Skip to content

মুরগির বৈশিষ্ট্য ও মুরগির জাতের নাম

মুরগির বৈশিষ্ট্য ও মুরগির জাতের নাম

মুরগির আচরণ সাধারনত ভদ্র, চঞ্চল ও সতর্ক। বিশেষত মুরগির বৈশিষ্ট্য হলো এরা ডিম পাড়ার সময় বাসায় ঢুকে ডিম দেয়, কোনো সময় অলস বসে থাকে না। ডিম পাড়া মুরগির পিঠে হাত রাখলে সহজেই বসে পড়বে।

পৃথিবীতে কয়েকশত মুরগির জাতের নাম রয়েছে। মুরগিদের গৃহপালিত পাখি হিসেবে পালন করা হয় সমগ্র পৃথিবী জুড়ে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ভৌগোলিক সীমা রেখা এবং মুরগির বৈচিত্রতার ভিত্তিতে এদের আলাদা আলাদা জাত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে।

যে সমস্ত শারীরিক বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে এদের আলাদা হিসেবে গণ্য করা হয় সেগুলো হচ্ছে- আকার, শারীরিক গঠন, ঝুঁটির ধরন, চামড়ার রং, আঙুলের সংখ্যা, পাখার গঠন, ডিমের রং, উৎপত্তি স্থল প্রভৃতি। এছাড়াও এদেরকে ব্যবহারের ভিত্তিতে আলাদা বলে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। যেমন- ডিমের জন্য, মাংসের জন্য প্রদর্শনীর জন্য, মাংস এবং ডিম উভয়ের জন্য।

এখানে আমরা মুরগির বিভিন্ন শ্রেণি, মুরগির জাতের নাম এবং এসব মুরগির বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোচনা করব।

এ পাঠ শেষে আপনি- মুরগির বিভিন্ন শ্রেণি ও মুরগির জাতের নাম সম্পর্কে বঅবগত হতে পারবেন। বিভিন্ন শ্রেণী ও জাতের মুরগির বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানতে পারবেন।

(১) শ্রেণীভেদে মুরগির বৈশিষ্ট্য ও মুরগির জাতের নাম

শ্রেণি (Class): পৃথিবীর কোনো নিদিষ্ট এলাকা হতে উদ্ভুত এবং কিছু কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য সাদৃশ্যের মুরগিগুলোকে একটি শ্রেণিতে অন্তর্ভূক্ত করা হয়। যেমন- আমেরিকান শ্রেণি, এশিয়াটিক শ্রেণি, ভূমধ্যসাগরীয় শ্রেণি এবং ইংলিশ শ্রেণি। পৃথিবীর সব মুরগিকে এই চারটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়।

See also  গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগি পালন এবং তাদের কিছু কমন রোগব্যাধির পরিচিতি

জাত (Breed): শ্রেণির অধীনে আকার ও আকৃতিতে সাদৃশ্যপূর্ণ মুরগিগুলোকে একটি জাতের অন্তর্ভূক্ত করা হয়। যেমন- লেগহর্ণ, মিনর্কা, অস্ট্রালর্প ইত্যাদি। এবার অসা যাক কোন কোন শ্রেণিতে কি কি জাত এবং উপজাত রয়েছে সেই আলোচনায়। নিম্নোক্ত সারণী সেই সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

ক) মুরগির শ্রেণী ‘আমেরিকান’

মুরগির জাতের নাম: রোড আইল্যান্ড রেড, প্লাইমাউথ রক, নিউ হ্যাম্পশায়ার, ওয়েনডট প্রভৃতি।

মুরগির বৈশিষ্ট্য:

  1. কানের লতির রং লাল।
  2. এ জাত ডিম ও মাংস উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত।
  3. এদের পায়ের নালা পালকবিহীন।
  4. গায়ের চামড়ার রং হলুদ।
  5. ডিমের খোসার রং বাদামি।
  6. পায়ের নালার রং হলুদ।

খ) মুরগির শ্রেণী ‘এশিয়াটিক’

মুরগির জাতের নাম: ব্রাহমা, কোচিন, ল্যাংসেন প্রভৃতি।

মুরগির বৈশিষ্ট্য:

  1. কানের লতির রং লাল।
  2. মাংস উৎপাদনের জন্য ব্যবহার করা যায়।
  3. এদের পায়ের নালা পালকযুক্ত।
  4. দেহে পালক বেশি থাকে।
  5. ডিমের খোসার রং বাদামি।
  6. এদের কুঁচে হওয়ার প্রবনতা বেশি।
  7. এদের ডিম উৎপাদন হার কম।

খ) মুরগির শ্রেণী ‘ভূমধ্যসাগরীয়’

মুরগির জাতের নাম: লেগহর্ন, মিনর্কা, অ্যানকোনা, ফাওমি, আন্দালুসিয়ান প্রভৃতি।

মুরগির বৈশিষ্ট্য:

