Skip to content

গৃহপালিত পশু ও পাখির সম্পূরক খাদ্য

গৃহপালিত পশু ও পাখির সম্পূরক খাদ্য

এই আর্টিকেলটি শেষ অবধি অধ্যয়ন করলে আপনি- খাদ্য, পুষ্টি উপাদান, সুষম খাদ্য, সম্পূরক খাদ্য, রেশন বা খাদ্য তালিকা প্রভৃতি কি/কাকে বলে তা বুঝতে পারবেন। খাদ্যের কাজ কি তা অনুধাবন জানতে পারবেন। আদর্শ রেশন বা খাদ্য তালিকার বৈশিষ্ট্য ও এটি তৈরিতে বিবেচ্য বিষয়সমূহ সম্পর্কে জানতে পারবেন।

(১) খাদ্য কাকে বলে?

খাদ্য কাকে বলে: সাধারণভাবে খাওয়ার যোগ্য যে কোন দ্রব্যকেই খাদ্য বলে। কিন্তু বিজ্ঞানের ভাষায় খাদ্য হলো সেসব দ্রব্য যা প্রাণী আহার হিসেবে গ্রহণ করে এবং পরিপাক, শোষণ ও বিপাকের পর তা দেহে ব্যবহৃত হয়। যেমন- ঘাস, খৈল, ভুসি ইত্যাদি।

(২) পুষ্টি উপাদান কাকে বলে?

পুষ্টি উপাদান কাকে বলে: পুষ্টি উপাদান হলো এমন একটি দ্রব্য যা গবাদিপশু ও পাখির দৈহিক বৃদ্ধি, পুষ্টি সাধন, দেহরক্ষা, প্রজনন ও দেহের অন্যান্য কার্যক্রমে সাহায্য করে।

পুষ্টি উপাদান কয়টি ও কি কি: পুষ্টি উপাদানকে ছয় ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন- ১। আমিষ; ২। শর্করা; ৩। স্নেহপদার্থ; ৪। ভিটামিন; ৫। খণিজ পদার্থ; ও ৬। পানি।

(৩) সুষম খাদ্য কাকে বলে?

সুষম খাদ্য কাকে বলে: যেসব খাদ্যদ্রব্যের মধ্যে দেহের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানসমূহ সঠিক অনুপাতে বিদ্যমান থাকে তাদের সুষম খাদ্য বলে। দেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও উৎপাদনের জন্য সুষম খাদ্য অপরিহার্য।

(৪) সম্পূরক খাদ্য কাকে বলে?

সম্পূরক খাদ্য কাকে বলে: গবাদিপশু প্রাকৃতিকভাবে বিচরণ করে যেসব খাদ্য খায় সেসব খাদ্যদ্রব্যের মধ্যে সব সময় দেহের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানসমূহ সঠিক অনুপাতে বিদ্যমান থাকে না। সে কারণে গবাদিপশু ও পাখি থেকে অধিক দুধ, মাংস ও ডিম উৎপাদনের জন্য এসব খাদ্যদ্রব্যের সঙ্গে আমিষ, স্নেহপদার্থ, ভিটামিন ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদানসম্মৃদ্ধ অতিরিক্ত খাদ্যদ্রব্য সরবরাহ করতে হয়। এই অতিরিক্ত খাদ্যদ্রব্যকেই সম্পূরক খাদ্য বলে থাকে।

See also  সম্পূরক খাদ্য কাকে বলে? সম্পূরক খাদ্য কি? গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি ও মাছের সম্পূরক খাদ্য তৈরি

(৫) খাদ্যের কাজ কি?

খাদ্যের কাজ কি: খাদ্যের প্রথম ও অত্যাবশ্যকীয় কাজ হলো গবাদিপশু ও পাখি তথা প্রাণীর জীবন রক্ষা করা। এছাড়াও খাদ্য নিম্নলিখিত কাজের সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। যেমন-

  • প্রাণিদেহের ক্ষয় রোধ করা।
  • দেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা।
  • দৈহিক বৃদ্ধি সাধন ও ভারসাম্য রক্ষা করা।
  • উৎপাদন ক্ষমতা রক্ষা ও বৃদ্ধি করা (গবাদিপশুর ক্ষেত্রে মাংস ও দুধ এবং গৃহপালিত পাখির ক্ষেত্রে ডিম ও মাংস উৎপাদন)।
  • দেহ থেকে বিষাক্ত পদার্থ বেরিয়ে যেতে সাহায্য করা।

(৬) রেশন বা খাদ্য তালিকা কাকে বলে?

রেশন বা খাদ্য তালিকা কাকে বলে: কোন গবাদিপশু ও পাখিকে সারাদিনে অর্থ্যাৎ ২৪ ঘন্টার মধ্যে যে খাদ্য সরবরাহ করা হয় তাকে রেশন বা খাদ্য তালিকা বলে।

রেশন বা খাদ্য তালিকা কত প্রকার: রেশন বা খাদ্য তালিকা দুই প্রকার। যথা-

  1. দেহরক্ষাকারী রেশন: গবাদিপশু ও পাখি যখন বিশ্রামরত অবস্থায় থাকে তখন তাদেরক যে রেশন দেয়া হয় তা হলো ‘দেহরক্ষাকারী রেশন’।
  2. উৎপাদন রেশন: গবাদিপশু ও পাখিকে যখন দেহরক্ষাকারী রসদের সঙ্গে তার উৎপাদন, যেমন- দৈহিক বৃদ্ধি ও দুধ উৎপাদন, গর্ভাবস্থা, হালচাষ, ডিম ও মাংস উৎপাদন প্রভৃতির জন্য অতিরিক্ত রেশন সরবরাহ করা হয় তখন সে রেশনকে ‘উৎপাদন রেশন’ বলে।

এটি গবাদিপশু ও পাখির দৈহিক ওজন ও উৎপাদনের ওপর নির্ভর করে। উৎপাদন মাত্রা বেশি হলে একই দৈহিক ওজনবিশিষ্ট গবাদিপশু ও পাখির উৎপাদন রেশনের চাহিদা বৃদ্ধি পায়।

(৭) আদর্শ রেশন বা খাদ্য তালিকার বৈশিষ্ট্য কি?

