Skip to content

 

ক্যাকটাস গাছের যত্ন ও পরিচর্যা

ক্যাকটাস গাছের যত্ন ও পরিচর্যা

(১) নং ক্যাকটাস গাছের যত্ন ও পরিচর্যা হলো: পানি দেওয়া

  • গাছের রঙ বা পাতার রঙ বদলে গেলে বুঝবেন প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি দিচ্ছেন গাছে। 
  • ক্যাকটাস বা সাকুলেন্ট ধরনের গাছ অতিরিক্ত পানির কারণে মারা যায়। কারণ এগুলো মরুভূমির গাছ, অর্থাৎ এদের পানি প্রয়োজন হয় খুব কম।
  • ক্যাকটাস এমনই এক উদ্ভিদ, খরা সহ্য করার ক্ষমতা যার আছে। ফলে দীর্ঘদিন ছুটিতে থাকলেও অফিসের ডেস্কে রাখা ক্যাকটাসে পানি দেওয়া নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।
  • ৬/৭ দিন পরপর অল্প করে পানি দিন। তবে অতিরিক্ত পানিতে ক্যাকটাস মারা যায়। যেদিন পানি দিবেন সেদিন অবস্যাই গাছ রোদে দিতে হবে,না হলে গাছ পঁচে যাবার সম্ভাবনা থাকে।
  • বর্ষায় ১০-১৫ দিন পরপর ক্যাকটাসে পানি দিন। গরমে সপ্তাহে ১ দিন। তবে পানি দেওয়ার সময় মাটি পরীক্ষা করে দেখতে হবে। উপরের ১-২ ইঞ্চি শোকালেই ফের পানি দেবেন। এতে শিকড় পচে যাওয়া বা গাছ পচে যাওয়ার কোনও সমস্যা হবে না।
  • ক্যাকটাস গাছে খুব বেশি পানি দিলে ধীরে ধীরে এর মূল পচে যেতে শুরু করে৷ পাতা শুকিয়ে আসে৷ সেটা ফাংগাল ইনফেকশনের জন্যই হয়৷ শেষমেশ গাছটি মরে যায়৷ তাই পরের বার গাছে পানি দেওয়ার আগে দেখে নেবেন মাটি একেবারে শুকনো কিনা৷
  • বেখেয়ালে প্রায় সময় ক্যাকটাসে দীর্ঘদিন পানি দেওয়া হয় না। এতে ক্যাকটাস শুকিয়ে যায়, কুঁচকে যায়, মরমর দেখায়। এমনটা হলে যত দ্রুত সম্ভব গাছে পানি দিতে হবে এবং খেয়াল রাখতে হবে ক্যাকটাসের টবের নিচের অংশের ছিদ্র দিয়ে বাড়তি পানি যেন বেরিয়ে যেতে পারে।
  • মাটি শুষ্ক হলেই পানি বাড়তি পরিচর্যার ফলে অনেকেই ক্যাকটাসের টবে এক-দুই দিন পরপরেই পানি দিতে থাকেন। এতে করে ক্যাকটাসের গোড়া থেকে পচন ধরে যায়। খেয়াল রাখতে হবে, ক্যাকটাসের টবে মাটি একেবারে শুকিয়ে গেলে তবেই তাতে পানি দিতে হবে। তার আগে নয়।