  1. কানের লতির রং সাদা।
  2. ডিম উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়।
  3. পায়ের নালা পালকহীন।
  4. ডিমের খোসার রং সাদা।
  5. এরা আকারে ছোট।
  6. পালক আটোসাঁটো ও দেহের সাথে সুবিন্যস্ত।
  7. কুঁচে হওয়ার অভ্যাস একেবারেই নেই।

খ) মুরগির শ্রেণী ‘ইংলিশ’

মুরগির জাতের নাম: সাসেক্স, অস্ট্রালপ, অরপিংটন, কর্নিশ প্রভৃতি।

মুরগির বৈশিষ্ট্য:

  1. কানের লতির রং লাল।
  2. মাংস ও ডিম উৎপাদন উভয় উদ্দেশ্যেই ব্যবহারউপযোগী।
  3. এদের পায়ের নালা পালকহীন।
  4. ডিমের খোসর রং বাদামি।
  5. কর্নিশ ছাড়া সবগুলো জাতের চামড়ার রং সাদা।
  6. এদের আাকার মাঝারি।

(২) বিভিন্ন শ্রেণির একটি করে জাতের মুরগির বৈশিষ্ট্য বর্ণনা

ক) মুরগির জাতের নাম ‘রোড আইল্যান্ড রেড’

চিত্র- রোড আইল্যান্ড রেড
চিত্র- রোড আইল্যান্ড রেড

উৎপত্তি এবং প্রাপ্তিস্থান: আমেরিকার ‘রোড আইল্যান্ড’ (Rhode Island) নামক স্থানে এ জাতের উৎপত্তি। এটি আমেরিকান শ্রেণীভুক্ত মুরগির জাত। বর্তমানে পৃথিবীর সব অঞ্চলে এ জাতটি পাওয়া যায়। 

See also  হাঁস-মুরগির রোগ ও প্রতিকার

মুরগির বৈশিষ্ট্য:

  1. পালকের রং লাল। চামড়ার রং হলুদ।
  2. ঝুঁটি একক বা গোলাপি হয়ে থাকে। কানের লতির রং লাল।
  3. পায়ের নালায় পালক থাকে না। নালার রং হলুদ।
  4. এ জাতের মোরগের সাহায্যে দেশি মুরগির প্রজনন ঘটিয়ে সংকর মোরগ-মুরগি উৎপাদন করা হয়ে থাকে।
  5. এ সংকর মোরগ-মুরগির ডিম ও মাংস বেশি হয়ে থাকে।
  6. ডিমের খোসার রং বাদামি।

উৎপাদান বৈশিষ্ট্য:

  • ডিম এবং মাংস উৎপাদনের জন্য এ মুরগির জাতটি বিশেষভাবে পরিচিত।
  • শরীরের ওজন: মোরগ ৩.৮ কেজি ও মুরগি ৩.০ কেজি।
  • বার্ষিক ডিম উৎপাদান ক্ষমতা: প্রায় ১৮০টি।

খ) মুরগির জাতের নাম ‘অস্ট্রালর্প’

চিত্র- অস্ট্রালর্প জাতের মুরগি
চিত্র- অস্ট্রালর্প জাতের মুরগি

উৎপত্তি এবং প্রাপ্তিস্থান: ‘অস্ট্রালর্প’ (Australorp) জাতের মুরগির উৎপত্তি গ্রেট ব্রিটেন। এটি ইংলিশ শ্রেণীভুক্ত মুরগির জাত। এরা ডিম ও মাংস উৎপাদনের জন্য উপযোগী। তাই বিশ্বব্যাপী এই জাতটি বেশ জনপ্রিয়।

মুরগির বৈশিষ্ট্য:

  1. এদের দেহ খাড়া ও লেজের দিকে ক্রমশ ঢালু, গভীর ও মজবুত হয়ে থাকে।
  2. এদের মাথার ঝুঁটি একক এবং কানের লতি লাল।
  3. পায়ের নালা পালকহীন ও চামড়ার রং সাদা।
  4. পালকের রং উজ্জ্বল ও সবুজের আভাযুক্ত কালো।
  5. ডিমের খোসার রং বাদামি।

উৎপাদান বৈশিষ্ট্য:

  • দৈহিক ওজন: ২.৯-৩.৯ কেজি।
  • বার্ষিক ডিম উৎপাদান ক্ষমতা: ১৫০-২০০টি।

গ) মুরগির জাতের নাম ‘লেগহর্ন’

চিত্র- লেগহর্ন জাতের মুরগি
চিত্র- লেগহর্ন জাতের মুরগি

উৎপত্তি এবং প্রাপ্তিস্থান: ‘লেগহর্ন’ (Leghorn) মুরগির উৎপত্তিস্থল ইটালি। এটি ভূমধ্যসাগরীয় জাতের মুরগি। এই শ্রেণির মধ্যে এরা সবচেয়ে জনপ্রিয় জাত। ডিম উৎপাদনের জন্য এরা বিশ্ববিখ্যাত। মুরগির জাত উন্নয়নের জন্য এটি ব্যাবহৃত হয়। 

