বাংলাদেশে খাদ্য ফসল হিসেবে গম দ্বিতীয় শীর্ষ স্থানে রয়েছে। সত্তর দশকে বাংলাদেশে প্রায় ১ লক্ষ হেক্টর জমিতে স্থানীয়ভাবে প্রাপ্ত খেরী, আইপি-৫২, আইপি-১২৫ জাতের গম আবাদ হত। এর মোট উৎপাদন মাত্র ১ লক্ষ টনের মত ছিল। তখন উচ্চ ফলনশীল জাতের গম চাষ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয় এবং বিদেশ থেকে কল্যাণসোনা এবং সোনালিকা জাতের ৫ হাজার টন গম বীজ আমদানি করা হয়। স্থানীয় জাতের তুলনায় উচ্চ ফলনশীল জাতের প্রায় তিন গুণ বেশি হওয়ায় তখন উৎপাদনে বিপুল উৎসাহ সৃষ্টি হয়।
প্রতি বছরই গম চাষের অধীন জমির পরিমাণ এবং উৎপাদন বৃদ্ধি পেতে থাকে। এভাবে ১৯৮৫ সালে প্রায় ৭ লক্ষ হেক্টর জমিতে গমের চাষ সম্প্রসারিত হয় এবং এর উৎপাদন প্রায় ১২ লক্ষ টনে উন্নীত হয়। এভাবে স্বল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ পৃথিবীর মানচিত্রে গম উৎপাদনকারী দেশে পরিণত হয়। ১৯৯৮-৯৯ সালে ৮ লক্ষ হেক্টর জমিতে গমের আবাদ সম্প্রসারিত হয় এবং উৎপাদন প্রায় ১৯ লক্ষ টনে উন্নীত হয়।
বাংলাদেশে গম চাষ এত দ্রুত জনপ্রিয় হওয়ার কারণ হিসেবে উল্লেখ করা যায় যে, গমের চাষ সহজ, পানি সেচ চাহিদা কম এবং রোগ ও পোকার আক্রমণের তেমন সমস্যা নেই।
বর্তমানে এদেশে অধিক আবাদকৃত গম জাতের মধ্যে শতাব্দী, প্রদীপ, সৌরভ, গৌরব, সুফী এবং বিজয় প্রধান। এছাড়া সম্প্রতি ‘বারি গম-২৫’ এবং ‘বারি গম- ২৬’ নামে ২টি উচ্চ ফলনশীল এবং যথাক্রমে লবণাক্ততা ও উচ্চ তাপমাত্রা সহনশীল জাত উদ্ভাবিত হয়েছে।
(১) গম চাষ পদ্ধতি
ক) গম চাষের জন্য কোন মাটি উপযোগী?
উঁচু ও মাঝারী দোআঁশ মাটি গম চাষের জন্য বেশি উপযোগী। লোনা মাটিতে গমের ফলন কম হয়।
খ) গম চাষের সময়/গম চাষের উপযুক্ত সময় কখন?
গমের উচ্চ ফলনশীল জাতসমূহের বপনের উপযুক্ত সময় হল কার্তিক মাসের শেষ থেকে অগ্রহায়ণের তৃতীয় সপ্তাহ। যে সব এলাকায় ধান কাটতে ও জমি তৈরি করতে বিলম্ব হয় সে ক্ষেত্রে আকবর, অম্রাণী, প্রতিভা ও গৌরব বপন করলে ভাল ফলন পাওয়া যায়।
গ) বীজের হার
হেক্টরপ্রতি ১২০ কেজি বীজ ব্যবহার করতে হবে। বীজ গজানোর ক্ষমতা ৮৫% এর বেশি হলে ভাল হয়।
ঘ) বীজ শোধন
ভিটাভেক্স-২০০ প্রতি কেজি বীজে ৩ গ্রাম হারে মিশিয়ে বীজ শোধন করতে হবে।
ঙ) বপন পদ্ধতি
সারিতে বা ছিটিয়ে গম বীজ বপন করা যায়। সারিতে বপনের জন্য জমি তৈরির পর লাঙ্গল দিয়ে সরু নালা তৈরি করে ২০ সেমি দূরত্বের সারিতে ৪-৫ সেমি গভীরে বীজ বুনতে হয়।
চ) গম চাষে সার প্রয়োগ পদ্ধতি
সেচসহ চাষের ক্ষেত্রে নির্ধারিত ইউরিয়া সারের দুই তৃতীয়াংশ এবং সম্পূর্ণ টিএসপি, এমপি ও জিপসাম শেষ চাষের পূর্বে প্রয়োগ করে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। বাকি এক তৃতীয়াংশ ইউরিয়া প্রথম সেচের সময় উপরি প্রয়োগ করতে হবে।
সেচ ছাড়া চাষের ক্ষেত্রের সম্পূর্ণ সার অর্থাৎ ইউরিয়া, টিএসপি, এমপি ও জিপসাম শেষ চাষের সময় জমিতে প্রয়োগ করতে হবে।
ছ) সারের পরিমাণ
গম চাষে নিচে উল্লিখিত হারে সার ব্যবহার করা প্রয়োজন।
সারের নাম | সারের পরিমাণ/হেক্টর (সেচসহ) | সারের পরিমাণ/হেক্টর (সেচ ছাড়া) |
