Skip to content

 

কালোজিরা চাষ পদ্ধতি

কালোজিরা চাষ পদ্ধতি

দেশে মসলা ফসলের মধ্যে কালোজিরার ব্যবহার কম। উৎপাদন ও ব্যবহারের দিক থেকে গৌণ হলেও কালোজিরা জনপ্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ মসলা।

কনফেকশনারী ও রন্ধনশালায় দৈনন্দিন বিভিন্ন খাদ্য তৈরিতে এর জুড়ি নেই।

কালোজিরার ঔষধি গুণাবলীও কম নয়। পেট ফাপা, চামড়ার ফুস্কুরী, মায়েদের প্রসব ব্যাথা, ব্রঙ্কাইটিস, এজমা ও কফ দূর করতে এটি ব্যবহৃত হয়। তাছাড়া শরীরের মূত্রবর্ধক ও উদ্দীপক হিসেবে কালোজিরা ব্যবহৃত হয়।

আমাদের বাংলাদেশে অল্প জমিতে বিছিন্নভাবে কালোজিরার চাষ হয়ে থাকে। ফসলটির উন্নয়নের প্রধান বাধা হল এর উন্নত জাত ও উৎপাদন কৌশলের অভাব। বর্তমানে দেশে ব্যাপক চাহিদার কারণে কালোজিরা চাষ একান্ত প্রয়োজন।

(১) কালোজিরা গাছের জাত ও বৈশিষ্ট্য

বারি কালোজিরা-১:

বারি কালোজিরা-১
বারি কালোজিরা-১
  • গাছের উচ্চতা ৫৫-৬০ সেমি।
  • প্রতিটি গাছে প্রায় ৫-৭টি প্রাথমিক শাখা এবং ২০-২৫টি ফল থাকে।
  • প্রতিটি ফলের ভিতরে প্রায় ৭৫-৮০টি বীজ থাকে যার ওজন প্রায় ০.২০-০.২৭ গ্রাম।
  • প্রতি গাছে প্রায় ৫-৭ গ্রাম বীজ হয়ে থাকে এবং ১০০০ বীজের ওজন প্রায় ৩-৩.২৫ গ্রাম।
  • বীজ পরিপক্ক হতে ১৩৫-১৪৫ দিন সময় লাগে।
  • বীজের হেক্টরপ্রতি গড় ফলন ১ টন।
  • স্থানীয় জাতের তুলনায় এর রোগবালাই খুব কম।

(২) কালোজিরা চাষ পদ্ধতি

ক) মাটি

জলাবদ্ধতা মুক্ত উঁচু ও মাঝারী উঁচু এমন জমিতে কালোজিরা চাষ করা হয়ে থাকে। দোআঁশ থেকে বেলে দোআঁশ মাটিতে এটি চাষের জন্য উত্তম।

জমিতে পানি সেচ এবং নিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকা ভাল।

শুষ্ক ও ঠান্ডা আবহাওয়ায় কালোজিরা চাষের বেশি উপযোগী। মেঘাচ্ছন্ন পরিবেশ রোগবালাইয়ের বিস্তারে অনুকূল।

ফুল ফোটার সময় বৃষ্টি হলে কালোজিরার ফলন কমে যায়।

খ) জমি তৈরি

সাধারণত ৩-৪টি চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে এবং আগাছা পরিষ্কার করে জমি তৈরি করা হয়।

গ) বীজ বপন, বীজের পরিমাণ ও বপণ দূরত্ব

মধ্য অক্টোবর-মধ্য নভেম্বর মাসে বীজ বপন করা হয়। তবে নভেম্বর মাসের প্রথম-দ্বিতীয় সপ্তাহ বীজ বপনের উত্তম সময়।

বীজ ছিটিয়ে বপন করলে হেক্টরপ্রতি ১০ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়। সারি করে বীজ বপন করলে হেক্টরপ্রতি ৮০ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়।

সারি থেকে সারি ৩০ সেমি ও গাছ থেকে গাছ ৫ সেমি (চারা পাতলাকরণের মাধ্যমে)।

ঘ) সার প্রয়োগ

বাংলাদেশের প্রায় অধিকাংশ জমিতেই জৈব সারের ঘাটতি রয়েছে। তাই সম্ভব হলে জৈব সার বেশি পরিমাণ দেওয়াই ভাল।