যে কোন গবাদিপশু বা পাখির জন্য রেশন বা খাদ্য তালিকার কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এখানে এগুলো উল্লেখ করা হলো-

  • একটি আদর্শ রেশনে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানগুলো সঠিক অনুপাতে থাকবে।
  • রেশনে ব্যবহৃত উপকরণ অবশ্যই সুস্বাদু হবে।
  • রেশনে যথাসম্ভব বেশি উপকরণ যোগ করা উচিত।
  • রেশনের খাদ্য উপকরণগুলোতে কোন বিষাক্ত পদার্থ থাকবে না।
  • রেশন অবশ্যই রেচক (খধীধঃরাব) হবে।
  • রেশন আয়তনে বেশি হবে (ইঁষশু)।
  • রেশনে কাঁচা ঘাসজাতীয় খাদ্যদ্রব্য বেশি পরিমাণে ব্যবহার করা উচিত।
  • হঠাৎ করে রেশনে পরিবর্তন আনা যাবে না।
  • প্রতিদিন একই সময়ে রেশন সরবরাহ করতে হবে।
  • রেশন তৈরির সময় অর্থনৈতিক দিক লক্ষ্য রাখতে হবে।
  • একই জাতের ও একই বয়সের গবাদিপশু ও পাখিদের একই খাদ্যতালিকা সরবরাহ করতে হবে।
  • রেশনে প্রয়োজনীয় খণিজ উপাদান বিদ্যমান থাকবে।
See also  সম্পূরক খাদ্য কাকে বলে? সম্পূরক খাদ্য কি? গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি ও মাছের সম্পূরক খাদ্য তৈরি

(৮) রেশন বা খাদ্য তালিকা তৈরিতে বিবেচ্য বিষয়সমূহ কি?

যে কোন গবাদিপশু বা পাখির জন্য রেশন বা খাদ্য তালিকা তৈরি করতে কিছু বিষয় বিবেচনা করতে হয়। এখানে এগুলো উল্লেখ করা হলো-

  • রেশন তৈরির উদ্দেশ্য কি তা জানতে হবে।
  • কোন বয়সের গবাদিপশু/পাখির জন্য রেশন তৈরি করা হবে তা জানতে হবে।
  • গবাদিপশু বা পাখিটি উৎপাদনের কোন স্তরে আছে তা জানতে হবে।
  • গবাদিপশু বা পাখিটির অসুস্থ হওয়া চলবে না।
  • রেশনে ব্যবহৃত খাদ্য উপকরণগুলোর রাসায়নিক গঠন জানতে হবে।
  • খাদ্য উপকরণে শক্তির হিসাব জানতে হবে।
  • খাদ্য উপকরণ সস্তা ও সহজলভ্য হতে হবে।
  • খাদ্য উপকরণে কোন বিষাক্ত পদার্থ আছে কি-না তা জানতে হবে।
  • গবাদিপশু বা পাখির দৈহিক ওজন জানতে হবে।
  • প্রয়োজনীয় ভিটামিনসম্মৃদ্ধ খাদ্য উৎস অন্তর্ভূক্ত করতে হবে।

প্রিয় পাঠক বন্ধু, উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে আমরা- খাদ্য কাকে বলে? পুষ্টি উপাদান কাকে বলে? সুষম খাদ্য কাকে বলে? সম্পূরক খাদ্য কাকে বলে?খাদ্যের কাজ কি? রেশন বা খাদ্য তালিকা কাকে বলে? আদর্শ রেশন বা খাদ্য তালিকার বৈশিষ্ট্য কি? রেশন বা খাদ্য তালিকা তৈরিতে বিবেচ্য বিষয়সমূহ কি? ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে জানতে পারলাম।

খাওয়ার যোগ্য যে কোন দ্রব্যই খাদ্য। খাদ্যে সর্বমোট ছয়টি পুষ্টি উপাদান রয়েছে। যেসব খাদ্যদ্রব্যে এই উপাদানগুলো সঠিক অনুপাতে থাকে সেগুলোই সুষম খাদ্য। গৃহপালিত পশু-পাখি থেকে বেশি পরিমাণে দুধ, মাংস ও ডিম পেতে হলে তাদেরকে সম্পূরক খাদ্য দিতে হবে। পশু-পাখিকে ২৪ ঘন্টায় প্রদানকৃত খাদ্যকে রসদ, খাদ্যতালিকা বা রেশন বলে। গৃহপালিত পশু-পাখি থেকে কাঙ্খিত উৎপাদন পেতে হলে সঠিক রসদ সরবরাহ করতে হবে।

[সূত্র: ওপেন স্কুল]

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/krisi

Everything related to animal and plants in the Bangla language!View Author posts