ইউরিয়া | ১৮০-২২০ কেজি | ১৪০-১৮০ কেজি |
টিএসপি | ১৪০-১৮০ কেজি | ১৪০-১৮০ কেজি |
এমপি | ৪০-৫০ কেজি | ৩০-৪০ কেজি |
জিপসাম | ১১০-১২০ কেজি | ৭০-৯০ কেজি |
গোবর/কম্পোস্ট | ৭-১০ টন | ৭-১০ টন |
জ) পানি সেচ
মাটির প্রকারভেদে সাধারণত ২-৩টি সেডের প্রয়োজন হয়। প্রথম সেচ চারার তিন পাতার সময় (বপনের ১৭-২১ দিন পরে), দ্বিতীয় সেচ গমের শীষ বের হওয়ার সময় (বপনের ৫৫-৬০ দিন পর) এবং তৃতীয় সেচ দানা গঠনের সময় (বপনের ৭৫-৮০ দিন পর) দিতে হবে।
ঝ) ফসল সংগ্রহ
চৈত্র মাসের প্রথম থেকে মধ্য-চৈত্র পর্যন্ত গম সংগ্রহ করতে হয়।
(২) ট্রিটিক্যালি গম চাষ পদ্ধতি
ট্রিটিক্যালি গমের মতই একটি ফসল। তাই এর চাষাবাদ পদ্ধতি প্রায় গম ফসলের মতই।
- গমের মত জমি তৈরি করে শেষ চাষের পূর্বে একরপ্রতি ৬০ কেজি ইউরিয়া, ৬০ কেজি টিএসপি, ৩০ কেজি পটাশ ও ৪৫ কেজি জিপসাম সার দিয়ে অগ্রহায়ণ মাসের প্রথম থেকে তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত দ্বৈত ট্রিটিক্যালি বোনা যায়।
- গজানোর ক্ষমতা শতকরা ৮০ ভাগ ও তার বেশি হলে একরপ্রতি ৬০ কেজি বীজ ব্যবহার করতে হবে। গজানোর ক্ষমতা ৮০ ভাগের নিচে হলে প্রতি ১ ভাগ কম গজানোর জন্য একরপ্রতি ১ কেজি করে বেশি বীজ বপন করতে হবে। গজানোর ক্ষমতা শতকরা ৬০ ভাগের কম হলে ঐ বীজ ব্যবহার করা উচিত নয়।
- গমের মতই সকল আন্তঃপরিচর্যা যেমন- ১ম সেচের পরপরই ‘জো’ আসলে আগাছা দমন করতে হয়। বোনার ১৭-২১ দিনে হালকাভাবে প্রথম সেচ দিয়ে একরপ্রতি ৩০ কেজি ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগ করতে হবে।
- ট্রিটিক্যালি ফসল বোনা থেকে ৩৫-৩৬ দিন বয়সে গোড়া থেকে এক ইঞ্চি রেখে কেটে নিলে একরপ্রতি ১২০-১৫০ মণ কাঁচা ট্রিটিক্যালি ঘাস পাওয়া যায়। কাঁচা ঘাস সরাসরি গবাদি পশুকে খাওয়ানো যাবে কিংবা অকনো খড়ের সাথে মিশিয়ে খাওয়ানো যাবে। অতিরিক্ত ঘাস রোদে শুকিয়ে ‘হে’ তৈরি করে কিংবা ‘সাইলেজ’ তৈরি করে দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করে গবাদি পশুকে খাওয়ানো যায়।
- ট্রিটিক্যালি ঘাস কাটার পর জমিতে হালকা সেচ দিয়ে একরপ্রতি ৩০ কেজি ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগ করতে হয়। এরপর শীষ বের হলে আর একটি সেচ দিলেই ট্রিটিক্যালি থেকে একরে ৩০-৪০ মণ গমের মত দানা পাওয়া যায়।
- ট্রিটিক্যালি ক্ষেতে ইঁদুরের আক্রমণ হলে ফাঁদ পেতে কিংবা বিষটোপ (জিংক ফসফাইড বা ল্যানিরেট) দিয়ে দমন করতে হবে।
- দানার জন্য ট্রিটিক্যালি কাটার উপযুক্ত হলে, রৌদ্রজ্জ্বল দিনে সকালে কাটা উত্তম। কাটার পর ভালভাবে রোদে শুকিয়ে দুপুরে মাড়াই যন্ত্রের সাহায্যে ট্রটিক্যালি মাড়াই করা উত্তম।
- ট্রিটিক্যালির দানা গমের দানার মতই। তাই এর ব্যবহার ও সংরক্ষণ পদ্ধতি গমের মতই।
(৩) গম চাষে রোগ দমন ব্যবস্থাপনা
ক) গমের পাতার মরিচা রোগ দমন
রোগের পরিচিতি:
পাক্সিনিয়া রিকভিটা নামক ছত্রাকের আক্রমণে এ রোগ হয়ে থাকে। প্রথমে পাতার উপর ছোট গোলাকার হলদে দাগ পড়ে। শেষ পর্যায়ে এই দাগ মরিচার মত বাদামি বা কালচে রঙে পরিণত হয়। হাত দিয়ে আক্রান্ত পাতা ঘষা দিলে লালচে মরিচার মত গুঁড়া হাতে লাগে।
