Skip to content

বীজের বিশুদ্ধতার হার নির্ণয়

বীজের বিশুদ্ধতার হার নির্ণয়

বীজ কৃষি উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপকরণ। অন্যান্য উপকরণ সঠিক মাত্রায় এবং সঠিক সময়ে ব্যবহার করা সত্ত্বেও বীজ যদি মানসম্পন্ন না হয় তবে ফসলের ফলন ভাল আশা করা যায় না। এজন্য কীভাবে বীজ উৎপাদন, সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করতে হয় সে সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। 

এ পাঠ শেষে আপনি- বীজের বিশুদ্ধতা পরীক্ষা কাকে বলে তা জানতে পারবেন; বীজের বিশুদ্ধতা হার নির্ণয় কীভাবে করা হয় তা আয়ত্ত্ব করতে পারবেন; বীজের বিশুদ্ধতার হার নির্ণযয়ের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সম্পর্কে আবগত হতে পারবেন।

(১) বীজের বিশুদ্ধতা পরীক্ষা কাকে বলে?

বীজের বিশুদ্ধতা পরীক্ষা কাকে বলে: কোন বীজ নমুনায় ওজন ভিত্তিতে শতকরা কত অংশ মূল শস্য বীজ আছে তা নির্ধারণের প্রক্রিয়াকে বীজের বিশুদ্ধতা পরীক্ষা বলে। 

একটি বীজের নমুনার মধ্যে প্রধানত ৪টি অংশ থাকে। যথা-

  1. বিশুদ্ধ প্রজাতির বীজ
  2. অন্য প্রজাতির বীজ
  3. আগাছা বীজ
  4. জড় পদার্থ 

বীজের এই চারটি ভাগের মধ্যে বিশুদ্ধ বীজের অর্থ্যাৎ মূল শস্য বীজের শতকরা হার কত রয়েছে তা বের করাই হলো বীজের বিশুদ্ধতার হার নির্ণয়। 

(২) বীজের বিশুদ্ধতার হার নির্ণয় পদ্ধতি

ক) প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি

  1. পিউরিটি বোর্ড বা বীজ বোর্ড 
  2. মাপক নিক্তি (+.০০১ গ্রাম)
  3. সাদা কাগজ
  4. পেট্রি-ডিস (মধ্যম ও বড় আকারের) 
  5. চিমটা
  6. স্ট্যান্ডযুক্ত ম্যাগনেফাইং 

খ) বিশুদ্ধ বীজ, অন্য প্রজাতির বীজ, আগাছা বীজ ও জড় পদার্থ শনাক্তকরণ

বিশুদ্ধ বীজ অংশ: বিভিন্ন প্রজাতিভেদে বিশুদ্ধ বীজের সংজ্ঞা ভিন্নতর। সাধারণভাবে নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে বিশুদ্ধ বীজ অংশ শনাক্ত করা যাবে-

  • সম্পূর্ণ অক্ষত ও সুস্থ বীজ।
  • ভাঙ্গা বীজের যে অংশে ভ্রণসহ বা ব্যতীয় ৫০% এর বেশি অবশিষ্ট আছে।
  • আংশিকভাবে অপূর্ণ বীজ ও সম্পূর্ণ চিটা বীজ বিশুদ্ধ বীজের অন্তভূক্ত হবে না। এ পরীক্ষার জন্য ম্যাগনিফাইং গ্লাস ব্যবহার করতে হবে।
See also  বীজ উৎপাদন পদ্ধতি/কৌশল ও ধাপ সমূহ

অন্য প্রজাতির বীজ অংশ: মূল প্রজাতির শস্য বীজ ব্যতীত সকল প্রকার বীজ অন্য প্রজাতির বীজের মধ্যে গণ্য হবে।

আগাছা বীজ: পূর্ণ, অপূর্ণ, ফাটল ধরা বা ভাঙ্গা সকল শনাক্তকৃত আগাছা বীজ এ অংশে অন্তর্ভুক্ত হবে।

জড় পদার্থ: উপরোল্লিখিত নিয়মে শনাক্তকৃত বিশুদ্ধ বীজ ও অন্য প্রজাতির বীজ, আগাছা বীজ ব্যতীত অবশিষ্ট অংশটুকু জড় পদার্থ  বলে গণ্য হবে।  জড় পদার্থ শনাক্ত করার উপায় হলো-