  • ক্যাকটাস গাছে সপ্তাহে একদিন সামান্য পানি দিন। এগুলো সাধারণত পানি জমিয়ে রাখে। দেখা যায় অনেক সময় উপরের অংশের মাটি শুকনা থাকলেও নিচের অংশের মাটি ভেজা থাকে। এমন অবস্থায় আবার পানি দিলে গাছের শিকড় পচে যায়। চাইলে দশদিনে একবার পানিও দিতে পারেন। তবে অতিরিক্ত পানি দেবেন না কোনোভাবেই। 
  • ক্যাকটাসে খুব বেশি পানি দেওয়ার প্রয়োজন হয় না৷ দরকার হলে একদিন অন্তর পানি দিতে পারেন৷ তবে সবটাই নির্ভর করে আবহাওয়ার ওপর৷ তাই কোনও নার্সারিতে জিজ্ঞাসা করে নিতে পারেন ক্যাকটাসে এখন কতটা পানি দিতে হবে৷ তবে মাটি সম্পূর্ন না শুকালে কখনওই ফের পানি দেবেন না৷ নয়ত ফাংগাল ইনফেকশন হয়ে গাছটি মারা যেতে পারে৷
  • সঠিক পরিমাণ পানি সময় মত দেওয়া খুবই দরকারী সঠিকভাবে ক্যাকটাস চাষের জন্য, বেশী পানি দেওয়া যেমন ক্ষতিকর তেমনি কম পানিও ক্যাকটাসের বৃদ্ধি ব্যহত করে, পানির পরিমাণ আর প্রয়োগ বছরের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন হয়। তাছাড়া এটা ক্যাকটাসের জাতের উপরও নির্ভর করে। ক্যাকটাসে শীতকালে পানি দেওয়ার দরকার হয় না। তবে যদি মূল শুকিয়ে যাওয়ার সম্ভব্না থাকে তাহলে শীতকালে মাসে একবার পানি দিতে হবে।
  • পানি ছাড়াও খাবার বলতে দিতে পারেন উদ্ভিদের জন্য প্রয়োজনীয় ১৬টি পুষ্টি-উপাদান (ম্যাক্রো ও মাইক্রো উপাদান) নিয়ে তৈরি তরল খাবার। প্রতি মাসে অল্প পরিমাণে দুবার দিলেই যথেষ্ট। পাওয়া যাবে ব্র্যাক কানন, আগোরা, আড়ংসহ বড় কিছু সুপারশপে। তবে বিকল্প হিসেবে বাসায় তৈরি করা যায়। ইউরিয়া ৪ গ্রাম,পটাশ ৬ গ্রাম, টি,এস পি ৬ গ্রাম (প্রতি লিটারে পানিতে) ১ মাস অন্তর হালকা করে স্প্রে করতে হবে।
See also  ক্যাকটাস গাছের চাষ বা টবে ক্যাকটাস চাষ পদ্ধতি