এ রোগের লক্ষণ প্রথমে নিচের পাতায়, তারপর সব পাতায় ও কাণ্ডে দেখা যায়। দেশের উত্তরাঞ্চলে এ রোগ বেশি হয়ে থাকে।
প্রতিকার:
- রোগ প্রতিরোধী গমের জাত আকবর, অদ্রাণী, প্রতিভা, সৌরভ ও গৌরবের চাষ করতে হবে।
- সুষম হারে সার প্রয়োগ করতে হবে।
- টিল্ট ২৫০ ইসি ছত্রাক নাশক (০.০৪%) ১ মিলি আড়াই লিটার পানিতে মিশিয়ে ১২-১৫ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।
খ) গমের পাতার দাগ রোগ দমন
রোগের পরিচিতি:
বাইপোলারিস সরোকিনিয়ানা নামক ছত্রাক এ রোগ ঘটায়। গাছ মাটির উপর আসলে প্রথমে নিচের পাতায় ছোট ছোট বাদামি ডিম্বাকার দাগ পড়ে। পরবর্তীকালে দাগসমূহ আকারে বাড়তে থাকে এবং গমের পাতা ঝলসে যায়।
রোগের জীবাণু বীজে কিংবা ফসলের পরিত্যক্ত অংশে বেঁচে থাকে। বাতাসে অধিক আর্দ্রতা এবং উচ্চ তাপমাত্রা (২৫ ডিগ্রি সে.) এ রোগ বিস্তারের জন্য সহায়ক।
প্রতিকার:
- রোগমুক্ত জমি হতে বীজ সংগ্রহ করতে হবে।
- গাছের পরিত্যক্ত অংশ সংগ্রহ করে পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
- প্রতি কেজি গম বীজে ২.৫-৩.০ গ্রাম ভিটাভেক্স-২০০ মিশিয়ে বীজ শোধন করতে হবে।
- টিস্ট-২৫০ ইসি (০.০৪%) এক মিলি প্রতি আড়াই লিটার পানিতে মিশিয়ে ১২ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।
গ) গমের গোড়া পচা রোগ দমন
রোগের পরিচিতি:
স্কেলেরোশিয়াম রলফসি নামক ছত্রাক দ্বারা গমের এ রোগ হয়। এই রোগের ফলে মাটির সমতলে গাছের গোড়ায় হলদে দাগ দেখা যায়। পরে তা গাঢ় বাদামি বর্ণ ধারণ করে এবং আক্রান্ত স্থানের চারদিকে ঘিরে ফেলে। পরবর্তীকালে পাতা শুকিয়ে গাছ মারা যায়।
রোগের জীবাণু মাটিতে কিংবা ফসলের পরিত্যক্ত অংশে দীর্ঘ দিন বেঁচে থাকে। সাধারণত বৃষ্টির পানি কিংবা সেচের দ্বারা এক জমি হতে অন্য জমিতে বিস্তার লাভ করে।
প্রতিকার:
- রোগ প্রতিরোধী আকবর, অমাণী, প্রতিভা, সৌরভ ও গৌরব জাতের চাষ করতে হবে।
- মাটিতে সবসময় পরিমিত আর্দ্রতা থাকা প্রয়োজন।
- ভিটাভেক্স-২০০ নামক ঔষধ প্রতি কেজি বীজে ২.৫-৩.০ গ্রাম হারে মিশিয়ে বীজ শোধন করতে হবে।
ঘ) গমের আলগা ঝুল রোগ দমন
রোগের পরিচিতি:
আসটিলেগো টিটিসি নামক ছত্রাকের আক্রমণে এ রোগ হয়। গমের শীষ বের হওয়ার সময় এ রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়। উক্ত ছত্রাকের আক্রমণের ফলে গমের শীষ প্রথম দিকে পাতলা পর্দা দিয়ে আবৃত থাকে। পরে তা ফেটে যায় এবং দেখতে কালো ঝুলের মত দেখায়।
ছত্রাকের বীজকণা সহজেই বাতাসের মাধ্যমে অন্যান্য পাছে এবং অন্য জমির গম গাছে সংক্রমিত হয়। রোগের জীবাণু বীজের ভ্রুণে জীবিত থাকে। পরবর্তী বছর আক্রান্ত বীজ জমিতে বুনলে বীজের অঙ্কুরোদগমের সময় জীবাণু সরিয় হয়ে উঠে।
প্রতিকার:
- রোগ প্রতিরোধী অগ্রাণী, প্রতিভা, সৌরভ ও গৌরব জাতের চাষ করতে হবে।
- রোগমুক্ত জমি হতে বীজ সংগ্রহ করতে হবে।
- ভিটাভেক্স-২০০ ঔষধ প্রতি কেজি বীজে ২.৫-৩.০ গ্রাম হারে মিশিয়ে বীজ শোধন করতে হবে।
ঙ) গম বীজের কালো দাগ রোগ দমন