  • শস্য বা অন্য শস্য বীজে ৫০% এর কম অংশ অবশিষ্ট রয়েছে এমন।
  • মুল শস্য বীজের বা অন্য শস্য বীজের বাইরে বা অভ্যন্তরে ছাতাগুটি বা কৃত্রিম গুল উৎপন্ন রয়েছে।
  • মূল শস্যের বা অন্যান্য শস্যেও চিটা অংশ।
  • খড়কুটা, পাতা, কান্ড ইত্যাদি।
  • মাটি কণা, নুড়ি, ইটের টুকরা, ধুলাবালি, মৃত ও জীবিত কীটপতঙ্গ ইত্যাদি।

খ) নির্ণয় পদ্ধতি

⇒ সর্ব প্রথম মাপক নিক্তি দ্বারা কার্য সম্পাদন নমুনার সঠিক ওজন নিন।

⇒ ওজন নেওয়ার পর সমস্ত বীজ পিউরিটি বোর্ডে ছড়িয়ে দিন। তারপর বিশুদ্ধ বীজ, অন্য প্রজাতির বীজ, আগাছা বীজ ও জড় পদার্থ অংশের পৃথক পৃথক হিসেব করুন। এসব উপাদান যথাযথভাবে পৃথক করার জন্য এদের সম্পর্কে  ভালোভাবে জানার জন্য এ পাঠের শেষ দিকের আলোচনা মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

⇒ বাছাই করা প্রতিটি অংশ পৃথক পৃথক পেট্রিডিসে রাখুন। পৃথক করার সময় বীজ শনাক্তকরণের যেকোন সন্দেহের ক্ষেত্রে ম্যাগনিফাইং গ্লাস ব্যবহার করুন।

⇒ তারপর প্রতিটি অংশের সঠিকভাবে (প্রয়োজনীয় সংখ্যক দশটি ঘর পর্যন্ত) পৃথক ওজন নিয়ে নিম্ন তালিকানুসারে হিসেব নির্ণয় করুন।

⇒ বীজের বিশুদ্ধতার হার নির্ণয়ের সূত্র ব্যবহার করে বীজের বিশুদ্ধতা নির্ণয় করুন নিম্নরূপ হবে।

আমরা জানি, বীজের বিশুদ্ধতার হার = (মোট বীজের ওজন – অন্য প্রজাতির বীজ অংশ – আগাছা বীজ – জড় পদার্থ) x 100 ÷ মোট বীজের ওজন

উদাহরণস্বরূপ:

ধরি,
মোট বীজের ওজন = ১০০০ গ্রাম
অন্য প্রজাতির বীজ অংশ = ৪০ গ্রাম
আগাছা বীজ = ৫০ গ্রাম
জড় পদার্থ = ৬০ গ্রাম

আমরা জনি,
বীজের বিশুদ্ধতার হার = (মোট বীজের ওজন – অন্য প্রজাতির বীজ অংশ – আগাছা বীজ – জড় পদার্থ) x ১০০ ÷ মোট বীজের ওজন
বা, বীজের বিশুদ্ধতার হার = (১০০০ – ৪০ – ৫০ – ৬০) x ১০০ ÷ ১০০০ শতাংশ
বা, বীজের বিশুদ্ধতার হার = ৮৫০ x ১০০ ÷ ১০০০ শতাংশ
বা, বীজের বিশুদ্ধতার হার = ৮৫ শতাংশ

See also  বীজ কি? বীজ কাকে বলে? বীজ কত প্রকার? প্রকৃত বীজ ও অঙ্গজ বীজের পার্থক্য এবং এদের গুরুত্ব

অতএব, নির্ণেয় বীজের বিশুদ্ধতার হার ৮৫%।

প্রিয় পাঠক, উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে আমরা বীজের বিশুদ্ধতা পরীক্ষা কাকে বলে ও বীজের বিশুদ্ধতার হার নির্ণয় পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে পারলাম।

ভালবীজ উৎপাদন ও মান নিয়ন্ত্রণের জন্য মাঠ পর্যায়ে আমাদের করণীয় হলো ভালো জমি নির্বাচন, সুস্থ বীজ নির্বাচন, সঠিক সময়ে বীজ বপন, চারা রোপণ, আগাছা নিয়ন্ত্রণ, বিজাত বাছাই এবং সময়মত ফসল কর্তন। এছাড়া, ফসল কাটার পর সঠিকভাবে ফসল মাড়াই, ঝাড়াই, নির্ধারিত মাত্রায় বীজ শুকানো, বীজ শোধন এবং বীজ সংরক্ষণ বা গুদামজাতকরণ এসব কাজগুলো যথাযথভাবে সম্পন্ন করতে হবে।

[সূত্র: ওপেন স্কুল]

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/krisi

Everything related to animal and plants in the Bangla language!View Author posts