(২) নং ক্যাকটাস গাছের যত্ন ও পরিচর্যা হলো: আলো/রোদের ব্যবস্থা

  • একইসাথে ক্যাকটাসটিকে খোলামেলা আলো ও বাতাসযুক্ত স্থানে রাখতে হবে।
  • সাকুলেন্ট ধরনের গাছ রোদ পছন্দ করে। তাই এগুলো এমন স্থানে রাখুন যেখানে অন্তত দুই ঘণ্টা সরাসরি রোদ পড়ে।
  • ক্যাকটাস গাছ সাধারণর ৪৫ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা সবচেয়ে ভালো, তবে ২৫ থেকে ৩৫ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড এ খারাপ হয় না।
  • যেহেতু মরুভূমির উদ্ভিদ, এ জন্য ক্যাকটাসে চাই সূর্যের আলো৷ ঘরে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস আছে এমন স্থানে ক্যাকটাস রাখতে হবে। পারলে সপ্তাহে ২ দিন রোদে রাখতে হবে।
  • সব ক্যাকটাস প্রচুর সূর্যালোক পছন্দ করে তবে সকালের সূর্যালোকই ক্যাকটাস এর জন্য বেশী ভালো, আর তাই সব ক্যাকটাসই কাঁচের বা পলিব্যাগের ছাউনীর নিচে চাষ করতে হয়।
  • ক্যাকটাস গাছ এমন গাছ রাখুন যেখানে সকালের নরম রোদ আসে। সারাদিন রোদ না পেলেও চলবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে যাতে বৃষ্টির ছাট গাছে না পড়ে। এতে শিকড় পচে যেতে পারে।
  • এদিকে ছায়াতে জন্মানো ক্যাকটাসে ফুল হয় না। আর প্রচুর পরিমাণে ভালো মানের ক্যাকটাস ফুল ও গাছ উৎপাদনের জন্য পর্যাপ্ত বাতাস দরকার, সেজন্য কাঁচের বা পলিব্যাগের ছাউনীর চারপাশে খোলা রাখতে হয়।
  • টানা ৪ ঘন্টা ক্যাকটাস গাছকে রোদে রাখতে হয়৷ একথা সত্যি৷ তবে শুধুমাত্র মরুভূমির কাঁটা যুক্ত ক্যাকটাসের ক্ষেত্রেই সেকথা প্রযোজ্য৷ অন্যান্য ক্যাকটাসের খুব বেশি রোদে কষ্ট হতে পারে৷ ফলে গরম পড়েছে বলে গাছটিকে বারান্দায় বের করে দেবেন না৷
  • আপনি যে আবহাওয়ায় বসবাস করেন তার জন্য যে ক্যাকটাস পারফেক্ট সেটিই কিনুন৷ খুব বেশি রোদ যদি আপনার ঘরে না ঢোকে তাহলে যে ক্যাকটাস কম রোদে বাঁচে সেটি কিনুন৷ ঘরের তাপমাত্রা খুব বেশি হলে কাঁটাযুক্ত ক্যাকটাস কিনুন৷ মোট কথা কেনার আগে আবহাওয়া ঠিক কিনা জানা জরুরি৷
  • একটানা রোদ সেও নিতে পারবে না৷ তাদের শুধুমাত্র আলোর দরকার হয়৷ যেহেতু আপনি ঘরে রাখার জন্য যখন গাছটি কিনেছেন তখন সেটিকে ঘরের মধ্যেই রাখুন৷ বেড়ে ওঠার জন্য এসব ক্যাকটাসের খুব বেশি আলোর প্রয়োজন নেই৷ তবে যে ঘরে গাছটি রয়েছে সেটি কখনওই সম্পূর্ন অন্ধকার করে দেবেন না৷
  • ক্যাকটাসের জন্য রোদের আলো অপরিহার্য। ক্যাকটাস যত বাড়তে থাকে, ছড়াতে থাকে তার শাখাপ্রশাখা। অনেক সময় একই টবে ক্যাকটাস অনেক বেশি বড় হয়ে গেলে ক্যাকটাসের ছোট অংশ রোদের আলো ঠিকমতো পায় না। সে অংশগুলোকে রোদের আলো দেওয়ার জন্য বেশি করে রোদের দিকে মুখ করে রাখতে হবে।
See also  ক্যাকটাস কি? ক্যাকটাস গাছের বৈশিষ্ট্য