ডেক্সলেরা প্রজাতি ও অলটারনারিয়া প্রজাতির ছত্রাক দ্বারা গমের এ রোগ হয়। এ রোগের ফলে গমের খোসায় বিভিন্ন আকারের বাদামি অথবা কালো দাগ পড়ে। বীজের ভ্রুণে দাগ পড়ে এবং পরবর্তীকালে নাগ সম্পূর্ণ বীজে ছড়িয়ে পড়ে।
এ রোগের জীবাণু বীজের মাধ্যমে সংক্রমিত হয়ে থাকে।
প্রতিকার:
- সুস্থ বীজ সংগ্রহ করে বপন করতে হবে।
- ভিটাভেক্স-২০০ ঔষধ প্রতি কেজি বীজে ২.৫-৩.০ গ্রাম হারে মিশিয়ে বীজ শোধন করতে হবে।
চ) গমের ইঁদুর দমনে বিষ টোপের ব্যবহার
পরিচিতি:
ইঁদুর গমের একটি প্রধান শত্রু। গম ক্ষেতে বিশেষ করে শীষ আসার পর ইঁদুরের উপদ্রব বেশি দেখা যায়। গম পাকার সময় ইঁদুর সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে।
বিএআরআই উদ্ভাবিত ২% জিংক সালফাইড বিষটোপ ইঁদুর দমনে কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে।
বিষটোপ প্রস্তুত প্রণালী:
- এক কেজি বিষটোপ তৈরির জন্য নিম্নরূপ হারে দ্রব্যাদি মিশাতে হবে।
- একটি এলুমিনিয়ামের পাত্রে বার্নি ও ১০০ গ্রাম পানি মিশিয়ে ২-৩ মিনিট জ্বাল দিতে হবে। বার্নি আঠালো হয়ে গেলে পাত্রটি নামিয়ে ফেলতে হবে।
- ঠাণ্ডা হওয়ার পর ২৫ গ্রাম জিংক ফসফাইড আঠালো বার্লির সাথে ভালভাবে মিশাতে হবে।
- জিংক ফসফাইড মিশানোর পর ১৬৫ গ্রাম গমের দানা পাত্রে ঢেলে এমন ভাবে মিশাতে হবে যেন প্রতিটি গমের দানার গায়ে কালো আবরণ পড়ে।
- এরপর গম দানা এক ঘন্টা রোদে শুকালে তা বিষটোপে পরিণত হবে। পরে তা ঠাণ্ডা করে পলিথিন ব্যাগ বা বায়ুরোধক পাত্রে রাখতে হবে।
উপাদান | পরিমাণ |
গম | ৯৬৫ গ্রাম |
বার্লি | ১০ গ্রাম |
জিংক ফসফাইড (সক্রিয় উপাদান ৮০%) | ২৫ গ্রাম |
পানি | ১০০ গ্রাম |
ব্যবহার পদ্ধতি:
- গমের জমিতে সদ্য মাটি উঠানো গর্ত সনাক্ত করতে হবে।
- ৩-৫ গ্রাম জিংক ফসফাইড বিষটোপ কাগজে রেখে শক্ত করে পুঁটলি বাধতে হবে।
- গর্তের মুখের মাটি সরিয়ে এ পুঁটলি ভিতরে ঢুকিয়ে দিয়ে মুখ বন্ধ করে দিতে হবে অথবা সতেজ গর্ভের আশে পাশে কাগজে বা মাটির পাত্রে বিষটোপ রেখে দিতে হবে।
- বিষটোপ খেলে ইঁদুর সাথে সাথে মারা যাবে।
(৪) গম চাষে অন্যান্য পরিচর্যা
আমাদের দেশে নানা জাতের পাখি আছে। এরা বিভিন্ন প্রকার কীটপতঙ্গ ও ক্ষতিকারক পোকা-মাকড় খেয়ে প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করে। তবে কিছু কিছু পাখি আছে যেগুলো উপকারের পাশাপাশি কিছু অপকারও করে থাকে। যেমন বাবুই, কাক, টিয়া, শালিক, এসব পাখি ফসলের ক্ষতি করে থাকে।
গম ক্ষেতে শালিক পাখির উপদ্রব হয়। বীজ বুনার ৫-৬ দিন পর গমের অংকুর বের হয়। কোন কোন এলাকায় শালিক পাখি এ অংকুরিত গম ক্ষেতের বীজ তুলে খেয়ে ফেলে। এতে আশানুরূপ ফলন হয় না। পাকা টমেটো ক্ষেতেও পাখির উপদ্রব হয়। ভুট্টা ক্ষেতে টিয়া ও কাকের উপদ্রব হয়। এরা ভুট্টার মোচা খেয়ে ফেলে ফসলের ক্ষতি করে। তেমনিভাবে সূর্যমুখী ক্ষেতেও কাক ও টিয়া পাখি পরিপত বীজ খেয়ে ফেলে।
যেহেতু এসব পাখি ফসলের ক্ষতির পাশাপাশি যথেষ্ট উপকারও করে থাকে তাই এগুলো একবারে মেরে ফেলা উচিত নয়। পাখিকে না মেরে কিভাবে ফসলের ক্ষেত থেকে তাড়িয়ে দেয়া যায় সে ব্যাপারে চিন্তা ভাবনা করা হচ্ছে।