মুরগির বৈশিষ্ট্য:

  1. এদের দেহ ত্রিভূজাকার অর্থাৎ কাঁধের দিকে চওড়া ও লেজের দিকে ক্রমশ সরু।
  2. দেহ আঁটোসাঁটো ও আকারের ছোট হয়ে থাকে।
  3. এদের মাথার ঝুঁটি একক এবং কানের লতি সাদা।
  4. পায়ের নালা পালকহীন ও চামড়ার রং হলুদ।
  5. উপজাত অনুযায়ী পালকের সাদা, কালো বাব বাদামি হতে পারে।
  6. ডিমের খোসার রং সাদা।
See also  ডিম সংগ্রহ ও বাছাই করার নিয়ম

উৎপাদান বৈশিষ্ট্য:

  • দৈহিক ওজন: ২.০-২.৭ কেজি।
  • বার্ষিক ডিম উৎপাদান ক্ষমতা: ২০০-২৫০টি।

ঘ) মুরগির জাতের নাম ‘ব্রাহমা’

চিত্র- ব্রাহমা জাতের মুরগির ছবি
চিত্র- ব্রাহমা জাতের মুরগির ছবি

উৎপত্তি এবং প্রাপ্তিস্থান: ‘ব্রাহমা’ (Brahma) মুরগির উৎপত্তিস্থল ভারতের ব্রহ্মপুত্র অঞ্চল। এটি এশিয়াটিক শ্রেণির মুরগির জাত। এরা মূলত মাংস উৎপাদনে উপযোগী। ব্রাহমা জাতের আসল নাম ছিল ‘গ্রে চিটাগাং’।

মুরগির বৈশিষ্ট্য:

  1. এদের দেহ ভারি ও ঘন পালকে ঢাকা।
  2. দেহ আঁটোসাঁটো ও আকারের ছোট হয়ে থাকে।
  3. মাথা মটর ঝুঁটিবিশিষ্ট এবং কানের লতি লাল।
  4. পায়ের নালা পালকযুক্ত, মাংসল ও হলুদ বর্ণের।
  5. চামড়ার রং হলুদ।
  6. ডিমের খোসার রং বাদামি।

উৎপাদান বৈশিষ্ট্য:

  • দৈহিক ওজন ৪.০-৫.০ কেজি।
  • ডিম উৎপাদান ক্ষমতা বেশ কম।

(৩) দেশি মুরগির বৈশিষ্ট্য

যদিও বাংলাদেশে মুরগির তেমন কোন উল্লেখযোগ্য জাত নেই তবে ‘আসিল’ নামে এক জাতের মুরগি দেখা যায়। নিচে এ জাতটির বৈশিষ্ট্য আলোচনা করা হলো।

দেশি মুরগির জাতের নাম ‘আসিল’:

চিত্র- আসিল জাতের দেশি মুরগির ছবি
চিত্র- আসিল জাতের দেশি মুরগির ছবি

উৎপত্তি এবং প্রাপ্তিস্থান: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল ও চট্টগামের বিভিন্ন অঞ্চল। এরা মূলত লড়াইয়ের মুরগি। তবে মাংসের জন্যও ব্যবহৃত হয়।

মুরগির বৈশিষ্ট্য:

  1. এই মুরগি দেখতে অত্যন্ত সুন্দর ও সুঠাম।
  2. মাথা মটর ঝুঁটিবিশিষ্ট।
  3. পা ও গলা বেশ লম্বা।
  4. গায়ে পালক খুব কম থাকে; পালকের সাদা, কালো, সোনালি প্রভৃতি।
  5. পায়ের নালায় পালক থাকে না।

উৎপাদান বৈশিষ্ট্য:

  • এদের দেহে বেশ মাংস থাকে এবং সুস্বাদু মাংসের জন্য এরা বিখ্যাত।
  • পূর্ণ বয়সে এদের দৈহিক ওজন ৪-৫ কেজি পর্যন্ত হয়। এরা ডিম কম দেয়।

প্রিয় পাঠক, উপরোক্ত আলোচনায় আমরা শ্রেণী অনুযায়ী বিভিন্ন প্রকার মুরগির বৈশিষ্ট্য ও মুরগির জাতের নাম সম্পর্কে জনলাম।

পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় মুরগির বিভিন্ন জাত উপত্তি এবং বিস্তৃতি লাভ করেছে। এসব জাতের আবার বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা দেখে এদের একটি থেকে আরেকটিকে আলাদা করা যায়। মুরগির এসব বৈশিষ্ট্যের উর ভিত্তি করে বিভিন্ন উপজাত এ ভাগ করা হয়েছে। উদাহরণ আমেরিকান শ্রেণিতে রোড আইল্যান্ডরেড, প্লাইমাউথ রক ইত্যাদি জাত রয়েছে।

[সূত্র: ওপেন স্কুল]

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/krisi

Everything related to animal and plants in the Bangla language!View Author posts