলিয়া রেডিকুম) মাটিতে বাস করে, কিন্তু প্রাপ্তবয়স্ক গোবরে পোকা ফসল ক্ষতিগ্রস্থ করে, পাতা খেয়ে ফেলে, বিশেষভাবে বীজের বড় হওয়াকে বাধাগ্রস্থ করে।
  • ডাঁশ পতঙ্গ (কন্টারিনিয়া নাসটারটিল) পাতাকে আক্রমণ করে এবং গাছের ডগায় জন্মায় এবং গাছের বৃদ্ধি ব্যহত করে।
  • শুয়োপোকা মাঝে মাঝে গোড়া আক্রমণ করে। পাতাগুচ্ছ মাঝে মাঝে ঢলে পড়ে এবং বিবর্ণ রং ধারণ করে, এবং ছোট হয়, সাদা পোকাগুলো মুলার ভেতর গর্ত তৈরী করে, একে অনাকর্ষনীয় এবং অখাদ্য করে তোলে।

[সূত্র: বিএআরআই]

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/krisi

Everything related to animal and plants in the Bangla language!View Author posts