পাখি তাড়ানোর উল্লেখযোগ্য পদ্ধতিগুলো হলো- ঢিল ছুড়া, বাশেঁর ডুগডুগি বাজানো, কাকতাড়ুয়া ব্যবহার করা, বাজি ফুটানো চকচকে ফিতা ব্যবহার করা, জাল পাতা ইত্যাদি। এসব পদ্ধতির মধ্যে চকচকে ফিতার ব্যবহার বেশি কার্যকর।
চকচকে ফিতার ব্যবহার পদ্ধতি-
- চকচকে ফিতা মূলত একটি প্লাস্টিকের ফিতা যা বিভিন্ন রঙের হতে পারে। তবে ফিতাটির রং একদিকে লাল এবং অন্য দিকে সাদা হলে ভাল হয়।
- ফিতার উপর সূর্যের আলো পড়ে চকচকে আলোর প্রতিফলন হয় যা পাখিদের চোখে পড়ে বিরক্তির সৃষ্টি করে। তাছাড়া ফিতার উপর বাতাস লেগে এক প্রকার শো শো শব্দের সৃষ্টি করে। এতে পাখি ভয় পেয়ে ক্ষেত থেকে চলে যায়।
- ক্ষেতে ১০/১২ ফুট দূরে দূরে খুঁটি পুঁতে আড়াআড়ি ভাবে এ ফিতা টানিয়ে দিতে হয়। এমনভাবে ফিতা টানাতে হবে যাতে ফিতাটা ফসলের এক দেড় ফুট উপরে থাকে। পাখিরা যেন দূর থেকেই এ ফিতা দেখতে পায়।
- পরীক্ষায় দেখা গেছে যে, এ ফিতা ব্যবহার করলে ভুট্টা ও সূর্যমুখী ক্ষেতে টিয়া বা কাকের উপদ্রব ৭০/৮০ ভাগ কমে যায় এবং এ ফিতার কার্যকারিতো প্রায় ২ সপ্তাহ স্থায়ী হয়।
- বেশি দিন এ ফিতা ব্যবহার করলে পাখিদের ভয় কেটে যায়। তাই চকচকে ফিতা বেশি দিন ব্যবহার করা উচিত নয়।
- এ ফিতা একবার ব্যবহার করলে নষ্ট হয় না। যত্ন করে রেখে দিলে আবার পরবর্তী বছর ব্যবহার করায় যায়।
- এ ফিতা ব্যবহারের ফলে প্রকৃতিতে কোন বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয় না। বার বার ব্যবহার করা যায় বলে ফসল রক্ষার খরচও কম হয়।
(৫) বেড প্লান্টিং পদ্ধতিতে গম চাষ পদ্ধতি
ক) বেড প্লান্টিং পদ্ধতিতে গম চাষ পদ্ধতির পরিচিতি ও সুবিধা
বেড প্লান্টিং পদ্ধতিতে গম চাষ বাংলাদেশে নতুন হলেও বিশ্বের প্রধান গম উৎপাদনকারী দেশসমূহ এ পদ্ধতিতে চাষ করে। জমি ভালভাবে চাষ করে পাওয়ার টিলার চালিত বেড প্লান্টার দ্বারা এক সঙ্গে বেড তৈরি ও সার ছিটানোর পাশাপাশি বীজ বপন করা সম্ভব অথবা কোদাল দিয়ে বেড তৈরি করে গম চাষ করা যায়।
- ফলন শতকরা ১০-২০ ভাগ বৃদ্ধি পায়।
- সেচের পানি শতকরা ৩০-৪০ ভাগ সময় হয়।
- নাইট্রোজেন সারের উপযোগিতা বেড়ে যায়।
- শতকরা ১৫-২০ ভাগ বীজ কম লাগে।
- ফসল মাটিতে পড়ে যাবার প্রবণতা হ্রাস পায়।
- একই বেড বারবার ব্যবহার করে চাষের খরচ কমানো যায়, পাশাপাশি বীজ বপনের পূর্বে সেচ (Pre-sowing irrigation) দিয়ে সহজে আগাছা দমন করা সম্ভব।
- স্থায়ী বেডের ক্ষেত্রে দু’ফসলের মাঝের সময় (Turmaround time) কমিয়ে সময়মত বীজ বপন সম্ভব।
গম কাটার পর একই বেডে মেরামত (Reshape) করে বিনা চাষে মুগডাল, ভুট্টা, বেড প্লান্টিং পদ্ধতিতে গম চাষের নকশা ধান, ইত্যাদি ফসলের চাষ করে আশানুরূপ ফলন পাওয়া সম্ভব। তবে, বিনা চাষের ক্ষেত্রে বীজ বপনের পূর্বে আগাছার উপদ্রব দেখা গেলে রাউন্ড আপ (Round up) নামক আগাছা নাশক ৬ মিলি প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
খ) গম চাষে বারি সিডার ও উইডার এর ব্যবহার