(৩) নং ক্যাকটাস গাছের যত্ন ও পরিচর্যা হলো: রোগবালাই ব্যবস্থা

  • পোকা আক্রমণ করলে পানিতে নিম অয়েল মিশিয়ে স্প্রে করে দিতে পারেন।
  • পাতার ওপর মাকড়সার জালের মতো হলে ভাববেন গাছটির স্পাইডার মাইটস হয়েছে৷ এই জালের মতো ধুলো পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে ফেলবেন৷ পোকামাকড়ের হাত থেকে গাছটিকে বাঁচানোর জন্য ভালো কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে৷ এক্ষেত্রে ভালো কোনও মালির সাহায্য নিতে পারেন৷
  • নষ্ট হয়ে যাওয়া অংশ কেটে ফেলা ক্যাকটাসটির কোন অংশ যদি নষ্ট হয়ে যায় বা পচে যাওয়ার লক্ষণ দেখা দেয় তবে উক অংশটি সযত্নে কেটে বাদ দিয়ে দিতে হবে। নতুবা উক্ত স্থান থেকে ভালো অংশেও পচন ধরে যাবে। ক্যাকটাসের কোন অংশে যদি ফাংগাসের মতো দেখা দেয়, বাদামী বা কালচে হয়ে আসে তবে বুঝতে হবে উক্ত স্থানে সমস্যা দেখা দিয়েছে।
  • গাছের গোড়ায় ও গাছে ফাঙ্গাসের জন্য ডায়থেন-এম ৪৫ দুই/তিন মাস অন্তর (লিটারে সাড়ে চার গ্রাম) দিয়ে স্প্রে করতে হবে। এটি দিলে গাছ পঁচবে না। যেদিন ব্যবহার করবেন সে দিন অবশ্যই রোদে রাখবেন। ডায়থেন-এম এর সহিত ম্যাগনল (Plant growth regulator) লিটারে হাফ মিলি ব্যবহার করতে পারেন, এতে করে শিকড় ও ফুলের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।
  • ক্যাকটাসের শরীর পরিষ্কার করা ক্যাকটাসের শরীর জুড়ে কাঁটা থাকার দরুন এতে খুব সহজেই ধুলা-ময়লা চুল আটকে যায়। ধুলা-ময়লার স্তর পুরু হয়ে গেলে অনেক সময় ক্যাকটাস রোদের আলো শোষণ করে সালোকসংশ্লেষণ করতে বাধাপ্রাপ্ত হয়। তাই ক্যাকটাসের টবে যেদিন পানি দেওয়া হবে, সেদিন পানির ঝাপটা দিয়ে ক্যাকটাসের পাতা ও শাখাপ্রশাখাগুলো পরিস্কার করে দিতে হবে।

(৪) নং ক্যাকটাস গাছের যত্ন ও পরিচর্যা হলো: টব ও মাটি পরিবর্তন

  • যে টবটিতে ক্যাকটাস রোপণ করা হবে তাতে তিন ভাগের একভাগ মাটি, একভাগ বালি এবং একভাগ পাতা পচা সার ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হয়। এক বছর পর পর একই নিয়মে টবের মাটি পরিবর্তন করে দিতে হয়।
  • ক্যাকটাসের পট বারবার পরিবর্তন করার দরকার পড়ে না। ২ বছরে একবার করলেই হবে। বসন্তে কাঁটা গাছের বৃদ্ধি সবচেয়ে বেশি হয়। তাই প্রতি বছর শীত শেষ হলে মাটির সঙ্গে কম্পোস্ট মেশান। দেখবেন গাছ বাড়ছে তরতর করে।
  • ক্যাকটাস বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে ছড়াতে থাকে তার শাখাপ্রশাখা এবং সেই সকল শাখাও বড় হতে থাকে। এভাবে ছোট ক্যাকটাসটিই এক সময় বিশাল আকৃতি ধারণ করে। ক্যাকটাস যত বড় হবে, তার জন্য তত বড় ও প্রশস্ত টবের প্রয়োজন হবে। নতুবা অপর্যাপ্ত স্থানের দরুন ক্যাকটাস ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যাবে।
  • ক্যাকটাস গাছ রোপন করার সময় একটা কথা মাথায় রাখুন যে এই গাছের ক্ষেত্রে এমন মাটি প্রয়োজন যা খুব দ্রুত শুকিয়ে যায়৷ আপনি যে টবে এটি রোপন করেছেন সেই টবে মাটি শুকাতে না পারলে আজই টব বদলান৷ নতুন তবে দুই ভাগ বালি এবং পুরানো মাটির এক ভাগ দিয়ে গাছটিকে ফের রোপন করুন৷ সময়ে সময়ে সার দিতে ভুলবেন না৷ এটাই কিন্তু গাছটির খাদ্য৷
See also  ক্যাকটাস গাছ লাগানোর নিয়ম

[সূত্র: ইন্টারনেট]

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/krisi

Everything related to animal and plants in the Bangla language!View Author posts

You cannot copy content of this page