নিচে হেক্টরপ্রতি জৈব ও অজৈব সারের পরিমাণ উলেখ করা হলো।

সারের নামপরিমাণশেষ চাষের সময়১ম কিস্তি২য় কিস্তি
পচা গোবর৫ টনসব
ইউরিয়া১২৫ কেজিসব৬৫ কেজি৬০ কেজি
টিএসপি৯৫ কেজিসব
এমওপি৭৫ কেজিসব

প্রয়োগ পদ্ধতি:

  1. জমি চাষের পূর্বে সম্পূর্ণ পচা গোবর সার ছিটিয়ে দিতে হবে।
  2. সম্পূর্ণ টিএসপি এবং এমপি সার শেষ চাষের আগে জমিতে ছিটিয়ে ভালভাবে মাটিতে মিশিয়ে দিতে হবে।
  3. অবশিষ্ট ইউরিয়া সার বীজ বপনের ৩০-৪০ দিন ৫০-৬০ দিন পরে আগাছা নিড়ানীর পর দুই কিস্তিতে উপরি প্রয়োগ করতে হবে।
  4. মাটিতে প্রয়োজনীয় রস না থাকলে সার উপরি প্রয়োগের পর সেচ দেয়া ভাল।

ঙ) অন্যান্য পরিচর্যা

সেচ ও নিষ্কাশন:

মাটিতে রস না থাকলে বীজ বপনের পর হালকা সেচ দেয়া ভাল। মাটির ধরন ও বৃষ্টির উপর নির্ভর করে জমিতে মোট ২-৩টি সেচ দেয়া যেতে পারে।

আগাছা দমন:

গাছের দৈহিক ও ফলন বৃদ্ধির জন্য সময়মতো আগাছা নিড়ানো ও গাছ পাতলাকরণ জরুরি। সাধারণত বীজ বপনের ১৫-২০ দিন পর আগাছা নিড়ানো উচিত।

উপরে বর্ণিত গাছ থেকে গাছের দূরত্ব বজায় রাখার জন্য পাতলাকরণ উচিত। এ ফসলের জন্য ২-৩টি নিড়ানি ও পাতলাকরণ প্রয়োজন।

চ) মাড়াই, ঝাড়াই ও সংরক্ষণ

হাত দ্বারা ঘসে কিংবা লাঠি দিয়ে পিটিয়ে বীজ বাহির করা হয়।

বীজগুলো পরিষ্কার করে এবং ভালভাবে রোদে শুকানোর পর ঠান্ডা করে পলিথিনের ব্যাগে/প্লাস্টিকের পাত্রে/টিনের কৌটায় রেখে মুখ ভালভাবে বন্ধ করে রাখতে হয়।

চটের বস্তায় কালোজিরা রাখলে ঠান্ডা ও শুষ্ক জায়গায় রেখে সংরক্ষণ করতে হবে।

ছ) ফসল সংগ্রহ

বীজ বপনের ১৩৫-১৪৫ দিনের মধ্যে গাছ হলুদ বর্ণ ধারণ করে এবং এ সময় কালোজিরা সংগ্রহ করতে হয়। এ সময় গাছ উত্তোলনের পর শুকানোর জন্য রোদে ছড়িয়ে দিতে হয়।

(৩) পোকামাকড় ও রোগ দমন

কালোজিরার জমিতে তেমন একটা পোকা মাকড়ের আক্রমণ দেখা যায় না। তবে জমিতে রস বেশি থাকলে গোড়া পচা রোগ দেখা যায়।

এই রোগের আক্রমণ দেখা দিলে রিডোমিল গোল্ড বা ডাইথেন এম-৪৫ বা কার্বেন ডাজিম নামক ছত্রাকনাশক প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে ৭ দিন পর পর ৩-৪ বার স্প্রে করা যেতে পারে।

[সূত্র: বিএআরআই]

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/krisi

Everything related to animal and plants in the Bangla language!View Author posts

You cannot copy content of this page