গম বপন ও আগাছা পরিষ্কারের জন্য বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে কৃষকের জমিতে ব্যবহার উপযোগী ‘বারি সিডার’ (বীজ বপন যন্ত্র) ও ‘বারি উইডার’ (আগাছা নিড়ানি যন্ত্র) উদ্ভাবন করা হয়েছে।
কৃষকেরা সাধারণত আমন ধান কাটার পরে গম বপন করে, ফলে ফলন কম হয়। কম খরচ ও অল্প সময়ে সময়মত বীজ বপন করার জন্য ‘বারি সিডার’ ব্যবহার করা যায়। পাশাপাশি আগাছা পরিষ্কারের জন্য ‘বারি উইডার’ ব্যবহার করা যায়। গম চাষে ‘বারি সিডার’ ব্যবহারের জন্য দোআঁশ ও বেলে দোআঁশ মাটি উপযোগী।
গ) চাষ পদ্ধতি
বিষয় | বিবরণ |
গমের জাত | সৌরভ, গৌরব, শতাব্দী |
জমি ও মাটি | বেলে দোআঁশ ও দোআঁশ মাটি |
বপন/রোপণের সময় | অগ্রহায়ণের শুরু থেকে শেষ (১৫-৩০ নভেম্বর) পর্যন্ত গম বীজ বপন করার উপযুক্ত সময়। তবে দেশের উত্তরাঞ্চলে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত বপন করা যেতে পারে। |
বপন পদ্ধতি | ‘বারি সিডার’ দিয়ে ২-৩ সেমি গভীরতায় ২০ সেমি পর পর লাইনে বীজ বপন করা যায়। এঁটেল দোআঁশ মাটির ক্ষেত্রে ‘জো’ আসার সাথে সাথে ৩-৪ টি চাষ ও মই দিয়ে জমি এমনভাবে তৈরি করতে হবে যাতে বড় টিলা (মাটির চাকা) না থাকে। সরাসরি ‘বারি সিডার’ ব্যবহার করে একই সময়ে জমি চাষ, বীজ বপন এবং মই দেয়া এই তিনটি কাজ করা সম্ভব। |
ঘ) সারের পরিমাণ (সেচসহ)
সারের নাম | সারের পরিমাণ/হেক্টর |
ইউরিয়া | ১৮০-২২০ কেজি |
টিএসপি | ১৪০-১৮০ কেজি |
এমপি | ৪০-৫০ কেজি |
জিপসাম | ১১০-১২০ কেজি |
জিংক অক্সাইড | ৪-৫কেজি |
বরিক এসিড | ৫-৬ কেজি |
গোবর | ৭-১০ টন |
ঙ) সার প্রয়োগ পদ্ধতি
শেষ চাষের সময় ইউরিয়া সারের তিন ভাগের দুই ভাগ এবং অন্যান্য সারের সবটুকু ছিটিয়ে মাটির সাথে ভালভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। বাকি একভাগ ইউরিয়া বীজ বপনের ১৭-২১ দিনের মধ্যে উপরি প্রয়োগ করতে হবে। এ সময় জমিতে পরিমাণমত রস না থাকলে সেচ দিতে হবে।
চ) গাছ পাতলা করণ
চারা গজানোর ৭-১০ দিনের মধ্যে সারিতে প্রয়োজনের অতিরিক্ত চারা গজালে তা উঠিয়ে পাতলা করে দিতে হবে। এছাড়াও কোন স্থানে চারা কম গজালে বীজ দিতে হবে। চারার বয়স ২৫-৩০ দিন হলে ‘বারি উইডার’ বা হাত দ্বারা অথবা উভয়ভাবে আগাছা দমন করতে হবে। সময়মত আগাছা দমনের ফলে গমের ফলন শতকরা ১০-১৫ ভাগ বৃদ্ধি পায়।
ছ) সেচ ও পানি নিষ্কাশন
মাটির প্রকারভেদে ২-৩টি সেচের প্রয়োজন হয়। প্রথম সেচ অবশ্যই চারা গজানোর ১৭-২১ দিন পর, দ্বিতীয় সেচ গমের শীষ বের হওয়ার সময় (বপনের ৭৫-৮০ দিন পর) প্রয়োগ করতে হবে।
জ) ফসল সংগ্রহ
সাধারণত বীজ বপনের ১১০-১২০ দিন পর অর্থাৎ চৈত্রের শুরু থেকে মধ্য চৈত্র পর্যন্ত গম সংগ্রহ করতে হয়।
(৬) বিভিন্ন গম চাষ পদ্ধতির মাঝে তুলনা
বপন এর ক্ষেত্রে-
বিষয় | হাত দ্বারা বপন | বারি সিডার দ্বারা বপন | বারি বেড প্লান্টার দ্বারা বপন |
জমি তৈরি (দোআঁশ ও বেলে দোআঁশ) মাটির ক্ষেত্রে | ৩-৪টি চাষের প্রয়োজন হয়। সিডারের তুলনায় অধিক শ্রমিক সময় ও অর্থের প্রয়োজন। | চাষের দরকার না হওয়ায় শ্রমিক, সময় ও অর্থে প্রয়োজন হয় না। | ১-২টি চাষ লোগে। সিডারের তুলনায় অেধিক শ্রমিক, সময় ও অর্থে প্রয়োজন। |
বপণে প্রয়োজনীয় শ্রমিক (সংথ্যা/দিন/হেক্টর) | ১৭ | ৭ | ৭ |
মাটির প্রকৃতি | সকল মাটির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য | সকল মাটির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য | এঁটেল মাটির ক্ষেত্রে অসুবিধাজনক। |
বীজের হার (কেজি/হেক্টর) | ১২০ | ৯০-১০০ | ৯০-১০০ |
আগাছা দমনে প্রয়োজনীয় শ্রমিক-
বিষয় | হাত দ্বারা বপন | বারি সিডার দ্বারা বপন | বারি বেড প্লান্টার দ্বারা বপন |
হাত দ্বারা | ৪২ শ্রমিক/দিন/হেক্টর | – | – |
বারি উইডার + হাত দ্বারা | ৪৬ শ্রমিক/দিন/হেক্টর | – | – |
বারি উহডার দ্বারা | ১২ শ্রমিক/দিন/হেক্টর | – | – |
সেচ ও নিষ্কাশন | সেচ ও নিষ্কাশন এর জন্য নালা তৈরি করতে হয়। | সেচ ও নিষ্কাশন এর জন্য নালা তৈরি করতে হয়। | বপনের সময় স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেচ ও নিষ্কাশন নালা তৈরি হওয়ায় পৃথকভাবে নালা তৈরি করতে হয় না। |
সময় | একই পরিমাণ জমিতে বপন ও আগাছা দমনে যন্ত্র ব্যবহারে তুলনায় ২.৫ গুণ সময় বেশি লাগে। | হাত দ্বারা বপন ও আগাছা দমনের তুলনায় ২.৫ গুণ সময় কম লাগে। | হাত দ্বারা বপন ও আগাছা দমনের তুলনায় ২.৫ গুণ সময় কম লাগে। |
জমির পরিমাণ | জমির পরিমাণের উপর নির্ভর করে না। | বড় আকারের জমিতে ব্যবহার করা সুবিধাজনক। | বড় আকারের জমিতে ব্যবহার করা সুবিধাজনক। |
ফসল বপন পদ্ধতি অনুসারে | ৩.১০ টন/হেক্টর | ৩.২৪ (টন/হেক্টর | ৩.২৩ (টন/হেক্টর |
আগাছা দমন পদ্ধতি অনুসারে-
বিষয় | হাত দ্বারা বপন | বারি সিডার দ্বারা বপন | বারি বেড প্লান্টার দ্বারা বপন |
হাত দ্বারা | ৩.১৪ | – | – |
বারি উইডার + হাত দ্বারা | ৩.২০ | – | – |
বারি উইডার দ্বারা | ৩.২৯ | – | – |
আয় ও ব্যয়ের অনুপাত | ১.৩৪ঃ১.০ | ১.৫২ঃ১.০ | ১.৫১ঃ১.০ |
(৭) গম চাষের অন্যান্য পদ্ধতি
ক) বিনা চাষে গম আবাদ
অনেক জমিতে রোপা আমন ধান কাটার পর চাষ-মই দিয়ে জমি পুরোপুরি তৈরি করে পম বীজ বোনার সময় থাকে না। এক্ষেত্রে বিনা চাষে গম আবাদ প্রযুক্তি অবলম্বন করা যায়।
- যে সব এলাকায় ধান কাটার পর জমিতে পর্যাপ্ত রস থাকে অর্থাৎ হাটলে পায়ের দাগ পড়ে এমন অবস্থায় বিনা চাষে গম আবাদ সম্ভব।
- জমিতে রস না থাকলে ধান কাটার পর পরই হালকা সেচ দিয়ে ‘জো’ আসলে বীজ বুনতে হবে।
- বীজ বোনার পর ১৫ দিন পর্যন্ত পাখি তাড়ানোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
- পাখির উপদ্রব কমানো এবং রোদে শুকিয়ে যাওয়া রোধ করার জন্য বীজ গোবর গুলানো পানির মধ্যে কয়েক ঘন্টা ডুবিয়ে রাখার পর উঠিয়ে শুকাতে হবে। এতে বীজের গায়ে গোবরের প্রলেপ লেগে যায়।
- এ প্রদ্ধতিতে গম আবাদে রাসায়নিক সার ২ কিস্তিতে প্রয়োগ করা যায়। প্রথমত বীজ ও সার একই সময়ে ছিটানো যায় অথবা গম বোনার ১৭-২০ দিনের মধ্যে জমিতে প্রথম হালকা সেচ দেওয়ার সময় সব সার প্রয়োগ করা যায়।
- বীজ বোনার ২৫-৩০ দিনের মধ্যে আগাছা দমন করা প্রয়োজন।
খ) স্বল্প চাষে গম আবাদ
দেশী লাঙ্গল দিয়ে ২টি চাষ দিয়ে গম বীজ বোনা যায়। স্বল্প চাষে গম আবাদ বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি।
- এক্ষেত্রে ধান কাটার পর জমিতে ‘জো’ আসার সাথে সাথে চাষ দিতে হবে। যদি ‘জো’ না থাকে তবে সেচ দেওয়ার পর ‘জো’ আসলে চাষ করতে হবে।
- প্রথম চাষ দিয়ে মই দিতে হবে। দ্বিতীয় চাষ দেবার পর সব সার ও বীজ ছিটিয়ে মই দিয়ে বীজ ঢেকে দিতে হবে অথবা দ্বিতীয় চাষের সময় লাঙ্গলের পেছনে ২০ সেমি দূরুত্বে সারিতে বীজ বোনা যায়।
- বপনের পর ১৫ দিন পর্যন্ত পাখি তাড়ানোর ব্যবস্থা নিতে হবে। বপনের ১৭- ২১ দিনের মধ্যে হালকাভাবে প্রথম সেচ দিতে হবে।
- প্রথম সেচের সময় ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগ করতে হবে।
- বপনের ২৫-৩০ দিনের মধ্যে আগাছা দমন করলে ভাল ফলন পাওয়া যায়।
(৮) গম বীজ সংরক্ষণ পদ্ধতি
কৃষক পর্যায়ে উন্নত পদ্ধতিতে গম বীজ সংরক্ষণ গম চাষের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ উন্নত মানের গম বীজের অভাবে অনেক চাষী গম বপন করতে পারে না। তাই কৃষক পর্যায়ে বৈজ্ঞানিক উপায়ে বীজ সংরক্ষণের পদ্ধতি উদ্ভাবন করা হয়েছে।
- প্রথমে পুষ্ট বীজ ভালভাবে রোদে শুকাতে হবে। শুকানোর পর বীজ দাঁতের নিচে চাপ দিলে ‘কট্’ করে শব্দ হলে বুঝতে হবে বীজ ভালভাবে শুকিয়েছে।
- ড্রাম, কেরোসিন বা বিস্কুটের টিনে সম্পূর্ণ বায়ুরোধক অবস্থায় বীজ সংরক্ষণ করতে হবে।
- পুরু (০.১২ মিমি) পলিথিন ব্যাগেও বীজ ভাল থাকে। ব্যাগটিকে চটের বস্তার ভিতরে ঢুকিয়ে রাখতে হবে।
- এ ছাড়া ২বার আলকাতরার প্রলেপ দেওয়া মাটির কলস বা মটকায় বীজ রাখা যায়।
- সব ক্ষেত্রেই বীজ দ্বারা পাত্র ভর্তি করতে হবে তা না হলে পোকার আক্রমণ হতে পারে।
- বীজ রাখার পূর্বে রোদে শুকানো বীজ অবশ্যই ছায়ায় ঠাণ্ডা করে নিতে হবে। পাত্র সরাসরি মেঝেতে না রেখে মাচায় রাখা ভাল।
(৯) গম চাষ পদ্ধতি pdf ডাউনলোড
(১০) চাষকৃত গমের পুষ্টিমান
গম সাধারণত মানুষের রুটি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া গমের কুঁড়া গো-খাদ্য হিসাবে ব্যবহৃত হয়।
গম হতে যে আটা হয় তার প্রতি ১০০ গ্রাম আটায় আমিষ ১২.১ গ্রাম, শর্করা ৬৯.৪ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৪৮ মিলিগ্রাম, লৌহ ১১.৫ মিলিগ্রাম, ক্যারোটিন ২৯ মাইক্রোগ্রাম, ভিটামিন বি-১ ০.৪৯ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি-২ ০.২৯ মিলিগ্রাম, আাঁশ ১.৯ গ্রাম, খনিজ পদার্থ ২.৭ গ্রাম এবং জলীয় অংশ থাকে ১২.২ গ্রাম।
প্রিয় পাঠক! আশকরি গম চাষ পদ্ধতি ও গম চাষে রোগ দমন ব্যবস্থাপনা ও অন্যান্য পরিচর্যা সম্পর্কে আজকে বিস্তারিত ধারণা পেয়েছেন। নিয়মিত কৃষি বিষয়ক তথ্য পেতে নিয়মিত আমাদের এই ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন।
পোষ্টটি যদি আপনার উপকারে আসে বা ভালো লাগলে বা কোন মতামত থেকে থাকে অবশ্যই কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করে জানাবেন। আমদের মতামত আমাদের ব্যাপকভাবে উৎসাহিত করে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
[সূত্র: বিএআরআই ও বিডব্লিউএমআরআই]